![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আল্লাহ তুমি সবেচেয় বড় কারিগড়।
আসসালামুআলাইকুম।
আশা করি সকলেই আল্লাহর রহমতে ভাল আছেন। আমি তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি যারা নারী ও পুরুষদের সালাত আদায়ের ক্ষেত্রে ভিন্নতা বিষয়টি সম্পর্কে ভাল ধারণা রাখেন তাদের প্রতি। আমি ছোট বেলা থেকেই ইমান, আক্বীদা, আমল, সালাত, যাকাত, ইত্যাদি ইসলামের সম্পর্কে হুজুর বা বিভিন্ন বই পড়ে জ্ঞান অর্জন করেছি। কিন্তু বিজ্ঞানের বিভিন্ন উদ্ভাবনের ফলে এখন টিভিতে বা ইন্টারনেট-এ বিভিন্নজনের বক্তব্য দেখে শিক্ষা গ্রহণ করার চেষ্টা করছি। কিন্তু সালাত আদায়ের শিক্ষা নেবার সময় অনেক দ্বিমত লক্ষ্য করতে হচ্ছে। বিশেষ করে নারী ও পুরুষদের সালাত আদায়ের ব্যাপারে। কেউ বলছে যে, নারী ও পুরুষদের সালাত আদায়ের ব্যাপারে কোন পার্থক্য নেই। আবার কেউ কেউ বলছে যে পার্থক্য আছে। এ ব্যাপরে বিজ্ঞজনদের মতামত কোরআন ও সহী হাদীস-এর ব্যাখ্যা দরকার। আশা করি কেউ আমার মত কম জেনে মন্তব্য করবেন না। যদি কেউ যানেন তবে রেফারেন্স সহকারে উল্লেখ করবেন দয়া করে। সবাই ভাল থাকবেন। সবাইকে যেন আল্লাহ সঠিক বুঝ এবং সঠিক শিক্ষা গ্রহণের পথ সুগম করে দেন। আমিন।
০৩ রা জানুয়ারি, ২০১৪ বিকাল ৪:৩৩
েমা: রিফকুল ইসলাম বলেছেন: মো: আনারুল ইসলাম ভাই বেশ সুন্দর করে উপস্থাপন করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। এখানে যেহেতু ড. জাকির নায়েকের কথাই আসল তবে তিনি যে "ইউনিটি অফ মুসলিম" বা মুসলিমদের ঐক্য নামে একটি লেকচার দিয়েছেন সে ব্যাপারে আপনার মন্তব্য কি? তিনি সেখানে কোন মাযহাব না থাকার ব্যাপারে বলেছেন। তিনি বলেছেন যে, মুসলিম হবে কোন মাযহাব ছাড়া। যেখানে কোরআন ও হাদীসের আলোকে সবাই এক থাকবে। কেউ হানাফী বা শাফেই এমনটা বলা যাবে না অথবা শিয়া বা সুন্নী বলা যাবে না। আপনি সুন্দর ভাবে নারী ও পুরুষদের সালাত আদায়ের কথা বলেছেন। যা আমার শিরোনামের সঙ্গে মিল রেখে। কিন্তু পুরুষ পরুষদের মধ্যে কেন সালাত আদায়ের ব্যাপারে অমিল দেখা যায়? দয়া করে যদি উপরের ব্যাখ্যার মত করে দিতেন তাহলে মহতরাম অনেক উপকৃত হতাম। আর ড. জাকির নায়েক এর ব্যাপারে যে মন্তব্য করেছেন সেটা কতটা সত্যি তা ভেবে দেখেছেন কি? তিনি যদি কোরআন আর হাদীস সম্পর্কে নাই জানতেন তবে এত দূর পর্যন্ত আসতে পারতেন না। উনার সবগুলো লেকচারে দেখবেন কোরআণ থেকেই রেফারেন্স দেয়া। এখন আপনি এমন একটি লেকচারের কথা বলেন যেখানে ড. জাকির নায়েক ভুল বলেছেন অথবা কোরআন বা হাদীসের ভুল ব্যাখ্যা দিয়েছেন। আশা করি উত্তর পাব আপনার কাছ থেকে।
২| ০৩ রা জানুয়ারি, ২০১৪ বিকাল ৪:০৪
অনিকেত রহমান বলেছেন: মোঃ আনারুল ইসলাম ভাই আপনি যে কয়টা হাদিস দিয়েছেন কোনটা কিন্তু সহি হাদিস নয়।। এতে কিন্তু প্রমান হয় না নারী -পুরুষের নামাজ আলাদা।।
আমার মতে যদি নারী- পুরুষের নামাজ আলাদা হত তাহলে নামাজের মত গুরুত্ব পূর্ণ বিষয় অবশ্যয় সহি বুখারি কিংবা মুসলিম শরীফে থাকতো।। যেহেতু নেই সেহেতু হয়তবা পার্থক্যও নেই।।
আর আমি যত দূর শুনেছি নবী (সঃ) বলেছেনঃ আমি যেভাবে নামাজ পড়ি তোমরা সেভাবেই নামাজ পড়।।
নবী এমন কথা কখনো বলেছে কিনা জানি না যে, পুরুষেরা আমার মত করে নামাজ পড় , আর মহিলারা আয়েশা মত করে নামাজ পড়।।
০৩ রা জানুয়ারি, ২০১৪ বিকাল ৪:২৮
েমা: রিফকুল ইসলাম বলেছেন: আমি আপনার সাথে একমত। কারণ আমার কাছে বুখারী ও মুসলীম শরীফের সব খন্ডই আছে। কিন্তু কোথাও নারী ও পুরুষদের মধ্যে সালাত আদায়ের ক্ষেত্রে পার্থক্য বা ভিন্নতা নিয়ে একটি হাদীসও পাই নাই। তাই সেই পার্থক্য বা ভিন্নতা কোন কোন হাদীস থেকে নেয়া হয়েছে তার বিশদ জানার জন্যই আমার এই প্রচেষ্ট। ধন্যবাদ।
৩| ০৩ রা জানুয়ারি, ২০১৪ বিকাল ৪:১৭
মোঃ আনারুল ইসলাম বলেছেন: @অনিকেত রহমান মাফ করবেন, আমি কি জানতে পারি সহিহ হাদিস বর্ননার ব্যাপারে আপনার কতখানি জানা আছে?
৪| ০৩ রা জানুয়ারি, ২০১৪ বিকাল ৪:৩৫
মোঃ আনারুল ইসলাম বলেছেন: পুরুষ পরুষদের মধ্যে কেন সালাত আদায়ের ব্যাপারে অমিল দেখা যায়? এর আলোচনা
প্রথম দলীল : নবী স.-এর নামায
হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাঃ বলেন আমি কি তোমাদের কে হুজুর সাঃ এর নামাজ সম্পর্কে অবগতি দেব না? এ কথা বলে তিনি নামাজ পড়ে দেখালেন এবং নামাজে তাকবীরে তাহরীমার সময় একবার রাফয়ে ইয়াদাইন করলেন। নামাজে আর কোথাও তিনি রফঈ ইয়াদিন করলেন না। (প্রমান: তিরমিযী ১;৩৫, সহীহ নাসায়ী শরীফ, হাদিস নং ১০৬১, প্রকাশনী- ইসঃ ফাউঃ বাংলাদেশ, প্রকাশকাল- মে, ২০০২)
মুহাদ্দিস আহমদ শাকির এ হাদীস সম্পর্কে বলেন-
“ইবনে হাযম ও অন্যান্য হাফিজুল হাদীস উপরের হাদীসটিকে ‘সহীহ’ বলেছেন।”
আল্লামা ইবনুত তুরকামানী (রহ) বলেন,
“এই হাদীসের সকল রাবী সহীহ মুসলিমের রাবী”
(আল-জাওহারুন নাকী : ২/৭৮)
স্মর্তব্য যে, ইমাম তিরমিযী রহ. “সুনান” গ্রন্থে ইবনুল মুবারক রহ. এর যে মন্তব্য উল্লেখ করেছেন তা এই বর্ণনা সম্পর্কে নয়, অন্য আরেকটি বর্ননা সম্পর্কে, যা নিন্মোক্ত ভাষায় বর্ণিত হয়েছে-
‘রসুল স. শুধু প্রথমবার হাত উঠিয়েছেন।’
এ দুই বর্ণনার মধ্যে প্রভেদ না করায় অনেক আলেম বিভ্রান্তিতে পতিত হয়েছেন কিংবা অন্যকে বিভ্রান্ত করেছেন। (দেখুন : নাসবুর রাযাহ : ১/৩৯৪)
এজন্য সুনানে তিরমিযীর বিভিন্ন নুসখায় দ্বিতীয় বর্ণনাটি ভিন্ন শিরোনামের অধীনে উল্লেখ করা হয়েছে এবং ইবনুল মুবারকের মন্তব্যও রয়েছে সেখানে। অতএব তার মন্তব্য আলোচ্য হাদীস সম্পর্কে নয়।
(জামে তিরমিযী, তাহক্বীক আহমদ শাকির ২/৪১)
এখানে মুহাদ্দিস আহমদ শাকিরের পর্যালোচনা বিশেষভাবে লক্ষণীয়। তিনি লেখেন-
‘রাফয়ে ইয়াদাইন’ বিষয়ে (একশ্রেনীর মানুষ) জয়ীফ হাদীসকে সহীহ ও সহীহ হাদীসকে জয়ীফ সাব্যস্ত করার প্রয়াস পেয়ে থাকে। তাদের অধিকাংশই নীতি ও ইনসাফ বিসর্জন দিয়ে থাকে।’
দ্বিতীয় দলীল : রাফয়ে ইয়াদাইন সম্পর্কে হাদীসের বারণ
হজরত জাবির ইবনে সামুরাহ রাঃ বলেন , নামাজের মুহুর্তে হুজুর সাঃ আমাদের নিকট আসলেন এবং বললেন, “তোমাদের কি হল যে তোমাদের কে দেখতে পাচ্ছি তোমরা রাফয়ে ইয়াদাইন করছ দুর্দান্ত ঘোড়ার লেজের ন্যায়? নামাজের মধ্যে শান্ত ধীর হও। (প্রমানঃ ... আবু দাউদ ১;১০৯ নাসায়ী ১;১১৭)”
এ হাদীসে রাসূলুল্লাহ স. স্থিরতার সঙ্গে নামায পড়ার আদেশ দিয়েছেন। আর হাদীসের বক্তব্য অনুযায়ীই যেহেতু রফইয়ে ঈয়াদিন স্থিরতা-পরিপন্থী তাই আমাদের কর্তব্য হল, নবী স.-এর নিদেশমতো স্থিরতার সঙ্গে নামায পড়া।
তৃতীয় দলীল : হযরত উমর রা.- এর আমল
আসওয়াদ রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন-
‘আমি হযরত ওমর রা.-কে দেখেছি, তিনি শুধু প্রথম তাকবীরের সময় রাফয়ে ইয়াদাইন করতেন, পরে করতেন না।’ (তাহাবী: ১/১৬৪)
আল্লামা যায়লায়ী রহ. এই হাদীসকে ‘সহীহ’ বলেছেন। সহীহ বুখারীর বিখ্যাত ভাষ্যকার আল্লামা ইবনে হাজর আসকালানী রহ. এই বর্ণনার সকল রাবীকে ‘ছিকাহ’ (নির্ভরযোগ্য) বলেছেন। আলজাওহারুন নাকী গ্রন্থে বলা হয়েছে ‘এই হাদীসের সনদ সহীহ মুসলিমের সনদের মতো শক্তিশালী।’
ইমাম তাহাবী রহ. বলেন, ‘হযরত ওমর রা. এর আমল এবং এ বিষয়ে সাহাবায়ে কেরাম রা.-এর কোনরূপ বিরোধিতা না থাকায় প্রমাণ করে যে, সেই সঠিক পদ্ধতি এবং এ পদ্ধতির বিরোধিতা করা কারও জন্য উচিত নয়।’
(তাহাবী : ১/১৬৪)
চতুর্থ দলীল : হযরত আলী (রা) এর আমল
“হযরত আলী (রা) নামাযে প্রথম তাকবীরে হাত উঠাতেন এরপর আর হাত উঠাতেন না।” (সুনানে বায়হাকী : ২/৮০)
আল্লামা যায়লায়ী রহ. বর্ণনাটিকে ‘সহীহ’ বলেছেন। সহীহ বুখারীর বিখ্যাত ভাষ্যকার আল্লামা ইবনে হাজর আসকালানী রহ. এই বর্ণনার সকল রাবীকে ‘ছিকাহ’ (নির্ভরযোগ্য) বলেছেন। সহীহ বুখারীর অপর ভাষ্যকার আল্লামা আইনী রহ. বলেন, “এ সনদটি সহীহ মুসলিমের সনদের সমমানের।’
(নাসবুর রায়াহ : ১/৪০৬, উমদাতুল কারী :৫/২৭৪, দিরায়াহ : ১/১১৩)
পঞ্চম দলীল : হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা.-এর আমল
মুজাহিদ রহ. বলেন-
‘আমি আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা.-এর পিছনে নামায পড়েছি। তিনি প্রথম তাকবীর ছাড়া অন্য সময় রাফয়ে ইয়াদাইন করতেন না।’
(তাহাবী : ১/১৬৩, ইবনে আবী শাইবা : ২/৪১৮ হাদীছ নং ২৪৬৭ [শায়খ আওয়ামা দা.বা. তাহক্বীকৃত নুসখা)
আল্লামা তুরকুমানী রহ. বলেছেন, ‘এ বর্ণনার সনদ সহীহ’
(আল-জাওহারুন নাকী)
ষষ্ঠ দলীল : হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা.-এর আমল
আসওয়াদ রহ. বলেছেন-
‘হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. শুধু প্রথম তাকবীরের সময় রাফয়ে ইয়াদাইন করতেন, এরপর আর করতেন না।’
(জামউল মাসানীদ)
সপ্তম দলীল : খুলাফায়ে রাশেদীন ও রাফয়ে ইয়াদাইন
প্রসিদ্ধ মুহাদ্দিস আল্লামা নামাভী রহ. খুলাফায়ে রাশেদীনের কর্মধারা বিষয়ক বর্ণনাগুলো পর্যালোচনা করে এ সিদ্ধান্তে পৌছেছেন যে-
‘খুলাফায়ে রাশেদীন শুধু প্রথম তাকবীরের সময় রাফয়ে ইয়াদাইন করতেন। অন্য সময় রাফয়ে ইয়াদাইন করতেন বলে প্রমান পাওয়া যায় না।’
(আছারুস সুনান)
খুলাফায়ে রাশেদীন হলেন আম্বিয়ায়ে কেরাম আ.-এর পর মানবজাতির মধ্যে সর্বাধিক মর্যাদার অধিকারী। তাঁরা ছিলেন রাসূলুল্লাহর সত্যিকারের অনুসারী। রাসূলুল্লাহ স. তাদের সুন্নাহকেও নিদের সুন্নাহর মতো অনুসরণীয় ঘোষনা করেছেন। কেননা, তাদের সুন্নাহ ছিল নবীর সুন্নাহ থেকেই গৃহীত। তাই তারা যখন নামাযের সূচনা ছাড়া অন্য কোন স্থানে হাত উঠাতেন না তখন একথা সুস্পষ্ট হয়ে যায় যে, তাদের কাছেও নামাযের সূচনা ছাড়া অন্য কোন স্থানে রাফয়ে ইয়াদাইন না করা উত্তম। আর এটি নবী স.-এর সুন্নাহ।
অষ্টম দলীল : সাহাবায়ে কেরামের কর্মধারা
ইমাম তিরমিযী রহ. বলেন-
‘হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. এর (রাফয়ে ইয়াদাইন না করা সংক্রান্ত) হাদীস ‘হাসান’ পর্যায়ে উত্তীর্ণ এবং অনেক আহলে ইলম সাহাবা-তাবেয়ীন এই মত পোষন করতেন। ইমাম সুফিয়ান ছাওরী রহ. ও কুফাবাসী ফকীহগণ এই ফতোয়া দিয়েছেন।
(জামে তিরমিযী : ১/৩৫)
০৩ রা জানুয়ারি, ২০১৪ বিকাল ৫:১০
েমা: রিফকুল ইসলাম বলেছেন: কিন্তু আপনি রফেইয়াদাইন করা সম্পর্কে বুখারী ও মুসলীম শরীফে যে কয়টা হাদীস বর্ণনা করা হয়েছে সেখান থেকে কেন উদ্ধৃতি দেন নাই? ঐ হাদীস গুলো সম্পর্কে কেন এড়িয়ে গেলেন? যদি সবগুলো হাদীস একসাথে করা হয় এবং পরবর্তীতে সহীহ, জয়ীফ, মযু হাদীস কোনগুলো তা পরীক্ষা করা হয় বা হাদীস বিশ্লেষণকারীদের বক্তব্য কি তা বিশ্লেষণ করতেন তবেই তো আমাদের আর কোন দ্বিধা থাকতো না। আশা করি ঐ হাদীস গুলো সবার সামনে পেশ করবেন আপনার এই হাদীস গুলোর সাথে সাথে। ধন্যবাদ।
৫| ০৩ রা জানুয়ারি, ২০১৪ বিকাল ৫:০৫
আশমএরশাদ বলেছেন: মুলত নারী ও পুরষের সালাতের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। মুফতি ইব্রাহীম এবং আরো অনেক ডঃ হাদিস এবং ইসলাম বিশারদ গণ এই বিষয়ে নিয়মিত টিভিতে বলেতেছেন। আগের মারফতি গণের কথার কোন মুল্য নেই। মুলত আমাদের দেশের মেয়েরা যে ভাবে নামাজ পড়ে বা সেজদায় সেটা দেখতেও দৃষ্টিকটু এবং স্বাস্থ্য সম্মত নয়, নামাজ শুধ ইবাদত নয় শারিরীক ব্যায়ামও । সুতরাং নারী পুরুষের নামাজের মধ্যে দৃশ্যত পার্থক্য নেই আর নারীরা যে বুকে হাত বাঁধে সেটাই সহী নাবিজীও সে ভাবেই বাঁধতেন পুরুষরা যে নাভি বরাবর হাত বাঁধে সেটা ইরাকের একটি সম্প্রদায় থেকে এসেছে।
মুফতি ইব্রাহীম এবং এনটিভিতে আপনার জিজ্ঞাসা অনুষ্টানের আলোচকগণের কথা এবং বই পড়ে দেখতে পারেন ।
ভাই আনোয়ারের আলোচনাটা নির্থক কারণ উনার হাদিস গুলা সহি সিত্তা থেকে নেয়া নয়। এবং বিজ্ঞান সম্মতও নয়।
সিজদার সময় বুকের নীচ দিয়ে ছয় মাসের একটা বকরী যাও্য়ার মত করে মানুষকে আলগা থাকতে বলেছেন সেখানে নারী পুরুষ আলাদা করে বলা হয়নি।
০৩ রা জানুয়ারি, ২০১৪ বিকাল ৫:১৩
েমা: রিফকুল ইসলাম বলেছেন: আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ মূল্যবান মন্তব্যের জন্য। কিন্তু প্রোফাইল পিকচারের মেয়েটাকি সঠিক পথে আছে আশমএরশাদ ভাই?
