নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মরুভূমির জলদস্যু

মরুভূমির জলদস্যু

মরুভূমির জলদস্যুর বাগানে নিমন্ত্রণ আপনাকে।

মরুভূমির জলদস্যু › বিস্তারিত পোস্টঃ

পারিজাতের পরিচয়

২৪ শে মে, ২০২১ দুপুর ১:২৬



হিন্দুধর্মগ্রন্থ মহাভারতে আছে অমৃতের সন্ধানে দেবতা ও অসুররা মন্দার পর্বতকে মন্থনদণ্ড এবং শিবের স্কন্ধসঙ্গী নাগরাজ বাসুকীকে মন্থনরজ্জু হিসাবে ব্যবহার করে সমুদ্র থেকে তুলে এনেছিলেন একের পরে এক আশ্চর্য সব বস্তু। সেই মন্থনে উদ্ভাসিত হয়েছিলেন লক্ষ্মীদেবী, ঐরাবত হস্তী, উচ্চৈঃশ্রবা অশ্ব, অপ্সরাকুল, কামধেনু, চন্দ্র ইত্যাদি, এবং অবশ্যই হলাহল বিষ ও অমৃত। এসব ছাড়াও সেই মন্থনে উঠে এসেছিল এক আশ্চর্য বৃক্ষ, যার নাম পারিজাত। দেবরাজ ইন্দ্রের স্বর্গের নন্দন কাননে পারিজাত স্থান পেয়েছিলো। পারিজাত স্বর্গের শোভা হয়ে নিজের ঘ্রাণে মুগ্ধ করতো দেব দেবীদের।



স্বর্গ থেকে পারিজাত গাছটি পৃথিবীতে নিয়ে আসা নিয়ে পৌরাণিক কাহিনী দুই দিকে বাঁক নেয়। একদিকে পারিজাত গাছটিকে পৃথিবীতে আনে শ্রীকৃষ্ণ। কৃষ্ণের দুই স্ত্রী সত্যভামা ও রুক্মিণীর খুব ইচ্ছে তাদের বাগানও পারিজাতের ঘ্রাণে আমোদিত হোক। কৃষ্ণ স্ত্রীদের খুশি করতে লুকিয়ে স্বর্গের পারিজাত বৃক্ষ থেকে একটি ডাল ভেঙ্গে এনে সত্যভামার বাগানে রোপণ করে। যার ফুল রুক্মিণীর বাগানেও ঝরে পরে সুগন্ধ ছড়ায়।

অন্যদিকে আরেকটি কাহিনীতে বলা হয় অর্জুন তার মা কুন্তীর জন্য স্বর্গ থেকে পারিজাত গাছটি পৃথিবীতে নিয়ে আসে। পান্ডবদের বনবাস কালে, তাদের মা কুন্তী যাতে পারিজাত ফুল দিয়ে শিবপূজা করতে পারেন সেই জন্য অর্জুন পারিজাত বৃক্ষটি পৃথিবীতে নিয়ে আসে।


তাছাড়া মহাভারত-এর অন্যতম চরিত্র পাণ্ডবমাতা কুন্তীর নাম থেকে উত্তরপ্রদেশের বরবাঁকি জেলার একটি গ্রামের নামকরণ হয় কিন্তুর। কিংবদন্তি অনুযায়ী, এখানকার অসংখ্য প্রাচীন মন্দিরের একটি নাকি স্বয়ং কুন্তী কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত। মনে করা হয়, কুন্তীকে এখানেই দাহ করা হয়েছিল এবং তার চিতাভস্ম থেকেই জন্ম নেয় একটি পারিজাত বৃক্ষ।



এই গাছটিকে সম্মান জানিয়েছে ভারত সরকারও। ভারতীয় সরকার ১৯৯৭ সালে এই পারিজাতের ছবিওয়ালা একটি ৫ টাকা মূল্যের ডাকটিকেট এবং এই পারিজাতের ফুলের ছবিওয়ালা একটি ৬ টাকা মূল্যের ডাকটিকিট প্রকাশ করে।



এই পারিজাত গাছটি আসলে একটি বাওবাব (Baobab) গাছ, এবং খুব সম্ভবতঃ আফ্রিকা থেকে আনা। এই নির্দিষ্ট বৃক্ষটি ছাড়া অন্য কোনো বাওবাব গাছকে কিন্তু পারিজাত বলা হয় না।
এতোক্ষণে আপনার একটি পারিজাতের দেখা পেলেন।




