নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ব্লগে আপনাকে স্বাগতম !!

অশ্লীল রাজ

সাধারন এর মধ্যে কিছুটা অসাধারণ !!

অশ্লীল রাজ › বিস্তারিত পোস্টঃ

এবং রুপা.......

১০ ই অক্টোবর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:৫০




আমি হাত পেতে আছি, আমার হাতের তালুতে
খুব যত্ন করে কেউ একজন একটা ফুল আঁকছে! কলম
দিয়ে! সুড়সুড়ি লাগছে! কেমন একটা অস্থির
ভালোলাগা হাতের তালু থেকে চট করে পুরো
শরীরে ছড়িয়ে যাচ্ছে! এই কেউ একজনের চেহারা
পুরোপুরি আমি দেখতে পাচ্ছিনা! অর্ধেক দেখা
যাচ্ছে আর অর্ধেক চেহারায় চুল এসে পড়েছে!
চুলগুলো সরানোর চেষ্টাও করছেনা মেয়েটি! আমি
ডানহাত দিয়ে মেয়েটির ডানপাশের চেহারায়
এসে পড়া চুলগুলো সরিয়ে কানের পাশে গুজে
দিই! চেহারা টা স্পষ্ট হওয়ার আগে ঘুম ভেঙ্গে
যায় আমার! ঘুম থেকে উঠে বসে হতাশায় ডুবে
থাকি! প্রায় রাতে এই স্বপ্ন টা দেখা হয়, কিন্তু
পুরো চেহারা টা স্পষ্ট হয়না! অর্ধেক চেহারাই
দেখা হয় প্রতিরাতে! এই অর্ধেক চেহারায় এত্তো
মায়া কেন? আর স্পর্শ! এখনো যেন মনে হচ্ছে কেউ
হাত টা ধরে আছে! একদম জীবন্ত অনুভুতি! কে
মেয়েটি!
.......
বিকেলঃ রুপা আসার কথা বিকেলে! এখনো
আসেনি। ও বিকেলে আমায় নিয়ে ঘুরতে বের হয়!
আমার মন ভালো রাখার চেষ্টায় সারাক্ষন
আমায় নিয়ে ব্যস্ত থাকে মেয়েটি। ভালোই
লাগে মেয়েটির পাগলামো দেখতে! আচ্ছা,
স্বপ্নে দেখা মেয়েটির সাথে কি রুপার কোনো
মিল আছে? বুঝতে পারিনা! স্বপ্নবালিকার
অর্ধেক চেহারায় চুল এসে থাকে, চুল সরাতে
গেলেই ঘুম ভেঙ্গে যায়! পুরো চেহারা টা দেখার
পর হয়তো চিনতে পারবো কে এই মেয়েটি!
প্রতিরাতে কেন মেয়েটি কল্পনায় এসে হাবুডুবু
খায়! কারন টা কি?
আমরা হাঁটছি, রুপা আমার পাশে হাত ধরে
হাঁটছে! রুপা কে আমি ভালোবাসি, এটা রুপাই
বলেছে! আমার কিছু মনে নেই! আমাদের নাকি
বিয়ে ঠিক হয়ে আছে। কয়েক বৎসর পর বিয়ে! এটাও
আমার মনে নেই! কিছুই মনে পড়ছেনা। কিছুই মনে
করতে পারছিনা! পেছনের স্মৃতিগুলো সব শুন্য!
কারন টা কি?
.....
আজ আমরা ঝর্না দেখতে যাচ্ছি! বাসা থেকে
আব্বু কে বলে গাড়ি নিয়ে বের হইছি, রুপার কেন
জানি মনে হচ্ছে ঝর্না দেখলে আমার ভালো
লাগবে! আমার এমনিতেই ভালো লাগে ওর সাথে
থাকতে, তারপরও আমার ভালো লাগা নিয়ে ও
সবসময় চিন্তিত! আমি বাইরে তাকিয়ে আছি!
অচেনা রাস্তা, রাস্তার পাশের গাছগুলো চট করে
পেছনে চলে যাচ্ছে! হঠাৎ রুপা কে থামালাম!
রাস্তার পাশে একটু দুরে একটা পুকুর, পুকুরপাড়ে
সারিবদ্ধভাবে লাগানো হয়েছে অনেকগুলা গাছ!
পুকুরপাড়ের একটু দক্ষিনে একটা ঘর! ছোট্ট টিনের
ঘর! রাস্তার দু'পাশে যতদুর দেখা যায় বিস্তীর্ণ
ধানক্ষেত! এর মধ্যে ছোট্ট একটা বাড়ি, দেখতে
কি অদ্ভুত লাগছে! রুপা গাড়ি থেকে নেমে এসে
দেখে, আমি তাকিয়ে আছি ওদিকে! আমি রুপার
হাত ধরে অসহায় দৃষ্টি নিয়ে বললাম,
-- রুপা, এই জায়গাটা আমার বড্ড পরিচিত
