![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ক্যাফেটেরিয়ায় ঢুকে কফির কাপ
হাতে নিয়ে একমাত্র ফাঁকা
টেবিলটার দিকে ছুট দিল মাইশা আর
ওর দুই বান্ধবী। অঘটনটা ঘটেই গেল
হঠাত করে।
আচমকা একটা ছোটখাট হোঁচট খেল
মাইশা। কফির কাপ থেকে ছিটকে
পড়ল কিছু কফি। এপর্যন্ত সব ঠিকই ছিল,
ঠিকই থাকত যদি কফিটা রায়ানের
শার্টে না পড়ত। গরম কফি গায়ে
পড়তেই রায়ান সেটা ঝেড়ে ফেলার
চেষ্টা করল। কিন্তু যা হবার ততক্ষনে
হয়ে গেছে।
ঘটনার আকস্মিকতায় মাইশা এতক্ষন
চোখ দুটো বন্ধ করেছিল। চোখ খুলতেই
দেখতে পেল সাদা শার্ট পরা একটা
ছেলে চোখে মুখে বিরক্তি আর রাগ
নিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে আছে।
শার্টের ওপর কফির আলপনা দেখা
যাচ্ছে। মাইশা কাচুমাচু করে কিছু
একটা বলতে যাবে অমনি ছেলেটার
রাগ আকাশ পাতাল নিয়ে হুড়মুড় করে
মাইশার ওপর ভেঙ্গে পড়ল।
-এটা কি করলেন? শার্টটার তেরোটা
বাজিয়ে দিলেন? কি হলো বলেন?
--আসলে একটু তাড়ায় ছিলাম তো।
হঠাত হোঁচট খেয়েছি।
নিচু গলায় বলল মাইশা।
-তাই বলে আমার শার্ট কি দোষ
করেছিল? দিলেন
যা তা অবস্থা করে।
--স্যরি।
-কিসের স্যরি? আপনি যে কাজ
করেছেন তাতে স্যরি কোন সমাধান
না। আমার এত সাধের শার্টটা আপনি
শেষ করে দিলেন। জানেন এটা আমি
গতকালই কিনেছি। আজ প্রথম পরে
ভার্সিটি এসেছি। আর আপনি সব কফি
কফি করে দিলেন। ফালতু মেয়ে
কোথাকার।
শোরগোল শুনে মজা লুটার জন্য
ক্যাফেটেরিয়ায় বসা সব পাবলিকের
ইন্দ্রিয়গুলো ফুল ফোর্সে সজাগ হয়ে
গেছে। মাইশার অবস্থা দেখে খুব
বিনোদন পাচ্ছে তারা। বদমায়েশি
হাসি কয়েকটার মুখে। আর রায়ানের
সাথে বসে থাকা ওর বন্ধুগুলো আর এক
কাঠি উত্তেজিত। একজন তো উঠে
দাঁড়িয়ে শার্টের হাতা গুটিয়ে
ফেলেছে। চেহারায় "আর একটা কিসু
কইয়া দ্যাখ, বক্সিং মেরে চোয়াল
গুড়ো করে দিব" এইরকম একটা ভাব।
সবার সামনে ফালতু মেয়ে বলায়
এবার মাইশা রেগে গেল।
--কি বললেন আপনি? আমি ফালতু
মেয়ে? কেন কি করেছি আমি? মানুষ
চলতে গিয়ে হোঁচট খেতে পারেনা
নাকি? আপনি খাননি কখনও? আসলে
যারা নিজেরা ফালতু তারা
সবাইকেই নিজের মত মনে করে।
-এহহ চোখে দেখেনা আবার মুখে বড়
বড় কথা।
দেখে হাঁটতে পারেন না? চোখ তো
দুটো নয়
চারটা তাও যদি না দেখেন তাহলে
আর দুইটা চোখের
ব্যাবস্থা করেন। আর একহাত লম্বা হিল
না পরলেই
তো আর হোঁচট খেতে হয়না। হিল পরে
চলাই জানেন
না তো পরেন কেন?
