![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমাদের মৌলবাদি গোষ্ঠীরাই শুধু নয়,অনেক জ্ঞানী-গুণি(!!!) মানুষও বলে থাকেন বাংলাদেশের রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম ই থাকতে হবে,ধর্ম নিরপেক্ষতা হতে পারবেনা।এখন কথা হচ্ছে রাষ্ট্রের কি ধর্ম থাকতে পারে?নাকি ধর্ম থাকা সংগত?'রাষ্ট্র ধর্ম ইসলাম'-এই কথাটি বলা হয় মূলত আমাদের দেশে মুসলিম ধর্মাবলম্বিরা সংখ্যা গরিষ্ঠ এজন্য।যখন একটা নির্দিষ্ট ধর্ম কে রাষ্ট্র ধর্ম হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হবে তখন সেই ধর্মাবলম্বীরা কি বিশেষ কোন সুবিধা ভোগ করবে?যদি করে তাহলে অন্য ধর্মাবলম্বীরা সেই সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবে।তার মানে রাষ্ট্রের সকল নাগরিক সম-অধিকার পাবেনা।আর যদি রাষ্ট্র ধর্মের অনুসারীরা বিশেষ কোন সুবিধা নাই পেয়ে থাকে তাহলে আলাদা করে রাষ্ট্র ধর্ম রাখার যৌক্তিকতা কি?রাষ্ট্রের সংজ্ঞা অনুযায়ী দেশের সকল নাগরিক কে নিয়েই রাষ্ট্র গঠিত হবে এবং সকল নাগরিক সম-অধিকার লাভ করবে।এখন রাষ্ট্র ধর্ম বানিয়ে ধর্মের কি উপকার হচ্ছে?ধর্মের প্রচার হচ্ছে?ধর্ম পালন বাড়ছে?না,রাষ্ট্রধর্মের ফলে ধর্মের কোন উপকার হচ্ছেনা।রাষ্ট্রধর্ম থাকুক আর নাই থাকুক যার যার ধর্ম সে সে পালন করবেই।
বরং একে ব্যবহার করে অন্য ধর্মাবলম্বীদের হেনস্তা করার চেষ্টা করে কিছু মানুষ।
সংবিধানে যদি উল্লেখ থাকে যে আমরা ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র,তার মানে এই না যে আমাদের এখানে কেউ ধর্ম পালন করেনা বরং তার মানে হল আমাদের দেশে সকল ধর্মের মানুষের সমান অধিকার।
একজন বিবেকবান মানুষ মাত্রই চাইবেন যে সকল মানুষ সমান অধিকার পাক,একজন ধার্মিক ব্যক্তি মাত্রই চাইবেন সবার মধ্যে শান্তি বিরাজ করুক।কিন্তু আমাদের দেশে যারা ধর্মকে রক্ষা করার দায়িত্ব পালনে নিয়োজিত তারা যে ধর্মকে একটা শোষন নিপীড়নের অস্ত্র এবং নিজেদের লাভের সহায়ক বলে মনে করে সেটা বুঝতে একটু চোখ কান খোলা রাখলেই হয়।
আসুন একটু অতীত থেকে ঘুরে আসা যাক...
