নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মরুভূমির জলদস্যু

মরুভূমির জলদস্যু

মরুভূমির জলদস্যুর বাগানে নিমন্ত্রণ আপনাকে।

মরুভূমির জলদস্যু › বিস্তারিত পোস্টঃ

পাঁচ খানি কবিতা - ০৫

২৩ শে অক্টোবর, ২০২২ রাত ১২:৩৩


হয়তো ফুটেনি ফুল রবীন্দ্র-সঙ্গীতে যতো আছে,
হয়তো গাহেনি পাখি অন্তর উদাস করা সুরে
বনের কুসুমগুলি ঘিরে । আকাশে মেলিয়া আঁখি
তবুও ফুটেছে জবা,–দূরন্ত শিমুল গাছে গাছে,
তার তলে ভালোবেসে বসে আছে বসন্তপথিক ।

এলিয়ে পড়েছে হাওয়া, ত্বকে কী চঞ্চল শিহরণ,
মন যেন দুপুরের ঘূর্ণি-পাওয়া পাতা, ভালোবেসে
অনন্ত সঙ্গীত স্রোতে পাক খেয়ে মৃত্তিকার বুকে
নিমজ্জিত হতে চায় । হায় কী আনন্দ জাগানিয়া ।

এমন আগ্রাসী ঋতু থেকে যতোই ফেরাই চোখ,
যতোই এড়াতে চাই তাকে দেখি সে অনতিক্রম্য ।
বসন্ত কবির মতো রচে তার রম্য কাব্য খানি
নবীন পল্ববে, ফুলে ফুলে । বুঝি আমাকেও শেষে
গিলেছে এ খল-নারী আপাদমস্তক ভালোবেসে ।

আমি তাই লঘুচালে বন্দিলাম স্বরুপ তাহার,
সহজ অক্ষরবৃত্তে বাঙলার বসন্ত বাহার।



অনেকেই জানেন ফুল আমার খুবই প্রিয়। ফুল কার না প্রিয়! সকলেই ফুল ভালোবাসে। আমি ফুলের ছবি তুলতে পছন্দ করি। ফুলের নাম জানতে চেষ্টা কবরি। এইটুকুই হয়তো ব্যাতিক্রম। আমি যেমনি ভাবে ফুল ভারোবাসি তেমনি ভাবে কবিতাকেও ভালোবাসি এটা বলা যাবে না। বলা যায় আমার সবচেয়ে কম পছন্দের বিষয় হচ্ছে এই কবিতা। কবিতা আমি একেবারেই পড়ি না, তা না। আমি কবিতা পড়ি। ইদানিং আগের চেয়ে বেশীই পড়ছি। সম্ভবতো বয়স বাড়ার সাথে সাথে পড়ার রুচি পালটাচ্ছে। বেশীরভাগ সময় কবিতার অর্থ বুঝতে পারি না বলে কবিতা এড়িয়ে চলি। বিশেষ করে আধুনিক কবিতা। মনে হয় যেনো কঠিন কিছু শব্দের এলোমেলো সমাবেশ, যে যার মতো যেখানে খুশী বসে আছে অর্থের পরোয়া না করেই। আমার পছন্দ কঠিন শব্দের সহজ-সরল কবিতা। আমার পছন্দ নরীর রূপ বর্ননার কবিতা, আমার পছন্দ ফুল-পাখি-প্রকৃতির কবিতা, আমার প্রছন্দ প্রেমের কবিতা, আমার পছন্দ .... কঠিন শব্দে সরল অর্থের কবিতা।

