নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

রাবীব আমিন

নিচে তাকিয়ে থাকার মজা হল কাওকে দেখতে হয় না, আবার কাওকে দেখা দিতে হয় না। লুকিয়ে থাকতে চাই বলে উপরে তাকাই না। একদিন তাকাবো, আর সব কিছু দেখে নেব। চেনা মানুষ দেখতে দেখতে আজ ক্লান্ত আমি, বড় বেশি ক্লান্ত। facebook.com/rabib5

রাবীব আমিন

রাবীব আমিন › বিস্তারিত পোস্টঃ

অর্ক

২২ শে নভেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৪:৩৪

বাম পকেটে সাতটা বাবা ট্যবলেট নিয়ে রাস্তায় ঘুরে বেড়াচ্ছি। বাবা ট্যাবলেটের মালিক ইয়াবা সম্রাট আক্কাস ভাই। আমার কাজ হল জিনিস জায়গা মত পৌছে দেওয়া। জিনিস ডেলিভারি দিলে আমি পাব দশ হাজার টাকা। পাঁচ হাজার আমার পাঁচ হাজার আক্কাস ভাই এর। টাকাটা আমার দরকার। একটা চায়না কালার টিভি কম দামে পাওয়ার অফার শুনেছি ইউনুসের কাছে। সুযোগে কঠিন দাঁও মারতে হবে।

ইউনুসের সাথে আমার পরিচয় পার্কে ফেরিকরা চা খেতে গিয়ে। ইউনুসের মায়ের চায়ের হাত ভাল। পার্কে গেলেই আমি ইউনুসকে খুজে বের করে চা খাই।

একদিন চা খেতে গিয়ে দেখি ব্যাটার চোখ লাল। কিছুক্ষন আগে কান্নাকাটি করেছে বোঝা যাচ্ছিল।

আমি জিজ্ঞেস করলাম, 'কিরে ব্যাটা কান্দিস ক্যান? কি হইসে?'

ইউনুস টলমল চোখে যা বলল তার মর্ম হল ইউনুসের বাপ গার্মেন্টস এ কাজ করে। গেল সপ্তাহে ইউনুসের বাপের চাকরী চলে গিয়েছে। চাকরী চলে যাওয়ায় পর দেখা গেল ইউনুসের বাপের দেনা তিন হাজার। ঘরভাড়া বারশো আর বিদ্যুত বিল তিনশ টাকা বাকি। বাকি শোধ করার উদ্দেশ্যে ইউনুসের বাপ তাদের চায়না কালার টিভি বিক্রয় করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। পাঁচ হাজার হলেই টিভি ছেড়ে দিবে।

আমি সেইদিন ই মনে মনে পাঁচ হাজার টাকা দিয়ে একটা আধা নতুন কালার টিভি কিনে ফেলা ছক করে ফেললাম।

******

আমি এখন এলেবেলা নামের বাড়ীর সামনে দাড়িয়ে আছি। বাড়ীর ভিতরে কিছু দেখা যাচ্ছে না। কারন সামনে মস্ত লোহার গেট। আমি মস্ত গেটের কোনে উকি দিয়ে পিচ্চি গেট খুজে বের করলাম।

গেটের দারোয়ান চিমশা যাতীয় মানুষ। দৈর্ঘ্যে বড় জোর পাঁচ ফুট হবে সেই তুলনায় প্রস্থ অতি নগন্য। আমাকে দেখেই ক্যাটক্যাট করে বলে উঠল,

'কাকে চাই?'
আমি লোকটাকে কাছে গিয়ে ফিসফিস করে বললাম, 'জিনিস আছে। ইয়াবা সম্রাট আক্কাস ভাই পাঠাইছেন।'

আক্কাস ভাই এর নাম শুনে দারোয়ানের ক্যাটক্যাটে গলা তেলেতেলে হয়ে গেল। তেলতেলে গলায় বলল, জিনিস আর উপরে যাইব না, বড় সাহেবের নিষেধ আছে। '