-- শোনেন আপনি কিন্তু আপনার
লিমিট ক্রস করছেন। হিল পরে চলা
আপনার কাছে শিখতে হবেনা আমার।
আর আমার চোখে একটু সমস্যা আছে
বলেই আমি চশমা পরি। সেটা নিয়ে
আপনার রসিকতা আমি সহ্য করবোনা।
-আমিতো কেবল ক্রস করলাম।
আপনিতো সেই কখন করেছেন।যাকগে
স্বীকার তো করলেন চোখে
দেখেননা। ভালভাবে দেখার
ব্যাবস্থা করেন। যান।
--আপনার মত লোকদের যে কি শাস্তি
হওয়া উচিৎ
বুঝিনা। এতক্ষন মনে হচ্ছিল কফিটা
ফেলে বুঝি আমিই ভুল করেছি। এখন
দেখছি না, মোক্ষম
শাস্তি হয়েছে আপনার। আরো
খানিকটা ঢেলে দিতে ইচ্ছে করছে।
কিন্তু আমি আপনার মত অসভ্য না।
-আপনিও খুব সভ্য হলে ভালভাবে স্যরি
বলে চলে যেতেন। এত ঝগড়া করতেন
না। এই মুহূর্তে আপনি আমার সামনে
থেকে যান নাহলে কিন্তু ভাল
হবেনা।
--আমি ভালভাবেই স্যরি বলতে
চেয়েছিলাম কিন্তু
আপনার জন্যই সেটা আর বলা হলোনা।
ভাগ্যিস আপনার কথা গুলো শুনে চুপ
করে থাকিনি। আমার ভালভাবে
বলা স্যরিটা এক্কেবারে বাজে খরচ
হত।
রায়ানকে আর কিছু বলার সুযোগ না
দিয়ে সেখান থেকে চলে গেল
মাইশা। রাগে আর শার্টের বেহাল
দশা দেখে বাকরুদ্ধ হয়ে রায়ান বসে
পড়ল। এখন
ভেবে দেখছে যা ক্ষয়ক্ষতি সব ওরই
হয়েছে। ফালতু মেয়েটার সাথে
যাচ্ছেতাই রকম ঝগড়া করে।
এসব বহু বছর আগের কথা। আজ রায়ানের
বিয়ে। সেই মেয়েটার সাথে যে
কফি ফেলে ওর নতুন শার্ট এর দফারফা
করেছিল। হ্যাঁ মাইশার সাথেই
রায়ানের বিয়ে।
সেদিনের পর আরও বহু ঘাত-সংঘাতের
পর কিভাবে যেন খুব কাছে চলে
আসে ওরা। একদম কাছে। নানান রকম
ঝগড়ার মধ্যেই কেটেছে দিন গুলো।
তাই আজ পাকাপাকি ভাবে
সারাজীবনের জন্য আবদ্ধ হতে যাচ্ছে
ওরা, ভালবাসার বন্ধনে নাকি
ঝগড়ার? ওরাই ভাল জানে।
রায়ান বিয়ের পোষাকে খুব অস্বস্তি
বোধ করছে। বিশেষ করে পাগড়ীটা।
মনে হচ্ছে মাথায় সবজির ডালি
নিয়ে বসে আছে। তবুও মনে মনে একটা
খুশি আর সেই মেয়েটার জন্য অপার
ভালবাসা নিয়ে অপেক্ষা করছে ও।
কখন দেখবে চশমা পরা ঝগড়ুটে
মেয়েটাকে। ইশ আজ যদি আবার একটা
কফির কাপ নিয়ে হোঁচট খেয়ে পুরো
কফিটা রায়ানের শেরওয়ানিতে
ঢেলে দিত মাইশা। তাহলে হয়ত
আবার একটা ঝগড়া উপহার পেত
বিয়েতে আসা গেস্টরা।
,
→ MD NAYEEM RAAZ
©somewhere in net ltd.
১|
১৪ ই অক্টোবর, ২০১৬ সকাল ৭:১৭
নাসের গ্যাং ০০৭ বলেছেন: সুন্দর পোস্ট।