নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

যুক্তিতে মুক্তি,অজ্ঞতায় দাসত্ব,জ্ঞানে স্বাধিনতা.।

রাফীশামস

আমি নিরপেক্ষ নই,বাংলাদেশের পক্ষে

রাফীশামস › বিস্তারিত পোস্টঃ

রূপান্তর (সত্য ঘটনা অবলম্বনে)

২৯ শে নভেম্বর, ২০১৪ রাত ১২:২২

এটা খুব খুশির সংবাদ যে আমি রূপান্তরিত হয়ে গেছি।আমার এই রূপান্তর খুব বিস্ময়কর ঘটনা।হয়তো অলৌকিকও বটে।আমি বদলে গেছি,সম্পূর্ণ বদলে গেছি-ভিতর এবং বাইরে,বাইরে এবং ভিতরে। রূপান্তরের ব্যাপারটা হুট করে ঘটেনি,আস্তে আস্তে ঘটেছে।আমি বুঝতে পারছিলাম আমার ভিতরে কোন একটা কিছুর ব্যাপক পরিবর্তন ঘটছে।পরিবর্তন ঘটছে বাইরেও।আমি আর আমি নেই।এই রূপান্তরকে আমি মেনে নিতে পারছিলাম না,কেন এমন ঘটছে আমার সাথে?কেন আমিই?কেন অন্য কেউ নয়?এই রূপান্তর আমার জন্য কি কোন ভাল ফল বয়ে আনবে?জানিনা।আমি আর আমি থাকছিনা,আমি জীবিত আছি কিন্তু আমার মৃত্যু ঘটেছে,আমার কোন অস্তিত্ব নেই।এর থেকে যন্ত্রনা আর কিসে আছে?


আমিও ছিলাম অন্যদের মতই।রফিক-আজাদ-কামরুল ওদের মত।সব ছেলে যেমন থাকে আমিও ছিলাম সেরকমই।ছোট বেলায় ডানপিটে ছিলাম খুব।নজরুল দের বাগানের পেয়ারা গাছটা আমার হাত থেকে রক্ষা পেতনা।পুকুরে ঝাপিয়ে পড়তাম,মাছের সাথে সাতার কাটতাম,মাছ গুলোও মনে হয় আমাকে চিনতো,যেমন চিনতো নজরুলদের পেয়ারা গাছটা।এখন কি ওরা আমাকে চিনবে?

এখন তো আমি রূপান্তরিত হয়ে গেছি।আচ্ছা আমার গায়ের ঘ্রান কি পরিবর্তন হয়ে গেছে?বুঝতে পারছিনা।মনে হয়ে সেটারও রূপান্তর ঘটেছে।পেয়ারা গাছটা,পুকুরের মাছ কেউ এখন আমাকে চিনবে না।ভুলোটাও না।ভুলো ছিল আমাদের বাড়ির পোষা কুকুর।আমার সব সময়ের সঙ্গী ছিল সে।কুকুর নাকি গায়ের গন্ধ শুকে মানুষ চেনে।ভুলো কি এখন আমাকে চিনবে?


রূপান্তরের শুরুর দিন গুলো ছিল অসহ্য রকমের যন্ত্রনার।পরিবর্তনটা টের পাচ্ছিলাম আমি।কিন্তু বুঝে উঠতে পারছিলাম না।এমন কেন হচ্ছে?কোন পাপের শাস্তি পাচ্ছি আমি?কিন্তু এমন তো কোন পাপ করিনি।হ্যা কুলসুম কে গাছের সাথে চেপে ধরে চুমু খেতে চেয়েছিলাম।কিন্তু কুলসুম কে তো আমি ভালবাসতাম।ওকে দেখে আমার সুখ লাগতো।ও যদিও আমাকে দুচোখে দেখতে পারতনা।সেদিন চড় বসিয়ে দিয়েছিল গালে।এরপর তো আমি আর কুলসুমের ধারে কাছে যাইনি।তবে কোন পাপের সাজা পাচ্ছি আমি?ঐ নিষিদ্ধ জিনিস গুলো দেখার শাস্তি?ওগুলো তো কতগুলো ছবি মাত্র।বিদেশি মেয়েমানুষের নগ্ন ছবি।প্রথম যখন আমি ছবি গুলো দেখেছিলাম,তখন কেপে উঠেছিলাম।তখনও আমার মধ্যে একটা রূপান্তর ঘটেছিল তবে সেটা এখনকার মত না।সেই রূপান্তরে সুখ ছিল,সেই রূপান্তরের মাধ্যমে আমি নিজেকে আবিষ্কার করেছিলাম, সেই রূপান্তর আমাকে পূর্ন করেছিল,এই রূপান্তর আমাকে নিঃশেষ করে দিচ্ছে।


