নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

কুয়াশা

কুয়াশা

কুয়াশা › বিস্তারিত পোস্টঃ

বৈমানিক বিজ্ঞানে মুসলিমদের অবদান পর্ব ১:

১১ ই নভেম্বর, ২০২১ দুপুর ১:১৬


আজ থেকে প্রায় চারশো বছর আগে এক মুসলিম বিজ্ঞানী নিজের তৈরী Aircraft দিয়ে ইউরোপ মহাদেশ থেকে উড়ে এশিয়া পৌঁছতে সক্ষম হয়েছিল।
শুনে আশ্চর্য আর অবিশ্বাস্য লাগছে? আরো অবিশ্বাস্য লাগবে যদি বলি ,তার আপন বড়ভাই পরের বছর নিজের তৈরী রকেটে করে, ১০০০ ফুট উপরে উঠে আরার ল্যান্ড করতে পেরেছিলেন মোটামুটি সুস্থ অবস্থায়ই !!! আজ সেই দুই ভাই, বিখ্যাত চেলেবি ব্রাদার্স অর্থাৎ, হাজারফেন আহমেদ চেলেবি আর লাগাড়ি হাসান চেলেবির আকাশে উড়ার অসাধারণ ইতিহাস শুনবো।
লেখক : Julfikar Rijon (Copy without credit Not Allowed)
চেলেবি ব্রাদার্স এর ইতিহাস শুরু করার আগে সংক্ষেপে আরো পূর্ববর্তী সময়ে মুসলমান বিজ্ঞানীদের আকাশে উড়ার আমরণ প্রচেষ্টার ইতিহাস তুলে ধরি।
সোলাইমান ইবনে দাউদ (আলাই-হিস্সালাম ) এর জাদুর কার্পেটে করে আকাশে উড়ে বেড়ানোর কাহিনী সকল মুসলিমেরই জানা। কথিত আছে যে,
সোলাইমান (আলাই-হিস্সালাম ) সকালে নাস্তা করতো দামেস্কোতে আর দুপুরে খেতেন মিডিয়াতে।
বর্তমানে ইরানের উত্তর পশ্চিমের এলাকাকে খ্রিস্টপূর্ব ৬০০ সালের আগে মিডিয়া বলতো। এই বহুদূর পথ উড়ন্ত কার্পেটে করে উড়ে যেতেন। তাছাড়া আরব্য রজনীর জাদুর কার্পেটে উড়ে দেশ বিদেশ দূরে বেড়ানোর কল্পকাহিনী সকল আরবদের মনে গেঁথে গিয়েছিলো। সতরাং তাদের মধ্যে আকাশে উড়ার চেষ্টা করার প্রয়াস সব সময়ই ছিল।
৮২০-৮৩০ সালের মধ্যে , আরমান ফরমান নামের একজন ,ইসলামিক স্পেন অর্থাৎ আন্দালুসিয়ার কর্ডোভার এক টাওয়ার থেকে লাফ দেন আকাশে উড়ার উদ্দেশে। তার শরীরে হালকা কাঠ আর কাপড় দিয়ে তৈরী পাখা ছিল। তার আকাশে উড়া দেখতে পুরু কর্ডোভা শহরের সব মানুষ এসেছিলেন। এই সব মানুষের মধ্যে ছিল এক বালক, আব্বাস ইবনে ফিরনাস। যদিও আরমান ফরমান আকাশে উড়তে সফল হয়নি। কিন্তু শরীরে কাপড়ের পাখা থাকার দরুন মাটিতে আস্তে আস্তে পড়েন, ফলে আহত হলেও বেঁচে যান।
এই ঘটনা দেখে আব্বাস ইবনে ফিরনাস নামক বালকের মনে আকাশে উড়ার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন। আব্বাস ইবনে ফিরনাসের ইতিহাস আরো অসাধারণ। আব্বাস ইবনে ফার্নাস ৮৭৫-৮৮০ সালের দিকে তার নিজের তৈরী হালকা Aircraft বা গ্লাইডার দিয়ে ইয়েমেনের জাবর-আল-আরূস পাহাড়ের চূড়া থেকে লাফ দেন। ওই পাহাড়ের চূড়া ছিল: সাড়ে নয় হাজার ফুট উঁচু আর ইবনে ফিরনাসের বয়স তখন প্রায় ৭০ বছর বয়স !