আমি চোখমুখ ভয়ংকর করে বললাম, 'হারামজাদা, আমি উপরে না গেলে তুই ওপারে যাবি।'

ইংগিতে আমার পকেটে ঢোকানো হাত দেখালাম। আমার পকেটে একটা লাল কালির কলম আছে। আপাতত লাল কালির কলম একটা মারাত্তক অস্ত্রের অভিনয় করছে।

চিমশা দারোয়ান আমাকে সোজা দুই তলার ড্রইং রুমে পাঠিয়ে দিল।

ড্রয়িংরুমে ঢুকে আমি তব্দা খেয়ে গেলাম। ড্রয়িংরুমের সোফায় অসম্ভব রূপবতী এক তরুনী বসে আছে। তরুনীর বাম হাতে মুড়িয়ে গোল করে রাখা কিছু টাকা। ডান হাত সোফার হাতলে রাখার পর ও অল্প অল্প কাঁপছে।

তরুনী আমাকে হাতের ইশারায় বসতে বলল। সুন্দরী মেয়েরা অপরিচিত মানুষের সাথে হাতের ইশারায় কথা বলতে পছন্দ করে। এতে তাদের সৌন্দর্যের গরিমা প্রকাশ পায়। আমি টুক করে সামনের সোফায় বসে পড়লাম।

রূপবতী তরুনী এইবার আমার দিকে গোল করে মোড়ানো টাকার বান্ডিলটা এগিয়ে দিয়ে বলল, 'এইখানে দশ হাজার টাকা আছে। টাকা নিয়ে আমার বাবা দিন।'

বাবা দিন কথাটা শুনে আমার হাসি পেয়ে গেল। কেউ যদি বাবা দিন বলে তাহলে মনে হয় আমার খুব আপন একটা জিনিশ দরকার। এই মেয়ের কাছে ইয়াবা তার বাবার থেকেও বেশি দরকারি জিনিশ।

আমি ট্যাবলেটের প্যাকেট বের তরুনীর কম্পমান হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললাম, 'রাতুল ভাই এর জন্য নিজের জীবন নষ্ট করবেন না। যে মানুষটা আপনাকে ধোঁকা দিতে পারে সে মানুষ কখনোই আপনাকে ভালবাসতে পারে না।'

রূপবতী তরুণী তব্দা খেয়ে জিজ্ঞেস করল, 'আপনি রাতুলের কথা জানলেন কি করে?'

আমি ইংগিতে টেবিলের উপরে রাখা সাদা কাগজটি দেখিয়ে দিলাম। কাগজে ক্ষুদে ক্ষুদে ইংরেজি অক্ষরে লেখা 'রাতুল আই হেইট ইউ।'

রূপবতী তরুণী ঝাড়া তিরিশটা সেকেন্ড চোখের পলক না ফেলে আমার চোখের দিকে তাকিয়ে রইল। তারপর চোখ ফিরিয়ে নিয়ে বলল, 'আপনার কাজ শেষ হয়েছে, আপনি এখন আসতে পারেন।'

আমি সোফা ছেড়ে উঠে পড়লাম।

-'এইযে শুনুন, আপনার নামটা বলে যান।'

-'আমার নাম অর্ক। রাশেদুল ইসলাম অর্ক।'

'আপনি আমার নাম জিজ্ঞেস করলেন না?'

-'না। সুন্দরী মেয়েদের নাম দিয়ে বেধে ফেলা ঠিক না। তাতে সুন্দরের কমতি হয়ে যায়। সুন্দরীরা হবে আকাশের মত বিশাল। তাদের বিভিন্ন প্রেমিক থাকবে। বিভিন্ন প্রেমিকেরা বিভিন্ন আদরের নামে ডাকবে।'

'মিস্টার অর্ক। আপনি কি জানেন, আপনি অনেক বেশি কথা বলেন? আপনি চলে যান। আর কখনো এই বাসায় আসবেন না। আমি আক্কাস ভাই কে বলে দিব যেন পরেরবার অন্য কাওকে পাঠায়।'

আমি দরজার দিকে হাটা দিলাম। দরজায় দাড়িয়ে বললাম, 'আমি কি আপনাকে একটা রিকুয়েস্ট করতে পারি?'

