![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
শেখ হাসিনা: উন্নয়নের স্থপতি না গণতন্ত্রের সংকোচক?
================================================
বাংলাদেশের রাজনীতিতে শেখ হাসিনার নাম একটি অনিবার্য অধ্যায়। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা হিসেবে নয়, বরং নিজ রাজনৈতিক প্রজ্ঞা, দৃঢ়তা ও দীর্ঘ সংগ্রামের মধ্য দিয়ে তিনি নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন এক অবিসংবাদিত নেতৃত্বে। তাঁর নেতৃত্বে দেশ যেমন অসাধারণ কিছু অর্জন করেছে, তেমনি গণতন্ত্রের প্রশ্নে দেশ অনেকখানি পিছিয়েও পড়েছে। এই আলো-আঁধারির মধ্যেই শেখ হাসিনার কর্মময় জীবনের মূল্যায়ন প্রয়োজন।
রাজনীতিতে আগমন ও উত্থান
১৯৮১ সালে দলের প্রধান হিসেবে নির্বাচিত হয়ে স্বেচ্ছানির্বাসন থেকে দেশে ফিরে আসেন শেখ হাসিনা। এর আগে তাঁর পুরো পরিবার ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টে নির্মমভাবে নিহত হয়। সেই যন্ত্রণা ও রাজনৈতিক সংকটের প্রেক্ষাপটেই তিনি আওয়ামী লীগের হাল ধরেন। তাঁর সংগ্রাম ছিল দীর্ঘ, বারবার হামলা, মামলা, জেল ও ষড়যন্ত্রের মধ্য দিয়ে এগিয়ে গেছেন। ১৯৯৬ সালে প্রথমবার প্রধানমন্ত্রী হন। ২০০৯ সাল থেকে তিনি টানা চতুর্থ মেয়াদে ক্ষমতায় আছেন এটি ইতিহাসে এক অনন্য দৃষ্টান্ত।
ষড়যন্ত্র, হামলা ও প্রতিরোধের ইতিহাস
শেখ হাসিনার রাজনৈতিক জীবনের আরেকটি বড় বৈশিষ্ট্য হলো তাঁর ওপর বারবার প্রাণঘাতী হামলার ষড়যন্ত্র। সবচেয়ে ভয়াবহ ঘটনা ২০০৪ সালের ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা, যা ছিল একটি স্পষ্ট রাজনৈতিক হত্যাচেষ্টা। এ ছাড়াও বিভিন্ন সময় জঙ্গি গোষ্ঠী, সাম্প্রদায়িক শক্তি ও স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তি তাঁর ওপর এবং তাঁর সরকারের ওপর নানা রকম হামলা চালিয়েছে প্রায়ই দেশি ও বিদেশি ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে।
তবে শেখ হাসিনা কখনো পিছু হটেননি। তিনি এসব ষড়যন্ত্র ছিন্ন করে দেশকে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও উন্নয়নের ধারায় ফিরিয়ে এনেছেন।
উন্নয়নমূলক অর্জন ও মেগা প্রকল্প
শেখ হাসিনার সময় বাংলাদেশ অভাবনীয় অবকাঠামোগত উন্নয়নের সাক্ষী হয়েছে। তাঁর সরকারের অধীনে বাস্তবায়িত বা চলমান উল্লেখযোগ্য মেগা প্রকল্পগুলো হলো:
শেখ হাসিনার শাসনামলের গুরুত্বপূর্ণ মেগা প্রকল্পসমূহ:
1. পদ্মা সেতু – নিজস্ব অর্থায়নে নির্মিত দেশের সবচেয়ে বড় সেতু (২০২২ সালে উদ্বোধন)
2. মেট্রোরেল (MRT Line-6) – ঢাকায় প্রথম মেট্রোরেল (২০২২ সালে আংশিক চালু)
3. পায়রা সেতু – বরিশাল বিভাগের অন্যতম বড় সংযোগ সেতু (২০২১)
4. বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতু – যমুনা নদীর ওপর নির্মাণাধীন ডুয়েল গেজ রেলসেতু
5. রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প – দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র (রাশিয়ার সহায়তায় নির্মাণাধীন)
6. মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্র বন্দর – কক্সবাজারে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যবন্দর গড়ার প্রকল্প
7. বঙ্গবন্ধু টানেল (কর্ণফুলী টানেল) – চট্টগ্রামে দেশের প্রথম সাবমেরিন টানেল
8. ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে – ঢাকায় যানজট নিরসনের জন্য উঁচু সড়ক প্রকল্প (আংশিক চালু)
