![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
শেষ চিঠি
(একটি বিয়ের দিনেই ছিন্ন হয়ে যাওয়া প্রেমের গল্প)
--- সালাউদ্দিন রাব্বী
পরিচয় ও প্রতিজ্ঞা
মৌমিতা ও সিমান্ত।
ছোট এক শহরের প্রেমিক-প্রেমিকা। পরিচয় কলেজে, বন্ধুত্ব ধীরে ধীরে পরিণত হয় গভীর প্রেমে।
সাত বছরের সম্পর্ক, যার ভিত গড়া ছিল চিঠিতে, ফোনে, মাঝে মাঝে দেখা আর হৃদয়ের গোপন প্রতিশ্রুতি দিয়ে।
সিমান্ত ছোটবেলা থেকেই দেশপ্রেমিক।
“দেশ আগে, সব পরে” এটাই তার মন্ত্র। কলেজ শেষ করেই ভারতীয় সেনাবাহিনীতে যোগ দেয়। মৌমিতা শুরু করে স্থানীয় স্কুলে শিক্ষকতা।
সীমান্তে পোস্টিং হলেও প্রতিটি ছুটিতে ছুটে আসত গ্রামের বাড়ি, শুধুমাত্র মৌমিতার জন্য।
তাদের স্বপ্ন একটাই একদিন বিয়ের পর একসাথে সংসার করা, ছাদে বসে সন্ধ্যার চা খাওয়া, আর প্রতিদিন একে অন্যকে ‘আপন’ বলে ডাকা।
বিয়ের প্রস্তুতি ও প্রতীক্ষা
সাত বছরের অপেক্ষা এবার শেষ হবে।
সিমান্ত বলেছিল, “এইবার ছুটি নিয়ে এসেছি শুধু বিয়ের জন্য। এবার আর বিদায় নয়, এবার শুরু আমাদের নতুন জীবনের।”
বাড়ি ভরে ওঠে আলোয়, মৌমিতার হাতে মেহেন্দির রঙ, গালে লাজুক হাসি। আত্মীয়-স্বজন, বন্ধুবান্ধব সব এসে পড়েছে।
শুভ দিনটা ঠিক ৭ই মে ২০২৫। সেই দিন, যেদিন ৭ বছর আগে প্রথমবার তারা একে অপরকে “ভালোবাসি” বলেছিল।
মৌমিতা ভাবছিল, “এবার থেকে ও আর ওদের নয় শুধু আমার হবে।”
কিন্তু জীবনের গল্পগুলো কি কখনো পুরোপুরি মানুষের ইচ্ছায় চলে?
যুদ্ধের ডাক
বিয়ের আগের দিন সন্ধ্যাবেলা। সবাই ব্যস্ত, কেউ সাজসজ্জা করছে, কেউ রান্নাঘরে ব্যস্ত।
ঠিক তখনই বেজে ওঠে সিমান্তের ফোন।
সেনা সদর দফতর থেকে।
পাকিস্তান সীমান্তে হঠাৎ উত্তেজনা। যুদ্ধাবস্থা।
তিন ঘণ্টার মধ্যে সেনা ক্যাম্পে উপস্থিত হতে হবে এটা কোনো অনুরোধ নয়, দায়িত্ব।
সিমান্ত স্তব্ধ হয়ে যায়। মৌমিতা কিছু বুঝে উঠতে না পেরে ছুটে আসে।
সে বলল, “যেতেই হবে... দেশ ডাক দিয়েছে।”
মৌমিতা চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকে। চোখের কোণে জল জমে।
সিমান্ত তার হাত ধরে বলে,
“তোমার কপালে সিঁদুর তুলে ফিরবো... তুমি অপেক্ষা করো।”
পরদিন সকালে ভোরেই রওনা দেয় সিমান্ত।
বিয়ের দিন সকালে, বাড়ির উঠোনে ছিল আলো, কিন্তু হৃদয়ে ছিল অন্ধকার।
বিকেলে যুদ্ধ শুরু হয় বারুদ, গুলি, ট্যাংক, গর্জে ওঠা যুদ্ধের ময়দান।
সিমান্ত তার ইউনিটের সামনে দাঁড়িয়ে ছিল
কাঁধে জাতীয় পতাকা, হাতে অস্ত্র, বুকভরা সাহস আর হৃদয়ে একটাই ছবি মৌমিতার।
প্রথম দিনেই আঘাত হানে শত্রুপক্ষ।
সিমান্ত নিজের জীবনের বিনিময়ে বাঁচায় তার ইউনিটের আরও ১২ জনকে।
সেই রাতেই খবর আসে
"সিপাহী সিমান্ত সাহসিকতার সঙ্গে যুদ্ধ করে শহীদ হয়েছেন।"
মৌমিতার কানে তখন বাজছিল শুধু শেষ কথা:
“আমি ফিরবো... কপালে সিঁদুর তুলে।”
শেষ চিঠি ও অনন্ত অপেক্ষা
তিনদিন পর গ্রামে ফিরে আসে একটি coffin
মোড়ানো জাতীয় পতাকায়, পাশে একটি চিঠি।
"মৌমিতা,
যদি আমি না ফিরি, তবে জানবে তোমার মেহেন্দির রঙে আমি ছিলাম,
তোমার চোখের জলেই আমি ধুয়ে যাবো,
তোমার জীবনের প্রতিটি নিঃশ্বাসে আমি বেঁচে থাকবো।
কাউকে দুঃখ দিও না। তুমি হাসবে, কারণ আমার সবটুকু ভালোবাসা তোমার কাছে রেখে যাচ্ছি।
জয় হিন্দ। তোমার,
সিমান্ত”
মৌমিতা আর কোনোদিন সিঁদুর পরেনি।
কিন্তু প্রতিদিন সকালে সে ছাদে ওঠে, দুই কাপ চা বানায়
একটা নিজের জন্য, আরেকটা সিমান্তের খালি চেয়ারের জন্য।
আজও তার হাতে মেহেন্দি নেই,
তবু হৃদয়ে লেখা সিমান্তর নাম আজও মুছে যায়নি।
শেষ নয়... এ প্রেম অমর, কারণ ভালোবাসা কখনও শহীদ হয় না।
©somewhere in net ltd.
১|
০৮ ই মে, ২০২৫ সকাল ৯:৪২
রাজীব নুর বলেছেন: কবিতা লিখেছেন?