'বলুন?'

-'আপনি রাতুল ভাইকে ফোন দিন। ফোন দিয়ে বলুন, "রাতুল আমি তোমাকে ক্ষমা করে দিলাম।"'

রূপবতী তরুনী হাতের কাছে রাখা কাঁচের গ্লাস আমার দিকে ছুড়ে দিয়ে চিৎকার করে বলল, 'আই সেইড গেট লস্ট।'

নেশাগ্রস্থ মানুষের হাতের নিশানা ঠিক হয় না। গ্লাস গিয়ে পড়ল পাশের দেয়ালে। আমি মাথা বাঁচিয়ে এলেবেলা থেকে পালিয়ে আসলাম।

******

আমার সামনে ইউনুসের বাবা বসে আছে। সে একমনে টাকা গুনছে। ইতিমধ্যে দুইবার গোনা হয়েছে। এইবার দিয়ে তৃতীয় বার গোনা শুরু হয়েছে। প্রত্যেকটা টাকা গোনার সময় সে মুখের থুতু ব্যবহার করছে।

আমি বললাম, 'আপনি কি জানেন, টাকায় কত রোগ জীবানু লেগে থাকে? আপনি অসুস্থ হয়ে পড়বেন।'

'গরিবের আবার রোগ জীবানু। কি যে বলেন অর্ক ভাই। তবে আপনি আমার এই টিভিটা কিনে খুব উপকার করলেন। শালার টিপু মেকার কয় এই টিভি নাকি চায়না মাল। দুই হাজার টাকার বেশি এক টাকাও কোথাও পাওন যাইব না।'

আমি হাসিমুখে বললাম, 'অবশ্যই চাইনার মাল না। একদম জেনুইন মাল। আমার কাছে পাঁচ হাজার টাকাই আছে। বেশি থাকলে আপনাকে আরো বেশি টাকা দিতাম।'

ইউনুসের বাপ খুশি হয়ে পাশে চোখমুখ শুকনো করে দাড়িয়ে থাকা ইউনুসের দিকে তাকিয়ে খেঁকিয়ে উঠল, 'হারামজাদা চাইয়া চাইয়া দেখস কি? জলদি টিভির বাক্সে টিভি ভর। ভইরা টাইট দিয়া বান্ধ। অর্ক ভাই অনেক দূরে নিয়া যাইব।'

ইউনুস চোখমুখ করুন করে টিভি প্যাক করল। লাইলনের দড়ি দিয়ে শক্ত করে বাধল। শেষ বাঁধন দেওয়ার সময় তার চোখ দিয়ে একফোঁটা জল বাক্সের উপর গড়িয়ে পড়ল। আমি দেখেও না দেখার ভান করে ইউনুসের বাপের সাথে আলাপ চালাতে লাগলাম।

বাঁধা শেষ হলে আমি পকেট থেকে একটা নীল রিবন বের করলাম। রিবন দিয়ে বাক্সটা পেঁচিয়ে বেধে উপরে ফুলগিরা দিয়ে একটা ফুল বানালাম। তারপর পকেট থেকে একটা ছোট্ট কাঁচি বের করে ইউনুসের হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললাম, 'ইউনুস, আমি তোমাকে এই টিভি টা উপহার দিলাম। তুমি কাঁচি দিয়ে ফিতে কেটে তোমার আধা পুরোনো নতুন উপহার খোল।'

ইউনুসের বাপ হাহাকার করে বলল, 'এইটা আপনি কি কন আর্ক ভাই?'

