নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

কুয়াশা

কুয়াশা

কুয়াশা › বিস্তারিত পোস্টঃ

"আরব নারী "

০৩ রা নভেম্বর, ২০২১ দুপুর ১২:৪০


(পর্ব-১)
অসুস্থ বাংলাদেশি সহকর্মীকে দেখতে গিয়ে আল আইন হাসপাতালের সুবিশাল লিফটে উপরে উঠছি, আমি একাই আছি লিফটে। অতীব ধীর গতি আমাকে ঢাকা শহরের যানজট মনে করিয়ে দিল। আমার গন্তব্য পঞ্চম তলায়। দ্বিতীয় তলায় এসে দরজা খুলে গেল। দেখলাম আপাদমস্তক কালো বোরকাবৃত পাঁচজন মহিলা দাড়িয়ে আছেন।
তাদের দলনেতৃ(!) মুখে ঐতিহ্যবাহী নিকাব লাগানো, বুঝাগেল উনি মা। আমাকে উদ্দেশ্য করে দলনেতৃ মৃদু কিন্তু দৃঢ় হুঙ্কার দিয়ে বললেন-মুহাম্মদ বাররা! (মুহাম্মদ বের হও)
টু শব্দটি না করে বের হয়ে গেলাম আর তারা হুরমুড় করে ঢুকে পড়লো।
ভিতরে ঢুকে সবচেয়ে বড় মেয়েটি আমাকে ডাকলো-মুহাম্মদ ত্বায়াল, ত্বায়াল (আসো, আসো)।
আমি ঢুকতেই নাকের ডগা থেকে নিচের ঠোঁট পর্যন্ত সোনালি রংয়ের উল্টা V আকৃতির শক্ত ছাউনি লাগানো চাচী তার মেয়ের সাথে গজগজ শুরু করে দিলেল। কেন সে একজন গায়ের মাহরম (পরপুরুষ) কে ভিতরে ডাকলো, ওয়াল্লা হাদা হারাম, হাদা হারাম (এটা হারাম...হারাম)।
এবার মেয়ের বলার পালা, সেও শুরু করলো...ইয়া আম্মি, ইয়া আম্মি...সে কিন্তু আগে উঠেছিল, তুমি তাকে বের করে দিয়েছ, এটা তার হক্ক ছিল, তুমি তার হক্ক নষ্ট করবা? হাদা মাফি হারাম? (এটা কি হারাম না ?)
এবার চাচী তার গজগজ বন্ধ করে আস্তাগফিরুল্লাহ, আস্তাগফিরুল্লাহ পড়া শুরু করলেন।
মুখের সোনালী রংয়ের শক্ত ছাউনিটা কপালের উপর সিঁথি থেকে একটা শক্ত কাঠির সাহায্যে ঝুলানো থাকে, এবং দুই গালের কিছু অংশ ঢেকে চিকন হয়ে কানের কাছে আটকানো থাকে। প্রাচীন কাল থেকে আরব মহিলারা এই নিকাব পরে আসলেও আধুনিক আরব মহিলারা এটা খুব কম পড়ে। বলা হয়ে থাকে এটা পড়া মানে বুঝানো যে উনি তার বর্তমান স্বামীর প্রথম স্ত্রী! আবার এর আরেকটা মানেও হয় - উনি বিধবা!
আরব দেশে আমার কর্ম জীবনে বহু জাতি ও বহু ভাষাভাসি মানুষের সাথে মিশেছি, তাদের পর্যবেক্ষণ করেছি, প্রয়োজনে, অপ্রয়োজনে কিংবা শুধুই কৌতুহল থেকে। তবে আরবের মানুষ, জীবনধারা, সমাজ একটু ব্যতিক্রম এটা সবার জানা কিন্তু তার মধ্যে আরবের নারী সারা বিশ্বে সম্পূর্ণ আলাদা ধরণের, ইউনিক বলা যায়। আমার "আরবের ডায়েরি" থেকে পাঠককে আরবের নারী সমাজ সমন্ধে একটু ধারণা দেই-
আইয়ামে জাহেলিয়া বা অজ্ঞতার যুগে আরবে নারীদের কোন মান মর্যাদা ছিলনা, নবী সঃ এর আগমনে আবার আরব সমাজে ন্যায় বিচার ও সামাজিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত হল। সেই থেকে আজ অবধি সন্মানের চোখে আছে বিশ্ব মুসলিম নারী তথা আরব নারী।
এদেশের ৯৯.৮% জনগণ শিক্ষিত, কমার্শিয়াল পাইলট, জঙ্গি বিমানের পাইলট থেকে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার, ডুবুরি সব ক্ষেত্রেই এদেশের নারীরা আছেন।