৬| ০৩ রা জানুয়ারি, ২০১৪ বিকাল ৫:২০
আশমএরশাদ বলেছেন: ভাই রফিকুল : মালালা একজন মুসলমানের মেয়ে এবং তার সম্পর্কে বিভ্রান্তি ছড়ানোর জন্য নানা গল্প ছড়ানো হচ্ছে যেমন করে বলা হয়ে থাকে নীল আমস্ট্রংদের চাঁদে অভিযান নিয়ে। আসলে প্রকৃত ইসলামী চেতনায় রয়েছে উদারতা সংকীর্ণতার স্থান নেই আর আপনি উপরে লিখেছেন ডেডিকেটেড সোশাল ওয়ার্কার হতে । এই সোস্যাল ওয়ার্কার হতে হলে আপনি কে কি কোন ধর্মের সেটা দেখলে চলবে না আপনাকে হতে হবে ভিক্টিম নির্ভর ।রাজনৈতিক মতলব বাজিও এখানে অচল । সুতরাং যেটা লিখেছেন সেটা যদি হতে চান তাহলে আরো উদার হন।
০৩ রা জানুয়ারি, ২০১৪ রাত ৮:৩৩
েমা: রিফকুল ইসলাম বলেছেন: মালালার কথা বলাতে কি রাগ করলেন নাকি ভাই। হা মালালা মুসলিম এবং মুসলিমের সন্তান । তবে আমি ব্যক্তিগত ভাবে মালালার ঘটনাটি পুরোপুরি ভাবে বিশ্বাস করি না। এটা সত্যি। আর সোস্যাল ওয়ার্কার হওয়া কথা বলছেন সেটা খুশি হইছি। আমি জানি না আপনি সোস্যাল ওয়ার্ক সম্পর্কে কতটুকু জানেন। ডেডিকেটেড সোস্যাল ওয়ার্কার হতে হলে তা ভিক্টিম নির্ভর হতেই হবে তা শর্ত না। আমাদের ক্লাইন্ট সে ভিক্টিম হতেও পারে আবার নাও হতে পারে। তবে সোস্যাল ওয়ার্কটিকে পেশার স্বীকৃতি পাওয়ার জন্য নিরব আন্দোল করতে হচ্ছে।
৭| ০৩ রা জানুয়ারি, ২০১৪ বিকাল ৫:২৯
মোঃ আনারুল ইসলাম বলেছেন: এখানে যেহেতু ড. জাকির নায়েকের কথাই আসল তবে তিনি যে "ইউনিটি অফ মুসলিম" বা মুসলিমদের ঐক্য নামে একটি লেকচার দিয়েছেন সে ব্যাপারে আপনার মন্তব্য কি? তিনি সেখানে কোন মাযহাব না থাকার ব্যাপারে বলেছেন। তিনি বলেছেন যে, মুসলিম হবে কোন মাযহাব ছাড়া।
এর বিষয়ে ছোট আলোচনা
মাজহাব কি ও কেন ? মাযহাব মানার কি কোন দলীল নেই ?
প্রশ্নঃ মাজহাব কি ও কেন ?
**********************
মাজহাব শব্দের অর্থ – চলার পথ
ইসলামি পরিভাষায় কোরআন – সুন্নাহর প্রদর্শিত,রাসুল সাঃ ,সিদ্দিকীন,শোহাদায়ে কেরাম ও সতকর্মশীল ব্যক্তিবর্গের মনোনীত পথের নামই হল মাজহাব।
অন্ন শব্দে এটাই সিরাতেমুস্তাকিম ও সরল পথ । সুতরাং মাজহাব কোন নতুন ধর্ম,মতবাদ বা কোরআন সুন্নাহ বহির্ভূত ব্যক্তি বিশেষের নিজস্ব মতের নাম নয়, বরং মাজহাব হল কোরআন, সুন্নাহ,ইজমা ও কেয়াসের ভিত্তিতে
বিভিন্ন ধর্মীয় সমস্যার প্রদত্ত সমাধান যা এবিষয়ে বিজ্ঞ ব্যক্তিগণ প্রদান করেছেন। মাজহাব হল , কোরআন -সুন্নাহর তে অঅস্পষ্ট আয়াতও হাদীস গুলুর ব্যাখ্যা মাত্র।
সুতরাং কোন ইমাম ই রাসুলের কথার বাহিরে এক কদম ও দেননি । সুতরাং যেহেতু চার মাজহাবই ইসলামের মুল ৪ টি ভিত্তি তথা কোরআন ,সুন্নাহ, ইজমা, ও কিয়াসের আলোকে প্রণীত ।
আর এই ৪ টি মাযহাবের ব্যাপারে রাসুলের সাঃ ও সমর্থন ছিল।যা আমরা মুয়াজ রা” এর হাদিসের মাধ্যমে জানতে পারি। তাহলে মাজহাব মানার মানেই হল রাসুলের কথা মানা ।
এখানে একটা প্রশ্ন? হাদিস শরীফে মূলত পাওয়া যায়, কুরআন –সুন্নাহ মানার কথা তাহলে মাযহাব মানার দরকার কি?
হাদিসের কথা অবশ্যই ঠিক ।কিন্তু কুরআন –সুন্নাহর প্রত্যক্ষ –পরোক্ষ , সুস্পষ্ট –অস্পষ্ট ও পরস্পর বিরোধপূর্ণ জটিল বিষয়ের যথাযথ সমাধান বের করে তা অনুসরণ করে মূল লক্ষে যাওয়া সকলের পক্ষে মোটে ও সম্ভবপর নয়। বরং এ সকল বিষয়ে পূর্ণ পারদর্শী ব্যক্তি বর্গের দেওয়া সমাধান মেনে চলেই মূল লক্ষে যাওয়া সম্ভব।
এখানে অনেকে প্রশ্ন করেন, এক সময় বাংলায় কোরআন হাদিস ছিলনা তাই আমরা মৌলবীদের কথা মেনেছি। এখন আর দরকার নাই। কেননা বাংলায় কোরআন ও হাদিসের অনেক বই পাওয়া জায়।তাই আমরা এগুলু দেখে দেখে আমল করব???????
এদের উত্তরে আমি প্রথমে - বলবো ভাই দেখুন, আপনি হয়ত বাংলা পড়তে পারেন। কিন্তু আমাদের দেশে লাখো মানুষ আছে যারা বাংলা পড়া থাক দূরের কথা তারা তো ক,খ ই চিনেনা এদের কি হবে? এমন আবস্হা পূবেও ছিল ,আছে এবং থাকবে ৷ তাছাডা আরবী কোরআন হাদীসতো বাদই দিলাম বিশ্বে এখনও লাখো-কুটি মুসলিম এমনও রয়েছেন যারা আরবী কোরআন হাদীস পড়তে পারেনা ,ব্যখা জানাতো দূরের কথা ৷
দ্বিতীয়ত -শুধু বই পড়েই সব জিনিসের সমাধান দেয়া যায়না । বিশেষ করে ঐ সকল জিনিস যে গুলুর জন্য রয়েছে কিছু নীতি মালা ও কোর্স , প্রশিক্ষণ । যেমন , ডাক্তারি বিসয়গুলু। বাংলায় এবিষয়ে বইয়ের কোন অভাব নেই। বরং ফুটপাথেও পাওয়া যায়। অনুরূপ উকিলি, সংবিধান থেকে নিয়ে সকল আইনের বই কিন্তু কিনতে পাওয়া যায়। এখন বলুন তো কেউ একজন যদি এ বই গুলু কিনে এনে আগা –গোঁড়া মুখস্ত করে ফেলে এবং অনায়েসে বলতে পারে সরকার কি তাকে ডাক্তার / উকিল হিসেবে সার্টিফিকেট দিবে? আর আপনিও সমস্যা নিয়ে তার কাছে যাবেন ? অথবা আপনি নিজে বাংলা পরে নিজের চিকিৎসা ও আইনি বিষয় সমাধান করেন? সেক্ষেত্রে তো ঠিকই বলবেন যে এ গুলু আমার কাজ না। এ প্রশ্নের যে জবাব যারা মাজহাব মানবেনা বলে তাদের ও একি জবাব।
তাছাড়া আমরা সকলের জন্য সমহারে মাজাহাব মানা ওয়াজিব এ কথা ও তো বলিনা । বরং আমরা বলি মাজহাবের রয়েছে বিভিন্ন স্তর । যাদের এজতেহাদ করার ক্ষমতা আছে তাদের জন্য অন্য কারো মাযহাব মানার প্রয়োজন নেই ৷ আর যাদের কাছে এজতেহাদ করার ক্ষমতাতো দূরে থাক কোন কিছু পড়তে ও জানেনা তাদের জন্যই মাযহাব বা তাকলীদ ৷
; আমাদের অনেক ভাই বলেন, মাযহাব মানার কোন দলীল নাই। বরং এটা ভিত্তিহীন, বানানো ,বিদাআত। আসলে কি তাই?
*************************************************************************
উত্তরঃ না ভাই, কথাটি সঠিক নয়। মাযহাব মানার অবশ্যই দলীল প্রমান আছে। আমাদের কে প্রথমে একটা বিষয় পরিষ্কার করতে হবে। তা হল, মাজহাব মানার অর্থ কি? এর একটা অর্থ হতে পারে কোরআন –সুন্নাহ বাদ দিয়ে কোন ব্যক্তির কথা মানা ।
আরেকটা অর্থ হল, ধর্মীয় বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের জন্য কোন বিজ্ঞ ব্যক্তির ফায়সালা মেনে নেওয়া। যা তিনি কোরআন –সুন্নাহ কে সামনে রেখে প্রদান করেছেন। তার থেকে বর্ণিত প্রতিটি মাসালায় তিনি কোরআন – হাদিসকে ই প্রাধান্য দিয়েছেন। সুতরাং এদের কথা মানার অর্থই হল , কোরআন হাদিস মানা । মূলত এদেরকে মানা উদ্দেশ্য নয়, এবং মানাও হয়না । বরং তাদের দেখান মূলনীতি অনুযায়ী কোরআন- সুন্নার উপর আমল করা ই উদ্দেশ্য , এবং তাই করা হয়। এমন নয় যে, তারা একেকটা নতুন নিয়ম-কানুন দাড় করিয়েছেন।আর আমরা এ গুলোর অনসরন করছি। সারকথা, দ্বীন মানার জন্য তাদের মাতামত গুলু কে সহায়ক হিসেবে নেয়া হয় মাত্র।
কুরআনের আলোকে মাযহাব
***********************
কুরআনের মোট ৩ টি আয়াত এবিষয়ে দলীল হিসেবে তুলে ধরছি ।
১ ম আয়াতঃفا سئلوا اهل الذكر ان كنتم لاتعلمون তোমাদের কোন বিষয়ে জানা না থাকলে আহলে ইলমদের নিকট জিজ্ঞাসা কর । সুরা, আল আম্বিয়াঃ৭,ও সুরা আন নাহালঃ৪৩,
টীকাঃ এ আয়াত যদিও বিশেষ ঘটনার সাথে যুক্ত । কিন্তু কুরআনের একটি মূলনীতি হল, যে ঘটনাকে কেন্দ্র করে তা নাযিল হয়েছে তা এতে সীমাবদ্ধ থাকেনা।বরং শব্দের ব্যাপক অর্থ ব্যাবহার হবে।
বিশ্লেষণঃ দেখুন, আয়াতটির হুকুম রহিত হয়নি।
আয়াতে বলা হচ্ছে,অজানা বিষয়ে বিজ্ঞ লোকদের অনুসরণ করার জন্য। এখন আমরা যদি বলি , না তাদের অনুসরণ কারা যাবেনা । তাহলে এটা কি কোরআনের বিরোধিতা হবেনা।
আর অজানা বিষয়ে বিজ্ঞদের অনুসরণ করার নাম ই হল , তাকলিদ। সুতরাং তাকলিদ কোরআন দ্বারা প্রমাণিত।
আল্লামা খতীবে বাগদাদি (রাহ)বলেন, করান-সুন্নার যে সকল বিষয়ে সাধারণ লোক সরাসরি শরীয়তের বিধান আহরণে অক্ষম, তাদের জন্য কোন বিজ্ঞ আলেমের তাকলিদ করা আল্লাহর নির্দেশ মোতাবেক জায়েজ।সুত্রঃ আল ফাকিহ ওয়াল মুতাফাককিহ ৩০৬।
আল্লামা ফাখ্রুদ্দিন ও আল্লামা আলুসি উক্ত আয়াতের তাফসীরে লিখেন, উপরুল্লিখিত আয়াতের ভিত্তিতে অনেকে ই মুজতাহিদ ইমামগনের তাকলিদ বৈধ ও অনভিজ্ঞ সবাইকে বিজ্ঞ মুজতাহিদের শরণাপন্ন হওয়া ওয়াজিব বলেন।
সুত্রঃতাফসিরে কাবির১৯/১৯,রুহুল মায়ানি-১৪/১৪৮, মাঝহারি- ৫-৩৪২, লুবাব-১২/৬১, কুরতুবি ১০/৭২
২য় আয়াতঃ اطيع الله واطيع الرّسول وأولى ألامر من كم الخহে ইমানদারগণ ! আল্লাহ ও তার রাসুলের আনুগত্য কর।আর আনুগত্য কর তোমাদের মধ্যে যারা “ উলিল আমর” তাদের । সুরা আন নিসাঃ ৫৯
বিশ্লেষণঃ দেখুন , আয়াতে আল্লাহ ও তার রাসুলের পাশাপাশি উলিল আমরের আনুগত্য করতে বলা হয়েছে।আসুন, দেখি এ ব্যাপারে মুফাসসির গণ কি বলেন।তাফসির গ্রন্থাবলিতে উলিল আমরের ২ টি তাফসীর পাওয়া যায়। ১মঃ কুরআন- সুন্নার ইলমের অধিকারী ফাকিহ ও মুজতাহিদগণ। ২য়ঃ মুসলিম শাসক বর্গ । ১ম তাফসীর টি অধিক গ্রহণযোগ্য । কেননা , এর পক্ষে মতামত দিয়েছেন, হযরত জাবের, এবনে আব্বাস, মুজাহিদ, আতা বিন আবি রাবাহ, আতা বিন সাইব, হাসান বাসরি ও আলিয়াহ (রাহ) এর মত সেরা মুফাসসিরগন । মাত্র দু একজন ২য় মত টি ব্যক্ত করেছেন।
আল্লামা রাযি (রাহ) প্রথম তাফসীরের সমর্থনে সারগর্ভ যুক্তি প্রমান অবতারনা করে বলেছেন, বস্তুত আয়াতে উলিল আমর ও উলামা শব্দ দুটি সমার্থক।
ইমাম আবু বাকার (রাহ) বলেন , এখানে মূলত কোন বিরোধ নেই। মূলত উলিল আমর শব্দ টি ব্যপক। সুতরাং ধর্মীয় বিষয়ে ১ম তাফসীর গৃহীত হবে। আর আহকাম ও মাসআলার ক্ষেত্রে ২য় তাফসীর গ্রহন হবে। আয়াতের অর্থ হবে, তোমরা রাজনীতি প্রশাসনিক ক্ষেত্রে শাসকবর্গের কথা আর আহকাম ও মাসআলার ক্ষেত্রে আলিমগণের ইতায়াত কর । সুত্রঃ আহকামুল কুরআন-২/২৫৬,তাফসিরে কাবির-৩/ ৩৩৪ ।
মোট কথাঃ আলোচ্য আয়াতের আলোকে আল্লাহ ও রাসুলের ইতায়াত যেমন ফরয তেমনি কুরআন ও সুন্নার ব্যাখ্যা দাতা হিসেবে আলিম ও মুঝতাহিদ্গনের ইতায়াত ও ফারয।
আয়াতের শেষাংশের ব্যাখ্যা নিয়ে অনেকে প্রশ্ন তুলতে পারেন, যেখানে বলা হয়েছে মতবিরোধ পূর্ণ ব্যাপারে আল্লাহ ও তার রাসুলের দিকে ফিরার জন্য । এ ব্যাপারে আমরা বলবো, মূলত এ দ্বিতীয়াংশের মাধ্যমে ফকিহ ও মুজতাহিদদেরকে উদ্দেশ্য করা হয়েছে। সাধারন মানুষের জন্য নয়। যা আহলে হাদিসদের ইমাম জনাব নবাব সিদ্দিক হাসান খান তার লিখিত কিতাব “ফাতহুল বায়ান “ নামক গ্রন্থে ও স্বীকার করেছেন, তার ভাষায়ঃوالظاهرأنّه خطاب مستقلّ مستأنف موجّه للمجتهدين স্পষ্টতই এখানে মুজতাহিদ গণকে সতন্ত্রভাবে সম্ভোধন করা হয়েছে। এ দুটি আয়াতের আলোচনা বিস্তারিতভাবে করলাম। আশা করি আমার লা মাজহাবী ভাইগণ একটু হলেও চিন্তা করবেন।
তৃতীয় আয়াত: والتّبع سبيل من أناب اليّ যে আমার অভিমুখী হয়েছে , তুমি তার পথ অনুসরণ কর। সুরা আল লোকমানঃ ১৫
এ আয়াতে মূলত আবু বাকার (রা) মতান্তরে সা”দ ইবনে ওয়াককাসের ব্যাপারে মন্তব্য করা হলেও কোন কোন তাফসীর কারক বলেছেন, এখানে উদ্দেশ্য হল , ধর্মানুরাগী মুসলমান । আল্লামা জমখসরি লিখেন,আল্লাহ অভিমুখী বলতে মুমিনদের পথ বুঝানো হয়েছে। কাজেই আয়াতের অর্থ হল, তুমি দ্বীন ধর্মের ক্ষেত্রে মুমিনগণের পথ অনুসরণ কর। সুত্রঃ আল কাসসাফ-৩/৪৭৯।
হে আল্লাহ! আমাদের কে সরল পথে পরিচালিত কর ।অর্থাৎ তাদের পথে যাদের কে তুমি নেয়ামত দান করেছ,
সাহাবা যুগে তাকলিদ
******************
প্রশ্নঃ আমাদের অনেক ভাই বলেন, সাহাবা যুগে তাকলিদ ছিলনা। তাই আমরা ও কারো তাকলিদ করবোনা । / মাজহাব মানবনা। এটা কি ঠিক ?