আমাদের সকলের অতি পরিচিত শিউলি বা শেফালি ফুলের আরেক নাম পারিজাত। উপরের হিন্দুধর্ম গ্রন্থগুলির বর্ননা অনুযাই তাদের পারিজাত হচ্ছে এই শিউলি ফুল (আমার মতে)। ফুলটির হওয়ার কথা শ্বেত-শুভ্র এবং সুগন্ধী যুক্ত। বাওবাবের ফুল সাদা হলেও সুগন্ধী অবশ্যই নয়। বরং এর ঘ্রাণ আমার কাছে বেশ বাজেই মনে হয়েছে।



শিউলি ফুল নিয়ে আরো একটি মিথ আছে।
পারিজাতিকা নামের এক রাজকুমারী সূর্যকে ভালোবেসে ফেলে। কিন্তু সূর্যের সাথে মিলন হবার নয় বলে সে মনের দুঃখে আত্মহত্যা করে। সেই রাজকন্যা পারিজাতিকার চিতাভষ্ম থেকে জন্ম নেয় শিউলি ফুলের গাছ। তাই শিউলি ফুলের আরেক নাম পারিজাত। পারিজাত মনের দুঃখে ক্ষোভে সূর্যের মুখ দেখতে চায় না বলেই সকাল বেলায় সূর্য উঠার আগেই ঝরে পড়ে গাছ থেকে।


তৃতীয় আরো একটি ফুল পারিজাত নামে পরিচিতো।
সেটি হচ্ছে মান্দার বা মাদার।
অবহেলিত কাঁটাযুক্ত গাছে রূপসী মান্দার লোকের অবহেলার জবাব দেয় নিজের রূপে। মান্দার গাছ পাতা ঝরায় বসন্তে এবং ফুল ও ফোটে ঠিক এই সময়ে। ফুলবতী মান্দারের দিকে যেকোনো লোক দ্বিতীয়বার তাকাতে বাধ্য হবে।



মান্দারের পোষাকি নাম পারিজাত হলেও পুরানে বর্ননা করা পারিজাতের ফুলের সাথে এর কোনো মিল খুঁজে পাওয়া যায় না। তবে একটি মিল আছে। শ্রীকৃষ্ণ স্বর্গ থেকে একটি ডাল এনে পৃথিবীতে লাগিয়ে ছিলো। শিউলির ডাল লাগালেই চারা হয়ে যায় না, কিন্তু মান্দারের ডাল লাগালেই চারা হয়ে যায়।



ইদানিং ভুল করে অনেকেই আরো একটি ফুলকে পারিজাত ফুল নামে ডাতকে শুরু করেছে। ফুলটি হচ্ছে সুপ্তি ফুল। ইংরেজী নাম Rose of Venezuela আর বৈজ্ঞানিক নাম Brownea coccinea. এর প্রকৃত নাম সুপ্তি ফুল, কেউ কেউ পাখি ফুল নামেও ডাকে।

ছবি সূত্র : কয়েকটি ছবিতে সংগৃহীত লেখা রয়েছে, সেগুলি ইন্টারনেট থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে।
বাকি ছবিগুলি বিভিন্ন সময় বিভিন্ন স্থানে গিয়ে আমি তুলেছি নিজের ক্যামেরায়।



=================================================================
আজি যত কুসুম কলি ফুটিলো কাননে

ফুলেদের কথা
অশোক, অর্কিড, অলকানন্দা, অলকানন্দা (বেগুনি), আকন্দ, আমরুল (গোলাপি)
কদম, কলাবতী, কসমস, কাঞ্চন
গাঁধা, গামারি, গোলাপ, গোলাপি আমরুল
জবা, সাদা জবা, ঝুমকো জবা, লঙ্কা জবা, পঞ্চমুখী জবা, বহুদল জবা, রক্ত জবা, হলুদ জবা, গোলাপি জবা
ডালিয়া
তমাল, তারাঝরা
দাঁতরাঙ্গা, দাদমর্দন, দেবকাঞ্চন, দোলনচাঁপা, ধুতুরা
নাগেশ্বর, নাগলিঙ্গম, নীল হুড়হুড়ে
পপী
ফাল্গুনমঞ্জরী, ফুরুস
বরুণ, বড়নখা, বিড়াল নখা, বাদুড় ফুল, বাগানবিলাস, বেগুনী অলকানন্দা, বোতল ব্রাশ, ভাট ফুল
মাধবীলতা, মধুমঞ্জরি
রঙ্গন, রুদ্রপলাশ, রাজ অশোক, রাধাচূড়া
লতা পারুল
শাপলা, শিমুল, শিউলি, শিবজটা


