নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

Quazi Hassan’ World of Writings

Quazi Hassan’ World of Writings

কাজীহা

“For every beauty there is an eye somewhere to see it. For every truth there is an ear somewhere to hear it. For every love there is a heart somewhere to receive it.”

কাজীহা › বিস্তারিত পোস্টঃ

বাংলার কৌতুক বনাম পাক হানাদার

১০ ই ডিসেম্বর, ২০১৭ রাত ১২:২৮



নয় মাসে ত্রিশ লক্ষ প্রাণ। পৃথিবীর ইতিহাসে এত অল্প সময়ে এত মানুষ আর কোথাও জীবন দেয় নি। আবার, আধুনিক বিশ্বের প্রথম উদাহরণ যেখানে রক্তাক্ত, সশস্ত্র সংগ্রাম করে; একটা জাতি স্বাধীনতা ছিনিয়ে এনেছে। একটা ভূখণ্ড আলাদা করে নিজের ভাষার নামে দেশের নাম করণ করেছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতার যুদ্ধকে বিশ্লেষণ করলে এরকম অনেক অনন্য সাধারণ ঘটনা উঠে আসে।

বাংলাদেশের স্বাধীনতার যুদ্ধ, পাক হানাদার বাহিনীর সাথে শুধু অস্ত্র আর গোলা বারুদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না। পুরো বাংলাদেশ স্বাধীনতা চেয়েছে; যারা পেরেছে সামরিক প্রশিক্ষণ নিয়ে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছে। আর অন্যরা তাদের যার যেই শক্তি আর উপায় ছিল, সেটাই সম্বল করে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছে। জাকারিয়া পিন্টু, সালাহউদ্দিন প্রমুখ ফুটবল দল গড়ে তুলেছিলেন। তারা সারা ভারত জুড়ে ফুটবল খেলে বাংলাদেশের জন্যে সমর্থন তৈরির কাজ করেছিলেন। যারা লিখতে পারতেন, তারা হলেন কলম সৈনিক, আবৃত্তিকার, গানের শিল্পীরা হলেন শব্দ সৈনিক। শিল্পীরা ছবি, কার্টুন দিয়ে তাদের প্রতিবাদের কথা প্রকাশ করলেন। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র ছিল যেন বাঙালিদের নৈতিক মনোবলের শক্তিশালী কামান। একেবারে সম্মুখ যুদ্ধে যারা ছিলেন, তাদেরকে সাহস ও অনুপ্রেরণা যোগাত “একটি ফুলকে বাঁচাবো বলে”, “তীর হারা এই ঢেউয়ের সাগর” ধরণের গানগুলো। এম আর আখতার মুকুলের “চরম পত্র” র ব্যঙ্গাত্মক পরিবেশনাগুলো সবার মুখে মুখে ফিরত। প্রবাসী বাঙালিরাও অবিস্মরণীয় অবদান রেখেছিলেন। কেও fund raise করার কাজ করেছেন, কেও বিশ্ববাসীর সমর্থন গড়ার কাজ করেছেন। এমনকি কিছু প্রবাসী বিদেশ থেকে ফিরে এসে সরাসরি স্বাধীনতার যুদ্ধে পর্যন্ত অংশগ্রহণ করেছেন। বাঙালি মায়েরা তাদের দ্বার খুলে দিয়েছিলেন মুক্তিযোদ্ধা সন্তানদের জন্যে। যারা অন্য কোন ভাবে অংশগ্রহণ করতে পারেন নি, তাদের দোয়া আর শুভেচ্ছা থাকত বাংলাদেশের বিজয়ের জন্যে।