তারিখ টা ঠিক মনে নেই তবে বেশ কিছুদিন আগে আমেরিকার এক উন্মাদ যাজক ঘোষণা দিল যে সে জনসম্মুখে কুরআন পোড়াবে (এও কিন্তু ধর্মান্ধ,মজার ব্যাপার সব ধর্মেই কিছু উগ্র ধর্মান্ধ রয়েছে)।সেটা নিয়ে দেশে তুলকালাম কান্ড।একদল লোক মিছিল বের করে এমন হম্বি-তম্বি করল যেন আমেরিকাকে মাটির সাথে মিশিয়ে দেবে।ভাল কথা,এতে কোন সমস্যা নেই।কিন্তু খটকা লাগে তখন যখন দেখি হেফাজতের সমাবেশে এত কুরআন পোড়ানোর পরও আমাদের মহা ধার্মিকরা বিস্ময়কর ভাবে নিশ্চুপ।
প্রথম-আলোর আলপিনে (এখন যা রস-আলো) একবার মহানবী(স) কে অবমাননা করে একটা কার্টুন আঁকা হয়েছিল।কার্টুন টা ছিল অনেকটা এরকম যে একটা ছেলেকে নাম জিজ্ঞেস করলে সে তার নাম বলল।প্রশ্ন কর্তা বলল শুধু নাম বলতে নেই,নামের আগে মোহাম্মদ বলবে।এরপর কেউ একজন ছেলেটাকে তার কোলের বিড়াল টার নাম জিজ্ঞেস করল।ছেলেটিও আগের উপদেশ অনুযায়ী উত্তর দিল।
এখানে হয়তো কার্টুনিস্টের মহানবী কে অবমাননা করার কোন ইচ্ছা ছিল না,সে এটাকে একটা নাম হিসেবে নিয়ে সাধারন একটা হাস্য-রস তৈরি করেছে কারণ ভেবে দেখুন আমাদের দেশে মুসলমানরা নামের শুরুতে মোহাম্মাদ শব্দটি ব্যবহার করে,তাদের নিশ্চই এই নামে ডাকাও হয়।তাহলে কি সেটা মহানবী(স) কে অবমাননা করা হবে??যা হোক,এরপর তো দেশের ধর্মপ্রাণেরা ক্ষেপে গেল।প্রথম-আলোর বিলবোর্ড,পত্রিকা পুড়িয়ে দিল।সেই কার্টুনিস্ট কে গ্রেফতার করা হল।
আচ্ছা আপনারা কি জানেন জামাত-ইসলাম এর গুরু মওদুদি বলেছিল-"নবী-রাসুলরাও মানুষ,তাই সাধারন মানুষের মত ভুল করে।"অথচ পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে-
اِنَّ عِبَادِىْ لَيْسَ لَكَ عَلَيْهِمْ سُلْطَانٌ
“হে ইবলিস! আমার বিশিষ্ট বান্দাদের উপর তোমার কর্তৃত্ব নেই।” (সূরা আল হিজার, আয়াত : ৪১ ) আর শয়তানও স্বয়ং স্বীকার করেছিল,
وَلَأُغِوَ ينهُمْ أَجْمعيْنَ – اِلَّا عِبَادَكَ مِنْهُم الْمُخْلِصِيْنَ
“হে আল্লাহ! তোমার বিশিষ্ট বান্দাগণ ব্যতীত বাকী সবাইকে বিপথগামী করবো।” (সূরা আল হিজার, আয়াত ৪১)
এই মওদুদির আরো কিছু প্রচারনা হচ্ছে-
১. মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইসলাম ধর্মের প্রবর্তক নন। ২. রাসূল না অতিমানব, না মানবীয় দুর্বলতা থেকে মুক্ত। তিনি যেমন খোদার ধন-ভান্ডারের মালিক নন, তেমনি খোদার অদৃশ্যের জ্ঞানেরও অধিকারী নন বলে সর্বজ্ঞ নন। ৩. তিনি পরের কল্যাণ বা অকল্যাণ সাধন তো দূরে নিজেরও কল্যাণ বা অকল্যাণ করতে অক্ষম। ৪. তিনি কোন কিছু হালাল বা হারাম করতে পারেন না। লন্ডনের ভাষণ, পৃষ্টা: ৩-১৯, কৃত: আবুল আলা মওদূদী, অনুবাদ: আখতার ফারূক, জুলকরনাঈন প্রেস, ৩৮, বানিয়া নগর, ঢাকা।
অথচ ইসলামে কি বলে দেখে আসি।
পবিত্র হাদীস শরীফে এরশাদ হয়েছে,
اِنِّى أُوْتِيْتُ مَفاتيح خَزَائِنِ الْأَرْضِ
“প্রিয় নবী স্বয়ং বলেছেন, আমাকে জমিনের খণিসমূহের চাবি দেওয়া হয়েছে বা ধন-ভান্ডারের মালিক বানানো হয়েছে। (বোখারী শরীফ, ২য় খন্ড, পৃষ্টা: ১০৪২। ) হযরত আবু হোরায়রা রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু হতে এ ধরনের আরও একটি হাদীস বর্ণিত হয়েছে। এছাড়াও তাঁকে অদৃশ্যের জ্ঞান দেওয়া হয়েছে। পবিত্র কুরআনে এরশাদ হয়েছে:
عِلْمُ الْغَيْبِ فَلَا يُظْهِر عَلى غَيْبِه أَحَدًا – اِلَّا من ارْتَضى مِنْ رَسول
“অদৃশ্যের জ্ঞাতা, আল্লাহ আপন অদৃশ্যের উপর কাউকে ক্ষমতাবান করেন না আপন মনোনীত রাসূল ব্যতীত।” ( সূরা আল জিন । আয়াত : ২৬।)
অর্থাৎ জামাত ইসলাম যে আদর্শ অনুসরণ করে চলে সেটা যে ইসলামের সাথে সাংঘর্ষিক সেটা বোঝা যাচ্ছে।
কিন্তু কই এ নিয়ে তো কোন ইসলাম রক্ষাকারীকে কিছু বলতে দেখিনি।
শাহবাগি নাস্তিক(???) দের বিচারের দাবিতে হেফাজত ছাড়াও আরো কিছু ইসলামী দল আন্দোলন করেছে।কিন্তু জামাত তাদের সমর্থন দিলনা কেন??