ইতিহাসবিদদের মতে ,
"ইবনে ফিরনাস তখন নিজের গ্লাইডার করে দীর্ঘ ১০ মিনিট আকাশে উড়তে সক্ষম হয়েছিলেন এবং পৃথিবীতে প্রথম মানুষ যে আকাশে সফলভাবে উড়তে সক্ষম হন। যদিও তিনি সঠিকভাবে ল্যান্ড করতে পারেননি এবং গুরুতরভাবে আহত হন। কয়েকবছর পর তিনি ওই ল্যান্ডিং এ আহত হওয়ার করণে মৃত্যু বরন করেন।"
আব্বাস ইবনে ফিরনাসের ইতিহাস পরবর্তিতে বিভিন্ন সময়ে পৃথিবীব্যাপী হাজার হাজার মানুষকে আকাশে উড়ার বেপারে উৎসাহ জুগিয়েছে।
ইবনে ফিরনাস এর আকাশে উড়ার ইতিহাস থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে বিখ্যাত তুর্কিশ পলিম্যাথ আর অভিধান নির্মাতা আবু নাসের আল জুয়াহেরি , ১০০২ সালে ইরানের নিশাপুরের এক সুউচ্চ মসজিদের মিম্বার থেকে নিজের তৈরী গ্লাইডার দিয়ে উড়ার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন এবং তৎক্ষণাৎ মৃত্যুবরণ করেন।
ইতালিয়ান পলিম্যাথ লিওনার্দো ডি ভিঞ্চি নিজেও ইবনে ফিরনাসের কাছ থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে ১৪০০ সালের শেষের দিকে আকাশে উড়ার জন্য অনেকগুলো আকাশযান ডিজাইন করেন এবং নিজেও আকাশে উড়ার চেষ্টা করেছিলেন। আবু নাসের আল জুয়াহেরি বা লিওনার্দো ডি ভিঞ্চি অসফল হলেও তাদের আকাশযানের ডিজাইন আর প্রচেষ্টা বৃথা যায়নি।
১৬২৯ সালে ইস্তানবুলে দুই ভাই হাজারফেন আহমেদ চেলেবি আর লাগাড়ি হাসান চেলেবি ইস্তানবুল শহরের উসকুদারা তে বসবাস করতেন করতেন। বসফরাস প্রণালী যেটা ইস্তানবুলের মধ্য দিয়ে গেছে এবং এই প্রণালী কৃষ্ণ সাগর অর্থাৎ ব্ল্যাক সী এর সাথে মারমারা সাগরকে সংযুক্ত করেছে।উসকুদারা হলো ইস্তানবুলের আনাতুলিয়ার ভূখণ্ডের এশিয়া মহাদেশের সাইডে পড়েছে। বসফরাস প্রণালীর ওপর সাইডে ইউরোপিয়ান ভূখণ্ড শুরু। ইন্টারেষ্টিং সাইড নোট হলো যে, উস্কুদ্বারা কে নিয়ে অটোমান সময়ের বিখ্যাত লোকসংগীত "উস্কুদ্বারা গিদেরকেন'' এর সুর সমগ্র পৃথিবীতে ছড়িয়ে গেছে এবং হাজার হাজার গানকে অনুপ্রাণিত করেছে। আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামও প্রথম বিশ্ব যুদ্ধের সময় এই গান শুনে অনুপ্রাণিত হয়ে তার বিখ্যাত দুইটি গানেই সুর : "শুকনো পাতার নূপুর পায়ে" এবং "ত্রিভুবনের প্রিয় মোহাম্মদ" লিখেন।
যাইহোক, এই চেলেবি ব্রাদার্স , প্রতিদিন সকালে আর বিকালে উস্কুদ্বারা থেকে প্রণালীর কূলে বসে দেখতো, বসফরাস প্রণালীর নীল পানিতে গাংচিল সুবিশাল পাখা মেলে উড়ে এসে মাছ ধরছে । ছোটবেলা থেকেই এই দুই ভাই , গাংচিলের মতো আকাশে উড়ে বেড়ানোর স্বপ্ন দেখতো।