উত্তরঃ না ভাই, এটা মোটেও ঠিক নয়। দেখুন , আমি আবারও একটা বিষয় পরিষ্কার করছি। মাজহাব মানা/ তাকলিদ করার মানে কিন্তু এই নয় যে কোন ইমাম মনগড়া কথা বলে যাবেন , আর আমরা তা মেনে নেব। বরং তাক্লিদ/ মাজহাব মানার অর্থ হল, একজন ধর্ম বিষয়ে অভিজ্ঞ ব্যক্তি কুরান-সুন্নার আলোকে বিভিন্ন সমস্যার সমাধান দিবেন , আর যারা এ বিষয়ে জানেনা বা জানার সুযোগ নেই তারা তার কথা মতে আমল করবে। এ পদ্ধতি সবসময় ছিল। বরং রাসুলের যুগেও সাধারণ সাহাবায়ে কেরাম , যারা বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত থাকতেন তারা আলেম সাহাবাদের কাছ থেকে জেনে আমল করতেন। আমাদের যে ভাইগণ মাজহাব না মেনে সরাসরি কোরআন হাদিেসর উপর আমল করবেন বলেন, তারাও কিন্তু প্রতিটি কাজ কোরআন হাদিস খুলে তারপর করেন না ।
বরং তার নিকট গ্রহন যোগ্য শাইখ/ ইমামের কথা মানেন এবং তার রেফারেন্স দেন। যেমন , শাইখ গালিব, জাকির নায়েক, বিন বাজ , আল বানি, ইত্যাদি।
সুতরাং আমরা হানাফি মাজহাব মানার অর্থ হল, ইমাম আবু হানিফা (রাহ”) কোরআন সুন্নার আলোকে যে সমাধান দিয়েছেন তা মানি। অর্থাৎ তার রেখে যাওয়া উসুল অনুযায়ী কোরআন হাদিস বুঝার চেষ্টা করি। এটা অবৈধ কিছু নয়। কেননা হাদিস যাচাই বাছাই করার বর্তমান নিয়ম কিন্তু রাসুলের যুগে ছিলনা । পরবর্তীতে আবিষ্কার হয়েছে। আমরা কিন্তু সেগুলু ঠিকই মানছি । তাহলে উসুলে ফিকহ মানতে সমস্যা কি? এখন আসা যাক মূল আলোচনায় ।
সাহাবা যুগে তাকলিদ
উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা বুঝা গেল, মাজহাব/ তাকলিদ করার অর্থ হল ধর্মীয় অজানা বিষয়ে বিজ্ঞ লোকের কথা মানা। এ অর্থে সাহাবা যুগেও এর প্রচলন ছিল। কিন্তু যেহেতু আমাদের ৪ ইমামের আগমন সাহাবা যুগের পর তাই সাহাবারা আমাদের ইমাম দের অনুসরণ করেছেন কিনা ? এমন প্রশ্ন হাস্যকর । হ্যাঁ , প্রশ্ন হতে পারে এর প্রচলন তাদের যুগে ছিল কিনা? এর উত্তরে আমরা বলব , জি ভাই ছিল ।
যেমনঃ ১ ম প্রমানঃ
হযরত আস ওয়াদ বিন ইয়াযিদ বর্ণনা করেন, মু”আজ ইবনে জাবাল গভর্নর হিসেবে ইয়ামানে আগমন করলে আমরা তাকে জিজ্ঞাসা করি, জনৈক ব্যক্তি ১ কন্যা ও ১ বোন রেখে মারা গেছে। এখন তাদের মাঝে সম্পদ বণ্টনের পদ্ধতি কি হবে? তদুত্তরে তিনি প্রত্যেকের অংশ অর্ধেক বলে সমাধান দেন। বুখারি শরিফ – ৮/৩৫১, হাঃ ৬৭৩৪
পর্যালোচনাঃ
ক* মুয়াজ( রা ) একজন নির্ধারিত ব্যক্তি মাত্র। ইয়ামান বাসী তার অনুসরণ করা ওয়াজিব ছিল। অন্যথায় তাকে প্রেরণ অনর্থক ও অহেতুক গণ্য হবে। জা নবীর সা, শানের খেলাফ।
খ, মুয়াজের ইয়ামান গমন রাসুলের যুগেই ছিল। এর মাধ্যমে নির্ধারিত ব্যক্তির অনুসরণ রাসুলের যুগেই শুরু হল। কেননা , রাসুলের জীবিত থাকাকালীন যাবতীয় বিষয়ে মুয়াজের অভিমত দলীল হিসেবে গ্রহণযোগ্য ছিল।
গ, প্রশ্ন ও উত্তর কোথাও দলিল উত্থাপন করা হয়নি। বরং তার প্রতি সুধারনার ভিত্তিতে তার কথা মানতে বাধ্য ছিলেন। এটাই তাক্লিদে সাখছি।
২য় প্রমানঃ
জনৈকা সাহাবী রাসুল (সা) এর কাছে আরয করেন, ইয়া রসুলাল্লাহ!আমার স্বামী জিহাদে গেছেন।তিনি থাকাবস্তায় আমি তার নামায ও অন্যান্য আমল অনুসরণ করতাম। তার আসা পর্যন্ত আমাকে এমন আমল বলে দেন, যা তার সমপর্যায়ে হবে।সুত্রঃ মুসনাদে আহমাদঃ৩/৪৩৯, তাব্রানি ২০/১৯৬,হাঃ৪৪১, মুস্তাদ্রা কে হাকিম২/৭৩ হাঃ ২৩৯৭।
পর্যালোচনাঃ
দেখুন, হাদিসে মহিলা নামায সহ যাবতীয় আমলে তার স্বামী তথা ১ ব্যক্তির অনুসরণ করার কথা বলছেন, অথচ রাসুল কিছুই বল্লেন্না। এতে তাকলিদে জায়েজ হওয়ার ইংগিত পাওয়া যায়।
তৃতীয় প্রমানঃ
রাসুলুল্লাহ সা, আব্দুল্লাহ ইবনে মাসুদ রাঃ , ব্যপারে বলেন,আমি তোমাদের জন্য তাই পছন্দ করি ইবনে মাসুদ যা পছন্দ করে।সুত্রঃ রে ইরশাদ মুসতাদরাক – ৩/৩১৯ হাঃ৫৩৯৪ । ইমাম জাহাবি ও হাকিম হাদিস টি কে সহিহ বলেছেন।
দেখুন, হাদিসে ইবনে মাসুদের পছন্দই রাসুলের পছন্দ বলে মত ব্যক্ত করা প্রমান বহন করে তার কথা অনুযায়ী অন্যরা আমল করলেও তা রাসুলের নিকট গৃহীত হবে। এর মাধ্যমে ও তাকলিদে শাখসি প্রমাণিত হয়।
উল্লেখ্য, হানাফি মাযহাবের মাসআলা – মাসাইল বেশীর ভাগ ইবনে মাসুদের রাঃ বর্ণনা ও আমলের ভিত্তিতে ই হয়েছে।
৪র্থ প্রমানঃ
মদিনাবাসীর তাকলিদ।
একদল মদিনাবাসি হযরাত ইবনে আব্বাস কে মাসআলা জিজ্ঞেস করল যে, ফরয তাওয়াপের পর বিদায়ী তাওয়াপের আগে যদি কোন মহিলার ঋতুস্রাব শুরু হয় তাহলে কি করবে? উত্তরে তিনি বললেন, বিদায়ী তাওয়াফ না করে মক্কা শরীফ ত্যাগ করতে পারবে । মদিনাবাসি যাইদ বিন সাবিতের অনুসরণ করতেন। তাই তারা বলল, আমরা যাইদ কে উপেক্ষা করে আপনার কথা মানতে পারিনা। যেহেতু আপনার ফাতওয়া যাইদের বিপরীতে । সুত্রঃবুখারি-২/৫৪১ ( ১৭৫৮-১৭৫৯)দেখুন, এখানে মদিনা বাসী যাইদ(রা) এর অনুসরণ করতেন যা তাকলিদে শাখসি ছিল। তাই তারা ইবনে আব্বাসের কথা সরাসরি না মেনে বলল ,আমরা আগে জাইদ কে জিজ্ঞাসা করি, তারপর। অথচ এ মাসআলায় ইবনে আব্বাস সঠিক ছিলেন। পরে ইবনে আব্বাস তাদেরকে বুঝিয়ে বললেন, তাহলে তোমরা মদিনায় গিয়ে উম্মে সুলাইম কে জিজ্ঞাসা করে নিবে।সুত্রঃ আবু দাউদ-তায়ালাসি প্রঃ২২৯ পরবর্তীতে তারা তাই করল। যাইদ বিন সাবিত ও বিষয়টি তাহকিক করে ইবনে আব্বাসের কথা মেনে নেন। দেখুন, কি অপূর্ব অনুসরণ। সাধারনরা এমনিতেই মেনে নিল । আর যিনি বিজ্ঞ , তিনি তাহকিক করার পর মেনে নিলেন। সুতরাং সাহাবারা কারো অনুসরণ করেননি এমনটা বলা ঠিক হবেনা।
তাছাডা নবী সাঃ পৃথিবী থেকে বিদায়ের পর সাহাবায়ে কেরামের সংখ্যা ছিল প্রায় ১৪৪০০০ তনমধ্যে ১৪৯ জন ছিলেন মুজতাহিদ ছাহাবী ,আর বাকীরা ছিল সাধারন তবকার সাহাবী অথাত তাদের মধ্যে ঐ রকম এজতেহাদ করার ক্ষমতা ছিলনা ,আবার মুজতাহিদ ছাহাবীদের
মধ্যে ৭ জন ছিলেন ১ম তবক্বা ২০ জন ছিলেন ২য় তবক্বার ও ১২২ জন ছিলেন ৩য় তবক্বার , গডে এ ১৪৯জন মূলত এ মুজতাহিদ ছাহাবীদের তাকলীদ করে ছিলেন প্রায় লক্ষাধীক ছাহাবায়ে কেরাম
সুতরাং ছাহাবীদের যুগেই মুলত তাকলীদের সূচনা ৷
০৩ রা জানুয়ারি, ২০১৪ রাত ৮:২৪
েমা: রিফকুল ইসলাম বলেছেন: বুঝলাম আপনার কথা। কিন্তু ৪ ইমামতো আর বলে যাননি যে তাদের নাম দিয়ে দল তৈরি করতে। কোরআন ও হাদীস নিয়া মাযাহাব মাযহাব করেই দল তৈরি হয়। ইসলামে তাই এটির জায়গা করে দেয়াটা কতটুকু যুক্তি যুক্ত। হা আমরা না পারলে জ্ঞানী মানুষের কাছে যাব। তাই বলে যার কাছ যে বা যার লেখা বই পড়লাম তার নাম করে দল তৈরি কি ইসলাম আমাদের শেখায়। আজ কেউ যদি হানাফী হয় তবে সে শাফেই ফিক্কাহ মানতে কোন দিনই রাজি নয় সেটা সহীহ শুদ্ধ হলেও। কারণ কারণ করা হানাফী বা শাফাই বা অন্য ইমামকে ১০০% সঠিক বলে দাবি করে। তাই বলতে চাই যে যার যোগ্যতা আছে তারা যেকোন জায়গা থেকে শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে। আর যারা পারে না তারা যেখান থেকে পারে গ্রহণ করবে। কিন্তু যখন তারা সেই জ্ঞান আহরণ করবে তখনই তাদের উপর দায়িত্ব যে যা শিখলাম তা কি শরীয়ত সম্মত কিনা!!! আর কোরআনে আল্লাহর উপর যারা বিশ্বাস স্থাপন করে তাদেরকে কি বলা হয়েছে? তাদেরকে শুধ মুসলিম বলা হয়েছে। এমনকি পূর্ববর্তী নবীদেরও। সুতরাং বিভিন্ন নামে আমরা আমাদের বিভিন্ন দল গঠন করছি এবং একে অপরের সঠিকতা নিয়ে কথা বলছি। তাই আমাদের মুসলিম উম্মাদের এক হতে হবে। আল্লাহ এক, এবং তার সৃষ্টি শ্রেষ্ঠ জীব হিসেবে আমাদের একই দলে আবদ্ধ থাকা বাঞ্চনীয়। আরেকটা কথা মো: আনারুল ইসলাম ভাই। আপনি কিন্তু রফে ইয়াদিন বা আমিন বলা ইত্যাদি বিষয়ের কথা বলেন নাই অথবা এড়িয়ে গেছেন। আপনি একজন হাদীসের ছাত্র হিসেবে এটা জানানেন আশা করি। এ সম্পর্কে আপনার মতামত জানতে চাচ্ছি।
৮| ০৩ রা জানুয়ারি, ২০১৪ রাত ৯:০১
মোঃ আনারুল ইসলাম বলেছেন: রাফয়ে ইয়াদাইন না করা সম্পর্কিত //ইমামের পিছনে মুক্তাদীর সুরা ফাতিহা পড়া আর না পড়া
আজকাল কিছু ভাই রাফয়ে ইয়াদাইন সম্পর্কে এমন কিছু কথা ছড়াচ্ছে যা সাধারন মুসলমানদের বিভ্রান্তিতে ফেলছে। কিন্তু তারা (সাধারন মুসলমান) কুরআন ও হাদীস সম্পর্কে বিশেষ জ্ঞান রাখেন না এবং স্বভাবতই তারা অনেকেই বিভ্রান্তির স্বীকার হচ্ছেন। তাই উক্ত বিষয় সম্পর্কে কিছু বলা নিজের ঈমানী দায়িত্ব মনে করছি।
নিচে রাফয়ে ইয়াদাইন না করা সম্পর্কিত দলীলগুলো পেশ করা হল :---
প্রথম দলীল : নবী স.-এর নামায
হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাঃ বলেন আমি কি তোমাদের কে হুজুর সাঃ এর নামাজ সম্পর্কে অবগতি দেব না? এ কথা বলে তিনি নামাজ পড়ে দেখালেন এবং নামাজে তাকবীরে তাহরীমার সময় একবার রাফয়ে ইয়াদাইন করলেন। নামাজে আর কোথাও তিনি রফঈ ইয়াদিন করলেন না। (প্রমান: তিরমিযী ১;৩৫, সহীহ নাসায়ী শরীফ, হাদিস নং ১০৬১, প্রকাশনী- ইসঃ ফাউঃ বাংলাদেশ, প্রকাশকাল- মে, ২০০২)
মুহাদ্দিস আহমদ শাকির এ হাদীস সম্পর্কে বলেন-
“ইবনে হাযম ও অন্যান্য হাফিজুল হাদীস উপরের হাদীসটিকে ‘সহীহ’ বলেছেন।”
আল্লামা ইবনুত তুরকামানী (রহ) বলেন,
“এই হাদীসের সকল রাবী সহীহ মুসলিমের রাবী”
(আল-জাওহারুন নাকী : ২/৭৮)
স্মর্তব্য যে, ইমাম তিরমিযী রহ. “সুনান” গ্রন্থে ইবনুল মুবারক রহ. এর যে মন্তব্য উল্লেখ করেছেন তা এই বর্ণনা সম্পর্কে নয়, অন্য আরেকটি বর্ননা সম্পর্কে, যা নিন্মোক্ত ভাষায় বর্ণিত হয়েছে-
‘রসুল স. শুধু প্রথমবার হাত উঠিয়েছেন।’
এ দুই বর্ণনার মধ্যে প্রভেদ না করায় অনেক আলেম বিভ্রান্তিতে পতিত হয়েছেন কিংবা অন্যকে বিভ্রান্ত করেছেন। (দেখুন : নাসবুর রাযাহ : ১/৩৯৪)
এজন্য সুনানে তিরমিযীর বিভিন্ন নুসখায় দ্বিতীয় বর্ণনাটি ভিন্ন শিরোনামের অধীনে উল্লেখ করা হয়েছে এবং ইবনুল মুবারকের মন্তব্যও রয়েছে সেখানে। অতএব তার মন্তব্য আলোচ্য হাদীস সম্পর্কে নয়।
(জামে তিরমিযী, তাহক্বীক আহমদ শাকির ২/৪১)
এখানে মুহাদ্দিস আহমদ শাকিরের পর্যালোচনা বিশেষভাবে লক্ষণীয়। তিনি লেখেন-
‘রাফয়ে ইয়াদাইন’ বিষয়ে (একশ্রেনীর মানুষ) জয়ীফ হাদীসকে সহীহ ও সহীহ হাদীসকে জয়ীফ সাব্যস্ত করার প্রয়াস পেয়ে থাকে। তাদের অধিকাংশই নীতি ও ইনসাফ বিসর্জন দিয়ে থাকে।’
দ্বিতীয় দলীল : রাফয়ে ইয়াদাইন সম্পর্কে হাদীসের বারণ
হজরত জাবির ইবনে সামুরাহ রাঃ বলেন , নামাজের মুহুর্তে হুজুর সাঃ আমাদের নিকট আসলেন এবং বললেন, “তোমাদের কি হল যে তোমাদের কে দেখতে পাচ্ছি তোমরা রাফয়ে ইয়াদাইন করছ দুর্দান্ত ঘোড়ার লেজের ন্যায়? নামাজের মধ্যে শান্ত ধীর হও। (প্রমানঃ ... আবু দাউদ ১;১০৯ নাসায়ী ১;১১৭)”
এ হাদীসে রাসূলুল্লাহ স. স্থিরতার সঙ্গে নামায পড়ার আদেশ দিয়েছেন। আর হাদীসের বক্তব্য অনুযায়ীই যেহেতু রফইয়ে ঈয়াদিন স্থিরতা-পরিপন্থী তাই আমাদের কর্তব্য হল, নবী স.-এর নিদেশমতো স্থিরতার সঙ্গে নামায পড়া।
তৃতীয় দলীল : হযরত উমর রা.- এর আমল
আসওয়াদ রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন-
‘আমি হযরত ওমর রা.-কে দেখেছি, তিনি শুধু প্রথম তাকবীরের সময় রাফয়ে ইয়াদাইন করতেন, পরে করতেন না।’ (তাহাবী: ১/১৬৪)
আল্লামা যায়লায়ী রহ. এই হাদীসকে ‘সহীহ’ বলেছেন। সহীহ বুখারীর বিখ্যাত ভাষ্যকার আল্লামা ইবনে হাজর আসকালানী রহ. এই বর্ণনার সকল রাবীকে ‘ছিকাহ’ (নির্ভরযোগ্য) বলেছেন। আলজাওহারুন নাকী গ্রন্থে বলা হয়েছে ‘এই হাদীসের সনদ সহীহ মুসলিমের সনদের মতো শক্তিশালী।’
ইমাম তাহাবী রহ. বলেন, ‘হযরত ওমর রা. এর আমল এবং এ বিষয়ে সাহাবায়ে কেরাম রা.-এর কোনরূপ বিরোধিতা না থাকায় প্রমাণ করে যে, সেই সঠিক পদ্ধতি এবং এ পদ্ধতির বিরোধিতা করা কারও জন্য উচিত নয়।’
(তাহাবী : ১/১৬৪)
চতুর্থ দলীল : হযরত আলী (রা) এর আমল
“হযরত আলী (রা) নামাযে প্রথম তাকবীরে হাত উঠাতেন এরপর আর হাত উঠাতেন না।” (সুনানে বায়হাকী : ২/৮০)
আল্লামা যায়লায়ী রহ. বর্ণনাটিকে ‘সহীহ’ বলেছেন। সহীহ বুখারীর বিখ্যাত ভাষ্যকার আল্লামা ইবনে হাজর আসকালানী রহ. এই বর্ণনার সকল রাবীকে ‘ছিকাহ’ (নির্ভরযোগ্য) বলেছেন। সহীহ বুখারীর অপর ভাষ্যকার আল্লামা আইনী রহ. বলেন, “এ সনদটি সহীহ মুসলিমের সনদের সমমানের।’
(নাসবুর রায়াহ : ১/৪০৬, উমদাতুল কারী :৫/২৭৪, দিরায়াহ : ১/১১৩)
পঞ্চম দলীল : হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা.-এর আমল
মুজাহিদ রহ. বলেন-
‘আমি আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা.-এর পিছনে নামায পড়েছি। তিনি প্রথম তাকবীর ছাড়া অন্য সময় রাফয়ে ইয়াদাইন করতেন না।’
(তাহাবী : ১/১৬৩, ইবনে আবী শাইবা : ২/৪১৮ হাদীছ নং ২৪৬৭ [শায়খ আওয়ামা দা.বা. তাহক্বীকৃত নুসখা)
আল্লামা তুরকুমানী রহ. বলেছেন, ‘এ বর্ণনার সনদ সহীহ’
(আল-জাওহারুন নাকী)
ষষ্ঠ দলীল : হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা.-এর আমল
আসওয়াদ রহ. বলেছেন-
‘হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. শুধু প্রথম তাকবীরের সময় রাফয়ে ইয়াদাইন করতেন, এরপর আর করতেন না।’
(জামউল মাসানীদ)
সপ্তম দলীল : খুলাফায়ে রাশেদীন ও রাফয়ে ইয়াদাইন
প্রসিদ্ধ মুহাদ্দিস আল্লামা নামাভী রহ. খুলাফায়ে রাশেদীনের কর্মধারা বিষয়ক বর্ণনাগুলো পর্যালোচনা করে এ সিদ্ধান্তে পৌছেছেন যে-
‘খুলাফায়ে রাশেদীন শুধু প্রথম তাকবীরের সময় রাফয়ে ইয়াদাইন করতেন। অন্য সময় রাফয়ে ইয়াদাইন করতেন বলে প্রমান পাওয়া যায় না।’
(আছারুস সুনান)
খুলাফায়ে রাশেদীন হলেন আম্বিয়ায়ে কেরাম আ.-এর পর মানবজাতির মধ্যে সর্বাধিক মর্যাদার অধিকারী। তাঁরা ছিলেন রাসূলুল্লাহর সত্যিকারের অনুসারী। রাসূলুল্লাহ স. তাদের সুন্নাহকেও নিদের সুন্নাহর মতো অনুসরণীয় ঘোষনা করেছেন। কেননা, তাদের সুন্নাহ ছিল নবীর সুন্নাহ থেকেই গৃহীত। তাই তারা যখন নামাযের সূচনা ছাড়া অন্য কোন স্থানে হাত উঠাতেন না তখন একথা সুস্পষ্ট হয়ে যায় যে, তাদের কাছেও নামাযের সূচনা ছাড়া অন্য কোন স্থানে রাফয়ে ইয়াদাইন না করা উত্তম। আর এটি নবী স.-এর সুন্নাহ।
অষ্টম দলীল : সাহাবায়ে কেরামের কর্মধারা
ইমাম তিরমিযী রহ. বলেন-
‘হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. এর (রাফয়ে ইয়াদাইন না করা সংক্রান্ত) হাদীস ‘হাসান’ পর্যায়ে উত্তীর্ণ এবং অনেক আহলে ইলম সাহাবা-তাবেয়ীন এই মত পোষন করতেন। ইমাম সুফিয়ান ছাওরী রহ. ও কুফাবাসী ফকীহগণ এই ফতোয়া দিয়েছেন।
(জামে তিরমিযী : ১/৩৫)
ইমামের পিছনে মুক্তাদীর সুরা ফাতিহা পড়া আর না পড়া
******************************************************
-
ইমামের পিছনে সুরা ফাতিহা পড়া আর না পড়া
– অনেক দিন ধরেই এটি একটি বিতর্কের বিষয়।এই তর্কটি, কোন পদ্ধতি ভাল ও উত্তম শুধুমাত্র এই বিষয়ে সীমাবদ্ধ নয়,বরং ইমামের পিছনে সুরা ফাতিহা পড়া যাবে কি যাবে না অর্থাৎ জায়েজ নাকি মানা – এটিও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।এ কারণে সালাতের বিভিন্ন বিষয়ের মধ্যে এটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।এজন্য বিভিন্ন আলেম উলামাদের এ নিয়ে বিভিন্ন মতামত লক্ষ্য করা যায় এবং অনেক বই, অনুচ্ছেদ ও পাওয়া যায়।
নামাযের অন্যান্য বিষয়গুলো যেমন রাফয়ে ইয়াদাইন ইত্যাদির ক্ষেত্রে ২ টি মতামত এর মাঝে কোনটি অধিকতর ভাল তা নিয়ে বিভিন্ন আলোচনা পাওয়া যায়,কিন্তু ইমামের পিছনে মুক্তাদীর কেরাত এর বিষয়টি অনেক গুরুতর,কারণ কারও মতে ইমামের পিছনে মুক্তাদীর কেরাত ফরজ,কারও মতে ওয়াজিব,আবার কারও মতে মাকরুহে তাহ্রীমী আর কারও মতে হারাম।
ইমামের পিছনে মুক্তাদীর কেরাত পড়া কি জরূরী? উত্তর যদি হ্যাঁ হয়, তবে কোন নামাযের ক্ষেত্রে, সিরী নামায(ইমাম যখন কেরাত চুপে চুপে পড়েন) এবং জেহরী নামায (ইমাম যখন কেরাত শব্দ করে জোরে জোরে পড়েন), উভয়ের ক্ষেত্রে না যে কোন একটির ক্ষেত্রে।
উত্তর যদি না হয়, তাহলে সে সব হাদীসের ব্যাখ্যা কি যেগুলো দেখতে এ মতামতের বিরোধী মনে হয়?