মহিলারা এখানে গাড়ী চালায়, শেখ খলিফার (বর্তমান রাষ্ট্রপতি) মেয়ে ব্যক্তিগত হেলিকপ্টার চালিয়ে ঘুরে বেড়ায়। এদেশের নারীরা এন্টার্কটিকা, হিমালয় চূড়ায় পা রেখে ফেলেছে অনেক আগে। মহাকাশেও চলে যাবেন আমিরাতি নারী নভোচারী যিনি এখন নাসা'য় চূড়ান্ত পর্যায়ের প্রশিক্ষণরত আছেন।
আমি এদেশের (সংযুক্ত আরব আমিরাত) মহিলাদের খুবই ভদ্র এবং মার্জিত দেখেছি, সারাদিন তাদের মুখপানে চেয়ে থাকলেও চোখাচোখি হওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই! এটা নিয়ে আপনার সাথে বাজি ধরা যেতে পারে! প্রয়োজন ছাড়া তারা অন্য পুরুষের দিকে তাকায় না।
লিফটে ঢুকে আপনাকে একা দেখলে সালাম দিয়ে প্রবেশ করবে। সাধারণত ইয়াং মহিলা, যারা চল্লিশের নিচে তারা বেশির ভাগ উচ্চ শিক্ষত এবং অমায়িক। ষাটোর্ধ মহিলারা অতিমাত্রায় রক্ষণশীল, তারা লিফটে আপনাকে একলা পেলে বলবে- ইয়াল্লা বাররা! এই যে, বের হও আমি যাব (যেমনটা প্রথমে লিখেছি)। এক্ষেত্রে চুপ করে বের হওয়াটাই ভদ্রতা। তারা কোন ভাবেই আপনার সাথে গমন করবেনা যদি তার সাথে কোন পুরুষ না থাকে। তারা সুপার মার্কেটেও (ফিক্সড প্রাইসের দোকানে) দামদর করবে, রাস্তার পাশে সবুজ ঘাসের সন্ধান পেলে ল্যান্ড ক্রুজার, মার্সিডিজ গাড়ী থামিয়ে ঘাস কাঁটবে (কাজের মেয়ে বা ছেলেকে দিয়ে) ছাগলের জন্য! বৃদ্ধ মহিলা যাদের কে "মামা" (মা) ডাকা হয়, তাদের কাছে পুলিশ অসহায়। তর্কে তারা আরব চ্যাম্পিয়ন!
কোন বিষয় নিয়ে আপনার সাথে তর্ক বেঁধে গেলে আপনার সকল যুক্তিকে কাঁচা খেজুর দেখিয়ে বলবে - "খাল্লি বাল্লি" ( বাদ দেও/ রাখ্ এসব/ আমি পরোয়া করিনা)
এদেশের ১৮ বছরের উর্ধ্বে প্রায় ৯০% মহিলার ড্রাইভিং লাইসেন্স আছে। রাস্তায় গাড়ীতে ৫০-৫০ নারী চালক দেখা যায়। পুরুষের গাড়ী থামালে নেমে গিয়ে পুলিশকে ডকুমেন্ট দেখাতে হয় কিন্তু মহিলাদের বেলায় পুলিশ নেমে আসে মহিলার গাড়ীর কাছে। এটা আরব মহিলা ছাড়াও সকল মহিলাদের বেলায় প্রযোজ্য। আর যদি মহিলার সাথে ছোট বাচ্চা থাকে তাহলে তার সময় নষ্ট না করে পরে যোগাযোগ করা হয়, যদি মহিলা চায়। কোন এক্সিডেন্ট হলে পুলিশ ঐ মা মহিলার মোবাইল নম্বর রেখে তাকে চলে যেতে বলবে, যদি ঐ মহিলা চায়।
"এক্সিডেন্ট ঘটালে"পুলিশ নেমে মহিলা চালকের গাড়ির কাছে আসার অবশ্য দ্বিতীয় আরেকটি কারণ আছে, সেটা না বললেও সমস্যা নেই।
২০১৫ সালে একজন ফিলিপিনা মহিলা একটি পিস্তল নিয়ে একটি মানি এক্সচেন্জে ডাকাতির চেষ্টা করে, পুলিশ এসে তাকে গ্রেফতার করে, হাতকড়া লাগানোর পর মহিলাটি মেঝেতে বসে পড়ে, তখন পুলিশ তাকে পাশে থাকা সোফা দেখিয়ে বলে- নিচে নয়, আপনি দয়াকরে এখানে বসুন। ইউটিউবে ভিডিওটা দেখলে এদেশে নারীদের প্রতি মানুষের (পুলিশের) আচরণ সমন্ধে বেশ ভালো ধারণা পাওয়া যাবে।
(ছবিঃ সংগৃহীত)
চলবে
ধন্যবাদ
মাসুদ আলম
০৮.০১.২০১৭
আল আইন, ইউএ
তথ্যসূত্র: মাসুদ আলম এর ফেসবুক ওয়াল থেকে কপি করা।