আর কি কি পাপ করেছি আমি?প্রায় রাতে ওই নগ্ন ছবি গুলোর কথা চিন্তা করে যেটা করতাম সেটা কি তবে পাপ ছিল?তবে ওতো সবাই করে।রফিক আমাকে বলেছে সে করে,জুয়েল আমাকে বলেছে সেও করে।সব ছেলেরাই বলেছে যে তারা করে।কই বাকিদের তো কোন রূপান্তর ঘটলো না,তবে আমি কেন?নারীর স্তন,নারীর শরীর,নারীর হাতের ছোয়া,নারীর ঠোট-এগুলোর কথা চিন্তা করা কি তবে পাপ ছিল?হয়তো আমার মত আর কেউ চিন্তা করতনা,তাই আর কারও রূপান্তরও ঘটেনি।আমি হয়তো ভয়াবহ পাপ করে ফেলেছি।কিন্তু আমার থেকেও বড় পাপ করেছিল তো জুয়েল।আমরা যেটা রোজ রাতে কল্পনায় করতাম,ও সেটা বাস্তবে করেছিল-ওদের বাড়িতে যে মেয়েটি কাজ করত তার সাথে।সেই গল্প শুনে আমরা কেপে উঠেছিলাম-ভয়ে,উত্তেজনায়,আবেশে।মনে হচ্ছিল আমরাই জুয়েল হয়ে গেছি।আমি হয়ে গেছি জুয়েল,রফিক হয়ে গেছে জুয়েল,কামরুল হয়ে গেছে জুয়েল।আমরা সবাই একএকজন জুয়েল।যেন আমরা সবাই করেছি তাই যেটা জুয়েল করেছে।কই জুয়েলের তো পরিবর্তন ঘটলো না!তবে আমি কেন?


আর কোন পাপের কথা তো মনে পড়ছে না।পড়াশুনায় আমি বরাবরই ভাল ছিলাম।বাবা মা কে জ্বালালেও তাই কিছু বলতেন না তারা।কোন কিছুর অভাব ছিলনা আমার।আমি ছেলে,আমি ভাল ছেলে-সবাই তাই মনে করত এবং আমি এটা নিয়ে একটু অহংকারীও ছিলাম।ভাল ছেলে হওয়ার অহংকার,পৌরষের অহংকার।তবে কি এর অহংকারই আমার পতন ঘটালো?পতন?তখন অবশ্য তাই মনে হয়েছিল,এখন আর মনে হয় না।এখন মনে হয় আমার উত্তরন ঘটেছে।আমি রূপান্তরিত হয়ে উন্নত হয়েছি,আরও মর্যাদা লাভ করেছি।কিন্তু রূপান্তরের কালটা ছিল অসহ্য।ভয়ংকর রকমের অসহ্য।