স্বাধীনতার যুদ্ধের সেই উত্তাল দিনগুলোতে, সৃষ্টি হয়েছিল বেশ অনেক ব্যঙ্গাত্মক কৌতুক। কোন কৌতুক, কে সৃষ্টি করেছিলেন, তা এখন বের করা প্রায় অসম্ভব। কিছু হয়ত সত্য ঘটনা ছিল, বাকীগুলো নিছক বানানো। কিন্তু এই সব কৌতুক প্রমাণ করেছিল বাঙালিরা ভীষণ বিপদে থেকেও, সৃষ্টি আর হাসি দুই কাজই সমান তালে চালিয়ে যেতে পারে। এই সব কৌতুক সেই সময়কার চরম উৎকণ্ঠা ও অনিশ্চয়তার মধ্যে মানুষদের শুধুই বিনোদনই দেয় নি, তাদের নৈতিক শক্তিকে অটুট রাখতে বিশাল একটা ভূমিকা রেখেছিল।

আজকের লেখা-- আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালীন সময়কার কিছু কৌতুক গল্প আর পাক হানাদারদের বুদ্ধির নমুনা নিয়ে। তবে বিষয়বস্তুতে যাবার আগে, একটা সত্যি ঘটনা বলি। পাক সরকার বেশ চিন্তিত হয়ে পড়ল, যখন তারা আবিষ্কার করল, বাংলা ভাষা আর রবীন্দ্রনাথ একেবারেই এক সুতায় গাঁথা। অনেক ভেবে পূর্ব পাকিস্তানের যিনি গভর্নর ছিলেন, তিনি ডেকে পাঠালেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন স্বনাম ধন্য শিক্ষককে। বললেন, “আপনারা কি করেন, রবীন্দ্র সঙ্গীত লিখতে পারেন না”?

বুঝতেই পারছেন, প্রতিপক্ষ যদি রবীন্দ্র সঙ্গীত কি, তাই যদি না জানে, তা হলে ব্যাপারটা কি ধরনের হতে পারে। একটা ছোট শিশুও বলে দিতে পারবে, রবীন্দ্র সঙ্গীত একমাত্র রবীন্দ্রনাথই লিখে গিয়েছেন। একটা শিশুর জ্ঞান পর্যন্ত যদি শাসক মহলের না থাকে,তার পরিণতি কি মারাত্মক হতে পারে তা আমরা আজকে সবাই জানি। ১৯৭১ সালের ২৫ শে মার্চ রাতে তারা লেলিয়ে দিয়েছিল সেই সময়কার পৃথিবীর সবচেয়ে সুসজ্জিত সেনাবাহিনীকে ঘুমন্ত বাঙ্গালীর উপর। যদি কখনো বিশ্ব গর্দভ সিদ্ধান্তের তালিকা বানানো হয়, সম্ভবত আমাদের প্রতিপক্ষদের এই সিদ্ধান্ত, তালিকার শীর্ষ কিংবা তার একেবারে কাছাকাছি থাকবে। তারা গুলি আর কামান দিয়ে একটা সভ্যতা ধ্বংস করতে চেয়েছিল। তাদের এক দোসর হিটলার চেয়েছিল ইহুদি নামক জাতিকে পৃথিবী থেকে মুছে ফেলতে। অনেক অত্যাচার করেও তারা সেটা করতে ব্যর্থ হয়েছে। পাকিস্তানীরাও পারেনি হামলা করে বাঙালির অস্তিত্ব নিশ্চিহ্ন করতে। ইতিহাস থেকে সামান্য শিক্ষা নেয় নি তারা। এই ক্ষুদ্র বিষয়টা তাদের মাথায় ছিল না যে, মানুষ হত্যা করে কখনো একটা জাতিকে বিলীন করা যায় না। ত্রিশ লক্ষ মানুষ খুন করার ব্যাখ্যা তারা আজ কোন ভাবেই দিতে পারবে না। সিদ্ধান্ত গ্রহণের দিক থেকে নিজেকে তারা বিশ্ব সমাজের কাছে, একটা হাসির পাত্রে পরিণত করে রেখেছে। হাসিটা অবশ্যই নিন্দা আর বিদ্রূপের।