এই প্রবন্ধটি বা লেখাটি আশা করি আপনার সকল প্রশ্নের উত্তর দিবে এবং আপনার বুঝে আসবে।
আল্লাহ পাক আমাদের সবাইকে বুঝার তওফীক দান করুন। আমিন।
চার ইমাম এবং উলামা কেরাম গণের মতামতঃ
প্রথমত, ইমাম এবং মুনফারিদ (যে একাকী নামায পড়ে) নামাযে সুরা ফাতিহা পড়বে কি পড়বে না – এ বিষয়ে মুজতাহিদ ইমাম গণের মাঝে কোন মত বিরোধ নেই। সকল ইমাম এবং মুহাদ্দিসগণ একমত যে তাদের কে অবশ্যই সুরা ফাতিহা পাঠ করতে হবে এবং এটি বাধ্যতামূলক।তাঁদের এ বিষয়েও ঐক্যমত্য আছে যে, ইমামের পিছনে মুক্তাদীর অন্য কোন সুরা বা আয়াত পড়তে হবে না যা সাধারণত ইমাম বা মুনফারিদ কে সুরা ফাতিহার পড়ে অবশ্যই পড়তে হয়।
কিন্তু মুক্তাদী যখন ইমামের পিছনে নামায আদায় করবেন, তখন সুরা ফাতিহা পাঠ করতে হবে কি না তা নিয়ে উলামা দের মাঝে মতবিরোধ আছে।
ইমাম মালিক ও ইমাম আহমদঃ
তাদের উভয়েরই মত হলঃ জাহরী নামায ( ইমাম যখন কেরাত শব্দ করে জোরে জোরে পড়েন, ফজর, মাগরিব, এশা ) এর ক্ষেত্রে মুক্তাদীর ইমামের পিছনে সুরা ফাতিহা পাঠ করার দরকার নেই।কিন্তু সিরী নামায(ইমাম যখন কেরাত চুপে চুপে পড়েন, যোহর, আসর) এর ক্ষেত্রে সুরা ফাতিহা পাঠ করতে হবে।
ইমাম শাফীঃ
উনার প্রসিদ্ধ মত হচ্ছে, জাহরী নামায এবং সিরী নামায উভয় ক্ষেত্রেই মুক্তাদীর সুরা ফাতিহা পাঠ করতে হবে।
এই মতটি যদিও প্রসিদ্ধ, কিন্তু এটি ইমাম শাফীর সর্বশেষ মত ছিল না।
তাঁর কিতাবগুলোর উপর ভালভাবে পর্যবেক্ষণ করলে এই মতটিকে তাঁর পূর্বের মত হিসেবে পাওয়া যায়।
ইবনে কদামাহ তাঁর কিতাব “আল মুগনী” তে এই মতটিকে ইমাম শাফীর পূর্বের মত বলে অভিহিত করেছেন।
(আল মুগনী ৬০১ : ১)
ইমাম শাফীর নিজের লিখা “কিতাবুল উমম” গ্রন্থ থেকে আমরা জানতে পারি জাহরী নামায এর ক্ষেত্রে মুক্তাদীর সুরা ফাতিহা তিলাওয়াত জরূরী নয়, তবে সিরী নামায এর ক্ষেত্রে সুরা ফাতিহা পাঠ অবশ্যই জরুরী।
তিনি “কিতাবুল উমম” গ্রন্থে লিখেন, “এব্ং আমরা বলি ইমাম নিঃশব্দে পড়েন এ রকম প্রত্যেক নামাযের ক্ষেত্রে ইমামের পিছনে মুক্তাদীর অবশ্যই কিরাত পাঠ করতে হবে।”
(আল মুগনী ৬০১ : ১)
“কিতাবুল উমম” ইমাম শাফীর পরবর্তী কিতাবগুলোর মধ্যে একটি যা হাফেজ ইবনে কাসীর তার “আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া” (আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া ২৫২ : ১০) এবং আল্লামা সুয়ুতী “হুসনুল মুহাদরাহ” গ্রন্থে দৃঢ়তার সাথে উল্লেখ করেছেন।এটি প্রমাণ করে যে “কিতাবুল উমম” এর মতামতটি ইমাম শাফী পরে দিয়েছেন।
ইমাম শাফীর মত থেকে অনেক গাইর মুকাল্লীদীন দাবি করেন সুরা ফাতিহা পড়া মুক্তাদীর জন্য ফরয, এমনকি জাহরী নামায এর ক্ষেত্রেও।
দাউদ জাহিরি এবং ইবনে তাইমিয়ার মতে জাহরী নামায এ মুক্তাদীর কেরাত পড়া যাবে না।
ইমাম আবু হানিফাঃ
ইমাম আবু হানিফা, আবু ইউসুফ এবং মুহাম্মদ তাঁরা সবাই তাদের মতামতে এক।তাঁরা বলেছেন, “ইমামের পিছনে মুক্তাদীর পবিত্র কোরআনের যে কোন অংশ তিলাওয়াত করা, সেটি সুরা ফাতিহা হোক বা অন্য কোন আয়াত হোক, জায়েজ নেই, সিরী এবং জাহরী উভয় নামাযের ক্ষেত্রে।”
একটি কথা বলা হয়ে থাকে যে, সিরী নামাযের ক্ষেত্রে সুরা ফাতিহা পড়া ভাল – ইমাম মুহাম্মদের এ রকম একটি মত আছে- এটি সত্য নয়। ইবনে হুমাম এটিকে ইমাম মুহাম্মদের উপর ভ্রান্ত অভিযোগ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন এবং তিনি বলেন, “সত্য হল যে ইমাম মুহাম্মদের মতামত ইমাম আবু হানিফা এবং আবু ইউসুফের মতই ।”
(ফাতহুল মুলহিম ২০ : ২)
উপরের বর্ণনা থেকে কিছু point পাওয়া যায়ঃ
১। জাহরী নামাযের ক্ষেত্রে মুক্তাদীর সুরা ফাতিহা পড়া ফরয বা বাধ্যতামূলক - কোন ইমাম এ মত পোষণ করেন নি।
২।কেউ কেউ শুধুমাত্র সিরী নামাযের ক্ষেত্রে বাধ্যতামূলক বলেছেন।
৩।হানাফী ইমাম গণের শুধুই একটি মত, তা হচ্ছে মুক্তাদীর জন্য কোন কিরাত নেই।
এই মতটিই পবিত্র কোরআন ও সুন্নাহ্র আলোকে সবচেয়ে সঠিক ও সহীহ হিসেবে পাওয়া যায়, যা এ প্রবন্ধে প্রমাণ করা হবে ইনশাল্লাহ।
পবিত্র কোরআনের আলোকেঃ
১।
“আর যখন কোরআন পাঠ করা হয়, তখন তাতে কান লাগিয়ে রাখ এবং নিশ্চুপ থাক যাতে তোমাদের উপর রহমত হয়। ”
(সুরা আ’রাফ : ২০৪)
হযরত আবু হুরাইরা(রঃ),হযরত ইবনে মাসঊদ(রঃ),হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস(রঃ),মুজাহিদ(রঃ),ইবনে জুবাইর(রঃ),ইবনে জারীর(রঃ) প্রমখ সাহাবীগণ বলেছেন যে, এই আয়াতটি নাযিল হয়েছে সালাত এবং জুম’আর খুতবা সম্পর্কে।
(তাফসীর ইবনে কাসীরঃ ১ : ২৮১)
এই আয়াত দ্বারা যে কেউ সহজে বুঝতে পারবেন যে, মুক্তাদীর ইমামের পিছনে কেরাত না পড়ার জন্য এটি একটি বড় ও পর্যাপ্ত দলিল এবং যখন ইমাম কেরাত পড়তে থাকেন তখন মুক্তাদীর চুপ থাকা ও মনোযোগ দিয়ে শ্রবণ করা আবশ্যক।
“তানযীম উল আশতাত” গ্রন্থে উল্লেখ আছে, এই আয়াতটি মুক্তাদীকে ২টি আদেশ দেয়ঃ
১।নীরব থাকা- সিরী এবং জেহরী উভয় নামাযের ক্ষেত্রে সম্পূর্ণরূপে চুপ থাকা
২।মনোযোগ দিয়ে শ্রবণ করা- জেহরী নামাযের ক্ষেত্রে।
এ থেকে বুঝা যায় যে,মুক্তাদী জেহরী নামাযের ক্ষেত্রে ইমামের কেরাত মনোযোগ দিয়ে শ্রবণ করার জন্য সম্পূর্ণরূপে চুপ থাকবে এবং সিরী নামাযের ক্ষেত্রেও সে চুপ থাকবে যদিও সে ইমামের কেরাত শুনতে পাই না (১ম আদেশ অনুযায়ী)।
তাছাড়া এই আয়াতটি তে বলা হয়েছে, “আর যখন কোরআন পাঠ করা হয়” (উচ্চস্বরে হোক বা চুপে চুপে হোক, কেউ শুনতে পাক বা না পাক),
এই আয়াতটিতে “শুধুমাত্র যখন তুমি কোরআন শুনতে পাবে” বা “শুধুমাত্র যখন কোরআন উচ্চস্বরে পাঠ করা হয়” – “তখন নিশ্চুপ থাক,অন্যথায় নয়” – এ রকম কোন সীমাবদ্ধতা দেওয়া নেই।
সুতরাং এটি পরিষ্কার যে, এই আয়াতের মানে সিরী নামাযের ক্ষেত্রে অবশ্যই চুপ থাকতে হবে এবং যদি জেহরী নামায হয় তখন মনোযোগ দিয়ে শ্রবণ করাও জরুরী।
এখন, যারা বলে থাকেন যে, এই আয়াতটি সালাতের ক্ষেত্রে নয়, বরং শুধুমাত্র খুতবার সময় চুপ থাকার জন্য নাযিল হয়েছে, তাদের জন্য এটি আরও পরিষ্কার করা জরুরী। এই আয়াতটি শুধুমাত্র নামাযে নিশ্চুপ থাকার জন্যই নাযিল হয়েছে, খুতবার ক্ষেত্রে নয়।তার কারণ হলঃ
হাফেজ ইবনে তাইমিয়া তাঁর “ফতওয়া” কিতাবে লিখেছেনঃ
“পূর্বসূরীদের কাছ থেকে এটি বুঝা যায় যে এই আয়াতটি নামাযের কেরাতের ক্ষেত্রে নাযিল হয়েছে এবং কেউ বলেছেন খুতবার ক্ষেত্রে।ইমাম আহমদ লিখেছেন, মুহাদ্দিস ও হাদীস বিশারদ গণ নামাযের কেরাতের ক্ষেত্রে একমত ।”
(ফতওয়া ২৬৯ : ২৩)
ইবনে কদামাহ তাঁর কিতাব “আল মুগনী” তে লিখেছেনঃ
“ইমাম আহমদ আবু দাউদ এর কাছ থেকে বর্ণনা করেন, সবাই একমত যে এই আয়াতটি সালাতের ক্ষেত্রে নাযিল হয়েছে।”
(আল মুগনী ৬০১ : ১ )
ইবনে তাইমিয়াও লিখেছেনঃ
“আহমদ এ মত দিয়েছেন যে মুক্তাদীর জন্য কেরাত আবশ্যকীয় নয় যখন ইমাম শ্রবণযোগ্য ভাবে কেরাত পড়েন।”
(ফতওয়া ২৬৯ : ২৩)
ইমাম আহমদ আরও বিস্তারিত ব্যাখ্যা দিয়েছেনঃ
আহমদ বলেনঃ “আমরা কোন মুসলিম মনীষীর কাছ থেকে কখনো শুনি নি যে যদি ইমাম জোরে কেরাত পড়েন আর মুক্তাদী নীরব থাকে, তাহলে মুক্তাদীর নামায হবে না।” তি্নি আরও বলেন, “এটিই রসুলুল্লাহ (সঃ), সাহাবী, এবং তাবেঈন, হিজাজ এর জনগণ থেকে মালিক, ইরাকের মনীষীদের থেকে তাওরী, সিরিয়ার জনগণ থেকে আওযায়ী এবং মিশর থেকে লাইত, কেউ বলেননি, যে ব্যক্তির ইমাম তিলাওয়াত করল আর সে তা করল না তার নামায শুদ্ধ হবে না ।”
(আল মুগনী ৬০২ : ১ )
ইবনে জারীর ও ইবনে আবী হাতিম তাঁদের তাফসীরে এবং ইমাম বায়হাকী “কিতাবুল কিরাত” এ মুজাহিদ থেকে একটি হাদীস বর্ণনা করেন, “এই আয়াতটি নাযিল হয়েছে রসূলুল্লাহ (সঃ) এর কিছু সাহা্বী সম্পর্কে যাঁরা ইমামের পিছনে তিলাওয়াত করতেন।”
যদিও এটি মুরসাল, (যে সনদে একজন তাবী সরাসরি রসূলুল্লাহ (সঃ) এর কাছ থেকে বর্ণনা করেছেন, মাঝখানে কোন সাহাবীর নাম উল্লেখ না করে), কিন্তু এটি মুজাহিদ থেকে বর্ণিত যিনি “আ’লামুন নাস বিত তাফসীর” নামে পরিচিত যার অর্থ “তাফসীর শাস্ত্রে মানব সমাজের মধ্যে সবচেয়ে বেশি জ্ঞান বা পান্ডিত্যের অধিকারী”, তাই এটি একটি উপযুক্ত প্রমাণ এবং এটি গ্রহণ করা যাবে।
ইবনে জারীর “তাবারী” তে ইয়াসির ইবনে জারীর থেকে হযরত ইবনে মাসঊদ (রঃ) সম্পর্কে আরও একটি হাদীস বর্ণনা করেন যে, ইবনে মাসঊদ (রঃ) নামায পড়তেছিলেন, তখন তিনি কিছু মানুষকে ইমামের পিছনে তিলাওয়াত করতে শুনলেন। শেষ (নামায) করার পর তিনি বললেন, “সে সময় কি এখনও আসেনি যাতে তোমরা বুঝতে পার? সে সময় কি এখনও আসেনি যাতে তোমরা বুঝতে পার যে - যখন কোরআন তিলাওয়াত করা হয়, তখন তা মনোযোগ দিয়ে শোন এবং চুপ থাক যেভাবে আল্লাহ পাক তোমাদের আদেশ দিয়েছেন?”
