![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
টেন্স্ নিয়ে ভীষণ টেন্সড ছিলাম। স্কুলে পেঁৗছেই খোঁজ নিয়েছি, জয়েন স্যার বা সুবোধ স্যার এসেছেন কি না। কেউ একজন দিল দুঃসংবাদটা, দুজনই এসেছেন। কী আর করা? সযত্নে দুজনকে এড়িয়ে চলাই বুদ্ধিমানের কাজ। একটা ভয় তবুও ছিল। পাছে হুট করে দেখা হয়ে যাক এঁদের কারুর সঙ্গে, আর বলে বসেন, 'শুনলাম তুই নাকি টুকটাক লেখালেখি করিস। কী করে সম্ভব! তুই তো টেন্্স্ কয় প্রকার সেটাই কোনোদিন বুঝে উঠতে পারিসনি। আচ্ছা দেখি তোর বুদ্ধি কতটা খুলেছে। বাংলাতেই বল, কাল কয় প্রকার?'
আমরা যারা ব্যাক-বেঞ্চার ছিলাম, মানে নিয়ম করে কাসের শেষ বেঞ্চ দখলে রেখেছি স্কুলের প্রথম থেকে শেষদিন পর্যন্ত, তাদের কাছে কাল বরাবরই তিন প্রকার_আকাল, মাকাল আর নাকাল!
না, শেষ পর্যন্ত স্যারদের মুখোমুখি হলেও বুদ্ধির আকাল নিয়ে জন্মানো এই মাকাল ছাত্রকে প্রশ্নের উত্তর দিতে দিতে আর নাকাল হতে হয়নি। বরং স্যারেরা সস্নেহে বুকে টেনে নিয়েছেন। শৈশবে যাদের কড়া অনুশাসনের শিা দেওয়া রাশভারী পিতার ছবিটাই দেখেছি, রংপুর জিলা স্কুলের ১৭৫ বছর পূর্তি উৎসবে গিয়ে নতুন চেহারাটাও দেখা হয়ে গেল। দেখলাম, একেক জনের হূদয়ে খেলে যায় কী উথাল-পাথাল আবেগের ঢেউ!
ভাষার সাধ্য নেই স্কুল নিয়ে এই আবেগ, ভালোবাসার অদৃশ্য সুতোয় বাঁধা প্রাণের ছবিটা অাঁকে। হূদয় দিয়েই সেটা অনুভব করতে হয়। না হলে সেই ১৯৪০ সালে ম্যাট্রিক পাশ করে বেরিয়ে গেছেন যিনি, মাসুম আলী, সেই তিনিও কেন ছুটে আসবেন উৎসবে? কেন ১৯৪৮ সালের মো. শফিকুল হক রোদ মাথায় পেতে দীর্ঘণ অপো করবেন লম্বা লাইনে? স্মৃতি হিসেবে রেখে দিতে একটা স্মরণীকা পাওয়ার জন্য কণ্ঠে ঝরে পড়বে আকুতি? ১৯৪৫ সালের ব্যাচের মো. খবির উদ্দিন শাহ্ই বা কেন স্কুলের ওপর নির্মীয়মাণ প্রামাণ্যচিত্রের শুটিংয়ে অংশ নিতে সব ঝক্কি-ঝামেলা মেনে নেবেন হাসিমুখে?
