নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

রাবীব আমিন

নিচে তাকিয়ে থাকার মজা হল কাওকে দেখতে হয় না, আবার কাওকে দেখা দিতে হয় না। লুকিয়ে থাকতে চাই বলে উপরে তাকাই না। একদিন তাকাবো, আর সব কিছু দেখে নেব। চেনা মানুষ দেখতে দেখতে আজ ক্লান্ত আমি, বড় বেশি ক্লান্ত। facebook.com/rabib5

রাবীব আমিন

রাবীব আমিন › বিস্তারিত পোস্টঃ

মায়াবতী

২৬ শে জানুয়ারি, ২০১৪ বিকাল ৫:৪১

আপনার নাম কি শামিম?



আমি প্রশ্নকর্তার দিকে তাকালাম। তাকিয়ে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলাম। রবীন্দ্রনাথ যদি এই মেয়েকে দেখতেন তাহলে নির্ঘাত একটা কালজয়ী কবিতা লিখে ফেলতেন। আমি কবিতা লিখতে পারি না। আমি হা করে তাকিয়ে থাকলাম।



মেয়েটার সুন্দর চেহারা। কিছু কিছু মেয়ে আছে ন্যাচারালি সুন্দর। এই মেয়েটাও সেই দলে। মাথার চুল হালকা লালচে। আরেকটু লালচে হলে বিদেশিনী বলে চালিয়ে দেওয়া যেত। চুল পিছনে টেনে পণিটেইল করে বাঁধা। পণি হল একধরনের ঘোড়া। আর টেইল হল লেজ। ঘোড়ার লেজের মত করে যে চুল বাধা হয় তাকে পণিটেইল বলে।



তবে এই মেয়েটাকে বলা যাবে না তার চুল ঘোড়ার লেজের মত লাগছে। কারন মেয়েটা রাগী। রাগী মেয়েরা চোখে চশমা পড়ে। শুধু চশমা পড়ে না চশমা নাকের উপর দিয়ে মাস্টারনী মাস্টারনী ভাব নিয়ে থাকে। এই মেয়েটাও চোঁখে চশমা পড়ে আছে। কালো ফ্রেমের চশমা। এবং চশমা যথারীতি নাকের উপর রাখা।

এবং মেয়েটা রেগে আছে।



আমি চশমার উপর দিয়ে মেয়েটার চোঁখ দেখার চেষ্টা করলাম। চোঁখে খুব সুক্ষভাবে কাজল দেয়া হয়েছে। কাজল দেওয়ার জন্য মেয়েটা যথেষ্ট সময় নষ্ট করেছে। পরনে খুব সাদামাটা একটা সালোয়ার-কামিজ। সাধারাণ পোষাকেই মেয়েটাকে অসাধারণ অপুর্ব লাগছে।



মেয়েটি আমার ভ্যাবাচ্যাকা খাওয়া চেহারা দেখে আবার প্রশ্ন করল,



' আমি কি আপনার সাথে একটু কথা বলতে পারি?



আমি বসে আছে স্টেশনের প্লাটফরমে বানানো বেদিতে। ট্রেনের অপেক্ষা করছি গত ত্রিশ মিনিট ধরে। বাংলাদেশের ট্রেন কখনই সময় মত আসে না। এইটা হল সাধারাণ জ্ঞান। আমি সাধারাণ জ্ঞান জেনে অত্যন্ত ধৈর্য সহকারে অপেক্ষা করছি।



তবে মনে হচ্ছে আমার সামনে দাঁড়ানো মেয়েটার ধৈর্যচ্যুতি হয়েছে। এবং তার রাগ চক্রবৃদ্ধি হারে বাড়ছে। আমি যদি এখন বলি, 'না আপনি আমার সাথে কথা বলতে পারেন না' তাহলে নির্ঘাত সে তার হাতের স্পর্শকাতর ফোনটা ছুড়ে আমার মাথা ফাটিয়ে ফেলবে।



আমি মাথা বাঁচানোর জন্য দ্রুত উঠে তার পাশে মাথা নিচু করে দাঁড়ালাম।



এই মেয়েটাকে আমি চিনি। যদিও আমি এর আগে একে কখনই সামনা-সামনি দেখি নি। চিনি বলাটা বোধহয় ঠিক হল না। এই মেয়েটার সাথে সাথে প্রথম পরিচয় ফেসবুকে। তিন মাস আগে। তার পর দিন রাত চ্যাট করতে করতে কখন যে এই মেয়েটার প্রেমে পড়ে গিয়েছি আমি নিজেই বুঝতে পারি নি।