হেফাজত যে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে তৈরি সেটা তো প্রমাণিত।
এত কথা বলার একটাই উদ্দেশ্য,রাষ্ট্র ধর্ম নির্দিষ্ট করে দেয়ার মাধ্যমে প্রকৃত পক্ষে এসব সন্ত্রাস কে সুবিধা তৈরি করে দেয়া হয়।
এটা একটা হিন্দু ভাইয়ের ফেসবুক স্ট্যাটাস,একটু পড়ে দেখুন।
আমাদের দেশে অন্য ধর্মাবলম্বীদের উপাসনালয় অহরহই ভাংচুর করা হয়।এটা নতুন কিছু না।কিন্তু এ ধরণের ঘটনা আমাদের মনে কোন বিকার সৃষ্টি করেনা।
আজ যদি কোন মসজিদে অন্য কোন ধর্মাবলম্বীরা হামলা বা ভাংচুর চালায় তাহলে দেশে ভয়াবহ দাঙ্গা বেধে যাবে এটা নিশ্চিত।সরকার ও তখন নানা রকম ব্যবস্থা নেবে।অথচ যখন একটা মন্দির ভাংচুর হয় তখন সবাই নির্বিকার,অর্থাৎ সবাই সমান অধিকার বা সুবিধা পাচ্ছেনা।অন্য ধর্মাবলম্বীরা দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক হিসেবে গণ্য হচ্ছে।কিন্তু কেন?
এখন অনেকে বলতে পারেন,ধর্মনিরপেক্ষতা দিলেই কি সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে?
না হবেনা।তবে ক্ষেত্র প্রস্তুত হবে।দেশে অনেক আইন আছে কিন্তু প্রয়োগ নেই-এই অজুহাতে কি সব আইনা বাতিল করে দেয়া যাবে??সেরকমই কিছু হবে কিনা সেটার থেকে এখন গুরুত্বপূর্ণ কিছু করার সুযোগ সৃষ্টি করা যাচ্ছে কিনা?
এখন এমন একটি যুক্তিতে আসি শুধু মাত্র যেটার বিবেচনায় আমরা ধর্মনিরপেক্ষ হতে পারি।সেটা হল-মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধিন হওয়া দেশে প্রণীত সংবিধানে রাষ্ট্রের ৪ মূলিনীতির একটি ছিল ধর্মনিরপেক্ষতা।অর্থাৎ এটা ছিল স্বাধীন বাংলাদেশের ভিত্তি,মুক্তিযুদ্ধের অর্জন।তাই রাষ্ট্রের কোন ধর্ম থাকতে পারেনা।ধর্ম ব্যক্তিগত,সামষ্টিক ব্যাপার।
আর কোন মন্দিরে যেন ভাংচুর না হয়,আর কোন ভিন্ন ধর্মাবলম্বী যেন হেনস্তা না হয়।ধর্ম চর্চা করার নামে যেন আমরা অপচর্চা না করি।ধর্ম রক্ষাকারী ভেবে যেন আমরা কোন শয়তান কে যেন আমরা ফেরেশতা না বানাই।
সব থেকে বড় কথা হল-ধর্ম সুন্দর ভাবে পালন করার জন্য মুসলমানদের জন্য আছে মসজিদ,জায়নামায,কুরআন,হাদীস...এগুলো কে নিয়ে প্রকৃত ইসলাম ধর্ম পালন করুন,জামাত ইসলাম কে নিয়ে নয়।
©somewhere in net ltd.