কোথায় লুকিয়ে থাকে এত আবেগ! যে আবেগের টানে ১৯৫৩ সালের ছাত্র ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের প্রাক্তন মন্ত্রী, বিধান সভার বর্তমান এমএলএ ডা. ফজলে হক ঠিকই সময় মতো নিবন্ধন করেন উৎসবে অংশ নিতে। ১৯৫২ সালে পাশ করে বেরিয়ে যাওয়া, রংপুর পৌরসভার সাবেক শ্রদ্ধাভাজন চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আফজাল কিংবা ১৯৬২ ব্যাচের জহীরুল হক রন্জুকে চৌপর-দিনভর খাটতে দেখা যায় উৎসব কমিটির সবার সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে। সেই চট্টগ্রাম থেকে ট্রাকে করে শখের বশে তোলা ছবি নিয়ে চলে আসেন ১৯৭৫ ব্যাচের আব্দুল কুদ্দুস, প্রদর্শনীর জন্য।
১৯৭৭ ব্যাচের মাহমুদুল ইসলাম টুটুল কিংবা এবিএম আরশাদ হোসেনের মতো বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদে কর্মরত প্রাক্তন ছাত্রেরাও যে শত-ব্যস্ততা অস্বীকার করে ছুটে আসেন, সে তো হূদয়ের গভীর থেকে ডাক আসে বলেই। এই দুজনের নাম আলাদা করে বলার কারণ, মিলিত প্রাণের এই স্রোত যেন প্রবহমান থাকে, যেন অটুট থাকে ঐক্যের এই বন্ধন, সেই স্বপ্ন নিয়ে গড়া অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের মূল ধারণা এসেছে এঁদের কাছ থেকেই। লিখতে গিয়ে এঁদের নাম মনে পড়ছে বলেই উল্লেখ করা। আসলে দুই মাসব্যাপী প্রস্তুতি থেকে শুরু করে ২৩ ও ২৪ ডিসেম্বর উৎসবের দুই দিন পর্যন্ত কয়েক শ কর্মীর হাড়ভাঙা খাটুনির কারণেই রংপুর জিলা স্কুলের উৎসব পরিণত হয়েছিল রংপুরবাসীর সার্বজনীন উৎসবে। প্রায় পনের হাজার মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত সম্মিলন শেষবার কবে হয়েছিল রংপুরে!
কুদ্দুস স্যার ছিলেন আমাদের প্রধান শিক। প্রতিদিন সকালে, আরামে দাঁড়াও ভঙ্গীতে অ্যাসেম্বলিতে দাঁড়িয়ে থাকা এই আমাদের উদ্দেশে গমগম কণ্ঠে একটি করে উপদেশ দিতেন। দেখা হলো তাঁর সঙ্গেও। বয়সের ছাপ পড়েছে। কিন্তু এতটুকু ফিকে হয়নি সেই রাশভারী ব্যক্তিত্ব। 'লাল টিসি'র ভয় নেই, তবুও এখনো তাঁর সামনে দাঁড়ালে বুক কাঁপে। শ্রদ্ধামাখা ভয়ে!
সুবোধ স্যার-বাসুদেব স্যার আমাদের বিতর্ক শেখাতেন। উদারা-মুদারা-তারা থেকে কতদিন একা-একা আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে অনুশীলন করেছি_কণ্ঠে মন্দ্রার মালিকা হে মহেন্দ্র; দ্রুতলয়ে পড়েছি_চাচা চাঁছা চটা চেঁছো না, না চাঁছা চটা চাঁছ; জলে চুন তাজা, তেলে চুল তাজা... আরও কত কী!
বিশ-ত্রিশ বছর পর স্কুলের মাঠে, সেই বটগাছের ছায়া এসে দাঁড়িয়েছেন এমন ছাত্রেরও দেখা মিলল উৎসবে গিয়ে। হঠাৎ হারিয়ে ফেলা বন্ধুর সঙ্গে কয়েক দশক পর দেখা হওয়া, চোখে জল নিয়ে উষ্ণ আলিঙ্গনে বাঁধা_আহা কী সেই দৃশ্য! যে বটগাছের তলায় সেদিনের কিশোর ছাত্রটি কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে আবৃত্তি করেছিল সুকান্তের 'ছাড়পত্র', সেই আনিসুল হককে সেই বটগাছের নিচে বসে অটোগ্রাফ দিচ্ছেন_এই দৃশ্য কি কম উপভোগ্য!
হুট করেই যেন শেষ হয়ে গেল দুদিন। আনন্দের, আবেগের, ভালোবাসার মুহূর্তগুলো এত ছোট হয় কেন! একে একে নিভে যাচ্ছে সব বাতি। মঞ্চে অদ্ভুত অাঁধার এক। চারদিকে শ্মশানের নিস্তবব্ধতা। কুয়াশার চাদর ছিঁড়ে বান ডাকল জোৎস্না। অনেকেরই চোখে জল। দূরে, ২০০০ ব্যাচের তাঁবু থেকে ভেসে এলো গান, 'স্কুল তুমি থাকবে যেমন, আমিও তেমন রব, হাজার বছর পরেও তোমার, কাসে ছুটে যাব!'