আব্বাস ইবনে ফিরনাসের আকাশে সফলভাবে উড়ার কাহিনী তারা ছোটবেলা থেকেই জানতো। দুইভাই মিলে আকাশজান বানিয়ে আকাশে উড়ার জন্য প্রস্তুতি নিতে থাকে। তারা পাখির উড়া পর্যবেক্ষণ করে, নৌকা কিভাবে বসফরাসের পানিতে ভেসে যায় তা পর্যবেক্ষণ করে।
তারা বিভিন্ন ধরণের ডিজাইন বানাতে থাকে। ছোটভাই হাজারফেন আহমেদ চেলেবি একাধারে বৈজ্ঞানিক , চিকিৎসক, গণিতবিদ ছিলেন। হাজারফেন পার্সিয়ান শব্দের মানে হচ্ছে , হাজারটা বিজ্ঞানের জ্ঞান যার আছে, অর্থাৎ পলিম্যাথ।
তাদের বন্ধু মহলে সবাই জানতো যে তারা আকাশযান বানানোর চেষ্টা করছে।
তাদের এক বন্ধু হাজারফেন আহমেদ চেলেবির কাছে লিওনার্দো ডি ভিঞ্চির আকাশজানের একটা ডিজাইনের কপি নিয়ে আসে। সেখানে লাতিন ভাষায় লিখা বর্ণনা তার পক্ষে পড়া অসম্ভব ছিল। হাজারফেন আহমেদ চেলেবি একবার ইস্তানবুলে অবস্থানরত এক ইতালির ভেনিশিয়ান মহিলাকে চিকিৎসা করেছিলেন। ওই ভেনিশিয়ান মহিলার কাছ থেকে লিওনার্দো ডি ভিঞ্চির আকাশযানের ডিজাইনের ওখানে লিখা লাতিন ভাষা পড়ার চেষ্টা করেন।
লিওনার্দোর লিখা লাতিন বোঝা অনেক কঠিন কারণ তিনি ইচ্ছে করেই উল্টা করে লিখতেন তার নোট বইতে। যাইহোক তার ওই লিখা একটা আয়নার সামনে ধরার পর ওই ভেনিশিয়ান মহিলা ওই লিখা পড়তে সক্ষম হয়েছিল। ওখানে আকাশে উড়ার জন্য আকাশযানের Aero-dynamic নিয়ে লিখা ছিল।
তারপর থেকে হাজারফেন আহমেদ চেলেবি নতুন করে ডিজাইন করা শুরু করে হালকা কাঠের কাঠামো আর কাপড় দিয়ে গ্লাইডার বানানো শুরু করেন।
নতুন ডিজাইন নিয়ে দুই ভাইয়ের মধ্যে বিরোধ বাধে। ছোটভাই হাজারফেন আহমেদ চেলেবি নতুন ডিজাইন নিয়ে কাজ চালিয়ে যায়। কিন্তু বড় ভাই, লাগাড়ি হাসান চেলেবি এর মাথায়, ভিন্ন চিন্তা আসে। তিনি হালকা বেরেল আকৃতির তামার কাঠামোর নিচে গান পাউডার দিয়ে রকেট বানিয়ে , সেই রকেটে চড়ে আকাশে উড়ার চিন্তা করেন। আর ল্যান্ড করার জন্য কোনো বুদ্ধি খুঁজে না পেয়ে , অবশেষে সিদ্ধান্ত নেন বসফরাস প্রণালীর পানিতে ঝাঁপিয়ে পরে ল্যান্ড করবেন।
সময়টা ছিল ১৬২৯ সালের গ্রীষ্মকাল , দুই ভাইয়ের মধ্যে অঘোষিত প্রতিজুগিতা শুরু হয়ে যায়। কে আগে আকাশে উড়তে পারে। বড় ভাই লাগাড়ি হাসান চেলেবি আর মধ্যেই ছোট ছোট রকেট বানিয়ে এক্সপেরিমেন্ট চালাতে থাকেন। তার ওই রকেট উড়ানোর জন্য পুরু ইস্তানবুল বাসীর কাছে তিনি তখনকার আমলে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেন।
তৎকালীন সময়ের সুলতান চতুর্থ মুরাদের কানেও রকেট উড়ানোর কথা যায়। সুলতান চতুর্থ মুরাদ লাগাড়ি হাসান চেলেবিকে ডাকেন। সাক্ষাতে লাগাড়ি হাসান চেলেবি সুলতান চতুর্থ মুরাদ এর কাছে মানুষ বহনকারী রকেট বানানোর উপকারিতার কথা তুলে ধরেন।