রূপান্তরটা প্রথম ঘটছিল আমার ভিতরে।কি যেন বদলে যাচ্ছে।আমি ভেঙ্গে যাচ্ছি।চুরমার হয়ে যাচ্ছি।আবার গড়ে উঠছি নতুন করে।আমার ভিতরে চলছে অবিরাম ভাঙ্গা-গড়া।শত সহস্র শ্রমীক কাজ করছিল আমার ভিতরে।আমাকে ভাংতে,আবার গড়তে।এই বয়সে এসে এত ভাঙা গড়া চলবে আমার ভিতরে আমি কল্পনাও করিনি।কারণ অভূতপূর্ব,অশ্রুতপূর্ব কোন কিছু কল্পনা করা যায়না।ধীরে ধীরে আমার রূপান্তর দ্রুত থেকে দ্রুত হল।শ্রমীক গুলো মনে হয় বিরতিহীন ভাবে কাজ করে চলেছে আমার ভিতরে এবং বাইরে।তাদের কোন ক্লান্তি নেই,তাই কোন বিশ্রামও নেই।কাজ শেষে নিশ্চয়ই তারা বিশাল অংকের পারিশ্রমিক পাবে,তাই হয়তো তাদের এত তাড়া।


বাইরের পরিবর্তনটা যখন হল তখন সবাই বুঝতে পারল আমার রূপান্তরটা।আমার রূপান্তর কেবল আমার থাকলনা,আমার পরিবারের রূপান্তর হয়ে গেল,আমার পাড়ার রূপান্তর হয়ে গেল।আমার বাবা মা ভয় পেয়ে গেলেন,ভয় পেল আমার খেলার সাথীরা,আমার প্রতিবেশীরা।শুধু কি ভয়?কিঞ্চিত ঘৃণাও কি ছিল তার সাথে?এক মুঠ গুড়ের সাথে দু চিমটি লবণ দিয়ে যেমন স্যালাইন বানানো হয় তেমনি কি তাদের মধ্যেও আমার প্রতি ছিল ভয়-ঘৃণা আর আতংকের কোন সুষম মিশ্রণ?থাকার সম্ভাবনাই বেশি।সমাজ কোন পরিবর্তন গ্রহন করেনা,সেখানে আমার এই রূপান্তর তো কোন সাধারণ পরিবর্তন নয়,অসাধারণ পরিবর্তন।অলৌকিক পরিবর্তন।


বাবা মা ভয় পেয়ে ডাক্তার দেখালেন আমাকে।ডাক্তার বেচারাও মনে হয় এমন কোন রোগি আগে দেখেন নি।আমি কি রোগি?আমার কি কোন রোগ হয়েছে?না তো,আমি তো অসুস্থ না।রূপান্তর কি কোন রোগ?কোন দুর্লভ বিচিত্র ধরণের রোগ?ডাক্তার সাহেব মজার পরামর্শ দিলেন।বললেন রূপান্তর হোক,রূপান্তরই আমার নিয়তি।সেটাকে ঠিক মত করতে হলে কিছু কাটা ছেড়া করতে হবে আমার শরীরে।তাহলে রূপান্তর নিরাপদ হবে,সুন্দর ও সুচারু ভাবে হবে।আমার বাবা মা কাদতে বসলেন,যেন আমি রূপান্তরিত হইনি,মারা গিয়েছি।জীবিত আমার সামনে তারা মরাকান্না কাদতে শুরু করলেন।অবশ্য এ এক রকম মৃত্যুই।একটি অস্তিত্বের মৃত্যু।একটি স্বপ্ন,একটি আত্মার মৃত্যু।হয়তো শরীরেরও মৃত্য।


হ্যা,আমার মৃত্যু ঘটেছিল।আমার শরীর মন সব কিছুর মৃত্যু ঘটেছিল।আমি ধ্বংস হয়ে গেছি এবং আবার সৃষ্টি হয়েছি নতুন করে।আমার স্বপ্ন গুলো হারিয়ে গিয়েছিল,আবার স্বপ্ন বুনেছি নতুন করে।আমার চিন্তা আমার কল্পনা সব কিছু ভেঙ্গে চুরমার হয়ে গিয়েছিল,আমিই তাদের আবার নতুন করে সাজিয়ে নিয়েছি।এখন আমার সব আছে।হয়তো যেভাবে থাকার কথা ছিল সেভাবে নেই কিন্তু আছে।আমার নিজস্ব ঘর আছে,পরিবার আছে।ফুটফুটে একটা সন্তান আছে।বাচ্চাটি যখন বলে,"মা আমি তোমাকে অনেক ভালবাসি"- আমার বুকটা তখন সুখে ভরে ওঠে।


