![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ন্যায়ের অপমৃত্যু ও জাতির সঙ্গে অবিচার
জাতীয় ইতিহাসের সবচেয়ে রক্তাক্ত অধ্যায় একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধ। সেই যুদ্ধের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধ গণহত্যা, ধর্ষণ, লুটপাট ও দেশদ্রোহীতার অপরাধে যাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক যাদের মৃত্যুদণ্ড কিংবা বিভিন্ন মেয়াদের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে তাদের একজন এ টি এম আজহারুল ইসলাম।
সম্প্রতি এই প্রমাণিত মানবতাবিরোধী অপরাধী কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন। তার মুক্তির পরপরই রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ স্থানে, শাহবাগ মোড়ে, এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে হাজির হয়ে নিজেকে 'মুক্ত' ও 'স্বাধীন' বলে ঘোষণার মাধ্যমে তিনি শুধু ইতিহাসের প্রতি ধৃষ্টতা প্রদর্শন করেননি, আহত করেছেন সমগ্র জাতিকে।
একজন স্বীকৃত যুদ্ধাপরাধী কীভাবে রাষ্ট্রক্ষমতার ছত্রছায়ায় কারামুক্তি পেতে পারেন, এটি একটি গুরুতর প্রশ্ন। এটি শুধু একটি মামলার বিচারিক প্রক্রিয়ার প্রশ্ন নয় এটি একটি জাতির চেতনার, আত্মত্যাগের এবং ন্যায়ের প্রশ্ন। যে রাষ্ট্র হাজারো শহীদের রক্তের বিনিময়ে স্বাধীন হয়েছে, সেই রাষ্ট্রে যদি যুদ্ধাপরাধীদের পৃষ্ঠপোষকতা চলে, তবে তা শুধু মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রতি নয়, গণতন্ত্র, বিচার ও মানবিক ন্যায়ের মূল ভিত্তির ওপরও সরাসরি আঘাত।
আমরা মনে করি, আজহারুল ইসলামের মুক্তি ও সংবর্ধনা আয়োজন একটি ভয়ঙ্কর দৃষ্টান্ত। এটি যুদ্ধাপরাধীদের উৎসাহিত করবে এবং ভবিষ্যতের প্রজন্মের কাছে একটি বিভ্রান্তিকর বার্তা পাঠাবে যেখানে অপরাধ, বিশ্বাসঘাতকতা ও বর্বরতার বিচার নয়, বরং তাদের পুনর্বাসন ও সম্মানজনক অবস্থান নিশ্চিত করা হচ্ছে।
এই ঘটনাটি আমাদের সামনে নতুন করে প্রশ্ন তোলে: বিচার কি শুধুই আদালতের কাজ, নাকি বিচারব্যবস্থা ও শাসনব্যবস্থার সম্মিলিত দায়িত্ব? আমরা চাই, এ ধরনের ঘটনা যেন আর না ঘটে। রাষ্ট্রকে তার অবস্থান স্পষ্ট করতে হবে সে কি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের, নাকি ঘাতকদের পুনর্বাসনে আগ্রহী?
জাতির পক্ষে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য এখনই প্রতিবাদ, প্রতিরোধ ও গণসচেতনতার বিকল্প নেই।
১. আইনি কাঠামো: আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন, ১৯৭৩
এই আইনের আওতায় যুদ্ধাপরাধ, গণহত্যা, মানবতাবিরোধী অপরাধ, নির্যাতন, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ ইত্যাদি অপরাধের বিচার হয়।
এই আইনে বলা আছে:
ট্রাইব্যুনালের রায় চূড়ান্ত (Final)।
তবে আসামি বা রাষ্ট্রপক্ষ চাইলে আপিল বিভাগে আপিল করতে পারে।
আপিলের রায়ও চূড়ান্ত।
২. সাজা মওকুফ বা মুক্তির সুযোগ কী আছে?
আইন অনুযায়ী তিনটি সম্ভাবনা থাকে
১) আপিলের মাধ্যমে খালাস পাওয়া:
আসামি যদি ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন, এবং সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ যদি সাক্ষ্যপ্রমাণে সন্তুষ্ট না হয়ে তাকে খালাস দেয় তাহলে সেটা আইনি খালাস, এবং তা বৈধ।
কিন্তু বর্তমান প্রেক্ষাপটে এ টি এম আজহারুল ইসলাম মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি ছিলেন এবং আপিলেও দণ্ড বহাল ছিল। সুতরাং এটি খালাস নয়।
২) রাষ্ট্রপতির ক্ষমা (Article 49, সংবিধান):
বাংলাদেশের সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৪৯ রাষ্ট্রপতিকে ক্ষমা করার ক্ষমতা দেয়।
তবে এটি বিরল, এবং সাধারণত মানবিক বিবেচনায় (মৃত্যুপথযাত্রী, দীর্ঘ কারাভোগ, বার্ধক্য ইত্যাদি) প্রয়োগ করা হয়।
৩) কারাবিধি অনুযায়ী শর্তসাপেক্ষ মুক্তি:
যদি কোনো আসামি দীর্ঘদিন সাজা ভোগ করেন, ভালো আচরণ করেন, বয়স বিবেচনায় থাকেন তাহলে সরকার বিশেষ বিবেচনায় শর্তসাপেক্ষে মুক্তি (parole বা remission) দিতে পারে।
তবে যুদ্ধাপরাধীরা সাধারণ কয়েদি নন, এবং তাদের ক্ষেত্রে এই সুযোগ প্রযোজ্য নয় বলেই ধরা হয়।
৩. বাস্তবতা ও আইনবহির্ভূত ইঙ্গিত
যদি একজন মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত যুদ্ধাপরাধী কারামুক্ত হন, এবং তার কোনো রাষ্ট্রপতির ক্ষমা বা সুপ্রিম কোর্টের রায় প্রকাশ্যে না আসে, তবে এটিকে আইনবহির্ভূত প্রভাব বা রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের ফল হিসেবে ধরা হবে।
এক্ষেত্রে প্রশ্ন উঠে:
কী প্রক্রিয়ায় মুক্তি পেলেন?
রাষ্ট্রপতির ক্ষমার আদেশ কি প্রকাশ্যে এসেছে?
মুক্তির আগে পূর্ণ দণ্ড ভোগ করেছেন কি?
এ টি এম আজহারুল ইসলামের কারামুক্তি যদি রাষ্ট্রপতির ক্ষমা বা সুপ্রিম কোর্টের কোনো পরিবর্তিত রায়ের ভিত্তিতে না হয়ে থাকে, তবে এটি আইনের চরম লঙ্ঘন, এবং রাষ্ট্রের বিচারিক ব্যবস্থার প্রতি জনগণের আস্থা ধ্বংসের সমতুল্য।
একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে ন্যায়ের বিচ্যুতি শুধু আইন নয়, জাতির আত্মমর্যাদারও অবমাননা। একাত্তরের ঘাতককে এভাবে মুক্তির সুযোগ দেওয়া মানে শহীদদের রক্তের সঙ্গে প্রতারণা।
২| ২৯ শে মে, ২০২৫ সকাল ৯:৫৩
রাজীব নুর বলেছেন: এখন দেশে যা হচ্ছে ভালো কিছু হচ্ছে না।
©somewhere in net ltd.
১|
২৮ শে মে, ২০২৫ বিকাল ৩:৪৯
অল্প বিদ্যা ভয়ংকর বলেছেন: ২৪ এর স্বাধীনতার সাধ - " মুক্তিযোদ্ধার গলায় জুতার মালা , রাজাকারের গলায় ফুলের মালা "