"পরবর্তী ভিয়েনা আক্রমণের সময় সিজ টাওয়ার বানানোর পরিবর্তে রকেট দিয়ে ভিয়েনা শহরের সুরক্ষা প্রাচীরের উপর দিয়ে উড়ে গিয়ে আক্রমণের সম্ভবনার কথা তুলে ধরেন।"
উপস্থিত গ্রান্ড ভিজির সুলতানকে এসব পাগলামি এক্সপেরিমেন্ট করা বন্ধ করতে অনুরোধ করেন। কিন্তু সুলতান চতুর্থ মুরাদ লাগাড়ি হাসান চেলেবিকে চালিয়ে যেতে বলেন।
১৬৩০ সালের শুরুতে , দুই ভাই এর মধ্যে আকাশে উড়ার প্রতিযোগিতা তখন তুঙ্গে। ছোটভাই হাজারফেন আহমেদ চেলেবির আকাশযানে করে উড়তে হলে উঁচু জায়গা থেকে লাফ দিতে হবে, অভিকর্ষের ফলে আকাশযান নিচের দিকে পড়তে থাকবে কিন্তু বাতাস আকাশযানের সুবিশাল পাখায় লেগে আকাশযানকে উপরের দিকে লিফট দিবে , এভাবেই আকাশযান তাকে সহ উড়িয়ে নিয়ে যাবে।
ওই সময় উস্কুদ্বারা যে দিকে, বসফরাস প্রণালীর বিপরীত দিকে , যেখানে গোল্ডেন হর্ন প্রণালি এসে বসফরাসের সাথে মিলিত হয়েছে , তার কুলেই রয়েছে ইস্তানবুলের বিখ্যাত গ্যালাতা টাওয়ার। এই টাওয়ারটি ১৩৪৮ সালে অর্থোডক্স খ্রীষ্টানদের তৈরী ২২০ ফুট সুউচ্চ টাওয়ার। মুসলিমরা ১৪৫৩ সালে ইস্তানবুল দখলের পর বহুবার এই টাওয়ারের সংস্কার করেছে।
যাহোক হাজারফেন আহমেদ চেলেবি মনস্থির করেন ওই গ্যালাতা টাওয়ার থেকেই তার আকাশযান নিয়ে লাফ দিবেন। তার এই সিদ্ধান্তের পিছনে তিনটি কারণ ছিল:
প্রথমত দূরবর্তী পাহাড়ের চূড়া থেকে লাফ দিলে শহরবাসী তার আকাশে উড়া দেখা থেকে বঞ্চিত হবে।
দ্বিতীয়ত ইস্তানবুলে তখন গ্যালাতা টাওয়ারই ছিল সবচেয়ে সুউচ্চ টাওয়ার এবং এই টাওয়ার ইউরোপিয়ান ভূখণ্ডে পড়েছে। যদি সফলভাবে উড়তে সক্ষম হন তাহলে টেকনিক্যালি তিনি ইতিহাসে প্রথম মানব হবেন যিনি উড়ে এক মহাদেশ থেকে আরেক মহাদেশে আসতে পেরেছেন।
তৃতীয়ত এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কারণ হলো যে, গ্যালাতা টাওয়ার থেকে পরিকল্পনা মতো উড়তে না পারলেও তার আকাশযান নিয়ে বসফরাস প্রণালীর পানিতে ঝাঁপিয়ে পড়ার সুযোগ পাওয়া যাবে , সেক্ষেত্রে অসফল হলেও হয়তো প্রাণে বেঁচে যাবেন।
পরিকল্পনা মতো হাজারফেন আহমেদ চেলেবি তার বড় ভাইয়ের আগেই আকাশযান তৈরী করে ফেলেন। লাগাড়ি হাসান চেলেবি তখন ও তার রকেট নিয়ে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।
হাজারফেন আহমেদ চেলেবি তখন গ্যালাতা টাওয়ার থেকে লাফ দেয়ার অনুমুতি কিভাবে পাবে সেই চিন্তা করছে। গ্যালাতা টাওয়ার থেকে লাফ দিতে হলে সেখানের ডিসট্রিক্ট চিফ (District chief ) এর অনুমুতি নিতে হবে। আর ডিসট্রিক্ট চিফ কখনোই সুলতান চতুর্থ মুরাদের অনুমুতি ছাড়া এই অনুমুতি দিবেন না।
