নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সালাউদ্দিন রাব্বী

রাবব১৯৭১

সালাউদ্দিন রাব্বী

রাবব১৯৭১ › বিস্তারিত পোস্টঃ

ধর্মভিত্তিক রাষ্ট্রের সীমাবদ্ধতা ও বাংলাদেশের অনিবার্য বাস্তবতা।

২৫ শে নভেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৫৩

ধর্মভিত্তিক রাষ্ট্রের সীমাবদ্ধতা ও বাংলাদেশের অনিবার্য বাস্তবতা।
----------------------------------------------------------------
একটি জাতি তার নিজস্ব ভূখণ্ড, ভাষা, সংস্কৃতি ও আত্মমর্যাদার জন্য লড়াই করলে সেই স্বাধীনতার দাবি ইতিহাসে বৈধতা পায়। মানুষের ওপর যখন অন্যায়, বৈষম্য, দমন-পীড়ন ও রাজনৈতিক অধিকারহরণের বোঝা চরমে পৌঁছে যায় তখন তারা স্বাধীনতার জন্য উঠে দাঁড়ায়। এটি মানবিক অধিকার, এটি স্বাভাবিক প্রবৃত্তি। কিন্তু যখন স্বাধীনতার ভিত্তি হিসেবে কোনো ধর্মকে দাঁড় করানো হয় তখন সেই রাষ্ট্রচিন্তা না ইতিহাসে স্থায়ী হয়, না সমাজে শান্তি আনে, না ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারে।
১৯৪৭ সালে ভারত বিভাজনের মাধ্যমে পাকিস্তান একটি ধর্মভিত্তিক রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। এটি ছিল মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠের জন্য একটি দেশ তৈরির রাজনৈতিক প্রকল্প। কিন্তু শুরু থেকেই এই ধারণা বাস্তবতার পরীক্ষায় টেকেনি। ধর্ম এক হলেও জাতিগত বৈচিত্র্য, ভাষা, অঞ্চল ও রাজনৈতিক অধিকার বঞ্চনার কারণে মাত্র ২৪ বছরেই পাকিস্তান ভেঙে যায়।
এর চূড়ান্ত রূপ দেখা যায় ১৯৭১ সালে যখন পৃথিবীর ইতিহাসে অন্যতম ভয়াবহ হত্যাযজ্ঞ সংঘটিত হয়। মাত্র নয় মাসে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসররা ৩০ লাখ নিরস্ত্র বাঙালিকে হত্যা করে, ২ লাখ মা-বোনকে ধর্ষণ করে, এবং ৫০ লাখ বাঙালিকে স্থায়ীভাবে পঙ্গু করে দেয়। জাতিগত নিধন ও নারীর ওপর সুপরিকল্পিত যৌন সহিংসতা ছিল পাকিস্তানের রাষ্ট্র-পরিকল্পিত অস্ত্র। বাঙালিরা ধর্ম নয় জীবন, মর্যাদা, ভাষা, মানবাধিকার ও স্বাধীনতার জন্য লড়াই করেছে। তাই ১৯৪৭ ও ১৯৭১ দুটি ইতিহাসই একই শিক্ষা দেয়: ধর্মভিত্তিক রাষ্ট্র কখনো স্থায়ী হতে পারে না, বরং নৃশংসতার জন্ম দেয়।
দুঃখজনক হলেও সত্য স্বাধীন বাংলাদেশের মাটিতে আজও এমন কিছু গোষ্ঠী রয়েছে, যারা পাকিস্তানি রাষ্ট্রচিন্তার অনুসারী হয়ে ধর্মকে রাষ্ট্র পরিচালনার হাতিয়ার বানাতে চায়। তারা প্রচার করে, রাষ্ট্র নাকি শুধুই মুসলমানদের; অন্য ধর্মের নাগরিকরা দ্বিতীয় শ্রেণির হিসেবে বাঁচবে বা দেশ ছাড়তে বাধ্য হবে। এ মানসিকতা সংবিধানবিরোধী এবং মুক্তিযুদ্ধের মূল ভিত্তিকে অস্বীকার করে।
বাংলাদেশ একটি বহুধর্মের, বহু-জাতির, বহু-সংস্কৃতির দেশ এটাই আমাদের গর্ব। মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টানসহ সব ধর্মাবলম্বী মানুষ এখানে সমান অধিকার নিয়ে জন্মায়। সংবিধান তাই স্পষ্টভাবে বলে রাষ্ট্র কোনো ধর্মকে বিশেষ সুবিধা দেবে না এবং ধর্মের ভিত্তিতে বৈষম্য তৈরি করবে না। ধর্ম ব্যক্তিগত অধিকার; রাষ্ট্র পরিচালনার ভিত্তি হবে মানবাধিকার, ন্যায়বিচার ও সমঅধিকার।

ধর্মকে রাজনৈতিক মতাদর্শে রূপান্তরের প্রবণতা যে কত বড় বিপর্যয় ডেকে আনে তা পাকিস্তান, আফগানিস্তান, ইরাক, সিরিয়া অসংখ্য দেশের উদাহরণেই স্পষ্ট। যেখানে রাষ্ট্র ধর্মের ওপর দাঁড়ায়, সেখানে ব্যক্তির অধিকার সংকুচিত হয়, সংখ্যালঘুদের অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়ে, নারী অধিকার দমন হয়, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা চাপা পড়ে এবং সমাজে স্থায়ী বিভাজন জন্ম নেয়।

স্বাধীন বাংলাদেশের লক্ষ্য ছিল একটি মানবিক রাষ্ট্র যেখানে ধর্ম মানুষকে বিভক্ত করবে না, বরং সব নাগরিক সমান মর্যাদা নিয়ে বাঁচবে। তাই ধর্মকে সম্মান করা হবে; কিন্তু রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা, আইন, প্রশাসন বা রাজনীতিকে কখনোই ধর্মীয় নিয়ন্ত্রণে আনা যাবে না। এটি রাজনৈতিক অবস্থান নয় এটি বাংলাদেশের জন্মের অপরিহার্য ভিত্তি।
ধর্ম আমাদের ব্যক্তিগত পরিচয়; রাষ্ট্র আমাদের সামষ্টিক পরিচয়। এই দুইকে গুলিয়ে ফেললে রাষ্ট্র বিপন্ন হয়, সমাজ ছিন্নভিন্ন হয়, আর জাতি অগ্রযাত্রা হারায়। পাকিস্তান এই ভুলের শ্রেষ্ঠ উদাহরণ; বাংলাদেশ সেই ভুলকে সংশোধনের গৌরবময় ইতিহাস।

এই সত্য আমরা ভুলে গেলে চলবে না।

--- সালাউদ্দিন রাব্বী
সংখ্যালঘু বাচাও আন্দোলন, বাংলাদেশ
১২৭ মতিঝিল বাণিজ্যিক এলাকা, ঢাকা–১০০০, বাংলাদেশ

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.