নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

Quazi Hassan’ World of Writings

Quazi Hassan’ World of Writings

কাজীহা

“For every beauty there is an eye somewhere to see it. For every truth there is an ear somewhere to hear it. For every love there is a heart somewhere to receive it.”

কাজীহা › বিস্তারিত পোস্টঃ

ভাংচুর অলিম্পিয়াড

০৬ ই অক্টোবর, ২০১৩ সকাল ৮:০৩

এখন বাংলাদেশের সব চেয়ে বড় স্টেডিয়াম কোনটা? মানে সব চেয়ে বেশী মানুষ বসে খেলা দেখতে পারে।

ঢাকা স্টেডিয়াম না কি মিরপুরের বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম?

এর উত্তর নিশ্চয়ই যারা বিজ্ঞ পাঠক, তাদের একেবারে জানা। আপনি যদি ওই বিজ্ঞদের অন্তর্ভুক্ত হন, তা হলে একটু ধৈর্য নিয়ে অপেক্ষা করতে হবে। কারণ এখনই শুরু হবে বিশেষ বয়ান। যার থেকে দেশ, জাতির সম্যক উপকার হবে। পথে ঘাটে গাড়ি ভাংচুর, জ্বালাও, পোড়াও, মার-পিট, গালাগালি বন্ধ হয়ে যাবে। সারা পৃথিবীর মানুষ অবাক হয়ে বাংলাদেশের কথা বলবে। আয়োজকরা হয়ত নোবেল প্রাইজ পর্যন্ত পেয়ে যেয়ে পারেন। না থাক নোবেল প্রাইজ না পাওয়াটাই ভাল; পেলে আবার বিরাট ঝক্কি ঝামেলার শিকার হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা। সেটা নিয়ে আরেক দিন বয়ান দেয়া যাবে।

সব চেয়ে বড় স্টেডিয়াম সেখানে অলিম্পিক ধরণের এক বিশাল ক্রীড়া অনুষ্ঠান হতে যাচ্ছে। বেশ কয়েক ধরণের খেলা নিয়ে সেখানে প্রতিযোগিতা হবে। অনেকটা আন্তর্জাতিক অলিম্পিক গোছের। তবে বিজয়ীদের যে পুরস্কারের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে, তার উদাহরণ পৃথিবীর ইতিহাসে নাই। একেবারে সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে, এখন থেকে এই ক্রীড়া অনুষ্ঠান প্রতি পাঁচ বছর পর পর হবে। চলুন অনুষ্ঠানের নাম দেই: ভাংচুর অলিম্পিয়াড।

অংশগ্রহণকারী দলগুলো শপথ নিয়ে জানাবে, খেলাগুলোর অনুশীলন, প্রতিযোগিতা শুধু মাত্র নির্দিষ্ট জায়গায় হবে। তারা কখনই কোন ভাবে পথে ঘাটে খেলাগুলো খেলবে না। এ নিয়ে সবার থেকে হলফ-নামা নেয়া হয়েছে। কোন ব্যতিক্রম হলে, বড় স্টেডিয়াম থেকে ডিস কোয়ালিফায় মানে অযোগ্য ঘোষণা করা হবে। তখন তাদেরকে বাধ্যতামূলকভাবে মূল ভেন্যুর বাইরে আরেক খেলায় অংশগ্রহণ করতে হবে। সেটা হবে বঙ্গোপসাগরে নৌকা বাইচ। যারা সেখান থেকে ফিরে আসতে পারবেন, তাদের জন্যে থাকবে সু বিশেষ পুরষ্কার। না থাক, পুরষ্কারটা কি হবে, সেটা একটু পরে বলি। তার আগে চলুন, আমরা মূল অনুষ্ঠান থেকে ঘুরে আসি।

প্রথম খেলার নাম, “ জ্বালাও পোড়াও”। প্রতিটা দলের নবীন সদস্যরা এতে অংশ নিতে পারবে। বিদেশ থেকে নতুন মডেলের বাস, ট্রাক, আর লেক্সাস, ইনফিনিটি, মারসিডিস গাড়ি আনা হয়েছে। সব চেয়ে অল্প সময়ের মধ্যে সব চেয়ে বেশী জ্বালাও, পোড়াও যারা করতে পারবে, তাদের জন্যে থাকবে বিশেষ সম্মানিত পুরষ্কার। তারা হবেন, গ্রাম/ ওয়ার্ড পর্যায়ে শীর্ষ ক্ষমতার অধিকারী। জাতীয় বাস-ট্রাক সমিতি এই খেলার ১০০% স্পন্সরশীপ করছে।

খেলা দুই, “মাস্তানি/চাঁদাবাজি”। জাতীয় ব্যবসায়ী-বণিক সমিতি এর পুরো খরচ বহন করছে। স্টেডিয়ামের চারিদিকে দোকান, ব্যবসা বাণিজ্য বসান হয়েছে। মাঝারী লেভেলের লিডারদের নেতৃত্বে মাস্তানি কম্পিটিশন চলবে। এখানে বিজয়ী নির্ধারণ করা হবে হুমকি, ধামকির উপর। তার সাথে থাকবে ঝাড়ি দিয়ে কে কত টাকা তুলতে পারে। বিজয়ীরা, জেলা পর্যায়ের রাজনৈতিক ক্ষমতাবান ব্যক্তি হবেন।