আমার রূপান্তর কে আমি স্বাগত জানাই। আমার রূপান্তরিত হয়েছিলাম।পুরুষ থেকে নারীতে পরিণত হয়েছিলাম আমি।পুরুষ হয়ে আমি নারীত্ব কে অপমান করেছিলাম,এখন নারীত্ব আমায় শেখাচ্ছে পুরুষের অক্ষমতা।প্রতিদিন সকালে বিকালে কতবারই না আমরা রূপান্তরিত হই।অনেকেই বোঝেনা,অনেকে বোঝে।অনেকের রূপান্তর দেখা যায়না কিন্তু হয়তো সেটা অনেক ভয়ংকর।আমি না হয় এটুকুই রূপান্তরিত হলাম,কি আর এমন ক্ষতি...


(সালটা আমার ঠিক মনে নেই।৯০ এর দশকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ছেলে হঠাৎ করে নারীতে রূপান্তরিত হয়।এই ঘটনা একদম যে রেয়ার তা নয়।বাংলাদেশে এমন আরও দুটো ঘটনার খবর পাওয়া গেছে যেখানে নারীরা পুরুষের রূপান্তরিত হয়ে গেছে প্রাকৃতিক ভাবে।এদের একজনের দেখা পেয়েছিলাম আমি গ্রামে যে কিনা এখন মস্ত বড় পীর বাবা।তার দাবি তার ইবাদতে খুশি হয়ে আল্লাহ তাকে পুরুষ বানিয়ে দিয়েছে!যাই হোক,খুব সম্ভবত বড় ধরণের হরমোনাল পরিবর্তনের কারণে এটি ঘটে।কয়েক বছর আগে 'মা দিবস' এ রাজশাহীর সেই রূপান্তরিত মহিলার একটি লেখা পেয়েছিলাম একটি পত্রিকায় যেখানে তিনি তার মাতৃত্ব নিয়ে সুখেই আছেন বোঝা গিয়েছে... )

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২৯ শে নভেম্বর, ২০১৪ রাত ১:১২

শামছুর রহমান বলেছেন: হরমন জনিত কারনে নাকি এমন রূপান্তর হয় ৷ আল্লাহর সৃষ্টির রহস্য অনেক বিচিত্র !

২| ২৯ শে নভেম্বর, ২০১৪ রাত ১:৪৭

নতুন বলেছেন: এই রুপান্তর আমাদের দেশের মতন কখনোই হয়না...

প্রাকৃতিক ভাবে কোন ছেলে মেয়েতে পরিনত হতে পারেনা... শেষে তাকে অবশ্যই gender reassignment surgery করতে হয়...

আমাদের দেশের মানুষ অলৌকিকতায় বিশ্বাস করে... তাই কোন ছেলে যদি ছোট বেলাথেকে হরমনের পরিবত`নের জন্য মেয়েদের মতন শারীরিক পরিবত`ন হতে খাকে তা সবার কাছে লুকিয়ে রাখে...

পরে যদি সে মেয়ে হিসেবে পরিচয় দিতে চায়... তখন স্বপ্নের মেয়ে/ছেলে হয়ে গেছে এইরকমের প্রচার করে...

হয়তো এরা শিশুকাল হতেই পুরুপুরি ছেলে বা মেয়ের লিঙ্গ না হয়ে তাদের মাঝামাঝি কিছু অস্পস্ট লিঙ্গ থাকে.... পরে যদি হরমনের প্রভাবে তাদের দেহ ছেলে বা মেয়ের প্রভাব বেশি দেখা দেয় তখন সমাজের কাছে এই রকমের রাতারাতী ছেলে/মেয়েতে রুপান্তরের কাহিনি বানায়...

চিকিতসা বিঙ্গানে মনেহয়না এই রকমের রাতারাতি ছেলে বা মেয়েতে রুপান্তরের ঘটনা সমথ`ন করে...

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.