যাই হোক, এতক্ষণ তো হল শাসকদের কথা। এখন শাসকগোষ্ঠী যাদের বাঙালি নিধন করতে পাঠিয়েছিল, তাদের কিছু কর্মকাণ্ডের সাথে পরিচয় করিয়ে দেই। আরম্ভ করি একটা পাঠান হানাদার সৈনিকের গল্প দিয়ে। সে ঘটনাক্রমে একটা বাঙালিকে গ্রেফতার করল। স্যালুট দিয়ে তার ঊর্ধ্বতন অফিসারকে নিয়ে আসল তার বীরত্ব দেখাতে। কিন্তু যে গাছ তলায় তার বন্দী থাকার কথা, সেখানে কেও নাই। সৈনিক খুব চিন্তিত হয়ে পড়ল, বিষয়টা কি। অফিসার জানতে চাইল, “হাত, পা দুই কি বেঁধেছিলে?” সৈনিক অবাক হয়ে জানতে চাইল, “হাত কেন? শুধু পা বেঁধেছিলাম। পেশাওয়ারে তো তাই করা হয়।” খোলা হাত যে পায়ের বাঁধন খুলে ফেলতে পারে, তা তার মাথায় আসে নি।

আরেক দাড়িওয়ালা হানাদার সৈনিক, এক বসাতে এক কাঁঠাল খেয়ে ফেলল। হাতের কাঁঠালের আঠা কোন ভাবেই উঠাতে পারছিল না। জিজ্ঞাসা করলো দশ বছরের এক বালককে, কি করলে আঠা পরিষ্কার হয়। ছেলেটা নির্বিকার ভাবে বলল, চুল আর দাড়িতে ঘষতে। তার পরে ভেবে দেখুন অবস্থাটা। শেষে বাধ্য হয়ে, সৈনিক মহোদয়কে দাড়ি কামিয়ে, চুল ফেলে ন্যাড়া হতে হল।

পাক হানাদাররা এক বাঙালির বাসায় ঢুকে পড়ল। দেয়ালে পাশাপাশি রবীন্দ্রনাথ আর নজরুলের ছবি। তারা নজরুলের ছবি নামিয়ে ফেলল। আর রবীন্দ্রনাথের ছবির দিকে তাকিয়ে বলল, “দাড়িওয়ালা আদমি হায় , সাচ্চা মুসলমান হায়।” বুঝলেন, ব্যাক্কলদের কাণ্ড। দাড়ি দিয়ে তারা বাঙালির ধর্ম নির্ধারণ করত।

পাক হানাদার বাহিনী ঠিক করল, পুরুষ মানুষরা মুসলমান কিনা, তা তারা পরীক্ষা করা আরম্ভ করবে। কথাটা ছড়িয়ে পড়ল বাতাসের গতিতে। হিন্দু, মুসলমান সবাই কলেমা মুখস্থ করে ফেলল। কি মুশকিল, তাদের প্রথম আইডিয়া কাজ করলো না। এর পর, তারা পুরুষদের যৌন অঙ্গ পরিদর্শন করা আরম্ভ করল, মুসলমানি হয়েছে কিনা সেটা নির্ধারণ করার জন্যে। যদিও ব্যাপারটা বাঙ্গালীদের জন্যে একটা অপমানজনক বিষয় ছিল, তবুও পাক বাহিনীর বুদ্ধির এই মান আমাদেরকে এখনও একটা প্রচণ্ড ধিক্কারের হাসি দেয়।