লাগছে! আমি এখানে আগে কখনো এসেছিলাম?
রুপা আশ্চর্য হয়ে কিছুক্ষণ তাকিয়ে মুখ নিচু করলো
হয়তো চোখে এসে পড়া অশ্রু লুকোনোর জন্যে!
অনেকক্ষন এভাবে থেকে নিজেকে একটু সামলে
আমার চোখে চোখ রেখে বললো,
-- না নীল! এখানে আমরা কোনোদিন আসিনি!
এমনিতেই পরিচিত লাগছে...! আসো গাড়ি তে
বসো...
আমি গাড়ি তে বসে রুপার হাতে একটা কলম
দিয়ে বললাম,
-- আমার হাতে একটা ফুল এঁকে দাও তো প্লিজ...
রুপা কাঁপা কাঁপা হাতে কলম টা নিয়ে আমার
হাত টা ধরলো! নাহ! এই স্পর্শ পরিচিত না!
স্বপ্নবালিকার হাতের স্পর্শ এমন না! রুপা
আলতো করে আমার হাত টা ধরে একটা ফুল এঁকে
দিচ্ছে! সুড়সুড়ি লাগছে, কিন্তু পরিচিত লাগছে
না কেন? রুপার অর্ধেক চেহারায় অবাধ্য চুল এসে
পড়েছে! চুলগুলো সরাতে চেষ্টাও করছেনা সে!
আমি ডানহাত দিয়ে চুলগুলো কানের পাশে গুজে
দিলাম! রুপা চমকে উঠে আমার দিকে তাকালো,
আবার সামলে নিলো নিজেকে! আমি হাত পেতে
আছি, কিছু স্মৃতির জন্যে হাত পেতে আছি! স্মৃতি
ধরা দেয়না আমায়!
ঝর্না দেখে এসে বাড়ি ফিরছি দু'জন! রুপা আজ
একদম অন্যমনস্ক! বাড়িতে ঢোকার রাস্তাটায়
অনিচ্ছ্বাসত্ত্বেও যেন আমার হাত টা ধরে
আছে...!
.....
আমি তুলি! ঝর্না দেখে এসে নীলের হাত ধরে
বাড়ি ফিরছি বিকেলের ঝরঝরে রোদের মিষ্টি
আলোয় ভিজে। আজকাল বড্ড অপরাধী মনে হয়
নিজেকে। অবিরত মিথ্যে বলতে হচ্ছে আমায়!
নীলের পাশে রুপা হয়ে থাকছি, ওর প্রচন্ড
ভালোবাসার মানুষ হয়ে থাকতে হচ্ছে নিজেকে
লুকিয়ে! আমি রুপা নই, আমি তুলি! নীলের খুব
কাছের বন্ধু! প্রচন্ডরকম ভালোবাসতাম ছোটবেলা
থেকে। একতরফা ভালোবাসা। নীল কখনো
জানতেও পারেনি তার ছোট্ট বেলার বন্ধু টার
মনের গহীন কোনের লুকোনো অনুভুতি টা! নীলের
জীবন টা ছিলো রুপাময়! সকালে উঠে রাতে
ঘুমোতে যাওয়ার আগ পর্যন্ত রুপা আর রুপা! আমায়
এসে সব শেয়ার করতো, আজ কি করেছে? কোথায়
কোথায় ঘুরেছে? দু'জনের ভালোবাসার গল্প টা
আমায় শোনা লাগতো প্রতিদিন। দু'জন দু'জন কে
প্রচন্ডরকম ভালোবাসতো! রুপা আর নীলের
পরিবার দু'জনের সম্পর্কের ব্যাপারে জানতো!
দু'পরিবারের সম্মতি তে বিয়ে ঠিক হয়! দু'জন
পড়াশোনা করছে এখনো তাই পড়াশোনা শেষ
হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে দু'জনকে আরো
তিন বৎসর! রুপার সাথে আমার কথা হতো
প্রতিদিন! ভীষন ভালো মেয়ে! প্রচন্ড
ভালোবাসে নীল কে! আমি আমার সমস্ত কষ্ট
লুকিয়ে দু'জনের খুশি দেখতাম। ভাবতাম, দোষ
তো আমারি! আমিই তো কখনো বলিনি ও কে
ভালোবাসি! ওর অন্য কাউকে ভালো লাগতেই
পারে, ভালোবাসতেই পারে! নিজেকে
বোঝাতাম। তারপর ও প্রচন্ড কষ্টে বুক টা দুমড়ে
মুচড়ে যেতো! প্রতিরাতে কাঁদতাম, অঝোর
ধারায় চোখ থেকে জল পড়তো! এই প্রচন্ড কষ্ট
যেনো অভিশাপ হয়ে নামে রুপা আর নীলের
জীবনে!
বিয়ের কয়েক সপ্তাহ আগে ওরা দু'জন ঝর্না
দেখতে যাওয়ার প্ল্যান করে, এই ঝর্না টাই! যেটা
এইমাত্র দেখে এসেছি! ওরা ও দেখার কথা