-'আমি যা বলেছি ঠিক বলেছি।'

কথাটা বলেই আমি ইউনুসের পরিবারকে বিশ্বাস অবিশ্বাসে দন্দে ফেলে বাইরে বের হয়ে আসলাম।

****

আমার হাতে একটা চায়না মোবাইল ফোন। আমি আক্কাস ভাই এর কাছ থেকে রূপবতী তরুনীর ফোন নাম্বার সংগ্রহ করে রূপবতীকে ফোন দিলাম।

'হ্যালো? কে বলছেন?'

-'আমি অর্ক। রাশেদুল ইসলাম অর্ক।'

'আপনি! আপনি কি জানেন, আমি আপনাকে কত খুজছি? আমি আক্কাস ভাইকেও ফোন দিয়েছিলাম। কেউ জানেনা আপনি কোথায় থাকেন।'

আমি বললাম, 'কেন খুজছেন?'

রূপবতী খুশি খুশি গলায় বলল, 'আমি রাতুল কে ক্ষমা করে দিয়েছি।' আর সব থেকে আশ্চর্যের কথা কি জানেন? আমি ইয়াবা ছেড়ে দিয়েছি।'

-'কংগ্রাচুলেশনস।'

'আচ্ছা আমি কি আজ আপনাকে একটা অনুরোধ করতে পারি?'

-'বলুন।'

'আপনি কি আমার সাথে একবার দেখা করতে পারবেন?'

-'না।'

'কেন না! আমি আপনার একটা অনুরোধ রেখেছি। আপনি আমার অনুরোধ রাখবেন না?'

-'আমি তো আপনাকে কখনো কথা দেই নি অনুরোধ রাখব?'

'আচ্ছা ঠিক আছে। আপনি কি আজো আমার নাম জানতে চান না?'

-'না। ভাল থাকবেন।'

কথাটা বলেই ফোন রেখে দিলাম। সুন্দরী রূপবতীদের হঠাৎ করেই কারো প্রতি তীব্র ভাললাগা তৈরী হয়ে যায়। সেই ভাললাগা হঠাৎ করেই একদিন ফুরিয়ে যায়। কারো ভাললাগা পেয়ে গিয়ে কারো অবহেলা পেতে আমার ভাল লাগে না।

আমি হাটছি। আমার পকেটে একটা বারবি পুতুল। স্টেশনের পাশের বস্তিতে থাকা পারুল নামের মেয়েটিকে আমি একদিন কথা দিয়েছিলাম একটা পুতুল কিনে দেব।

পৃথিবীতে কিছু মানুষ আসে যাদের প্রয়োজনটাই হল অন্য মানুষের মুখে হাসি ফোটানো। এই সব মানুষেরা নিজেরা হাসতে ভুলে যায়। জীবনের চলার পথে পাওয়া কষ্টে ভুলিয়ে দেওয়া হাসি খুজে ফিরে অন্যের হাসিমাখা মুখে।

আমি তাদের একজন। আমার আপন কেউ নেই। আমার আপন কাওকে দরকার ও নেই।

মন্তব্য ৫ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৫) মন্তব্য লিখুন

১| ২২ শে নভেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৪:৫০

মানুষ বলেছেন: হিমু হিমু ফ্লেভার আছে। কিপিটাপ, আরো ভালো কিছু বেরিয়ে আসতে পারে।

২| ২২ শে নভেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৪:৫৮

 বলেছেন: ++++

৩| ২২ শে নভেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৪:৫৯

নিয়ামুল ইসলাম বলেছেন: সুন্দর :)

৪| ২২ শে নভেম্বর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:১৮

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: ১ম ভাললাগা :)

আহা সমাজে যদি ইরাম মানুষের সংখ্যা বাড়ত.....

+++++++++++++

৫| ২৪ শে নভেম্বর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:০৪

কলমের কালি শেষ বলেছেন: গল্পের নায়ক দেখি ইয়াবার চালান দেয় আবার অসহায়দের সাহায্য করে বিষয়টা কেমন হলো না ।

গল্পে ভালো লেগেছে । ++++

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.