পাক বাহিনী আসবে, এই কথা শুনলে গ্রামের সব মানুষ ঊর্ধ্বশ্বাসে পালাতে থাকত। শুধু থাকত, বয়স্ক মহিলারা। তার পরেও ওরা সুযোগ খুঁজত কিভাবে অত্যাচার আরম্ভ করা যায়। একবার হানাদাররা গ্রামের এক বাড়ির উঠানে এসে দেখল, কিছু মুরগী হেটে বেড়াচ্ছে। পাক বাহিনী জানতে চাইলো, মুরগীদের কি খাওয়ানো হয়। বাঙালি বৃদ্ধারা ভাবলেন, যদি গম বলা হয়, তা হলে হয়ত রেহাই পাওয়া যেতে পারে। কারণ পাক বাহিনী গমের আটার রুটি খায়। পাক বাহিনী মুরগী গম খায় শুনে বলল, “হাম লগ রুটি খাতা, আর তুমহারা মুরগীভি গম খাতা, এয়া তো বেয়াদবি হ্যায়।” সাথে সাথে আরম্ভ হয়ে গেল মার-পিট। কয়েকদিন পরে আবার পাক বাহিনী হাজির। এই বার মহিলারা বললেন, মুরগীরা চাল খায়। সাথে সাথেই আবার মারপিট, “সারা দেশমে চাষাবাদ নেই হ্যায়, আর তুমলোগ উসলোককো চাউল খিলাতা।”

বেশ কিছুদিন পর আবার পাক সেনারা ফিরল। ওদের দেখা মাত্র এক বৃদ্ধা মহিলা চিৎকার করে বললেন, “মুরগীর মুখে এক পয়সা ঢুকায় দেতা হ্যায়, মুরগী লোক দোকানসে যা ইচ্ছা তাই কিনে খাতা হ্যায়।” এই বার সেনারা আর কোন উত্তর খুঁজে পেল না। আগের দু বারের মত, মারপিট না করে চলে গেল।


এম আর আখতার মুকুল রসালো সুরে তার চরম পত্র অনুষ্ঠানে বলতেন, ১৯৭১ সালে বঙ্গ দেশে মোছওয়ালাদের রাজত্ব শেষ করে সমাধি বানান হবে। আসলে তাই হয়েছিল। কিন্তু তাদের সমাধি বানাতে বাঙালির যে মূল্য দিতে দিয়েছে তার কোন নজির নাই। কিন্তু সবচেয়ে অবাক হবার মত ব্যাপার হল, কোন আনুষ্ঠানিক প্রশিক্ষণ ছাড়াই বাঙালির মহান মুক্তি যুদ্ধে লড়েছিল। এ যুদ্ধ ছিল সার্বিক যুদ্ধ। পাক বাহিনীকে নিয়ে ব্যঙ্গাত্মক কৌতুক গল্প তৈরি করে মানুষের মুখে মুখে ছড়িয়ে দেয়াও ছিল, অনেক অস্ত্রের মধ্যে একটা অন্যতম শক্তিশালী অস্ত্র। এ গুলোকে সংগ্রহ করে সংরক্ষণ করা আমাদের সবার দায়িত্ব। না হলে হয়ত আমাদেরও কৌতুকের পাত্রে পরিণত হবার একটা সমূহ সম্ভাবনা থেকে যায়।



কাজী হাসান
প্রবাসী লেখক
[email protected]

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ১০ ই ডিসেম্বর, ২০১৭ ভোর ৪:২১

বিচার মানি তালগাছ আমার বলেছেন: মুরগীর জোকস টা দারুণ ছিল...

২| ১০ ই ডিসেম্বর, ২০১৭ সকাল ৯:৪৯

রাজীব নুর বলেছেন: খুব ভাল লাগলো।

৩| ১০ ই ডিসেম্বর, ২০১৭ দুপুর ১২:৩৫

গিয়াস উদ্দিন লিটন বলেছেন: একটি সত্য ঘটনা- পাকিস্তানী সৈন্যরা একবার কয়েকজনের সাথে কবি নির্মলেন্দু গুনকেও জিজ্ঞাসাবাদ করছিলেন।কবিকে নামধাম জিজ্ঞাসের পর তারা অন্যদের জিজ্ঞাসাবাদ করছিল। অবস্থা বেগতিক দেখে কবি সেখান থেকে ভেগে যান ।
একটু পরে কবিকে না দেখে পাকিস্তানিরা অন্যদের জিজ্ঞাস করছিল,'হিন্দু মৌলানা কিধার গিয়া?'

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.