এইত সেদিন হঠাৎ করেই একটা ফোন। আমার ফোন নাম্বারটা কোত্থেকে কোত্থেকে পেয়ে আমাকে কয়েকটা গান শুনিয়ে দিল। আমি এবার আর প্রেমে পড়লাম না একেবারে ভালবাসায় হাবুডুবু খেতে লাগলাম। ডুবে মরার আগেই আকারে ইঙ্গিতে তাকে ভালবাসার কথা জানানোর চেষ্টা করলাম।



সে চেষ্টা একেবারেই মাঠে মারা গেল। সেও আকারে- ইঙ্গিতে আমাকে বুঝিয়ে দিল এটা সম্ভব নয়। আমার প্রচন্ড রাগ হল। সুধু তার উপর না পুরো পৃথিবীরর উপর রাগ হতে লাগল। প্রচন্ড রাগ নিয়ে আমি ফোন-টোন বন্ধ করে দুই দিন মেসের বিছানায় শুয়ে থাকলাম। শুয়ে শুয়ে সিদ্ধান্ত নিলাম, আমি সংসারী হব। গৌতমবুদ্ধ প্রচন্ড বৈরাগ্যে সংসার ছেড়ে সন্যাসী হয়েছিলেন। আমি ছ্যাকা খেয়ে গৃহী হবার জন্য ব্যাগপত্র গুছিয়ে স্টেশনে এসে বসলাম। এমন সময় তার আগমন আমাকে ভ্যাবাচ্যাকা খাইয়ে দিল।



আমি পূর্ববর্তী রাগের রেশ গলায় ঢেলে জিজ্ঞেস করলাম,



- কেন এসেছ?



সেও গলায় সমপরিমাণ রাগ ঢেলে জবাব দিল,



আমি আপনার জন্য আসি নি। আমার এক বন্ধু আসবে এই ট্রেনে তাকে রিসিভ করতে এসেছি।



তবে সে তার রাগের সাথে সামান্য অভিমান মিশিয়ে দিল। আমি যখন তার অভিমানের সুক্ষ সংকেত উদ্ধারে ব্যাস্ত তখন সে বলল,



জানেন, আমি ৮ টাকার রিক্সা ভাড়া ১৫ টাকা দিয়ে এসেছি।



একথা শুনে আমি ফিক করে হেসে ফেললাম। হাসি তার ঠোটেও সংক্রামিত হতে হতে সে মাথা নিচু করে প্রচন্ড লজ্জ্বায় লাল হতে হতে বলল,



জানেন আমি শুধু রিক্সায় উঠে এই দোয়া করছিলাম যেন আজকে ট্রেন লেট হয়। আর আপনাকে পেয়ে যাই।



কথাগুলো তার মুখ থেকে বেড়িয়ে বোধহয় আমার আমার হৃদয় চিড়ে সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ছিল। ঠিক সদ্য প্রেমে পড়া বালকের হৃদয়ের মত আমার হৃদয় ভালবাসায় কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যাচ্ছিল। আমি আর কিছু বলি নি। কিছু বলার দরকার ও ছিল না। দুটি অপূর্ণ হৃদয় যখন পাশাপাশি থেকে ভালবাসায় পূর্ণ হয়ে যায় তখন কথা মুখের ভাষায় হয় না মনের আবেগে হয়।



ট্রেন চলে আসল। আমি ট্রেনে উঠার সময় পিছু ফিরে দেখলাম সে একদৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। চশমার ফ্রেমের আড়ালে তার চোঁখদুটো আকর্ষিক জলবর্ষণের জন্য তৈরী। আমি চোঁখ ফিরিয়ে নিলাম। জলভরা চোঁখের দিকে তাকালে আমার চোঁখেও জল আসে। ট্রেন ভর্তি মানুষের সামনে চোঁখে জল আসা কোন কাজের কথা না।



ট্রেন ছেড়ে দিয়েছে। হঠাৎ করেই আমি সিট ছেড়ে দৌড়ে দরজায় গিয়ে দাড়ালাম। দেখি সে এখনো প্লাটফরমে দাড়িয়ে আছে। আমি তার দিকে তাকিয়ে ডাক দিলাম। আমাকে দেখেই সে হেসে ফেলল। কাউকে হারিয়ে ফেলে ফিরে পাওয়ার মাঝে যে সুখ তার হাসিতে সেই সুখ দেখা যাচ্ছিল।



ট্রেন চলতে শুরু করেছে। আর আমি এক বগি থেকে দৌড়ে আরেক বগির দরজায় যাচ্ছি শুধু তার সেই মোহনীয় হাসি দেখার জন্য। আর সে? আমার পাগলামি দেখে হেসেই যাচ্ছে মেয়েটা। হেসেই যাচ্ছে



গল্পটি পূর্বে ফেসবুকে প্রকাশিত https://facebook.com/rabib5

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ০২ রা মার্চ, ২০১৪ দুপুর ১২:০৩

বৃষ্টিধারা বলেছেন: :#) :#)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.