মন্তব্য ৯ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (৯) মন্তব্য লিখুন

১| ০৩ রা নভেম্বর, ২০২১ দুপুর ১২:৪৮

জুল ভার্ন বলেছেন: অসাধারণ সুন্দর বর্ণনা। +

২| ০৩ রা নভেম্বর, ২০২১ দুপুর ১:১২

মোহামমদ কামরুজজামান বলেছেন: আমাদের তথাকথিত সুশীল যারা নারী স্বাধীনতার কথা বলতে বলতে এবং আরব নারীরা বাক্সবন্দী-ঘরবন্দী-নজরবন্দী-পরাধীন এবং তাদের কোন কিছু করার স্বাধীনতা নেই বলে দিন রাত এক করে ফেলে তাদের জন্য আপনার লেখা হতে পারে কিছুটা হলেও দিকনির্দেশিকা । অবশ্য এটাও ঠিক তারপরও তারা মেনে নাও নিতে পারে এবং বলবে এটা সমগ্র আরবের ছবি নয়।

লেখা ভাল লাগল আর তাই দিয়ে দিলাম +++।

৩| ০৩ রা নভেম্বর, ২০২১ সন্ধ্যা ৬:৫৯

ফুয়াদের বাপ বলেছেন: গাড়ি চালানোর চিত্রটা এখন সৌদিতে শুরু হয়েছে। প্রচুর মেয়েরা গাড়ি চালাচ্ছে-চাকরী করছে। বাকী প্রায় সবকিছুই সৌদি সংষ্কৃতির সাথে মিল আছে।

৪| ০৩ রা নভেম্বর, ২০২১ রাত ১০:১১

Abida-আবিদা বলেছেন: নবী মুহাম্মদ সঃ প্রশংসনীয় ব্যক্তি। নারীর মর্যাদা রক্ষায় তার অবদান অনস্বীকার্য।

৫| ০৩ রা নভেম্বর, ২০২১ রাত ১১:১১

নেওয়াজ আলি বলেছেন: খুব সুন্দর লেখা

৬| ০৩ রা নভেম্বর, ২০২১ রাত ১১:৫৯

নুরুলইসলা০৬০৪ বলেছেন: এখানে (কানাডায়)আরবের বহু নারী আছে।গরমের সময় লেকের ধারে প্রায় নেকেড জোড়ায় জোড়ায় বসে থাকে।এমন কি ওখানে পারে।সৌদি ছাড়া অন্য আরব দেশে হয়তো পারে।মিশর ও ইরানে অল্প দিনের জন্য বিয়ে করা যায়।সৌদি আস্তে আস্তে কাপড় খোলছে।

৭| ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২১ রাত ১২:০৭

রাজীব নুর বলেছেন: সৌদিকে আরো উদার হতে হবে।

৮| ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২১ সকাল ১০:০০

মহাজাগতিক চিন্তা বলেছেন: ভাল লিখেছেন।

৯| ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২১ সকাল ১১:৪৮

মোঃ মাইদুল সরকার বলেছেন:
লেখাটা ভাল লাগলো।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.