(ইলাউস সুনান ৪৩ : ৪; তাবারী ৩৭৮ : ১১)
অতএব,উপরের সমস্ত উক্তি এবং উদ্ধৃতি প্রমাণ করে যে, কোরআনের এই আয়াতটি নাযিল হয়েছে সালাতের ক্ষেত্রে, খুতবার ক্ষেত্রে নয়। এ কথার উপর জোর দেয়ার জন্য বা এর সত্যতা প্রমাণ করার জন্য আরও একটি বিষয় জানা দরকার যে, এটি হচ্ছে মক্কী আয়াত, আর সালাতুল জুম’আ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে আরও পরে মদীনাতে। সুতরাং, কোন ভাবেই এই আয়াতটি জুম’আর খুতবার সময় নিশ্চুপ ও নীরবতা পালন করার ক্ষেত্রে নাযিল হয়নি।
২।
“কাজেই কোরআনের যতটুকু তোমাদের জন্যে সহজ, ততটুকু আবৃত্তি কর।”
(সুরা মুযযাম্মিলঃ ২০)
এই আয়াতটি নির্দেশ করে, পবিত্র কোরআনের যে কোন অংশ তিলাওয়াত করা নামাযে ফরজ।কিন্তু এখানে শুধুমাত্র সুরা ফাতিহা তিলাওয়াত করাকে বলা হয়নি, বরং পবিত্র কোরআনের যে কোন অংশ তিলাওয়াত করার কথা বলা হয়েছে।
অনেকে বলে থাকেন, এই আয়াতটিতে সুরা ফাতিহাকে বুঝানো হয়েছে, নামাযে এটি তিলাওয়াত করা সবার জন্য অত্যাবশ্যক কেননা রসূলুল্লাহ (সঃ) হাদীসে বলেছেন,
“সুরা ফাতিহা ছাড়া কোন নাযায গ্রহণ করা হবে না ।”
তাঁরা এই হাদীসের সথে উক্ত আয়াতটির সামঞ্জস্য করেন এভাবে যে, আয়াতে উল্লেখিত 'Maa' শব্দটি অস্পষ্ট বা অনির্দিষ্ট (an indefinite term) এবং এই হাদীসটি তার ব্যাখ্যা।এভাবে তাঁরা কোরআনের আয়াতটির অর্থ “নামাযে সুরা ফাতিহা তিলাওয়াত কর (বাধ্যতামূলক বা ফরজ)” বলে থাকেন।
কিন্তু এই ধরণের ব্যাখ্যা শুধুমাত্র তখনই দেয়া হয়ে থাকে যখন (কোন আয়াত বা হাদীস ) বিচার বিশ্লেষণে কারও অজ্ঞতা থাকে (পূর্ণ জ্ঞান না থাকা)।
কারণ, বাস্তবতা হল, এখানে 'Maa' শব্দটি অস্পষ্ট বা অনির্দিষ্ট (an indefinite term) নয়, বরং সাধারণ বা আ’ম। সু্তরাং এক্ষেত্রে আয়াতটি নামাযে পবিত্র কোরআনের যে কোন অংশ তিলাওয়াত করার অনুমতি দেয় এবং শুধুমাত্র সুরা ফাতিহা তিলাওয়াতকে বুঝায় না।এভাবে কোরআনের আয়াতটির অর্থ দাঁড়ায়, “তাই তিলাওয়াত কর যা তোমার পক্ষে তিলাওয়াত করা সম্ভব” এবং এটিই অধিকতর শুদ্ধ কারণ এই আয়াতটিকে শুধুমাত্র সুরা ফাতিহার মাঝে সীমাবদ্ধ করা আয়াতটির প্রকৃত বা মৌলিক অর্থের পরিপন্থী এবং এটি অশুদ্ধ।
হানাফী ইমাম গণ এভাবেই আয়াত ও হাদীসটির মাঝে সামঞ্জস্য করেন যে, আয়াতটির মাধ্যমে নামাযে পবিত্র কোরআনের যে কোন অংশ তিলাওয়াত করা ফরজ এবং হাদীসটির মাধ্যমে সুরা ফাতিহা তিলাওয়াত করা ওয়াজিব করা হয়েছে।
আগের আয়াত ও এই আয়াতের ব্যাখ্যা একত্রিত করলে দাঁড়ায়, ইমাম ও মুনফারিদ সুরা ফাতিহা ও পবিত্র কোরআনের অন্য কোন অংশ বা আয়াত তিলাওয়াত করবে, কিন্তু মুক্তাদী কোনটিই করবে না।কারণ পূর্বের আয়াতের মাধ্যমে মুক্তাদীকে কোরআন তিলাওয়াত এর সময় চুপ থাকতে বলা হয়েছে।
ইমামের কেরাত যে মুক্তাদীর জন্য যথেষ্ট - পরে হাদীসের আলোকে আরও বিস্তারিত ব্যাখ্যা করা হবে ইনশাল্লাহ।
৩।
“ ……. তোমরা নামাযে তোমাদের স্বর উচ্চ করো না এবং অতিশয় ক্ষীণও করো না, এই দুই এর মধ্যমপন্থা অবলম্বন করো । ”
(সুরা বনী ইসরাঈলঃ ১১০)
ইবনে আব্বাস (রঃ) এই আয়াত নাযিল হওয়ার সময়কার অবস্থার কথা বর্ণনা করেছেন।
এই আয়াত অবতীর্ণ হওয়ার সময় রসূলুল্লাহ (সঃ) মক্কায় গোপনীয়ভাবে ছিলেন।তিনি সাহাবীদেরকে নামায পড়াতেন এবং তাতে উচ্চস্বরে কিরাত পড়তেন।যখন মুশরিকরা তিলাওয়াত শুনতে পেত, তখন তারা কোরআন এর সমালোচনা করত, যিনি এটি নাযিল করেছেন (আল্লাহ পাক) তাঁর সমালোচনা করত, ঠাট্টা-বিদ্রুপ করত এবং যিনি আমাদের কাছে কোরআন নিয়ে আসছেন (রসূলুল্লাহ (সঃ)) তাঁকে গালি দিত। এজন্য আল্লাহ পাক রসূল (সঃ) কে আদেশ দিলেন, “নামাযে এমন উচ্চস্বরে তিলাওয়াত করবেন না যাতে মুশরিকরা শুনতে পায় এবং এত ক্ষীণ স্বরেও তিলাওয়াত করবেন না যাতে বিশ্বাসীদের শুনতে কষ্ট হয়। ”
(তা’লীক উস সাবীহ ৩৬৬ : ১, মুসলিম)
এ আয়াতে আল্লাহ পাক তাঁর রসূলকে এমন পর্যাপ্ত স্বরে তিলাওয়াত করতে বলেছেন যাতে তাঁর পিছনের সাহাবীরা (নামাযরত) শুনতে পাই। আর এটি তখনই সম্ভব যখন সাহাবীরা চুপ থেকে বা নীরব থেকে মনোযোগ দিয়ে শুনবেন।অতএব, এই আয়াতটি প্রমাণ করে যে কিরাত পড়া শুধুমাত্র ইমামের দায়িত্ব।তিনি যখন ইমামতি করবেন তখন উচ্চ স্বরে (জেহরী নামায) তিলাওয়াত করবেন এবং মুক্তাদী চুপ থাকবে ও মনোযোগ দিয়ে শুনবে এবং কোন তিলাওয়াতে নিজেকে ব্যস্ত রাখবে না।
এরপর আমরা হাদীসের প্রসংগে আসব।এসব হাদীস গুলো উপরোক্ত আয়াতগুলোর মাধ্যমে যে বিষয় বা আদেশ গুলো এসেছে, তা আরও পরিষ্কার ও সুস্পষ্ট করবে ইনশাল্লাহ।
০৩ রা জানুয়ারি, ২০১৪ রাত ১০:০৬
েমা: রিফকুল ইসলাম বলেছেন: ধন্যবাদ। ক্বিরাত বা সূরা ফাতিহা পড়ার যদিও প্রশ্ন ছিল না কিন্তু সামগ্রিক ভাবে আলোচনা করার জন্য ধন্যবাদ। কিন্তু আমার প্রশ্নটি ছিল যে, বুখারী ও মুসলীম শরীফের যে হাদীস গুলো আছে সে সম্পর্কে আপনার মতামত কি? আর বেতর নামায ও তার আদায় করার নিয়ম কি? বেতর কি জামাতে পরা যায়েজ আছে? যদি থাকে তবে তা পড়ার সহী নিয়ম কি? আর মক্কা মদীনায় কেমন করে পড়ানো হয়। সেটা যদি আমাদের উপমহদেশীয় সালাতের ভিন্ন হয় তবে সেটা কেন? আশা করি উত্তর গুলো অন্যসব উত্তররের মত করে দিবেন।
৯| ০৩ রা জানুয়ারি, ২০১৪ রাত ৯:০৯
ঝটিকা বলেছেন: ভালো বিষয়ের উপর পোস্ট এটা। আমি অনুসরন করছি। যে বিষয়গুলো নিয়ে এখানে কথা উঠেছে আমিও সেগুলোর ব্যাপরে বিস্তারিত জানতে আগ্রহী। বিশেষ করে মেয়েদের নামাজ এবং মাযহাব সম্পর্কে।
আমার একটা প্রশ্ন হল, আমরা কেন মাত্র ৪টা মাযহাবই মানব, অন্য ইমামদেরটা কেন মানব না?
আমি মোঃ আনারুল ইসলাম ভাইকে অনুরোধ করব কষ্ট করে এখানে উথ্থাপিত সবার প্রশ্নের উত্তর দিন। এতে আশা করি আমার মত অনেকেরই উপকার হবে। জাঝাকাল্লাখাইর।
১০| ০৩ রা জানুয়ারি, ২০১৪ রাত ১০:১৩
মোঃ আনারুল ইসলাম বলেছেন: বুখারী ও মুসলীম শরীফের যে হাদীস গুলো রাফয়ে ইয়াদাইন সম্পর্কে, সেই হাদীসের বারণ।
হজরত জাবির ইবনে সামুরাহ রাঃ বলেন , নামাজের মুহুর্তে হুজুর সাঃ আমাদের নিকট আসলেন এবং বললেন, “তোমাদের কি হল যে তোমাদের কে দেখতে পাচ্ছি তোমরা রাফয়ে ইয়াদাইন করছ দুর্দান্ত ঘোড়ার লেজের ন্যায়? নামাজের মধ্যে শান্ত ধীর হও। (প্রমানঃ ... আবু দাউদ ১;১০৯ নাসায়ী ১;১১৭)”
এ হাদীসে রাসূলুল্লাহ স. স্থিরতার সঙ্গে নামায পড়ার আদেশ দিয়েছেন। আর হাদীসের বক্তব্য অনুযায়ীই যেহেতু রফইয়ে ঈয়াদিন স্থিরতা-পরিপন্থী তাই আমাদের কর্তব্য হল, নবী স.-এর নিদেশমতো স্থিরতার সঙ্গে নামায পড়া।
০৩ রা জানুয়ারি, ২০১৪ রাত ১০:৫৯
েমা: রিফকুল ইসলাম বলেছেন: আপনি সেই একই পথে হাটলেন। আমি জানতে চাচ্ছি যে, সালাত আদায় করার সময় দুই হাত উঠানো। রুকুতে যাওয়ার আগে দুই হাত কাধ বরাবর উঠানো এবং রুকু থেকে উঠার পর হাত কাধ বরাবর উঠানো এবং বলতে হবে সামিয়াল্লাহুলিমান হামিদা+ রাব্বানালাকালহামদ্। কিন্তু সেজদার সময় এমনটি করা যাবে না।। সহীহ্ বুখারী: বিষয়: আযান, অনুচ্ছেদ-৪৭৫,৪৭৬,৪৭৭,৪৭৮ হাদীস নং ৬৯৯,৭০০,৭০১,৭০২,৭০৩। এই হাদীস গুলো সম্পর্কে আপনার মতামত কি? আপনি অন্যান্য গ্রণ্থের কথা বলছেন কেন? আমি নির্দিষ্ট করে দেবার পরও কেন আপনি এই হাদীস গুলো সম্পর্কে কিছু বলছেন না?
১১| ০৩ রা জানুয়ারি, ২০১৪ রাত ১০:১৭
মোঃ আনারুল ইসলাম বলেছেন: @ঝটিকা আপনার প্রশ্নে র উত্তর
প্রশ্নঃ মাজহাব কি ও কেন ?
**********************
মাজহাব শব্দের অর্থ – চলার পথ
ইসলামি পরিভাষায় কোরআন – সুন্নাহর প্রদর্শিত,রাসুল সাঃ ,সিদ্দিকীন,শোহাদায়ে কেরাম ও সতকর্মশীল ব্যক্তিবর্গের মনোনীত পথের নামই হল মাজহাব।
অন্ন শব্দে এটাই সিরাতেমুস্তাকিম ও সরল পথ । সুতরাং মাজহাব কোন নতুন ধর্ম,মতবাদ বা কোরআন সুন্নাহ বহির্ভূত ব্যক্তি বিশেষের নিজস্ব মতের নাম নয়, বরং মাজহাব হল কোরআন, সুন্নাহ,ইজমা ও কেয়াসের ভিত্তিতে
বিভিন্ন ধর্মীয় সমস্যার প্রদত্ত সমাধান যা এবিষয়ে বিজ্ঞ ব্যক্তিগণ প্রদান করেছেন। মাজহাব হল , কোরআন -সুন্নাহর তে অঅস্পষ্ট আয়াতও হাদীস গুলুর ব্যাখ্যা মাত্র।
সুতরাং কোন ইমাম ই রাসুলের কথার বাহিরে এক কদম ও দেননি । সুতরাং যেহেতু চার মাজহাবই ইসলামের মুল ৪ টি ভিত্তি তথা কোরআন ,সুন্নাহ, ইজমা, ও কিয়াসের আলোকে প্রণীত ।
আর এই ৪ টি মাযহাবের ব্যাপারে রাসুলের সাঃ ও সমর্থন ছিল।যা আমরা মুয়াজ রা” এর হাদিসের মাধ্যমে জানতে পারি। তাহলে মাজহাব মানার মানেই হল রাসুলের কথা মানা ।
এখানে একটা প্রশ্ন? হাদিস শরীফে মূলত পাওয়া যায়, কুরআন –সুন্নাহ মানার কথা তাহলে মাযহাব মানার দরকার কি?
হাদিসের কথা অবশ্যই ঠিক ।কিন্তু কুরআন –সুন্নাহর প্রত্যক্ষ –পরোক্ষ , সুস্পষ্ট –অস্পষ্ট ও পরস্পর বিরোধপূর্ণ জটিল বিষয়ের যথাযথ সমাধান বের করে তা অনুসরণ করে মূল লক্ষে যাওয়া সকলের পক্ষে মোটে ও সম্ভবপর নয়। বরং এ সকল বিষয়ে পূর্ণ পারদর্শী ব্যক্তি বর্গের দেওয়া সমাধান মেনে চলেই মূল লক্ষে যাওয়া সম্ভব।
এখানে অনেকে প্রশ্ন করেন, এক সময় বাংলায় কোরআন হাদিস ছিলনা তাই আমরা মৌলবীদের কথা মেনেছি। এখন আর দরকার নাই। কেননা বাংলায় কোরআন ও হাদিসের অনেক বই পাওয়া জায়।তাই আমরা এগুলু দেখে দেখে আমল করব???????
এদের উত্তরে আমি প্রথমে - বলবো ভাই দেখুন, আপনি হয়ত বাংলা পড়তে পারেন। কিন্তু আমাদের দেশে লাখো মানুষ আছে যারা বাংলা পড়া থাক দূরের কথা তারা তো ক,খ ই চিনেনা এদের কি হবে? এমন আবস্হা পূবেও ছিল ,আছে এবং থাকবে ৷ তাছাডা আরবী কোরআন হাদীসতো বাদই দিলাম বিশ্বে এখনও লাখো-কুটি মুসলিম এমনও রয়েছেন যারা আরবী কোরআন হাদীস পড়তে পারেনা ,ব্যখা জানাতো দূরের কথা ৷
দ্বিতীয়ত -শুধু বই পড়েই সব জিনিসের সমাধান দেয়া যায়না । বিশেষ করে ঐ সকল জিনিস যে গুলুর জন্য রয়েছে কিছু নীতি মালা ও কোর্স , প্রশিক্ষণ । যেমন , ডাক্তারি বিসয়গুলু। বাংলায় এবিষয়ে বইয়ের কোন অভাব নেই। বরং ফুটপাথেও পাওয়া যায়। অনুরূপ উকিলি, সংবিধান থেকে নিয়ে সকল আইনের বই কিন্তু কিনতে পাওয়া যায়। এখন বলুন তো কেউ একজন যদি এ বই গুলু কিনে এনে আগা –গোঁড়া মুখস্ত করে ফেলে এবং অনায়েসে বলতে পারে সরকার কি তাকে ডাক্তার / উকিল হিসেবে সার্টিফিকেট দিবে? আর আপনিও সমস্যা নিয়ে তার কাছে যাবেন ? অথবা আপনি নিজে বাংলা পরে নিজের চিকিৎসা ও আইনি বিষয় সমাধান করেন? সেক্ষেত্রে তো ঠিকই বলবেন যে এ গুলু আমার কাজ না। এ প্রশ্নের যে জবাব যারা মাজহাব মানবেনা বলে তাদের ও একি জবাব।
তাছাড়া আমরা সকলের জন্য সমহারে মাজাহাব মানা ওয়াজিব এ কথা ও তো বলিনা । বরং আমরা বলি মাজহাবের রয়েছে বিভিন্ন স্তর । যাদের এজতেহাদ করার ক্ষমতা আছে তাদের জন্য অন্য কারো মাযহাব মানার প্রয়োজন নেই ৷ আর যাদের কাছে এজতেহাদ করার ক্ষমতাতো দূরে থাক কোন কিছু পড়তে ও জানেনা তাদের জন্যই মাযহাব বা তাকলীদ ৷
; আমাদের অনেক ভাই বলেন, মাযহাব মানার কোন দলীল নাই। বরং এটা ভিত্তিহীন, বানানো ,বিদাআত। আসলে কি তাই?
*************************************************************************
উত্তরঃ না ভাই, কথাটি সঠিক নয়। মাযহাব মানার অবশ্যই দলীল প্রমান আছে। আমাদের কে প্রথমে একটা বিষয় পরিষ্কার করতে হবে। তা হল, মাজহাব মানার অর্থ কি? এর একটা অর্থ হতে পারে কোরআন –সুন্নাহ বাদ দিয়ে কোন ব্যক্তির কথা মানা ।
আরেকটা অর্থ হল, ধর্মীয় বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের জন্য কোন বিজ্ঞ ব্যক্তির ফায়সালা মেনে নেওয়া। যা তিনি কোরআন –সুন্নাহ কে সামনে রেখে প্রদান করেছেন। তার থেকে বর্ণিত প্রতিটি মাসালায় তিনি কোরআন – হাদিসকে ই প্রাধান্য দিয়েছেন। সুতরাং এদের কথা মানার অর্থই হল , কোরআন হাদিস মানা । মূলত এদেরকে মানা উদ্দেশ্য নয়, এবং মানাও হয়না । বরং তাদের দেখান মূলনীতি অনুযায়ী কোরআন- সুন্নার উপর আমল করা ই উদ্দেশ্য , এবং তাই করা হয়। এমন নয় যে, তারা একেকটা নতুন নিয়ম-কানুন দাড় করিয়েছেন।আর আমরা এ গুলোর অনসরন করছি। সারকথা, দ্বীন মানার জন্য তাদের মাতামত গুলু কে সহায়ক হিসেবে নেয়া হয় মাত্র।
কুরআনের আলোকে মাযহাব
***********************
কুরআনের মোট ৩ টি আয়াত এবিষয়ে দলীল হিসেবে তুলে ধরছি ।
১ ম আয়াতঃفا سئلوا اهل الذكر ان كنتم لاتعلمون তোমাদের কোন বিষয়ে জানা না থাকলে আহলে ইলমদের নিকট জিজ্ঞাসা কর । সুরা, আল আম্বিয়াঃ৭,ও সুরা আন নাহালঃ৪৩,
টীকাঃ এ আয়াত যদিও বিশেষ ঘটনার সাথে যুক্ত । কিন্তু কুরআনের একটি মূলনীতি হল, যে ঘটনাকে কেন্দ্র করে তা নাযিল হয়েছে তা এতে সীমাবদ্ধ থাকেনা।বরং শব্দের ব্যাপক অর্থ ব্যাবহার হবে।
বিশ্লেষণঃ দেখুন, আয়াতটির হুকুম রহিত হয়নি।
আয়াতে বলা হচ্ছে,অজানা বিষয়ে বিজ্ঞ লোকদের অনুসরণ করার জন্য। এখন আমরা যদি বলি , না তাদের অনুসরণ কারা যাবেনা । তাহলে এটা কি কোরআনের বিরোধিতা হবেনা।
আর অজানা বিষয়ে বিজ্ঞদের অনুসরণ করার নাম ই হল , তাকলিদ। সুতরাং তাকলিদ কোরআন দ্বারা প্রমাণিত।
আল্লামা খতীবে বাগদাদি (রাহ)বলেন, করান-সুন্নার যে সকল বিষয়ে সাধারণ লোক সরাসরি শরীয়তের বিধান আহরণে অক্ষম, তাদের জন্য কোন বিজ্ঞ আলেমের তাকলিদ করা আল্লাহর নির্দেশ মোতাবেক জায়েজ।সুত্রঃ আল ফাকিহ ওয়াল মুতাফাককিহ ৩০৬।
আল্লামা ফাখ্রুদ্দিন ও আল্লামা আলুসি উক্ত আয়াতের তাফসীরে লিখেন, উপরুল্লিখিত আয়াতের ভিত্তিতে অনেকে ই মুজতাহিদ ইমামগনের তাকলিদ বৈধ ও অনভিজ্ঞ সবাইকে বিজ্ঞ মুজতাহিদের শরণাপন্ন হওয়া ওয়াজিব বলেন।
সুত্রঃতাফসিরে কাবির১৯/১৯,রুহুল মায়ানি-১৪/১৪৮, মাঝহারি- ৫-৩৪২, লুবাব-১২/৬১, কুরতুবি ১০/৭২
২য় আয়াতঃ اطيع الله واطيع الرّسول وأولى ألامر من كم الخহে ইমানদারগণ ! আল্লাহ ও তার রাসুলের আনুগত্য কর।আর আনুগত্য কর তোমাদের মধ্যে যারা “ উলিল আমর” তাদের । সুরা আন নিসাঃ ৫৯
বিশ্লেষণঃ দেখুন , আয়াতে আল্লাহ ও তার রাসুলের পাশাপাশি উলিল আমরের আনুগত্য করতে বলা হয়েছে।আসুন, দেখি এ ব্যাপারে মুফাসসির গণ কি বলেন।তাফসির গ্রন্থাবলিতে উলিল আমরের ২ টি তাফসীর পাওয়া যায়। ১মঃ কুরআন- সুন্নার ইলমের অধিকারী ফাকিহ ও মুজতাহিদগণ। ২য়ঃ মুসলিম শাসক বর্গ । ১ম তাফসীর টি অধিক গ্রহণযোগ্য । কেননা , এর পক্ষে মতামত দিয়েছেন, হযরত জাবের, এবনে আব্বাস, মুজাহিদ, আতা বিন আবি রাবাহ, আতা বিন সাইব, হাসান বাসরি ও আলিয়াহ (রাহ) এর মত সেরা মুফাসসিরগন । মাত্র দু একজন ২য় মত টি ব্যক্ত করেছেন।
আল্লামা রাযি (রাহ) প্রথম তাফসীরের সমর্থনে সারগর্ভ যুক্তি প্রমান অবতারনা করে বলেছেন, বস্তুত আয়াতে উলিল আমর ও উলামা শব্দ দুটি সমার্থক।
ইমাম আবু বাকার (রাহ) বলেন , এখানে মূলত কোন বিরোধ নেই। মূলত উলিল আমর শব্দ টি ব্যপক। সুতরাং ধর্মীয় বিষয়ে ১ম তাফসীর গৃহীত হবে। আর আহকাম ও মাসআলার ক্ষেত্রে ২য় তাফসীর গ্রহন হবে। আয়াতের অর্থ হবে, তোমরা রাজনীতি প্রশাসনিক ক্ষেত্রে শাসকবর্গের কথা আর আহকাম ও মাসআলার ক্ষেত্রে আলিমগণের ইতায়াত কর । সুত্রঃ আহকামুল কুরআন-২/২৫৬,তাফসিরে কাবির-৩/ ৩৩৪ ।
মোট কথাঃ আলোচ্য আয়াতের আলোকে আল্লাহ ও রাসুলের ইতায়াত যেমন ফরয তেমনি কুরআন ও সুন্নার ব্যাখ্যা দাতা হিসেবে আলিম ও মুঝতাহিদ্গনের ইতায়াত ও ফারয।
আয়াতের শেষাংশের ব্যাখ্যা নিয়ে অনেকে প্রশ্ন তুলতে পারেন, যেখানে বলা হয়েছে মতবিরোধ পূর্ণ ব্যাপারে আল্লাহ ও তার রাসুলের দিকে ফিরার জন্য । এ ব্যাপারে আমরা বলবো, মূলত এ দ্বিতীয়াংশের মাধ্যমে ফকিহ ও মুজতাহিদদেরকে উদ্দেশ্য করা হয়েছে। সাধারন মানুষের জন্য নয়। যা আহলে হাদিসদের ইমাম জনাব নবাব সিদ্দিক হাসান খান তার লিখিত কিতাব “ফাতহুল বায়ান “ নামক গ্রন্থে ও স্বীকার করেছেন, তার ভাষায়ঃوالظاهرأنّه خطاب مستقلّ مستأنف موجّه للمجتهدين স্পষ্টতই এখানে মুজতাহিদ গণকে সতন্ত্রভাবে সম্ভোধন করা হয়েছে। এ দুটি আয়াতের আলোচনা বিস্তারিতভাবে করলাম। আশা করি আমার লা মাজহাবী ভাইগণ একটু হলেও চিন্তা করবেন।
তৃতীয় আয়াত: والتّبع سبيل من أناب اليّ যে আমার অভিমুখী হয়েছে , তুমি তার পথ অনুসরণ কর। সুরা আল লোকমানঃ ১৫
এ আয়াতে মূলত আবু বাকার (রা) মতান্তরে সা”দ ইবনে ওয়াককাসের ব্যাপারে মন্তব্য করা হলেও কোন কোন তাফসীর কারক বলেছেন, এখানে উদ্দেশ্য হল , ধর্মানুরাগী মুসলমান । আল্লামা জমখসরি লিখেন,আল্লাহ অভিমুখী বলতে মুমিনদের পথ বুঝানো হয়েছে। কাজেই আয়াতের অর্থ হল, তুমি দ্বীন ধর্মের ক্ষেত্রে মুমিনগণের পথ অনুসরণ কর। সুত্রঃ আল কাসসাফ-৩/৪৭৯।
হে আল্লাহ! আমাদের কে সরল পথে পরিচালিত কর ।অর্থাৎ তাদের পথে যাদের কে তুমি নেয়ামত দান করেছ,
সাহাবা যুগে তাকলিদ
******************
প্রশ্নঃ আমাদের অনেক ভাই বলেন, সাহাবা যুগে তাকলিদ ছিলনা। তাই আমরা ও কারো তাকলিদ করবোনা । / মাজহাব মানবনা। এটা কি ঠিক ?