আজ নির্মলেন্দু গুণ এর পাঁচ খানি কবিতা রইলো।


২ : মানুষ
আমি হয়তো মানুষ নই, মানুষগুলো অন্যরকম,
হাঁটতে পারে, বসতে পারে, এ-ঘর থেকে ও-ঘরে যায়,
মানুষগুলো অন্যরকম, সাপে কাটলে দৌড়ে পালায় ।
আমি হয়তো মানুষ নই, সারাটা দিন দাঁড়িয়ে থাকি,
গাছের মতো দাঁড়িয়ে থাকি।
সাপে কাটলে টের পাই না, সিনেমা দেখে গান গাই না,
অনেকদিন বরফমাখা জল খাই না ।
কী করে তাও বেঁচে থাকছি, ছবি আঁকছি,
সকালবেলা, দুপুরবেলা অবাক করে
সারাটা দিন বেঁচেই আছি আমার মতে । অবাক লাগে ।
আমি হয়তো মানুষ নই, মানুষ হলে জুতো থাকতো,
বাড়ি থাকতো, ঘর থাকতো,
রাত্রিবেলায় ঘরের মধ্যে নারী থাকতো,
পেটের পটে আমার কালো শিশু আঁকতো ।
আমি হয়তো মানুষ নই,
মানুষ হলে আকাশ দেখে হাসবো কেন ?
মানুষগুলো অন্যরকম, হাত থাকবে,
নাক থাকবে, তোমার মতো চোখ থাকবে,
নিকেলমাখা কী সুন্দর চোখ থাকবে
ভালোবাসার কথা দিলেই কথা রাখবে ।
মানুষ হলে উরুর মধ্যে দাগ থাকতো ,
বাবা থাকতো, বোন থাকতো,
ভালোবাসার লোক থাকতো,
হঠাৎ করে মরে যাবার ভয় থাকতো ।
আমি হয়তো মানুষ নই,
মানুষ হলে তোমাকে নিয়ে কবিতা লেখা
আর হতো না, তোমাকে ছাড়া সারাটা রাত
বেঁচে থাকাটা আর হতো না ।
মানুষগুলো সাপে কাটলে দৌড়ে পালায় ;
অথচ আমি সাপ দেখলে এগিয়ে যাই,
অবহেলায় মানুষ ভেবে জাপটে ধরি ।





৩ : যাত্রাভঙ্গ
হাত বাড়িয়ে ছুঁই না তোকে
মন বাড়িয়ে ছুঁই,
দুইকে আমি এক করি না
এক কে করি দুই।

হেমের মাঝে শুই না যবে,
প্রেমের মাঝে শুই
তুই কেমন কর যাবি?
পা বাড়ালেই পায়ের ছায়া
আমাকেই তুই পাবি।

তবুও তুই বলিস যদি যাই,
দেখবি তোর সমুখে পথ নাই।

তখন আমি একটু ছোঁব
হাত বাড়িয়ে জড়াব তোর
বিদায় দুটি পায়ে,
তুই উঠবি আমার নায়ে,
আমার বৈতরণী নায়ে।

নায়ের মাঝে বসবো বটে,
না-এর মাঝে শোবো,
হাত দিয়েতো ছোঁব না মুখ
দুঃখ দিয়ে ছোঁব।





৪ : ওটা কিছু নয়
এইবার হাত দাও, টের পাচ্ছো আমার অস্তিত্ব ? পাচ্ছো না ?
একটু দাঁড়াও আমি তৈরী হয়ে নিই ।
এইবার হাত দাও, টের পাচ্ছো আমার অস্তিত্ব ? পাচ্ছো না ?
তেমার জন্মান্ধ চোখে শুধু ভুল অন্ধকার । ওটা নয়, ওটা চুল ।
এই হলো আমার আঙ্গুল, এইবার স্পর্শ করো,–না, না, না,
-ওটা নয়, ওটা কন্ঠনালী, গরলবিশ্বাসী এক শিল্পীর
মাটির ভাস্কর্য, ওটা অগ্নি নয়, অই আমি–আমার যৌবন ।

সুখের সামান্য নিচে কেটে ফেলা যন্ত্রণার কবন্ধ–প্রেমিক,
ওখানে কী খোঁজ তুমি ? ওটা কিছু নয়, ওটা দুঃখ ;
রমণীর ভালোবাসা না-পাওয়ার চিহ্ন বুকে নিয়ে ওটা নদী,
নীল হয়ে জমে আছে ঘাসে,–এর ঠিক ডানপাশে , অইখানে
হাত দাও, হ্যাঁ, ওটা বুক, অইখানে হাত রাখো, ওটাই হৃদয় ।

