নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

রাবীব আমিন

নিচে তাকিয়ে থাকার মজা হল কাওকে দেখতে হয় না, আবার কাওকে দেখা দিতে হয় না। লুকিয়ে থাকতে চাই বলে উপরে তাকাই না। একদিন তাকাবো, আর সব কিছু দেখে নেব। চেনা মানুষ দেখতে দেখতে আজ ক্লান্ত আমি, বড় বেশি ক্লান্ত। facebook.com/rabib5

রাবীব আমিন

রাবীব আমিন › বিস্তারিত পোস্টঃ

রাইশা

২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ বিকাল ৫:৫১

কোত্থেকে একটা খুব পরিচিত গন্ধ নাকে আসছে রফিক সাহেবের। খুব মিষ্টি সুগন্ধির মত। একবার করে এসেই আবার হারিয়ে যাচ্ছে। আজ আবার প্রচন্ড গরম পড়েছে। একে তো রফিক সাহেবের গরম সহ্য হয় না তার উপর ট্রেনের কামরায় বসে আছেন। কপাল বেয়ে একফোটা ঘাম চশমার ফাকে ঢুকতেই আঙ্গুল দিয়ে ঘাম মুছার ব্যার্থ চেষ্টা করতে করতে সার্টের একটা বোতাম খুলে দিলেন তিনি। ট্রেন ইতিমদ্ধে ছেড়ে দিয়েছে। হাপ ছেড়ে বাচলেন, এবার যদি একটু বাতাস পাওয়া যায়।

হটাৎ রিনরিনে গলার চেচামেচি শুনে পেছন ফিরে তাকালেন । ভয়ংকর রকমের এক সুন্দরী তরুণীর সাথে ইয়ামোটা এক মহিলার ঝগড়া লেগেছে। তরুণী চোখ মুখ লাল করে মহিলাকে বলছে

"দেখুন ১৮ w আমার সিট , আমার কাছে টিকেট আছে। "

মহিলাও কম যায় না , গলার রগ ফুলিয়ে চিৎকার করে বললেন "এইটা আমার সিট, আমি আগে এসেছি। আমি এই সিট ছাড়বনা " মহিলার সাফ জবাব শুনে আকাশ থেকে পড়ে রাইশা । আরেকবার জ্বলন্ত দৃষ্টিতে মহিলাকে ভস্ম করতে করতে রফিক সাহেবের সামনের সিটে বসে পড়ে । বসেই বলে ওঠে " দেখেছেন কেমন দাজ্জাল মহিলা কিছুতেই সিট ছাড়লনা । আপনি কোথায় যাবেন? " রফিক সাহেবের দিকে প্রশ্নটা ছুড়ে দিয়েই ব্যাগ হাতরাতে শুরু করে রাইশা । " কিছু বললে ? " রফিক সাহেব অন্যমনস্ক । এখনো তার মাথায় সেই গন্ধটা ঘোরাফেরা করছে। কিছুতেই খুজে পাচ্ছেন না গন্ধটা কিসের। " বলি কোথায় নামবেন?" রাইশার গলায় হতাশা । "রংপুর, তুমি?" "বাহ! আমিও রংপুর।" এইবার পুরপুরি হতাশা ঝরে রাইশার গলায় । মনে মনে ভাবছিল বুড়োটা সামনের কোন ষ্টেশনে নামলে জানালার পাশের সিটটায় বসে বাকি রাস্তাটা আরামসে পার করে দিবে। কিন্তু সে আশায় গুড়ে বালি। হতাশ হয়েই ব্যাগ থেকে মোটা দাতের চিরুণী বের করে চুল আচরাতে শুরু করে রাইশা । এইবার ভালোকরে মেয়েটির দিকে নজর দেন রফিক সাহেব । মেয়েটির বয়স আন্দাজ ১৯-২০ হবে। তার নিজের মেয়ে থাকলে এত বড়ই হত। লম্বা একমাথা চুল কি টানাহেচড়া করেই না আচঁরাচ্ছে মেয়েটা । 'এভাবে চুল আচরালে শেষ বয়স এ মাথায় একটাও চুল থাকবে না ' কথাটা বলতে গিয়েও থেমে গেলেন তিনি। মেয়ের বয়সী একজনের সাথে এইরকম রশিকতা করা যায় না ।

"কিসে পড় ?"

"ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে, জিওগ্রাফিতে থার্ডইয়ার শেষ করলাম। কাল থেকে গ্রিস্মের ছুটি শুরু তাই আজ বাসায় যাচ্ছি। " এক নিস্বাসে কথাগুলো শেষ করেই দুই হাতে কায়দা করে চুলে পনিটেইল বেধে ফেলল। কথার কি জবাব দিবেন খুজে পান না রফিক সাহেব। হালকা একটা হাসি ঠোটের কোনে ঝুলিয়ে চোখ থেকে চশমা নামিয়ে মুছতে শুরু করেন। আরেকটা ষ্টেশনে থামে ট্রেন। ফোন বেজে ওঠে। না রফিক সাহেবের না রাইশার। "হ্যালো আম্মি ।.. না এখনো পৌছায় নি

, না না কোন সমস্যা নাই । না ঠিক আছে আমি সময় মত পৌছে যাব। বললামতো পারব। " ফোনটা কেটে দিয়ে দেখে বুড়োটা হা করে ওর দিকে তাকিয়ে আছে। অনেকটা কৈফিয়ত দেওয়ার সুরে বলে রাইশা। "আম্মুটা যে কি খালি টেনশন করে। আচ্ছা আপনার কি আমাকে দেখে মনে হয় আমি একটা পিচ্চি মেয়ে?" "তুমি তো এখনো পিচ্চি ।" বলে হা হা করে হেসে ওঠেন রফিক সাহেব। "আপনি আমাকে পিচ্চি বললেন?" কপট রাগ ঝরে পড়ে রাইশার গলায়। "না না আমি সেটা মিন করি নি।" রফিক সাহেব অনেকটা অজুহাত দেন এবার । "আসলে আমি বলতে চেয়েছি বয়স যতই হোক না কেন তোমার মাঝে একটা ছেলেমানুষি ভাব আছে।" রাইশা মুচকি হাসি দেয়। "জানেন সবাই এই কথায় বলে। আমি নাকি পিচ্চি বুড়ি।" বলতে বলতে খিলখিল হাসিতে ভেঙ্গে পড়ে রাইশা। হটাৎ রফিক সাহেবের কেমন যেন মনে হতে থাকে। মনে হয় অনেক পুরানো কিছু ঘটনার পুনুরবৃৃত্তি হচ্ছে। স্মৃতি হাতরাতে শুরু করেন তিনি। হ্যা কথা গুলো তিনি আরেকজনকে বলেছিলেন। সেই একজন কে যাকে কখনো ভোলা যায় না , ভুলতে পারেন নি । হটাৎ করেই উল্টো দিক থেকে বাতাস বইতে শুরু করে। ট্রেন ছেড়ে দিয়েছে। আবার সেই গন্ধ পান তিনি। মনে পড়েছে সব মনে পড়েছে তার । এই সেই স্মেল। একি কখনো ভোলা যায়। বুকের বাম পাশটায় ব্যাথা অনুভব করেন । ডান হাত দিয়ে বুক খামচে ধরে অস্ফুট শব্দ করে ওঠেন । "আঙ্কেল কি হয়েছে কথা বলেন?" চিৎকার করে ওঠে রাইশা। "পানি খাবেন?" পানির বোতল মুখে ধরে খাওয়ানোর চেষ্টা করে রাইশা। রফিক সাহেব খামচে ধরে রাইশার হাত। অতিকষ্টে প্রশ্ন করেন, তোমার নাম কি মা?

"রাইশা, আমার নাম রাইশা।" হাহাকার করে ওঠে রাইশার গলা।

রফিক সাহেবের চোখ ঝাপসা হয়ে আসে। তিনি আকুল হয়ে জিজ্ঞেস করেন "তোমার মায়ের নাম কি ?" পাশ দিয়ে সশব্দে একটা ট্রেন চলে যায়। হ্যা মিলে যাচ্ছে । সেই চেহারা , সেই চোখ, সেই চুল, সেই গন্ধ। কানে বাজতে থাকে " আমার হাতটা শক্ত করে ধরতো । খুব কষ্ট হচ্ছে তোমার? আমি আছিতো সারাজীবন থাকব। কোথাও যেতে দিব না আমাকে ছেড়ে।" কন্ঠটা ধিরে ধিরে মিলিয়ে যেতে থাকে। রফিক সাহেবের চোখ থেকে একফোটা জল গড়িয়ে পড়ে রাইশার হাতে। রাইশাকে ধরা হাতটা ধীরে ধীরে ঠান্ডা হতে থাকে

। ।



আমার ফেসবুক

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ৮:৪৯

চতুষ্কোণ বলেছেন: ভাল লাগলো।

২| ২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ১০:৫৫

ক্লান্ত তীর্থ বলেছেন: নতুন প্লটে লিখেন ভাই!


ভালো লেগেছে! :)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.