উত্তরঃ না ভাই, এটা মোটেও ঠিক নয়। দেখুন , আমি আবারও একটা বিষয় পরিষ্কার করছি। মাজহাব মানা/ তাকলিদ করার মানে কিন্তু এই নয় যে কোন ইমাম মনগড়া কথা বলে যাবেন , আর আমরা তা মেনে নেব। বরং তাক্লিদ/ মাজহাব মানার অর্থ হল, একজন ধর্ম বিষয়ে অভিজ্ঞ ব্যক্তি কুরান-সুন্নার আলোকে বিভিন্ন সমস্যার সমাধান দিবেন , আর যারা এ বিষয়ে জানেনা বা জানার সুযোগ নেই তারা তার কথা মতে আমল করবে। এ পদ্ধতি সবসময় ছিল। বরং রাসুলের যুগেও সাধারণ সাহাবায়ে কেরাম , যারা বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত থাকতেন তারা আলেম সাহাবাদের কাছ থেকে জেনে আমল করতেন। আমাদের যে ভাইগণ মাজহাব না মেনে সরাসরি কোরআন হাদিেসর উপর আমল করবেন বলেন, তারাও কিন্তু প্রতিটি কাজ কোরআন হাদিস খুলে তারপর করেন না ।
বরং তার নিকট গ্রহন যোগ্য শাইখ/ ইমামের কথা মানেন এবং তার রেফারেন্স দেন। যেমন , শাইখ গালিব, জাকির নায়েক, বিন বাজ , আল বানি, ইত্যাদি।
সুতরাং আমরা হানাফি মাজহাব মানার অর্থ হল, ইমাম আবু হানিফা (রাহ”) কোরআন সুন্নার আলোকে যে সমাধান দিয়েছেন তা মানি। অর্থাৎ তার রেখে যাওয়া উসুল অনুযায়ী কোরআন হাদিস বুঝার চেষ্টা করি। এটা অবৈধ কিছু নয়। কেননা হাদিস যাচাই বাছাই করার বর্তমান নিয়ম কিন্তু রাসুলের যুগে ছিলনা । পরবর্তীতে আবিষ্কার হয়েছে। আমরা কিন্তু সেগুলু ঠিকই মানছি । তাহলে উসুলে ফিকহ মানতে সমস্যা কি? এখন আসা যাক মূল আলোচনায় ।
সাহাবা যুগে তাকলিদ
উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা বুঝা গেল, মাজহাব/ তাকলিদ করার অর্থ হল ধর্মীয় অজানা বিষয়ে বিজ্ঞ লোকের কথা মানা। এ অর্থে সাহাবা যুগেও এর প্রচলন ছিল। কিন্তু যেহেতু আমাদের ৪ ইমামের আগমন সাহাবা যুগের পর তাই সাহাবারা আমাদের ইমাম দের অনুসরণ করেছেন কিনা ? এমন প্রশ্ন হাস্যকর । হ্যাঁ , প্রশ্ন হতে পারে এর প্রচলন তাদের যুগে ছিল কিনা? এর উত্তরে আমরা বলব , জি ভাই ছিল ।
যেমনঃ ১ ম প্রমানঃ
হযরত আস ওয়াদ বিন ইয়াযিদ বর্ণনা করেন, মু”আজ ইবনে জাবাল গভর্নর হিসেবে ইয়ামানে আগমন করলে আমরা তাকে জিজ্ঞাসা করি, জনৈক ব্যক্তি ১ কন্যা ও ১ বোন রেখে মারা গেছে। এখন তাদের মাঝে সম্পদ বণ্টনের পদ্ধতি কি হবে? তদুত্তরে তিনি প্রত্যেকের অংশ অর্ধেক বলে সমাধান দেন। বুখারি শরিফ – ৮/৩৫১, হাঃ ৬৭৩৪
পর্যালোচনাঃ
ক* মুয়াজ( রা ) একজন নির্ধারিত ব্যক্তি মাত্র। ইয়ামান বাসী তার অনুসরণ করা ওয়াজিব ছিল। অন্যথায় তাকে প্রেরণ অনর্থক ও অহেতুক গণ্য হবে। জা নবীর সা, শানের খেলাফ।
খ, মুয়াজের ইয়ামান গমন রাসুলের যুগেই ছিল। এর মাধ্যমে নির্ধারিত ব্যক্তির অনুসরণ রাসুলের যুগেই শুরু হল। কেননা , রাসুলের জীবিত থাকাকালীন যাবতীয় বিষয়ে মুয়াজের অভিমত দলীল হিসেবে গ্রহণযোগ্য ছিল।
গ, প্রশ্ন ও উত্তর কোথাও দলিল উত্থাপন করা হয়নি। বরং তার প্রতি সুধারনার ভিত্তিতে তার কথা মানতে বাধ্য ছিলেন। এটাই তাক্লিদে সাখছি।
২য় প্রমানঃ
জনৈকা সাহাবী রাসুল (সা) এর কাছে আরয করেন, ইয়া রসুলাল্লাহ!আমার স্বামী জিহাদে গেছেন।তিনি থাকাবস্তায় আমি তার নামায ও অন্যান্য আমল অনুসরণ করতাম। তার আসা পর্যন্ত আমাকে এমন আমল বলে দেন, যা তার সমপর্যায়ে হবে।সুত্রঃ মুসনাদে আহমাদঃ৩/৪৩৯, তাব্রানি ২০/১৯৬,হাঃ৪৪১, মুস্তাদ্রা কে হাকিম২/৭৩ হাঃ ২৩৯৭।
পর্যালোচনাঃ
দেখুন, হাদিসে মহিলা নামায সহ যাবতীয় আমলে তার স্বামী তথা ১ ব্যক্তির অনুসরণ করার কথা বলছেন, অথচ রাসুল কিছুই বল্লেন্না। এতে তাকলিদে জায়েজ হওয়ার ইংগিত পাওয়া যায়।
তৃতীয় প্রমানঃ
রাসুলুল্লাহ সা, আব্দুল্লাহ ইবনে মাসুদ রাঃ , ব্যপারে বলেন,আমি তোমাদের জন্য তাই পছন্দ করি ইবনে মাসুদ যা পছন্দ করে।সুত্রঃ রে ইরশাদ মুসতাদরাক – ৩/৩১৯ হাঃ৫৩৯৪ । ইমাম জাহাবি ও হাকিম হাদিস টি কে সহিহ বলেছেন।
দেখুন, হাদিসে ইবনে মাসুদের পছন্দই রাসুলের পছন্দ বলে মত ব্যক্ত করা প্রমান বহন করে তার কথা অনুযায়ী অন্যরা আমল করলেও তা রাসুলের নিকট গৃহীত হবে। এর মাধ্যমে ও তাকলিদে শাখসি প্রমাণিত হয়।
উল্লেখ্য, হানাফি মাযহাবের মাসআলা – মাসাইল বেশীর ভাগ ইবনে মাসুদের রাঃ বর্ণনা ও আমলের ভিত্তিতে ই হয়েছে।
৪র্থ প্রমানঃ
মদিনাবাসীর তাকলিদ।
একদল মদিনাবাসি হযরাত ইবনে আব্বাস কে মাসআলা জিজ্ঞেস করল যে, ফরয তাওয়াপের পর বিদায়ী তাওয়াপের আগে যদি কোন মহিলার ঋতুস্রাব শুরু হয় তাহলে কি করবে? উত্তরে তিনি বললেন, বিদায়ী তাওয়াফ না করে মক্কা শরীফ ত্যাগ করতে পারবে । মদিনাবাসি যাইদ বিন সাবিতের অনুসরণ করতেন। তাই তারা বলল, আমরা যাইদ কে উপেক্ষা করে আপনার কথা মানতে পারিনা। যেহেতু আপনার ফাতওয়া যাইদের বিপরীতে । সুত্রঃবুখারি-২/৫৪১ ( ১৭৫৮-১৭৫৯)দেখুন, এখানে মদিনা বাসী যাইদ(রা) এর অনুসরণ করতেন যা তাকলিদে শাখসি ছিল। তাই তারা ইবনে আব্বাসের কথা সরাসরি না মেনে বলল ,আমরা আগে জাইদ কে জিজ্ঞাসা করি, তারপর। অথচ এ মাসআলায় ইবনে আব্বাস সঠিক ছিলেন। পরে ইবনে আব্বাস তাদেরকে বুঝিয়ে বললেন, তাহলে তোমরা মদিনায় গিয়ে উম্মে সুলাইম কে জিজ্ঞাসা করে নিবে।সুত্রঃ আবু দাউদ-তায়ালাসি প্রঃ২২৯ পরবর্তীতে তারা তাই করল। যাইদ বিন সাবিত ও বিষয়টি তাহকিক করে ইবনে আব্বাসের কথা মেনে নেন। দেখুন, কি অপূর্ব অনুসরণ। সাধারনরা এমনিতেই মেনে নিল । আর যিনি বিজ্ঞ , তিনি তাহকিক করার পর মেনে নিলেন। সুতরাং সাহাবারা কারো অনুসরণ করেননি এমনটা বলা ঠিক হবেনা।
তাছাডা নবী সাঃ পৃথিবী থেকে বিদায়ের পর সাহাবায়ে কেরামের সংখ্যা ছিল প্রায় ১৪৪০০০ তনমধ্যে ১৪৯ জন ছিলেন মুজতাহিদ ছাহাবী ,আর বাকীরা ছিল সাধারন তবকার সাহাবী অথাত তাদের মধ্যে ঐ রকম এজতেহাদ করার ক্ষমতা ছিলনা ,আবার মুজতাহিদ ছাহাবীদের
মধ্যে ৭ জন ছিলেন ১ম তবক্বা ২০ জন ছিলেন ২য় তবক্বার ও ১২২ জন ছিলেন ৩য় তবক্বার , গডে এ ১৪৯জন মূলত এ মুজতাহিদ ছাহাবীদের তাকলীদ করে ছিলেন প্রায় লক্ষাধীক ছাহাবায়ে কেরাম
সুতরাং ছাহাবীদের যুগেই মুলত তাকলীদের সূচনা ৷
১২| ০৩ রা জানুয়ারি, ২০১৪ রাত ১০:২২
মোঃ আনারুল ইসলাম বলেছেন: @ঝটিকা আপনার প্রশ্নে র উত্তর
চার মাযহাব কেন? কেন একটি মাযহাবই মানতে হবে ?
ফিকহা ও এজতেহাদের অঙ্গনে এ চার ইমামের মত আরো অনেক ইমামের জন্ম হয়েছিল , তারা সকলে ও এজতেহাদ করেছিলেন যেমন ইমাম আওযায়ী , সুফিয়ান সওরী ,ইমাম রাহওয়াই , আবদুল্লাহ ইবন মোবারক, ইবনে আবি লায়লা, ইমাম বোখারী প্রমুখ – এ ক অনিবায্য কারন বশত অন্য ইমাম দের তাকলীদ সম্ভব নয় , কারন এ চার ইমামদয়ের এজতেহাদী মাসালা সমূহ সূবিন্যস্হ পুস্তুক /গ্রন্হবদ্ধ সংরক্ষিত আকারে আমাদের কাছে যে ভাবে পৌঁছেছে তা অন্যদের বেলায় ঘটেনি , তাছাডা সারা পৃথিবীতে এ চার মাযহাবের অসংখ্য মহাবিজ্ঞ,আলেম মুফতি মোহাদ্দেসীন রয়েছেন যা অন্য মাযহাবের বেলায় নেই , সুতরাং অনিবায্য কারন বশত এ ৪ মাযহাবই মানা জরুরী ৷
আর কুরআনে কারীম ৭টি কিরাতে নাজীল হয়েছে। কিন্তু একটি কিরাতে প্রচলন করেছেন হযরত উসমান রাঃ। যেটা ছিল আবু আসেম কুফী রহঃ এর কিরাত। এর কারণ ছিল বিশৃংখলা রোধ করা। যেন দ্বীনকে কেউ ছেলেখেলা বানিয়ে না ফেলে। আর সবার জন্য এটা সহজলভ্য হয়।
তেমনি একটি মাযহাবকে আবশ্যক বলা হয় এই জন্য যে, একাধিক মাযহাব অনুসরণের অনুমোদন থাকলে সবাই নিজের রিপু পূজারী হয়ে যেত। যেই বিধান যখন ইচ্ছে পালন করত, যেই বিধান যখন ইচেছ ছেড়ে দিত। এর মাধ্যমে মূলত দ্বীন পালন হতনা, বরং নিজের প্রবৃত্তির পূজা হত।
তাই ৪র্থ শতাব্দীর উলামায়ে কিরাম একটি মাযহাবের অনুসরণকে বাধ্যতামূলক বলে এই প্রবৃত্তি পূজার পথকে বন্ধ করে দিয়েছেন।
যা সেই কালের ওলামায়ে কিরামের সর্বসম্মত সীদ্ধান্ত ছিল। আর একবার উম্মতের মাঝে ইজমা হয়ে গেলে তা পরবর্তীদের মানা আবশ্যক হয়ে যায়। ইমাম ইবনে তাইমিয়াও লাগামহীনভাবে যে মাযহাব মনে চায় সেটাকে মানা সুষ্পষ্ট হারাম ও অবৈধ ঘোষণা করেন। {ফাতওয়ায়ে ইবনে তাইমিয়া-২/২৪১}
আর এ মাযহাব মানা না মানাকে কেন্দ্র করে বেদআত, শীরক্ কুফর, ইত্যাদি অকথ্য ভাষায় লাগামহীন ভাবে একে অপরকে আক্রমন করা একে বারেই অনূচীত ও নিন্দনীয় , এটা মুসলমানদের মধ্যে ফাটল সৃষ্টিরই নামান্তর ৷ অথচ ইমাম চথুষ্টদয়ের জীবদশায় এমন কিছুই ঘটেনি তাঁরা একে অপরকে শ্রদ্ধা করছেন ৷ বস্তুত তাদের সকল মত পাথক্য ছিল তাত্ত্বিক পযায়ের , ব্যক্তি পযায়ের নয় ৷ প্রত্যেক ইমাম অপরের ইলম ও প্রজ্ঞা সমপকে কেমন শ্রদ্বাশীল ছিলেন এবং তাদের মাঝে কি অপূব সৌহাদ্যমূলক আচরন ছিল তা দেখলে বা অধ্যয়ন করলে ,আজ তা ভাবতে ও অভাক লাগে ৷ আর ইমাম মুজতাহিদদের ইজতিহাত গত যে মত পাথক্য ছিল উত্তম ও অধিক উত্তম বিষয়ক ৷ জায়েয- না জায়েয বা হালাল –হারাম বিষয়ক নয় ৷
যেমন ------ রুকুর সময় হাত তোলা বা না তোলা ,বুকের উপর হাত বেঁধে দাঁডাবে নাকি নাভী বরাবর ৷ আমিন জোরে বলবে না আস্তে মুক্তাদি সুরায়ে ফাতেহা পড়বে কি পড়বেনা ইত্যাদি ক্ষেত্রে উভয় আবস্হার বৈধতা সমপকে কোন ইমামের দ্বিমত নেই , মত পাথক্য শুধু মাত্র এ দুয়ের মধ্যে কোনটি উত্তম ?সুতরাং ইমাম গনের এ সাধারন মত পাথক্যকে কেন্দ্র করে অতিরিক্ত বাডাবডি এবং মুসলিম উম্মার মধ্যে অনৈক্যের বীজ বপন করা , কাদা ছোডাছুডি করা ,একে অপরকে কাফের মুশরীক বেদআতী বলে গালী গালাজ করা কোন ক্রমেই অনুমোদন যোগ্য নয় ৷
ইমামও খতিবে কাবা শেখ শোরাইমের অভিমত
ইমাম হারামে মক্কী মুহতারম শেখ শোরাইম মাঃ জিঃ কে জনৈক ব্যক্তি প্রশ্ন করেছিলেন ৪ মাযহাব মানা কি বেদআত ? তখন তিনি এর জবাবে পবিত্র খানায়ে কাবার সামনে দাঁডিয়ে জুমার খোৎবাতে বলেছিলেন যে [ যা স্বীয় কানে শ্রবন কৃত] ৪ মাযহাব মানা বেদআত নয় , বরং সূযোগ সন্ধানী হয়ে মনের ইচ্ছা মাফিক এক এক সময় এক এক মাযহাবের অনুসরন করবে তা হবেনা , বরং যে যে মাযহাবকে অনুসরন করছে তাকে সেই মাযহাবই অনুসরন করতেই হবে , নাহয় মন বা রীপু পুজারী হয়ে দ্বীন কে ছেলে খেলা বানিয়ে ফেলবে ৷ কতইনা সুন্দর উক্তি তিনি করেছেন ,
১৩| ০৪ ঠা জানুয়ারি, ২০১৪ সকাল ১১:৩৮
মোঃ আনারুল ইসলাম বলেছেন: সহীহ্ বুখারী: বিষয়: আযান, অনুচ্ছেদ-৪৭৫,৪৭৬,৪৭৭,৪৭৮ হাদীস নং ৬৯৯,৭০০,৭০১,৭০২,৭০৩। এই হাদীস গুলো সম্পর্কে আপনার মতামত কি?