হাজারফেন আহমেদ চেলেবি তখন বড় ভাই লাগাড়ি হাসান চেলেবির কাছে এসে ধর্ণা দিচ্ছিলো সুলতানের কাছে গিয়ে অনুমুতি নেয়ার জন্য। যদিও লাগাড়ি হাসান চেলেবি নিজেও আকাশে উড়ার প্রতিজুগিতায় লিপ্ত , নিজের ছোট ভাইয়ের জন্য অবশেষে সুলতানের কাছ থেকে অনুমুতি নিতে যায়।
সুলতান চতুর্থ মুরাদ হাজারফেন আহমেদ চেলেবিকে ডেকে পাঠান। হাজারফেন আহমেদ চেলিবি সুলতানকে বুঝান যে ,
অন্যান্য ইউরোপিয়ান সম্রাজ্যের আগেই অটোমানদের আকাশে উড়ে এক মহাদেশ থেকে আরেক মহাদেশে যাওয়ার ইতিহাস করা উচিত।
সুলতানের নিজেও উৎসাহ বেড়ে গেলো এবং আগামী সকালেই গ্যালাতা টাওয়ার থেকে উড়ার অনুমুতি দেন।
অনুমুতি ঠিকই পেয়ে গেলেন , কিন্তু সেই রাতে ভীষণ চিন্তায় পরে গেলেন , ইউরোপিয়ান ভূখণ্ডের গ্যালাতা টাওয়ার থেকে এশিয়ান ভূখণ্ডের উস্কুদ্বারা পর্যন্ত উড়ে যেতে হলে ৩ কিলোমিটারের বেশি পথ বসফরাসের উপর দিয়ে উড়ে যেতে হবে। ২২০ ফুট গ্যালাতা টাওয়ার থেকে লাফ দিয়ে সাধারণত এতদূর তার ওই আকাশযানে করে উড়ে যাওয়া সম্ভব না , যদি না সকালে প্রচন্ড দক্ষিণ-পশ্চিম গামী বাতাস প্রবাহিত না হয়।
এবং ওই রাতে বিন্দু পরিমান বাতাস ছিল না। তার উপর সুলতানের কথা রাখতে , আগামীকাল সকালে গ্যালাতা টাওয়ার থেকে লাফ দিয়ে উড়ে দেখাতেই হবে।
হাজারফেন আহমেদ চেলেবি নির্ঘুম রাত কাটায় , সকাল থেকে প্রচন্ড বাতাস চালাতে থেকে। তিনি গ্যালাতা টাওয়ারের উপরে দাঁড়িয়ে তার আকাশযান নিয়ে লাফ দেয়ার জন্য প্রস্তুত। পুরু ইস্তানবুলবাসি বের হয়ে এসেছে হাজারফেন আহমেদ চেলেবির আকাশে উড়া দেখতে। তার বড়ভাই আর সব বন্ধু বান্ধব সবাই টাওয়ারের নিচে থেকে হৈ হুল্লো করে তাকে উৎসাহ দিচ্ছে।
সুলতান চতুর্থ মুরাদ নিজেও তাপকাপি প্যালেসের জানালা থেকে আগ্রহ নিয়ে চেয়ে আছেন গ্যালাতা টাওয়ার এর দিকে। সফল হলে এটা হবে একটা কালজয়ী অটোমান বিজয়। ১৮ বছর বয়স্ক সুলতান চতুর্থ মুরাদ এটা দেখার এতটাই আগ্রহি ছিলেন যে , সকাল থেকে সম্রাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ সব মিটিং পিছিয়ে দিয়েছিলেন।
হাজারফেন আহমেদ চেলেবি দীর্ঘশ্বাস নিচ্ছেন। ২২০ ফুট উঁচু থেকে পুরু শহরের বার্ড আই ভিউ দেখা যাচ্ছে। কখনো অনুধাবন করেননি যে ইস্তানবুল এত সুন্দর।
শেষ বারের মতো কালেমা দোয়া দরূদ পরে তার আকাশযান চেপে ধরে গ্যালাতা টাওয়ার থেকে লাফ দিলেন। পুরু ইস্তানবুলবাসী চিৎকার দিয়ে উঠলো, অনেকে ভয়ে আবার অনেকে উত্তেজনায়। হাজারফেন আহমেদ চেলেবি বসফরাসের উপর দিয়ে উড়ে যেতে লাগলেন।
তিনি নিজেও চিৎকার করে বলতেছিলেন "মানুষও উড়তে পারে ''