গাছেদের কথা
বাংলাদেশের সংরক্ষিত উদ্ভিদের সচিত্র তালিকা
অশোক সমগ্র; কৃষ্ণচূড়া; মাছি ফাঁদ উদ্ভিদ; জল জমানি পাতা
কৃষ্ণচূড়া, রাধাচূড়া ও কনকচূড়া বিতর্ক
চাঁপা নিয়ে চাপাবাজি
বিলম্ব

আরো কিছু
বিভিন্ন দেশের জাতীয় ফুল সমগ্র
বিভিন্ন প্রজাতীর গোলাপ ফুল সমগ্র
এডওয়ার্ডস বোটানিক্যাল রেজিস্টার সমগ্র
১০টি ফুলের ছবি সমগ্র

মন্তব্য ১৪ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (১৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২৪ শে মে, ২০২১ দুপুর ২:৩৪

মোহামমদ কামরুজজামান বলেছেন: ভাই, শিউলি ফুল (শিউলি নামও) প্রিয় তয় ইডা যে পরিজাত তা জানতাম না।

আহা!!! বড়ই সৌন্দর্য সেই ছোট ফুলটার ।আর ঘ্রাণ!!!! কি কমু।সুবা সুবা মন পাগল করার জন্য যথেষ্ট।

২৪ শে মে, ২০২১ বিকাল ৩:২৭

মরুভূমির জলদস্যু বলেছেন: শিউলির অনেকগুলি নাম আছে -
অন্যান্য ও আঞ্চলিক নাম : শেফালি, শেফালিকা ।
সংস্কৃত নাম : নালাকুমকুমাকা, হারসিঙ্গারাপুস্পক, সুকলাঙ্গি, রাজানিহাসা, মালিকা, পারিজাত, পারিজাতা, পারিজাতাকা, অপরাজিতা, বিজয়া, নিসাহাসা, প্রহার্ষিনী, প্রভোলানালিকা, বাথারি, ভুথাকেশি, সীতামাঞ্জারি, সুবাহা, নিশিপুস্পিকা, রাগাপুস্পি, খারাপাত্রাকা, প্রযক্তা, প্রযক্তি ।

২| ২৪ শে মে, ২০২১ দুপুর ২:৩৮

রাজীব নুর বলেছেন: শিউলি ফুলের ছবিটা খুবই ভালো লেগেছে। এই ফুলের গন্ধ অতি মনোরম।

২৪ শে মে, ২০২১ বিকাল ৩:২৮

মরুভূমির জলদস্যু বলেছেন: বেছে বেছে অনেকগুলি গাছ লাগাবো রাতের ফুলের। ওদের ঘ্রাণ আমার খুব পছন্দ।

৩| ২৪ শে মে, ২০২১ সন্ধ্যা ৬:৩১

চাঁদগাজী বলেছেন:



আগের দিনে, চট্টগ্রামে ফুলগাছ থাকতো শুধু হিন্দু বাড়িতে, মুসলমান বাড়ীতে আগে কেহ শিউলী লাগাতো না; মনে করা হতো, ইহা শুধু পুজার ফুল। এখন শিউলী বেশ পপুলার।

২৪ শে মে, ২০২১ সন্ধ্যা ৬:৫৮

মরুভূমির জলদস্যু বলেছেন: হিন্দুধর্মাবলম্বী নারীরা ঝরা শিউলি ফুল কুড়িয়ে নিয়ে যান পূজার জন্য। শিউলি এমনই এক ফুল যেটি ঝরে গেলেও পূজায় ব্যবহারে কোনো বাঁধা নেই। এই ফুলকে দুর্গা পূজার আগমনি ফুলের মর্যাদা দিয়েছে।

৪| ২৪ শে মে, ২০২১ রাত ৯:৪৬

সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: সুন্দর একটা পোস্ট। কিছুদিন আগেই পারিজাত নিয়ে একটু ঘাঁটাঘাঁটি করতে হয়েছিল। আচ্ছা, তার আগে বলে নিই, ছোটোবেলায় গ্রামে, বাড়ির আশেপাশে প্রচুর মান্দার গাছ ছিল। আর কিছু পাখি মান্দার গাছে বাসা বাঁধতো, কাঁটার জন্য ঐগুলোতে উঠতে পারতাম না বলে রাজ্যের বিরক্তি ছিল মনে :( গাছগুলোও তেমন জুইতের না, সবচাইতে নরম কাঠ, লাকড়ি ছাড়া কোনো কাজে লাগে না, মানুষ অন্য অকর্মা মানুষকে আবার মান্দার গাছ বলে গালিও দিত। সেই গাছের যে এত সুন্দর একটা নাম, তাও জানলাম কিছুদিন আগে। ছোটোবেলার এত ফুলের মধ্যে মান্দার ফুলও অনেক সুন্দর ছিল তা কোনোদিন চোখে পড়েছিল বলে মনে পড়ে না, অথচ মান্দার গাছের আশেপাশে ছোটোবেলাটা গেছে। এই ফুলের কি সত্যিই কোনো ঘ্রাণ আছে?