বুখারী শরীফের যে হাদীস গুলো রাফয়ে ইয়াদাইন সম্পর্কে, সেই হাদীসের বারণ।
০৫ ই জানুয়ারি, ২০১৪ রাত ৯:৫২
েমা: রিফকুল ইসলাম বলেছেন: কেন বারণ? হাদীসগুলো সম্পর্কে কে কি মন্তব্য দিয়েছেন? কিভাবে সেগুলো বারণ হল? উপরের মত করে বিস্তারিত কেন দিচ্ছেন না?
©somewhere in net ltd.
১|
০৩ রা জানুয়ারি, ২০১৪ বিকাল ৩:৪২
মোঃ আনারুল ইসলাম বলেছেন: মহিলা-পুরুষদের নামাজের পাথক্য দলিল ভিত্তিক পযালোচনা
নারী পুরুষের শারীরিক গঠন, সক্ষমতা, নিরাপত্তা ইত্যাদী নানা বিষয়ে যেমন পার্থক্য রয়েছে, তেমনি পার্থক্য রয়েছে ইবাদতসহ শরীয়তের অনেক বিষয়ে। যেমন-
১-পুরুষ ও মহিলা উভয়ের উপরই হজ্ব ফরয। কিন্তু মহিলাদের জন্য পথ খরচ ছাড়াও হজ্বের সফরে স্বামী বা মাহরাম পুরুষের উপস্থিতি শর্ত।
২-ইহরাম অবস্থায় পুরুষের জন্য মাথা ঢাকা নিষেধ। অথচ মহিলাদের জন্য ইহরাম অবস্থায় মাথা ঢেকে রাখা ফরয।
৩-ইহরাম খোলার সময় পুরুষ মাথা মুন্ডায়। কিন্তু মহিলাদের মাথা মুন্ডানো নিষেধ।
৪-হজ্ব পালনকালে পুরুষ উচ্চ আওয়াজে তালবীয়া পাঠ করে, পক্ষান্তরে মহিলাদের জন্য নিম্ন আওয়াজে পড়া জরুরী।
৫-পুরুষের উপর জুমআ পড়া ফরয, মহিলাদের উপর নয়।
৬-নামাযে সতর্ক করার মত কোন ঘটনা ঘটলে সতর্ক করার জন্য পুরুষের তাসবীহ পড়ার হুকুম করা হয়েছে। কিন্তু মহিলাদের তাসফীক করা তথা হাতে শব্দ করার বিধান।
৭-ইমাম ও খতীব শুধু পুরুষই হতে পারে, কোন নারী হতে পারেনা।
৮-আজান শুধু পুরুষই দিবে, কোন নারীকে মুয়াজ্জিন বানানো জায়েজ নয়।
৯-পুরুষের জন্য মসজিদে গিয়ে জামাআতে নামায পড়া সুন্নাতে মুয়াক্কাদা। আর মহিলাদের ঘরে নামায পড়াই উত্তম বলা হয়েছে।
১০-সতর। পুরুষের সতর হল নাভি থেকে হাটু পর্যন্ত। আর পরপুরুষের সামনে নারীদের সতর হল প্রায় পুরো শারীরই ঢেকে রাখা ফরয।
নারী-পুরুষের মাঝে এরকম পার্থক্যসম্বলিত ইবাদত সমূহের অন্যতম হল নামায।
*************************************************************
তাকবীরে তাহরীমার জন্য হাত উঠানো, হাত বাঁধা, রুকু, সেজদা, প্রথম ও শেষ বৈঠক ইত্যাদী ক্ষেত্রগুলোতে পুরুষের সাথে নারীর পার্থক্য রয়েছে। তাদের সতরের পরিমাণ যেহেতো বেশি তাই যেভাবে তাদের সতর বেশী রক্ষা হয় সেদিকটিও বিবেচনা করা হয়েছে ক্ষেত্রগুলিতে। মুসলিম উম্মাহর প্রায় দেড় হাজার বছরের অবিচ্ছন্ন আমলের ধারা তাই প্রমাণ করে। বিষয়টি প্রমাণিত রাসূলে কারীম সাঃ এর হাদিস, সাহাবায়ে কেরাম ও তাবেয়ীগণের ফতোয়া ও আছারের মাধ্যমে।
প্রথমে আমরা সহীহ হাদিস, তারপর পর্যায়ক্রমে সাহাবায়ে কিরাম ও তাবেয়ীদের ফতোয়া ও আছার উল্লেখ করছি।
*********************
হাদিস
১
3016 – أخبرناه أبو بكر محمد بن محمد أنبأ أبو الحسين الفسوي ثنا أبو علي اللؤلؤي ثنا أبو داود ثنا سليمان بن داود أنبأ بن وهب أنبأ حيوة بن شريح عن سالم بن غيلان عن يزيد بن أبي حبيب : أن رسول الله صلى الله عليه و سلم مر على امرأتين تصليان فقال إذا سجدتما فضما بعض اللحم إلى الأرض فإن المرأة ليست في ذلك كالرجل (سنن الكبرى للبيهقى، كتاب الحيض، باب ما يستحب للمرأة من ترك التجافي في الركوع والسجود، رقم الحديث-3016)
তাবেয়ী ইয়াযীদ বিন আবী হাবীব রহ. বলেন-একবার রাসূল সা. দুই মহিলার পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তখন তাদেরকে (সংশোধনের উদ্দেশ্য) বললেন-“যখন সেজদা করবে তখন শরীর যমীনের সাথে মিলিয়ে দিবে। কেননা মহিলারা এ ক্ষেত্রে পুরুষদের মত নয়। (সুনানুল বায়হাকী, হাদিস নং-৩০১৬, কিতাবুল মারাসিল লি ইমাম আবু দাউদ-৫৫, হাদিস নং-৮০)
প্রসিদ্ধ মুহাদ্দিস আলেম নওয়াব সিদ্দীক হাসান খান বুখারী শরীফের ব্যাখ্যাগ্রন্থ “আওনুল বারী” (১/৫২০) তে লিখেছেন-“উল্লেখিত হাদিসটি সকল ইমামদের উসুল অনুযায়ী দলীল হিসেবে পেশ করায় যোগ্য”।
মুহাদ্দিস মুহাম্মদ ইবনে ইসমাঈল আমীর ইয়ামানী “সুবুলুস সালাম” শরহু বুলুগিল মারাম” গ্রন্থে (১/৩৫১-৩৫২) এই হাদিসকে দলীল হিসেবে গ্রহণ করে পুরুষ ও মহিলার সেজদার পার্থক্য করেছেন।
২
وَالآخَرُ حَدِيثُ أَبِى مُطِيعٍ : الْحَكَمِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ الْبَلْخِىِّ عَنْ عُمَرَ بْنِ ذَرٍّ عَنْ مُجَاهِدٍ عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُمَرَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- :« إِذَا جَلَسْتِ الْمَرْأَةُ فِى الصَّلاَةِ وَضَعَتْ فَخِذَهَا عَلَى فَخِذِهَا الأُخْرَى ، وَإِذَا سَجَدْتْ أَلْصَقَتْ بَطْنَهَا فِى فَخِذَيْهَا كَأَسْتَرِ مَا يَكُونُ لَهَا ، وَإِنَّ اللَّهَ تَعَالَى يَنْظُرُ إِلَيْهَا وَيَقُولُ : يَا مَلاَئِكَتِى أُشْهِدُكُمْ أَنِّى قَدْ غَفَرْتُ لَهَا (السنن الكبرى، كتاب الصلاة، باب مَا يُسْتَحَبُّ لِلْمَرْأَةِ مِنْ تَرْكِ التَّجَافِى فِى الرُّكُوعِ وَالسُّجُودِ، رقم الحديث-3324)
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রা. থেকে বর্ণিত। রাসূল সা. ইরশাদ করেছন-“মহিলা যখন নামাযের মধ্যে বসবে তখন যেন (ডান) উরু অপর উরুর উপর রাখে। আর যখন সেজদা করবে তখন যেন পেট উরুর সাথে মিলিয়ে রাখে। যা তার সতরের জন্য অধিক উপযোগী। আল্লাহ তায়ালা তাকে দেখে বলেন-ওহে আমার ফেরেস্তারা! তোমরা সাক্ষী থাক। আমি তাকে ক্ষমা করে দিলাম। (সুনানে বায়হাকী-২/২২৩, হাদিস নং-৩৩২৪)
এই হাদিসটি হাসান।
৩
حدثنا محمد بن عبد الله الحضرمي قال حدثتني ميمونة بنت عبد الجبار بن وائل بن حجر عن أبيها عبد الجبار عن علقمة عمها عن وائل بن حجر قال : جئت النبي صلى الله عليه و سلم ………….فقال لي رسول الله صلى الله عليه و سلم : يا وائل بن حجر إذا صليت فاجعل يديك حذاء أذنيك والمرأة تجعل يديها حذاء ثدييها (المعجم الكبير، باب الواو، وائل بن حجر الحضرمي القيل، رقم الحديث-28)
হযরত ওয়াইল বিন হুজর রা. বলেন। আমি নবীজী সা. এর দরবারে হাজির হলাম। তখন তিনি আমাকে (অনেক কথার সাথে একথাও) বলেছিলেন যে, হে ওয়াইল বিন হুজর! যখন তুমি নামায শুরু করবে তখন কান বরাবর হাত উঠাবে। আর মহিলা হাত উঠাবে বুক বরাবর। (আল মুজামুল কাবীর, হাদিস নং-২৮)
এই হাদিসটিও হাসান।
উল্লেখিত হাদিসগুলি থেকে একথা স্পষ্ট হয়ে যায় যে, কিছু কিছু হুকুমের ক্ষেত্রে মহিলার নামায আদায়ের পদ্ধতি পুরুষের নামায আদায়ের পদ্ধতি থেকে ভিন্ন। বিশেষত ২ নং হাদিসটি দ্বারা একথাও বুঝা গেল যে, মহিলার নামায আদায়ের শরীয়ত নির্ধারিত ভিন্ন এই পদ্ধতির মধ্যে ওই দিকটিই বিবেচনায় রাখা হয়েছে যা তার সতরও পর্দার পক্ষে সর্বাধিক উপপোযী।
উল্লেখ্য যে, এই সব হাদিসের সমর্থনে মহিলাদের নামায আদায়ের পদ্ধতির পার্থক্য ও ভিন্নতাকে নির্দেশ করে এমন আরো কিছু হাদিস আছে। পক্ষান্তরে এগুলির সাথে বিরোধপূর্ণ একটি হাদীসও কোথাও পাওয়া যাবেনা। যাতে বলা হয়েছে যে, পুরুষ ও মহিলার নামাযের পদ্ধতিতে কোন পার্থক্য নেই। বরং উভয়ের নামাযই এক ও অভিন্ন। একথার পক্ষে একটি হাদীসও নেই।
সাহাবায়ে কিরামের ফতোয়া
১
5072 – عبد الرزاق عن إسرائيل عن أبي إسحاق عن الحارث عن علي قال إذا سجدت المرأة فلتحتفز ولتلصق فخذيها ببطنها (مصنف عبد الرزاق، كتاب الصلاة، باب تكبير المرأة بيديها وقيام المرأة و ركوعها وسجودها، رقم الحيث-5072)
হযরত আলী রা. বলেছেন-মহিলা যখন সেজদা করে তখন সে যেন খুব জড়সড় হয়ে সেজদা করে এবং উভয় উরু পেটের সাথে মিলিয়ে রাখে। (মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক-৩/১৩৮, হাদিস নং-৫০৭২, মুসান্নাফে ইবনে শাইবা-২/৩০৮, হাদিস নং-২৭৯৩, সুনানে কুবরা বায়হাকী-২/২২২)
২
حَدَّثَنَا أَبُو عَبْدِ الرَّحْمَنِ الْمُقْرِئ ، عَنْ سَعِيدِ بْنِ أَبِي أَيُّوبَ ، عَنْ يَزِيدَ بْنِ أَبِي حَبِيبٍ ، عَنْ بُكَيْرِ بْنِ عَبْدِ اللهِ بْنِ الأَشَجِّ ، عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ ؛ أَنَّهُ سُئِلَ عَنْ صَلاَةِ الْمَرْأَةِ ؟ فَقَالَ : تَجْتَمِعُ وَتَحْتَفِزُ. (مصنف ابن ابى شيبة، كتاب الصلاة، في المرأة كَيْفَ تَجْلِسُ فِي الصَّلاَةِ، رقم الحديث-2794)
হযরত ইবনে আব্বাস রা. কে জিজ্ঞেস করা হল-মহিলারা কিভাবে নামায আদায় করবে? তিনি বললেন-“খুব জড়সড় হয়ে অঙ্গের সাথে অঙ্গ মিলিয়ে নামায আদায় করবে। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা-১/৩০২, হাদিস নং-২৭৯৪)
উপরে মহিলাদের নামায সম্পর্কে দু’জন সাহাবীর যে মত বর্ণিত হল, আমাদের জানা মতে কোন হাদীসগন্থের কোথাও একজন সাহাবী থেকেও এর বিপরীত কিছু বিদ্যমান নেই।
রাসূল সা. থেকে সাহাবায়ে কিরাম যে, দ্বীন শিখেছেন তাদের কাছ থেকে তা শিখেছেন তাবেয়ীগণ। তাঁদের ফাতওয়া থেকেও এ কথাই প্রতীয়মান হয় যে,”মহিলাদের নামায পুরুষের নামায থেকে ভিন্ন। নিম্নে তাঁদের মধ্য থেকে প্রসিদ্ধ কয়েকজনের ফাতওয়া উল্লেখ করা হয়।
তাবেয়ীদের ফাতওয়া
১
2486- حدثنا هشيم ، قال : أخبرنا شيخ لنا ، قال : سمعت عطاء ؛ سئل عن المرأة كيف ترفع يديها في الصلاة ؟ قال : حذو ثدييها(مصنف ابن ابى شيبه، كتاب الصلاة، باب من كان يتم التكبير ولا ينقصه في كل رفع وخفض،)
হযরত আতা বিন আবী রাবাহ কে জিজ্ঞেস করা হল-“নামাযে মহিলা কতটুকু হাত উঠাবে?” তিনি বললেন-“বুক বরাবর”। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা,-১/২৭০, হাদিস নং-২৪৮৬)
২
2489- حدثنا محمد بن بكر ، عن ابن جريج ، قال : قلت لعطاء : تشير المرأة بيديها بالتكبير كالرجل ؟ قال : لا ترفع بذلك يديها كالرجل ، وأشار فخفض يديه جدا ، وجمعهما إليه جدا ، وقال : إن للمرأة هيئة ليست للرجل ، وإن تركت ذلك فلا حرج.
হযরত ইবনে জুরাইজ রহ. বলেন-“আমি আতা বিন আবী রাবাহকে জিজ্ঞেস করলাম-“মহিলা তাকবীরের সময় পুরুষের সমান হাত তুলবে?” তিনি বললেন-“মহিলা পুরুষের মত হাত তুলবেনা। এরপর তিনি তার উভয় হাত (পুরুষ অপেক্ষা) অনেক নিচুতে রেখে শরীরের সাথ খুব মিলিয়ে রাখলেন এবং বললেন-মহিলাদের পদ্ধতি পুরুষ থেকে ভিন্ন। তবে এমন না করলেও অসুবিধা নেই। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা-১/২৭০, হাদিস নং-২৪৮৯, মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক,হাদিস নং-৫০৬৬,৬২৫১)
৩
2796- حدثنا جرير ، عن ليث ، عن مجاهد ؛ أنه كان يكره أن يضع الرجل بطنه على فخذيه إذا سجد كما تصنع المرأة.
হযরত মুজাহিদ বিন জাবর রহ. থেকে বর্ণিত। তিনি পুরুষের জন্য মহিলার মত উরুর সাথে পেট লাগিয়ে সেজদা করাকে অপছন্দ করতেন। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা-১/৩০২, হাদিস নং-২৮৯৬)
৪
2487- حدثنا رواد بن جراح ، عن الأوزاعي ، عن الزهري ، قال : ترفع يديها حذو منكبيها.
হযরত যুহরী রহ. বলেন-“মহিলা কাঁধ পর্যন্ত হাত উঠাবে। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা-১/২৭০, হাদীস নং-২৪৮৭)
৫
5068 – عبد الرزاق عن معمر عن الحسن وقتادة قالا إذا سجدت المرأة فإنها تنضم ما استطاعت ولا تتجافى لكي لا ترفع عجيزتها
হযরত হাসান বসরী ও কাতাদা রহ. বলেন-“মহিলা যখন সেজদা করবে তখন সে যথাসম্ভব জড়সড় হয়ে থাকবে। অঙ্গ প্রত্যঙ্গ ফাঁকা রেখে সেজদা দিবেনা যাতে কোমড় উঁচু হয়ে না থাকে”। (মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক-৩/১৩৭, হাদিস নং-৫০৬৮, মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা-১/৩০৩)
৬
2795- حَدَّثَنَا أَبُو الأَحْوَصِِ ، عَنْ مُغِيرَةَ ، عَنْ إبْرَاهِيمَ ، قَالَ : إذَا سَجَدَتِ الْمَرْأَةُ فَلْتَضُمَّ فَخِذَيْهَا ، وَلْتَضَعْ بَطْنَهَا عَلَيْهِمَا.(مصنف ابن ابى شيبة، كتاب الصلاة، في المرأة كَيْفَ تَجْلِسُ فِي الصَّلاَةِ، رقم الحديث-2795)
হযরত ইবরাহীম নাখয়ী রহ. বলেন-মহিলা যখন সেজদা করবে তখন যেন সে উভয় উরু মিলিয়ে রাখে এবং পেট উরুর সাথে মিলিয়ে রাখে। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা-১/৩০২, হাদিস নং-২৭৯৫)
৭
5071 – عبد الرزاق عن معمر والثوري عن منصور عن إبراهيم قال كانت تؤمر المرأة أن تضع ذراعها وبطنها على فخذيها إذا سجدت ولا تتجافى كما يتجافى الرجل لكي لا ترفع عجيزتها
হযরত ইবরাহীম নাখয়ী রহ. আরো বলেন-“মহিলাদের আদেশ করা হত তারা যেন সেজদা অবস্থায় হাত ও পেট উরুর সাথে মিলিয়ে রাখে। পুরুষের মত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ফাঁকা না রাখে। যাতে কোমড় উঁচু হয়ে না থাকে। (মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক-৩/১৩৭, হাদিস নং-৫০৭১)
৮
2799- حَدَّثَنَا إسْمَاعِيلُ ابْنُ عُلَيَّةَ ، عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ إِسْحَاقَ ، عَنْ زُرْعَةَ بْنْ إِبْرَاهِيمَ ، عَن خَالِدِ بْنِ اللَّجْلاَجِ ، قَالَ : كُنَّ النِّسَاءُ يُؤْمَرْنَ أَنْ يَتَرَبَّعْنَ إذَا جَلَسْنَ فِي الصَّلاَةِ ، وَلاَ يَجْلِسْنَ جُلُوسَ الرِّجَالِ عَلَى أَوْرَاكِهِنَّ ، يُتَّقي ذَلِكَ عَلَى الْمَرْأَةِ ، مَخَافَةَ أَنْ يَكُونَ مِنْهَا الشَّيءُ.