ছিলো, গাড়ি নিয়ে বের ও হয়েছিলো! পথিমধ্যে
সড়ক দুর্ঘটনায় নীল মাথায় প্রচন্ডরকম আঘাত পায়,
কয়েক মাস হসপিটালে থাকে! স্মৃতি হারিয়ে
ফেলে! কাউকেই চিনতে পারেনা। আমাকে, ওর
বাবা, মা, ভাই কাউকেই চিনতে পারেনা। শুধু
জ্ঞান হওয়ার পর একটাই নাম মনে আছে ওর, রুপা!
তবে রুপা কে এটাও জানেনা ও, রুপা দেখতে
কেমন ছিলো সেটাও জানেনা! স্মৃতি হারিয়ে
ফেলে বেঁচে আছে ও, স্মৃতি ফিরে পাওয়ার
প্রয়োজন নেই! এটা আমি আমার জন্যে বলছিনা,
আমার স্বার্থের জন্যে বলছিনা, নীলের জন্যেই
বলছি। স্মৃতি ফিরে ফেলে ও রুপা কে খুঁজবে
পাগলের মতো! রুপা নেই, রুপা দুর্ঘটনা স্পটেই
মারা গিয়েছিলো! নীলের জ্ঞান ফেরার পর
নীলের বাবা মায়ের অসহায় আকুতির দিকে
তাকিয়ে ওর বাবা মা কে ফেরাতে পারিনি! হুম,
নীলের জীবনে রুপা হয়ে থাকার জন্যে নীলের
বাবা মাই আমার দু'হাত ধরে অঝোর ধারায়
কেঁদেছিলো, আমি প্রথমে রাজি হইনি! এটা যে
একটা অপরাধ! তারপর নীলের বাবা মায়ের
অশ্রুজলের দিকে তাকিয়ে প্রথমবারের মতো
সত্যিকারের অনুভুতি নিয়ে মিথ্যে পরিচয়ে
ছোটবেলার প্রচন্ডরকম ভালোবাসার মানুষটির
হাত টা শক্ত করে ধরেছি! কখনোই ছাড়বোনা এই
হাত, কখনোও না...!
......
দুই বৎসর পরঃ রুপা কোলে বাবু টা কে নিয়ে রুমের
ভেতরে এদিক থেকে ওদিক পায়চারি করছে! আমি
কিছু একটা বলতে চাইলাম, আমার দিকে
রাগান্বিত চোখে তাকিয়ে ঠোঁটে আঙ্গুল দিয়ে
চুপ করতে বললো! আমি চুপ করে আছি! বাবুটা বড্ড
কাঁদে, হাত পা ছোটাছুটি করে কাঁদে! আমি
সামলাতে পারিনা, এতোক্ষন চেষ্টা করেছি!
এরপর রুপা এসে ঘুম পাড়াচ্ছে কোলে নিয়ে!
ঘুমিয়েছে বাবুটা! আমার পাশে আলতো করে
শুইয়ে রাখলো বাবু কে। আমি রুপার হাত ধরে
বসালাম ও কে, বললাম
-- রুপা! বাবু'র নাম খোঁজার জন্যে বলেছো না?
একটা নাম খুঁজে পেয়েছি! তুলি! বড্ড আদুরে নাম!
তাইনা? তুলতুলে বাবুর তুলতুলে নাম! সুন্দর না?
রুপা আমার চোখের দিকে পলকহীন দৃষ্টি তে
তাকিয়ে আছে! আমি জিজ্ঞেস করলাম,
-- নাম পছন্দ হয়নি তোমার?
-- হুম। খুব পছন্দ হয়েছে.. খুব খুব।
-- নাম টা প্রথম শোনার পর থেকে কেমন যেন খুব
পরিচিত পরিচিত লাগছে, যেন আমার খুব আপন
কেউ ছিলো এই নামে। এমন কেন হয়?
রুপা কাঁদছে, শক্ত করে জড়িয়ে ধরেছে আমায়!
আমি ও জড়িয়ে ধরলাম, জিজ্ঞেস করলাম
-- কাঁদছো কেন?
রুপা কাঁদতে কাঁদতেই জবাব দিলো,
-- এমনিই! আমায় অনেকক্ষণ এভাবে জড়িয়ে ধরে
রাখো প্লিজ.......
//
লেখাঃ মোহাম্মদ নাঈম রাজ

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১০ ই অক্টোবর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:০৩

মার্কো পোলো বলেছেন:
রোমান্টিকতার আদলে মর্মস্পর্শী গল্প। খুব ভাল লাগলো।

২| ১১ ই অক্টোবর, ২০১৬ ভোর ৫:২৬

রক্তিম দিগন্ত বলেছেন:
মোটামুটি লাগলো। গল্পটা একপাশে সরে যাওয়ায় খুব একটা উপভোগ করতে পারিনি।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.