তিনি ইউরোপ ভুখন্ড থেকে উড়ে ৩.২ কিলোমিটার দূরত্ব অতিক্রম করে এশিয়ান ভূখণ্ডের উস্কুদ্বারা পর্যন্ত উড়ে এসে মোটামুটি সুস্থ অবস্থায়ই। ১৬৩০ সালে ইস্তানবুলের তৎকালীন ৭ লক্ষ জনগণের সম্মুখেই হাজারফেন আহমেদ চেলেবি ইতিহাস গড়ে তুলেন আন্তঃমহাদেশী ফ্লাইট সম্পন্ন করে। এই রেকর্ড ভাঙতে ইউরোপীয়ানদের আরো কয়েক শতাব্দী অপেক্ষা করতে হয়েছে।
এই ৭ লক্ষ উৎসুক জনতার মধ্যে একজন ছিলেন , বিখ্যাত অটোমান ভ্রমণকারী এবং ইতিহাসবিদ এভলিয়া চেলেবি। তিনি এই ঘটনাকে লিখে রাখেন।
অলপবয়স্ক সুলতানকে গ্রান্ড ভিজির আর কোর্টের সবাই বুদ্ধি দেয়,
এই হাজারফেন আহমেদ চেলেবি বিপদজনক লোক। যেকোনো সময় তাপকাপি প্যালেসে উড়ে আসে বিস্পোরণ ঘটিয়ে সুলতানকে মেরে ফেলতে পারে।
তাই তাকে মেরে ফেলার উপদেশ দেন। সুলতান হাজারফেন আহমেদ চেলেবিকে ঐদিনই ডেকে এক বস্তা ভর্তি স্বর্ণমুদ্রা দেন এবং আলজেরিয়াতে নির্বাসনে যাওয়ার কথা বলেন। হাজারফেন আহমেদ চেলিবি ঐদিন বিকালেই আলজেরিয়ার উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করেন। জীবনের বাকি দশ বছর আলজেরিয়ার আলজিয়ার্স শহরেই কাটান।
এদিকে বড়ভাই লাগাড়ি হাসান চেলেবি ১৬৩১ সালে , সুলতান চতুর্থ মুরাদের মেয়ের জন্মদিনে তার স্টিলের তৈরী কাঠামোর রকেটে করে উড়ে ১০০০ ফুট উঁচুতে উঠতে সক্ষম হন। তার এই ফ্লাইট পরিকল্পনা মতো যায়নি। তার ওই রকেটের জ্বালানিতে বিস্পোরণে ঘটে। লাগাড়ি হাসান চেলেবির পা প্রচন্ড চোটে ভেঙে যায়। কিন্তু তিনি সফলভাবে বসফরাসের পানিতে ল্যান্ড করতে সক্ষম হন। লাগাড়ি হাসান চেলেবিও ইতিহাসে স্থান করে নেন , প্রথম মানব যেকিনা রকেটে করে উড়তে সক্ষম হয়েছিলেন।
এই চেলেবি ভাইদের আকাশে উড়ার অসাধারণ ইতিহাস তুর্কিদের আজও অনুপ্রেরণা যোগায়। বর্তমানে হাজারফেন আহমেদ চেলেবিকে তুর্কিতে জাতীয় বীর হিসেবে ধরা হয় । ইস্তানবুলে ৪ টি এয়ারপোর্টের মধ্যে একটি হাজারফেন আহমেদ চেলেবির নামে নামকরণ করা হয়।
মুসলিমদের বিমান রকেট তৈরীর উপর বাংলা ডকুমেন্টারী: https://youtu.be/Jp7M6eOP-ME
সংগৃহীত© গবেষক মোহাম্মদ জুলফিকার রিজন
Bibliography:
How Invention Begins: Echoes of Old Voices in the Rise of New Machines By John H. Lienhard
Evliya Chelebi, Willem Floor, Travels in Iran & the Caucasus in 1647 & 1655
John Wilkins, 1802, Mathematicall Magick or the Wonders
John H. Lienhard (2004). "'Abbas Ibn Firnas". The Engines of Our Ingenuity.
Robert Dankoff (Translator), The Intimate Life of an Ottoman Statesman, Melek Ahmed Pasha, (1588-1662 : As Portrayed in Evliya Celeb's Book of Travels
লেখাটি ফেসবুক বন্ধু MD Lutful Bari থেকে কপি করা।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.