অইখানে থাকে প্রেম, থাকে স্মৃতি, থাকে সুখ, প্রেমের সিম্পনি ;
অই বুকে প্রেম ছিল, স্মৃতি ছিল, সব ছিল তুমিই থাকো নি ।





৫ : তোমার চোখ এত লাল কেন
আমি বলছি না ভালোবাসতেই হবে, আমি চাই
কেউ একজন আমার জন্য অপেক্ষা করুক,
শুধু ঘরের ভিতর থেকে দরোজা খুলে দেবার জন্য।
বাইরে থেকে দরোজা খুলতে খুলতে আমি এখন ক্লান্ত।

আমি বলছি না ভালোবাসতেই হবে, আমি চাই
কেউ আমাকে খেতে দিক।আমি হাতপাখা নিয়ে
কাউকে আমার পাশে বসে থাকতে বলছি না,
আমি জানি, এই ইলেক্ট্রিকের যুগ
নারীকে মুক্তি দিয়েছে স্বামী-সেবার দায় থেকে।

আমি চাই কেউ একজন আমাকে জিজ্ঞেস করুক:
আমার জল লাগবে কিনা, নুন লাগবে কিনা।
পাটশাক ভাজার সঙ্গে আরও একটা
তেলে ভাজা শুকনো মরিচ লাগবে কি না।
এঁটো বাসন গেজ্ঞি-রুমাল আমি নিজেই ধুতে পারি।

আমি বলছি না ভালোবাসতেই হবে, আমি চাই
কেউ একজন ভিতর থেকে আমার ঘরের দরোজা
খুলে দিক।কেউ আমাকে কিছু খেতে বলুক।
কাম-বাসনার সঙ্গী না হোক, কেউ অন্তত আমাকে
জিজ্ঞেস করুক: ’তোমার চোখ এত লাল কেন?







পাঁচ খানি কবিতা - ০১, পাঁচ খানি কবিতা - ০২, পাঁচ খানি কবিতা - ০৩, পাঁচ খানি কবিতা - ০৪

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ২৩ শে অক্টোবর, ২০২২ রাত ১২:৫৭

কামাল৮০ বলেছেন: পাঁচটি কবিতাই অনেক আগে পড়া।নতুন করে পড়ে ভালো লাগলো।শিল্প কর্মটি কোখা থেকে নেয়া।ইলোরা না অজান্তা নাকি খাজুরাহো মন্দির থেকে নেয়া।আগেও অনেক বার দেখেছি।

২৩ শে অক্টোবর, ২০২২ রাত ১:০৪

মরুভূমির জলদস্যু বলেছেন: - খাজুরাহো মন্দিরের ছবি এটি।
- ধন্যবাদ আপনাকে মন্তব্যের জন্য।

২| ২৩ শে অক্টোবর, ২০২২ রাত ২:৪৩

স্প্যানকড বলেছেন: খুব ভালো লাগলো। নির্মলেন্দু আমার প্রিয় কবি। ভালো থাকবেন সব সময়।

২৩ শে অক্টোবর, ২০২২ রাত ৮:১৯

মরুভূমির জলদস্যু বলেছেন:
- ধন্যবাদ আপনাকে মন্তব্যের জন্য।
- আপনিও ভালো থাকবেন।

৩| ২৩ শে অক্টোবর, ২০২২ সকাল ৮:০৯

জুল ভার্ন বলেছেন: নির্মলেন্দু গুণ আমার অন্যতম প্রিয় কবি। সবগুলো কবিতা সুন্দর!!!

২৩ শে অক্টোবর, ২০২২ রাত ৮:২০

মরুভূমির জলদস্যু বলেছেন:
- প্রথমটি ছাড়া বাকিগুলির আবৃত্তিযে কতশতবার শুনেছি!!

৪| ২৩ শে অক্টোবর, ২০২২ রাত ১০:১৪

সাখাওয়াত হোসেন বাবন বলেছেন: আদিম কাব্যসব, রস টস টস করছে। গাজার ধোয়ায় কবিদের দেখতে পাচ্ছি

২৩ শে অক্টোবর, ২০২২ রাত ১০:২২

মরুভূমির জলদস্যু বলেছেন:
- হাহাপগে

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.