হযরত খালেদ বিন লাজ্জাজ রহ. বলেন-“মহিলাদেরকে আদেশ করা হত যেন নামাযে দুই পা ডান দিক দিয়ে বের করে নিতম্বের উপর বসে। পুরুষদের মত না বসে। আবরণযোগ্য কোন কিছু প্রকাশিত হয়ে যাওয়ার আশংকায় মহিলাদেরকে এমনি করতে হয়। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা-১/৩০৩, হাদিস নং-২৭৯৯)
উল্লেখিত বর্ণনাগুলি ছাড়াও আয়িম্মায়ে তাবেয়ীনের আরো কিছু বর্ণনা এমন আছে যা মহিলা-পুরুষের নামাযের পার্থক্য নির্দেশ করে। পক্ষান্তরে একজন তাবেয়ী থেকেও এর বিপরীত বক্তব্য প্রমাণিত নয়।
চার ইমামের ফিক্বহের আলোকেঃ
****************************
ফিক্বহে ইসলামীর চারটি সংকলন মুসলিম উম্মাহর মাঝে প্রচলিত। যথা-
১-ফিক্বহে হানাফী
২-ফিক্বহে শাফেয়ী
৩-ফিক্বহে মালেকী
৪-ফিক্বহে হাম্বলী
এবার দেখুন এই চার ফিক্বহের ইমামদের মতামত।
১-ফ্বিকহে হানাফী
***************
احب الينا ان تجمع رجليها من جانب ولا تنتصب انتصاب الرجل، (كتاب الآثار-1/609)
ইমাম আবু হানীফা রহঃ এর অন্যতম সাগরীদ ইমাম মুহাম্মদ রহঃ বলেন-“ আমাদের নিকট পছন্দনীয় হল, মহিলারা নামাযে উভয় পা একপাশে মিলিয়ে রাখবে। পুরুষের মত এক পা দাঁড় করিয়ে রাখবেনা। {কিতাবুল আসার, ইমাম মুহাম্মদ রহঃ-১/৬০৯}
روى امامنا الأعظم عن نافع عن ابن عمر رضى الله عنهما أنه سئل كيف كان النساء يصلين على عهد رسول الله صلى الله عليه وسلم؟ قال كن يتربعن أمرن أن يحتفزن،
أخرجه أبو محمد الحارثى والأشنانى وابن خسرو من طريقه عن سفيان الثورى عنه، راجع جامع الماسانيد-1/400، وهذا أقوى واحسن ما روى فى هذا الباب، ولذا احتج به امامنا وجعله مذهبه وأخذ به،
আমাদের ইমামে আজম আবু হানীফা রঃ নাফে রহঃ থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন-“হযরত আব্দুল্লাহ বিন ওমর রাঃ কে জিজ্ঞেস করা হল-“রাসূল সাঃ এর যুগে মহিলারা কিভাবে নামায পড়তেন?” তিনি বললেন-“আগে তারা চারজানু হয়ে বসতেন, পরে তাদেরকে জড়সড় হয়ে বসতে বলা হয়েছে”। {জামেউল মাসানিদ-১/৪০০}
উক্ত হাদিসটি এ বিষয়ে বর্ণিত সবকিছুর চেয়ে শক্তিশালী। এ কারণেই আমাদের ইমাম এর দ্বারা দলীল পেশ করেছেন। এ অনুযায়ী আমল করেছেন। এবং এটিকে নিজের মাযহাব বানিয়েছেন। {কিতাবুল আসার এর টিকা-১/৬০৭}
মহিলাদের ক্ষেত্রে পার্থক্যের বর্ণনা হানাফী ফিক্বহের কিতাবে দেখুন-
১-বাদায়িউস সানায়ে-১/৪৬৬
২-হেদায়া-১/১০০-১১০
৩-আল মাবসূত লিস সারাখসী-১/৪৬৬
৪-ফাতওয়ায়ে শামী-১/৫০৪
৫-ফাতওয়ায়ে আলমগীরী-১/৭৩-৭৫
২-ফিক্বহে শাফেয়ী
***************
( قال الشافعي ) وقد أدب الله تعالى النساء بالاستتار وأدبهن بذلك رسوله صلى الله عليه وسلم وأحب للمرأة في السجود أن تضم بعضها إلى بعض وتلصق بطنها بفخذيها وتسجد كأستر ما يكون لها وهكذا أحب لها في الركوع والجلوس وجميع الصلاة أن تكون فيها كأستر ما يكون لها (كتاب الأم، باب الذكر في السجود)
ইমাম শাফেয়ী রহঃ বলেন-“আল্লাহ পাক মহিলাদেরকে পুরোপুরি আবৃত থাকার শিক্ষা দিয়েছেন। তার রাসূল সাঃ ও অনুরূপ শিক্ষা দিয়েছেন। তাই আমার নিকট পছন্দীয় হল-সেজদা অবস্থায় মহিলারা এক অঙ্গের সাথে অপর অঙ্গ মিলিয়ে রাখবে। পেট উরুর সাথে মিলিয়ে রাখবে। আর সেজদা এমনভাবে করবে যাতে সতরের চূড়ান্ত হেফাযত হয়। অনুরূপ রুকু, বৈঠক ও গোটা নামাযে এমনভাবে থাকবে যাতে সতরের পুরোপুরি হেফাযত হয়। {কিতাবুল উম্ম-১/১৩৮)
৩-ফিক্বহে মালেকী
*****************
মালেকী মাযহাবের প্রসিদ্ধ ফক্বীহ ইমাম আবুল আব্বাস আল কারাফী রঃ ইমাম মালিক রহঃ এর মত উল্লেখ করেন-
وأما مساواة النساء للرجال ففي النوادر عن مالك تضع فخذها اليمنى على اليسرى وتنضم قدر طاقتها ولا تفرج في ركوع ولا سجود ولا جلوس بخلاف الرجل
নামাযে মহিলা পুরুষের মত কিনা? এ বিষয়ে ইমাম মালিক রহঃ থেকে বর্ণিত। মহিলা ডান উরু বাম উরুর উপর রাখবে এবং যথাসম্ভব জড়সড় হয়ে বসবে। রুকু সেজদা ও বৈঠকে কোন সময়ই ফাঁক ফাঁক হয়ে বসবেনা। পক্ষান্তরে পুরুষের পদ্ধতি হল ভিন্ন। {আয যাখীরা-২/১৯৩}
৪-ফিক্বহে হাম্বলী
***************
ইমাম আহমদ রহঃ এর ফাতওয়া উল্লেখ আছে ইমাম ইবনে কুদামা রহঃ এর আল মুগীনী কিতাবে।
فأما المرأة فذكر القاضي فيها روايتين عن أحمد إحداهما ترفع لما روى الخلال بإسناده عن أم الدرداء وحفصة بنت سيرين أنهما كانتا ترفعان أيديهما وهو قول طاوس ولأن من شرع في حقه التكبير شرع في حقه الرفع كالرجل فعلى هذا ترفع قليلا قال أحمد رفع دون الرفع والثانية لا يشرع لأنه في معنى التجافي ولا يشرع ذلك لها بل تجع نفسها في الركوع والسجود وسائر صلاتها
তাকবীরের সময় মহিলারা হাত উঠাবে কি উঠাবে না? এ বিষয়ে কাজী [আবু ইয়াজ] ইমাম আহমাদ বিন
হাম্বল রহঃ থেকে দু’টি মত উল্লেখ করেছেন।
প্রথম মত হল
হাত উঠাবে। কেননা খাল্লাল হযরত উম্মে দারদা এবং হযরত হাফসা বিন সীরীন থেকে সনদসহ বর্ণনা করেন যে, তারা হাত উঠাতেন। ইমাম তাউসের বক্তব্যও তাই। উপরন্তু যার ব্যাপারে তাকবীর বলার নির্দেশ রয়েছে তার ব্যাপারে হাত উঠানোরও নির্দেশ রয়েছে। যেমন পুরুষ করে থাকে। এ হিসেবে মহিলারাও হাত উঠাবে। তবে সামান্য। আহমাদ রহঃ বলেন-“তুলনামূলক কম উঠাবে”।
দ্বিতীয় মত হল
-“মহিলাদের জন্য হাত উঠানোরই হুকুম নাই। কেননা হাত উঠালে কোন অঙ্গকে ফাঁক করতেই হয়, অথচ মহিলাদের জন্য এর বিধান দেওয়া হয়নি। বরং তাদের জন্য নিয়ম হল রুকু সেজদাসহ পুরো নামাযে নিজেদেরকে গুটিয়ে রাখবে। {আল মুগনী-২/১৩৯}
আলোচনার এই পর্যায়ে হাদীস, আসারে সাহাবা, তাবেয়ীন ও চার মাযহাবের ইমামদের ঐক্যমত্যের প্রমাণ পেশ করার পর আমরা দেখব আমাদের যে গায়রে মুকাল্লিদ ভাইয়েরা মহিলাদের নামাযের ভিন্ন বিষয়টিকে উপেক্ষা করেন এবং পুরুষ ও মহিলার নামাযের অভিন্ন পদ্ধতির পক্ষে কথা বলেন, তাদের আলেমগণ এ বিষয়ে কি বলেন? তারা কি ফাতওয়া দিয়েছেন?
গায়রে মুকাল্লিদ আলেমগণের ফাতওয়া
***************************
মহিলাদের নামাযের পদ্ধতিতে ইতোপূর্বে যা কিছু উল্লেখ করা হল তথা হাদিস, আসারে সাহাবা, তাবেয়ীনদের ইজমা, এবং চার ইমামের ঐক্যমত্বের আলোকে যুগ যুগ ধরে অবিচ্ছন্ন সূত্র পরম্পরায় যেই পার্থক্যের আমল চলে আসছে, সেটাকে গায়রে মুকাল্লিদদের নেতৃস্থানীয় আলেমগণও স্বীকৃতি দিয়েছেন এবং সেই আলোকে ফাতওয়া দিয়েছেন।
# মাওলানা মুহাম্মদ দাউদ গযনবী রঃ এর পিতা আল্লামা আব্দুল জাব্বার গযনবী রহঃ কে যখন জিজ্ঞেস করা হল-“মহিলাদের নামাযে জড়সড় হয়ে থাকা কি উচিত?” জবাবে তিনি একটি হাদিস উল্লেখ করার পর লেখেন-“এর উপরই আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআতের চার মাযহাব ও অন্যান্যের মাঝে আমল চলে আসছে”।
এরপর তিনি চার মাযহাবের কিতাবের উদ্ধৃতি প্রদান করার পর লিখেন-
“মোটকথা মহিলাদের জড়সড় হয়ে নামায পড়ার বিষয়টি হাদীস ও চার মাযহাবের ইমামগণ ও অন্যান্যের সর্বসম্মত আমলের আলোকে প্রমাণিত। এর অস্বিকারকারী হাদীসের কিতাবসমূহ ও উম্মতে মুসলিমার সর্বসম্মত আমল সম্পর্কে বেখবর ও অজ্ঞ”। (ফাতওয়ায়ে গযনবীয়্যা-২৭-২৮, ফাতওয়ায়ে ওলামায়ে আহলে হাদিস—৩/১৪৮-১৪৯, মাযমুয়ায়ে রাসায়েল-মাওলানা মুহাম্মদ আমীন সফদর-১-৩১০-৩১১)
মাওলানা আলী মুহাম্মদ সাঈদ সাহেব “ফাতওয়ায়ে ওলামায়ে আহলে হাদিস” এ এই পার্থক্যের কথা স্বীকার করেছেন। (মাজমুয়ায়ে রাসায়েল-১/৩০৫)
আলবানী সাহেবের অসার বক্তব্য
আশ্চর্যের কথা হল, উপরোল্লিখিত দলীলসমূহ এবং উম্মতের মাঝে নববী যুগ থেকে পর্যায়ক্রমে চলে আসা এই সর্বসম্মত আমলের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে আলবানী সাহেব তাঁর “সিফাতুস সালাতে” ঘোষণা দিয়ে দিলেন যে, “পুরুষ ও মহিলার নামাযের পদ্ধতি এক”।
*******************************************************
কিন্তু এই দাবির পক্ষে তিনি না কোন আয়াত পেশ করেছেন, না কোন হাদিস। আর কোন সাহাবী বা তাবেয়ীর ফাতওয়া। এহেন বক্তব্যের ভিত্তি তিনি শুধু এটাকেই বানিয়েছেন যে, পুরুষ ও মহিলার নামাযের পদ্ধতিগত পার্থক্যের ব্যাপারে কোন সহীহ হাদিস নাই।
অথচ তার এই দাবি প্রমাণ করার জন্য উচিত ছিল উপরোল্লিখিত দলিল সমূহ বিশ্লেষণ করা। কিন্তু তিনি তা না করে কেবল পার্থক্য সম্বলিত একটি হাদীসকে {যা বক্ষ্যমান নিবন্ধে উল্লেখিত হয়েছে} শুধু এ কথা বলে যয়ীফ বলে আখ্যা দিয়েছেন যে, হাদীসটি ‘মুরসাল’। আর মুরসাল হওয়ায় এটি দুর্বল। এ ছাড়া অন্য কোন আলোচনাই তিনি দলীল সম্পর্কে করেননি।
কিন্তু তার এই কথাটি এক গুয়েমি ছাড়া কিছু নয়। কারণ মুহাদ্দীসীনে কিরামের নিকট হাদিস মুরসাল হলেই তা অগ্রহণীয় হয়ে যায়না। কেননা
প্রথমত
আয়িম্মায়ে দ্বীনের অধিকাংশের মতে বিশেষত স্বর্ণযুগের ইমামগণের নিকট যদি প্রয়োজনীয় শর্তাবলী উপস্থিত থাকে। তাহলে মুরসাল হাদিসও সহীহ হাদিসের মত গ্রহণযোগ্য
।
দ্বিতীয়ত:
যে ইমামগণের নিকট ‘মুরসাল” হাদীসকে সহীহ বলার ব্যাপারে দ্বিধা রয়েছে তারাও মূলত কিছু শর্তের সাথে মুরসাল হাদীসকে দলীল হিসেবে পেশ করার উপযোগী মনে করেন। প্রবন্ধের শুরুতে বর্ণিত মুরসাল বর্ণনাটিতেও সেসব শর্ত বিদ্যমান রয়েছে। যার কারণে গায়রে মুকাল্লিদদের বিখ্যাত আলেম ও মুহাদ্দিস নওয়াব সিদ্দীক হাসান খান “আউনুল বারী”-(১/৫২০ দারুর রাশীদ, হালাব সিরিয়া) তে লিখেছেন-“এই মুরসাল হাদীসটি সকল ইমামের উসূল ও মূলনীতি অনুযায়ী দলীল হওয়ার যোগ্য”। তার পূর্ণ বক্তব্যটি দেখুন আওনুল বারী-২/১৫৯,
পুরুষ মহিলার নামাযের পার্থক্য নেই প্রমাণ করতে আলবানী দ্বিতীয় যে কাজটি করেছেন তা খুবই গর্হিত।
********************************************************************************
সেটা হল তিনি ইবরাহীম নাখয়ী রহঃ নাকি বলেছেন-“মহিলা পুরুষের মতই নামায আদায় করবে”। এই কথাটি নাকি মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবাতে আছে। অথচ সেই কিতাবের কোথাও এই উক্তিটি নাই। আল্লাহই ভাল জানেন তিনি কি করে এই কথা বলতে পারলেন!!
অথচ ইতোপূর্বে মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবার একাধিক বর্ণনা সহীহ সনদে ইবরাহীম নাখয়ী থেকে উদ্ধৃত হয়েছে। যেখানে ইবরাহীম নাখয়ী রহঃ স্পষ্টই মহিলা পুরুষের নামাযের পার্থক্যের কথা বলেছেন।
আলবানী সাহেব তার নিজের দাবী প্রমাণ করার জন্য তৃতীয় আরেকটি কাজ করেছেন। সেটা হল-ইমাম বুখারী রহঃ এর রিজালশাস্ত্রেরে একটি কিতাব “তারীখে সগীর” থেকে নিম্নোক্ত বর্ণনাটি পেশ করেছেন-
عن ام الدرداء انها كانت تجلس فى الصلاة جلسة الرجل
-
“উম্মে দারদা থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি নামাযে পুরুষের মত বসতেন”।
আলবানী সাহেব খেয়াল করতে পারেননি যে, এই বর্ণনাটি দ্বারা নামাযে পুরুষ ও মহিলার বসার ভিন্নতাই প্রমাণ হয়। এক হওয়া নয়। যদি উভয় বসার পদ্ধতি এক হত, তাহলে “পুরুষের মত বসা” কথাটির কোন অর্থ থাকেনা।
তাই এই কথা থেকে এটি বুঝা যায় যে, সেই যমানায় পুরুষদের মত মহিলারা বসতনা। কিন্তু তিনি যেহেতো ভিন্নভাবে বসতেন তাই এটি ইতিহাসের বর্ণনায় চলে এসেছে।
আরেকটি মজার ব্যাপার হল। উম্মে দারদা হলেন একজন তাবেয়ী। তিনি ৮০ হিজরীতে ইন্তেকাল করেন। তাবেয়ীর বক্তব্য দ্বারা আলবানী সাহেব দলীল পেশ করলেন। অথচ তিনিই আমাদের বর্ণিত প্রথম হাদিসটি মুরসাল বলে প্রত্যাখ্যান করলেন। আশ্চর্য ব্যাপার!!
সুতরাং যদি নামাযের পদ্ধতি বর্ণনার ক্ষেত্রে তাবেয়ীর আমল দলীল হয়ে থাকে (আসলে কথা এটাই, অর্থাৎ তাবেয়ীর কথা দলীল হিসেবে গ্রহণযোগ্য) তাহলে ইতোপূর্বে বিখ্যাত একাধিক তাবেয়ী ইমামগণের উদ্ধৃতিতে মহিলাদের নামাযের পদ্ধতির ভিন্নতার ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা গেছে। এবং একথা প্রমাণিত হয়ে গেছে যে, আয়িম্মায়ে তাবেয়ীদের তালীম ও শিক্ষা অনুযায়ী রুকু সেজদা, ও বৈঠকসহ অনেক ক্ষেত্রে মহিলাদের নামায পদ্ধতি পুরুষ থেকে ভিন্ন ছিল। এক্ষেত্রে শুধু একজন তাবেয়ী মহিলার ব্যক্তিগত আমলকে দলীল হিসেবে গ্রহণ করাটা কিছুতেই যুক্তিযুক্ত হতে পারেনা। বিশেষ করে যখন ঠিক এই বর্ণনাটির মাঝেই সুষ্পষ্ট একথার ইংগিত রয়েছে যে, এ ক্ষেত্রে এ মহিলা অন্য সাহাবী ও তাবেয়ী মহিলা থেকে সম্পুর্ণ ভিন্ন পন্থা অবলম্বন করেছিলেন।
সুতরাং বুঝা গেল নামাযের মাঝে বিভিন্ন বিষয়ে মহিলারা পুরুষদের থেকে আলাদা এটাই দলীল দ্বারা প্রমাণিত।
***************************************************************************
গায়রে মুকাল্লিদ ভাইদের বক্তব্যটির কোন দলিল নেই। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সত্যকে সত্য হিসেবে মেনে নেবার তৌফিক দান করুন। আমীন।
গাইরে মুকাল্লিদ ড. জাকের নায়েকও বলে থাকেন পুরুষ মহিলার নামাযের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই।
উপরোক্ত আলোচনায় বুঝা গেল ড. জাকের নায়েক নিজেকে ইসলামী চিন্তাবিদ বলে পরিচয় দিলেও হাদীস কুরআন এর প্রকৃত জ্ঞান তার মাঝে নেই। তাঁর সুন্দর সুন্দর লিকচারের মূল হলো শেষ পর্যন্ত গাইরে মুকাল্লিদ ও আহলে হাদীসদের মাসআলাগুলোকে মুসলমানদের মধ্যে প্রচার করে এর দিকে আকৃষ্ট করা। তাঁর আসল উদ্দেশ্য টের পাওয়ার পর এখন মুসলমানগণ তাঁর মুর্খতা সম্পর্কে সম্মক জ্ঞাত হয়েছেন বিধায় তার একচ্চত্র জনপ্রিয়তা আর নেই। তাতেই বুঝা যায় বানোয়াটি বেশি দিন টিকে না।