০৬ ই জানুয়ারি, ২০১০ সন্ধ্যা ৭:২১
রাহা বলেছেন: পুরো পড়ার সময় আমাদের কোথায় বলুন? তবে আপনাকে পুরা ধন্যবাদ
২| ০৬ ই জানুয়ারি, ২০১০ সন্ধ্যা ৭:২১
রাজিব খান০০৭ বলেছেন: ভালো লেখেছেন।
০৬ ই জানুয়ারি, ২০১০ সন্ধ্যা ৭:২৬
রাহা বলেছেন: ধন্যবাদ। ধন্যবাদ
৩| ০৬ ই জানুয়ারি, ২০১০ সন্ধ্যা ৭:৩৫
মেহবুবা বলেছেন: কয়েক বছর আগে পত্রিকায় রংপুর জেলা স্কুলের পূনর্মিলনী অনুষ্ঠানের কথা জানতে পেরে উদ্যোক্তাদের একজনকে ফোনে বলেছিলাম সাহিত্যিক বুদ্ধদেব গুহ এই স্কুলে পড়েছেন ,তাকে যেন স্মরন করা হয় । উনি জানিয়েছিলেন যোগাযোগ করেছিলেন ওনারা ।
ভাবতে ভাল লাগে উনি এই স্কুলে পড়েছেন ।
আফজাল সাহেব মানে কি প্লেয়ার ডানার ভাই ?
ধন্যবাদ পোষ্টের জন্য ।
০৭ ই জানুয়ারি, ২০১০ দুপুর ১:৫২
রাহা বলেছেন: হ্যাঁ, ঠিক ধরেছেন। আফজাল ভাই রংপুর পৌরসভার চেয়ারম্যান ছিলেন
৪| ০৬ ই জানুয়ারি, ২০১০ সন্ধ্যা ৭:৪৯
কালের কুতুব বলেছেন: অসাধারন।
আমিও রংপুর জিলা স্কুলের ছাত্র (কেন জানি সাবেক বলতে ইচ্ছে করেনা)।
স্কুল নিয়ে আমার অনেক গর্ব, অনেক অহংকার।
আমিও একটা পোস্ট দিয়েছিলাম স্কুল নিয়ে।
ইউরোপের এক মন খারাপ করা দিন। মনে পড়ছে রংপুর, মনে পড়ছে রংপুর জিলা স্কুল।
৫| ০৬ ই জানুয়ারি, ২০১০ রাত ৮:০৬
পৃথিবীর আমি বলেছেন: রংপুর জিলা স্কুলের ১৭৫ বছর পূর্তি উৎসব তো অনেক দিন আগের ঘটনা,এত পরে পোষ্ট দিলেন যে ?
আমি রংপুর ক্যান্ট. এ পড়তাম।সেই সময় রংপুরেই ছিলাম...জিলা স্কুলের ছাত্র না হলেও আপনাদের প্রোগ্রামের আবেগ তখন ঠিকই বুঝেছিলাম।আজ আবার বুঝলাম আপনার লেখা পড়ে.....অসাধারন। "+"
০৭ ই জানুয়ারি, ২০১০ দুপুর ১:৫৩
রাহা বলেছেন: লেখাটা আগেই লেখা। ভাবলাম একটু শেয়ার করি। 'কালোত্তীর্ণ লেখা' কী বলেন!
৬| ০৮ ই জানুয়ারি, ২০১০ সকাল ১১:৪৪
মেহবুবা বলেছেন: আফজাল সাহেব মানুষ অত্যন্ত ভাল ।
ওনার মা কে দেখেছিলাম , মার্জিত , রুচিসম্পন্না , স্নেহময়ী একজন ।
ওনাদের বাড়িটা পুরোন আমলের ধাঁচে । আমার বিশেষভাবে মনে আছে ।
©somewhere in net ltd.
১|
০৬ ই জানুয়ারি, ২০১০ সন্ধ্যা ৭:১৬
রু দ্র রা য় বলেছেন: আপনার লেখা পড়লাম তবে পুরোটা না
যা লিখেছেন ভালো
+