9. ঢাকা বাইপাস এক্সপ্রেসওয়ে – মাল্টি-লেন রিং রোড নির্মাণাধীন
10. হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর তৃতীয় টার্মিনাল – আন্তর্জাতিক মানের টার্মিনাল (চলমান)
11. রেললাইন সম্প্রসারণ (ডুয়েল গেজে রূপান্তর) – সারাদেশে রেল অবকাঠামোর আধুনিকায়ন
12. আইসিটি পার্ক ও হাইটেক পার্ক নির্মাণ – জেলায় জেলায় প্রযুক্তিনির্ভর কর্মসংস্থান
এই প্রকল্পগুলো শুধু অবকাঠামো উন্নয়ন নয়, বরং দেশের অর্থনীতি, কর্মসংস্থান ও আঞ্চলিক সংযোগ বাড়ানোর ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য প্রভাব রাখছে।
বিতর্ক ও ব্যর্থতার ছায়া
তবে উন্নয়নের এ চিত্রের পেছনে রয়েছে অস্বস্তিকর বাস্তবতা। দেশের গণতন্ত্র আজ প্রশ্নবিদ্ধ। ২০১৪ এবং ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ব্যাপক অনিয়ম, বিরোধী দলের দমন, গ্রেপ্তার, নির্যাতন এবং সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপের অভিযোগ রয়েছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনকে হাতিয়ার বানিয়ে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা খর্ব করা হয়েছে।
দুর্নীতির বিস্তার, ব্যাংক খাতের অব্যবস্থাপনা, রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন এবং সুশাসনের অভাব এই ক্ষেত্রগুলোতে দৃশ্যমান কোনো উল্লেখযোগ্য সাফল্য নেই। বিচার বিভাগ, প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিরপেক্ষতা নিয়েও সাধারণ মানুষের মধ্যে আস্থা সংকট রয়েছে।
নেতৃত্বের বৈশিষ্ট্য
শেখ হাসিনা একজন দৃঢ়, কৌশলী এবং বাস্তববাদী নেতা। রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে তিনি দৃঢ়চেতা, অনেক সময় আপসহীন। দল ও সরকারে তাঁর নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিতভাবেই স্থিতিশীলতা এনেছে, তবে এর ফলে রাজনৈতিক অংশগ্রহণ ও প্রতিযোগিতা অনেকক্ষেত্রে সংকুচিত হয়েছে যা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতিকর হতে পারে।
উপসংহার
শেখ হাসিনার রাজনৈতিক জীবন এক বিরল অভিজ্ঞতায় পরিপূর্ণ যেখানে সাফল্য, উন্নয়ন, ষড়যন্ত্র মোকাবিলা এবং বিতর্ক পাশাপাশি চলেছে। উন্নয়নের এই অগ্রযাত্রা নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়, তবে তা যেন হয় অন্তর্ভুক্তিমূলক ও গণতান্ত্রিক ভিত্তির ওপর।
বাংলাদেশের মানুষ চায় একটি ন্যায়ভিত্তিক, নিরাপদ, গণতান্ত্রিক এবং উন্নত সমাজ। ইতিহাস কেবল রাস্তাঘাটের হিসাব দিয়ে নয়, মানুষের অধিকার, মতপ্রকাশ ও অংশগ্রহণের সুযোগকে মূল্যায়ন করেই একজন রাষ্ট্রনায়ককে বিচার করবে।
✍ সালাউদ্দিন রাব্বী
২| ১৫ ই জুলাই, ২০২৫ রাত ১২:০৬
রাকু হাসান বলেছেন:
সব কিছু ছাপিয়ে হাসিনা একজন খু*নি,ফ্যাসিস্ট,স্বৈরাচার । তবে হ্যা তিনি উন্নয়নমূলক কাজ ভালো করেছেন , তা যা দলের নেতাকর্মীরা খেয়েছেন সেটার বিচার করতে পারলে,সুশাসন থাকলে ঠিকে যেত।
৩| ১৫ ই জুলাই, ২০২৫ রাত ১২:৪৯
মাথা পাগলা বলেছেন: অস্বীকার করার উপায় নেই, হাসিনার আমলে দেশের অনেক উন্নয়ন হয়েছে। সেটা অন্য কেউ পারতো কিনা, তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ আছে। তবে উন্নয়নের সাথে দুর্নীতিও সমান হারে বাড়ে। প্রকল্প যত বড়, ভাগ-বাটোয়ারাও তত বেশি। বর্তমান বাস্তবতায়, হয়তো সবকিছুতেই নেতিবাচক দিকটাই আগে চোখে পড়ে - সেজন্য দুঃখিত।
©somewhere in net ltd.
১|
১৪ ই জুলাই, ২০২৫ রাত ১১:৩৯
ঊণকৌটী বলেছেন: বুঝবে জনগন ,যখন বুঝবে তখন আর কিছুই করার থাকবেনা