এর পরের খেলার নাম, “খিস্তি খেউর”। এই খেলাটা অনেকেই স্পন্সর করতে চেয়েছিল। তবে সব চেয়ে বেশী টাকা অফার করার জন্যে খেলাটা হবে যৌথভাবে স্পন্সর করছেঃ “ফেডারেশন অফ রাজনৈতিক দল” ও “জাতীয় নির্বাচন পরিষদ”। কে কত জগণ্যভাবে, চিৎকার করে গালি গালাজ করতে পারে, তার উপর শিরোপা নির্ভর করবে। এই খেলায় প্রতিযোগীর সংখ্যা ব্যাপক হওয়ার সম্ভাবনা। এখানকার পুরষ্কার খুবই লোভনীয়। পাঁচ বছরের জন্যে এমপি হিসেবে আঞ্চলিক রাজত্ব। বাড়তি বোনাস হিসেবে থাকছে ফ্রি ঢাকা সফর, ফ্রি গাড়ি, বাড়ি, ফোন ইত্যাদি ইত্যাদি।

দলের সিনিয়র নেতাদের জন্যে থাকছে “মান ভাঙ্গাভাঙ্গি” খেলা। “জাতীয় অভিনয় শিল্পী গুষ্টি” এই পর্বের একেবারে সার্থক স্পন্সর। এখানে বিদেশী আর সুশীল সমাজ; সিনিয়র নেতাদের মান ভাঙ্গানোর চেষ্টা করতে থাকবেন। এক জন আরেক জনের দিকে তাকিয়ে গাল ফুলিয়ে কঠিন দৃষ্টি দিতে পারবে, কিন্তু কথা বললেই খেলা থেকে বাদ পড়ে যাবে। তবে এই খেলার মধ্যে একটা সমস্যা সম্ভাবনা খুব বেশী। দেখা গেল, কেওই কারোর সাথে কথা বলল না। বিদেশী, সুশীলদের সব চেষ্টাই ব্যর্থ হল। বিজয়ীদের পুরস্কার হিসেবে, অভিনয় শিল্পী গুষ্ঠির পক্ষ থেকে, টিভি চ্যানেলগুলোতে সিরিয়াল নাটকে অভিনয়ের ব্যবস্থা করে দেয়া হবে। এরা এমনিতেই খুব বিখ্যাত মানুষ। টিভির খবরে, টকশোতে একেক সময়ে একেক কথা বলার জন্যে তারা এমনিতেই সবার কাছে পরিচিত। প্যাকেজ নাটকে এক জনের ঘাড়ে আরেক জনের লাফ দিয়ে পড়ার কাজটা তারা খুব ভাল করতে পারবে।

শেষ খেলাটার দিকে সবার চোখ সব চেয়ে বেশী থাকবে। ইচ্ছা করেই এখানে কোন স্পন্সর নেয়া হয় নি। বাংলা অলিম্পিয়াডের আয়োজকরা অনুষ্ঠানের এই পর্ব আর কাওকে দিতে চান নি। এখানে শুধু অংশ নিতে পারবে দুই দলের দুই শীর্ষ নেতা। পর্বটাকে খুব সহজ বাংলা ভাষায় নাম দেয়া হয়েছে।“চুল ছেঁড়াছিঁড়ি”। দু জন সামনা সামনি বসবেন। উইসেল দেয়া মাত্রই এক জন আরেক জনের মাথার চুল ছিঁড়তে থাকবেন। যে বিপক্ষের মাথার চুল টেনে তুলে কদ বেল বানাতে পারবেন---তিনিই বিজয়ী। তার পুরষ্কার: দেশের প্রধান মন্ত্রীত্ব টানাপাঁচ বছর জন্যে।

পাঠকরা দেখলেন তো কি সুন্দর করে দেশের রাজনৈতিক সমস্যার সমাধান হয়ে গেল। এখন তা হলে উত্তর দিয়ে দেই, প্রথমেই যে প্রশ্ন করেছিলাম—তার। ক্ষমতা নিতে চাইবে, কিন্তু ভাংচুর অলিম্পিয়াডে অংশ নিবে চাইবে না, এমন রাজনৈতিক নেতা আর কর্মীদের বঙ্গোপসাগরে নৌকা বাইচ করতে পাঠান হবে। যারা প্রতিযোগিতা শেষ করে জান নিয়ে ফিরবে, তাদেরকে সব চেয়ে বড় সম্মানিত পুরস্কার দেয়া হবে-----“জনগণের প্যাঁদানি”।

শেষে সবিনয়ে আরেকটা কথা জানিয়ে রাখি, রাজনৈতিক দল গুলো যদি এই ক্রীড়া অনুষ্ঠানের ভণ্ডুল করতে চায়, তা হলে শেষ খেলার পুরষ্কার “জনগণের প্যাঁদানি” দিয়ে ওদেরকে ভাংচুর অলিম্পিকে অংশ গ্রহণে বাধ্য করান যেতে পারে।





অক্টোবর ১৫, ২০১৩

http://www.lelhalekhi.net

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.