আমি এতদিন জানতাম পারিজাত হলো সামুদ্রিক কোনো উদ্ভিদের নাম। পারিজাতের অন্য নাম যে শেফালি বা শিউলি, তা জেনে আরো বেশি বিস্মিত হচ্ছি।

যাই হোক, মান্দার যে পারিজাত না, সেই ব্যাপারেও অনেক আলোচনা পাওয়া যায় ইন্টারনেটে। ফেইসবুকে এক জায়গায় বেশ রসজ্ঞ একটা কমেন্ট পেলাম :

কবিগুরু এই প্যাচটা লাগিয়ে দিয়ে গিয়েছেন। উনি গান লিখেছেন:

পারিজাতের কেশর নিয়ে ধরায়, শশী ছড়াও কী এ।
ইন্দ্রপুরীর কোন্‌ রমণী বাসরপ্রদীপ জ্বালো।।

এখন সমস্যা হল, শিউলির কোন কেশর নেই!! কি একটা সমস্যার মধ্যে পরে গেলাম আমরা

২৫ শে মে, ২০২১ রাত ২:৪৩

মরুভূমির জলদস্যু বলেছেন: যতদূর মনে পড়ে মান্দার ফুলের কোনো ঘ্রাণ নেই।
আসলে আমাদের প্রায় প্রতিটি ফুলের একাধিক বাংলা এবং সংস্কৃত নাম রয়েছে। দেখা গেছে একই নাম কয়েকটি ফুলের আছে। তবে সেগুলি অপ্রচলিতো নাম।
পারিজাতের বিষয়টি আসলেই প্যাচালো।
পৌরানিক পারিজাত শুধুই কাহিনী হিসেবে ধরতে হবে। যে কাহিনীর বাস্তব ভিত্তি নেই তার বর্ননা করা ফুলের অস্তিত্ব খোঁজা অযৌক্তিক মনে হয় আমার কাছে।
সত্যিকার অর্থে মান্দারের পোষাকি নাম পারিজাত।
আর শিউলির স্বল্পপ্রচলিত সংস্কৃত নাম পারিজাত।

বাকি দুটি গোনায় না নিলেও হয়।

আর কবিরা কবিতা আর ছন্দের জন্য মাঠের গরুকে গাছে চড়াতে জানেন।
রবিবাবুর ভেঙ্গে মোর ঘরের চাবি গানটি শুনেছেন আপনিও।

৫| ২৪ শে মে, ২০২১ রাত ১১:০২

কামাল১৮ বলেছেন: হিন্দু দেবতার ছিল গাজাখোর,তাই তাদের ধর্মীয় কাহিনী বেশির ভাগ গাজাখুরী।

২৫ শে মে, ২০২১ রাত ২:২২

মরুভূমির জলদস্যু বলেছেন: কারো ধর্ম বা ধর্মগ্রন্থ সম্পর্কে বাজে মন্তব্য করতে চাইনা আমি। আমি বাজে মন্তব্য করলে অন্যেরাও আমার ধর্ম বা ধর্মগ্রন্থ সম্পর্কে বাজে মন্তব্য করার সুযোগ পায়।
তবে আমি মহাভারত কিছুদূর পড়েছি, সবটা শেষ করা হয়নি। আপনার পড়া আছে কিনা জানি না। ঐটা ধর্মগ্রন্থ না হয়ে বরং রূপকথার বই বললে খুব মানিয়ে যেতো। কি সব বিচিত্র কাহিনী!!! সেইখানেই প্রথম এই সমূদ্রমন্থনের কাহিনী পড়ি আমি।

৬| ২৪ শে মে, ২০২১ রাত ১১:৩১

নতুন বলেছেন: পারিজাতের পরিচয় জানলাম :) ধন্যবাদ

২৫ শে মে, ২০২১ রাত ২:১৭

মরুভূমির জলদস্যু বলেছেন: স্বাগতম আপনাকে।

৭| ২৫ শে মে, ২০২১ রাত ১২:২৮

নেওয়াজ আলি বলেছেন: ফুল এখন গ্রামে ছাদ বাগানে ফুটে অনেকের

২৫ শে মে, ২০২১ রাত ২:১৬

মরুভূমির জলদস্যু বলেছেন: আমিও ফুটাবো অনেক ফুল

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.