![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বল বীর – বল উন্নত মম শির! শির নেহারি’আমারি নতশির ওই শিখর হিমাদ্রির!
ছবি- এ আই জেনারেটেড
লাখ লাখ বছর আগের পৃথিবী। বরফযুগের ভেতর দিয়ে চলেছে মানব প্রজাতির আদিম জীবন। গুহার অন্ধকার আর অগ্নিশিখার উষ্ণতায় মানুষ তখনও শিখছে বাঁচতে—শিখছে শিকার করতে, আগুন জ্বালাতে, বন্য প্রাণীর আক্রমণ থেকে দলকে রক্ষা করতে। এই সময়েই ছিল লিয়ান্ডারথাল প্রজাতির এক যুবক। তার নাম আরকু।
এক সকালে আরকু তার দলের কয়েকজন সঙ্গীর সঙ্গে বেরিয়েছিল শিকারে। শীতল বাতাসে তার শ্বাস গাঢ় ধোঁয়ার মতো বের হচ্ছিল। হাতে ধারালো পাথরের বর্শা। চোখের দৃষ্টি গেঁথে ছিল হরিণের পালে। হঠাৎ গাছপালার আড়াল থেকে গর্জন করে বেরিয়ে এল এক বিশাল গুহা-সিংহ। সঙ্গীরা চিৎকার করে পালাতে শুরু করল। আরকু পেছনে পড়ে গেল। তার বর্শা সিংহের গায়ে লাগলেও সেটি আহত অবস্থায় আরও ভয়ংকর হয়ে উঠল। সে মরিয়া হয়ে দৌড়াল, কিন্তু গাঢ় জঙ্গলের ভেতর ঢুকে দল থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল।
সন্ধ্যা নামতেই ভয় তাকে আচ্ছন্ন করল। অন্ধকার জঙ্গলে চিতা, নেকড়ে, এমনকি হায়েনার দল ওত পেতে থাকে। ক্ষুধার জ্বালা চেপে বসেছিল। সে জানত, এখন আর দলের আগুন বা সঙ্গীর চিৎকার তাকে রক্ষা করবে না। একা আরকুর শুরু হল সংগ্রামের এক নতুন অধ্যায়।
প্রথম রাতেই আরকু শিখল—পেট খালি থাকলে ঘুম আসে না। সকালে গাছের গুঁড়ি ভেঙে সে পোকামাকড় খুঁজে বের করল। কেঁচো, পোকা—যা পায় তাই মুখে পুরে দিল। কয়েকদিন পর সে একা ছোট ছোট খরগোশ ধরতে শিখল। পাথর ছুঁড়ে বা ফাঁদ পেতে শিকার করত। কখনও কাঁচা খেত, কখনও ঘষে আগুন জ্বালিয়ে মাংস পোড়াত। প্রতিটি খাবারের কণা তার কাছে ছিল টিকে থাকার প্রতিশ্রুতি।
একদিন নদীর ধারে মাছ ধরার সময় পিছন থেকে ভেসে এল গর্জন। বিশাল এক ভাল্লুক! আরকু প্রাণপণে দৌড়ে প্রাণ বাঁচাল। ভাল্লুক দাঁত কেলিয়ে গর্জন করে কিছুক্ষণ পর চলে গেল। সেই রাতটা গাছের ডালে কাটাতে হল তাকে। সেদিন থেকে আরকু বুঝল—শুধু শিকার করা নয়, বেঁচে থাকতে হলে তাকে প্রতিনিয়ত পালাতে হবে, বুদ্ধি খাটাতে হবে।
এক রাতে আকাশ ফেটে বৃষ্টি নামল। বজ্রপাত, ঝড় আর শীতলতা তাকে কাঁপিয়ে তুলল। ভেজা শরীরে দাঁত কাঁপতে লাগল। তখনই সে আশ্রয় খুঁজল পাহাড়ের গুহায়। সেই গুহা তাকে দিল বেঁচে থাকার নতুন আশা। শুকনো ঘাস জড়ো করে শোবার জায়গা বানাল। পাথর ঘষে আগুন জ্বালিয়ে শরীর গরম করল। আগুনের আলো তাকে সাহস দিল, আবার মনে করিয়ে দিল দলের অগ্নিকুণ্ডের কথা।
দিনের পর দিন একা থাকার পর আরকুর মনে হলো—একলা বেঁচে থাকা কঠিন। সে অন্য দলের সন্ধান করতে শুরু করল। কখনও দূরে মানুষের মতো ডাক শুনত, কখনও ধোঁয়ার রেখা দেখতে পেত আকাশে। কিন্তু কাছে যেতেই শিকারী পশুর ডাক শোনা যেত। ভয় তাকে বারবার পিছিয়ে দিত।
একদিন হঠাৎ নদীর ধারে সে দেখল আরেকজন নারী লিয়ান্ডারথাল—তার হাতে কাঠের লাঠি, কাঁধে পশমি চামড়া। প্রথমে তারা একে অপরকে ভয় পেল। চিৎকার করে লাঠি তুলল নারীটি। কিন্তু আরকু মাটিতে শিকার করা খরগোশ ফেলে দিল। খাবারের বিনিময়ে ভরসা জন্মাল। তারা দু’জনে একসঙ্গে আগুন জ্বালাল, খরগোশ পুড়িয়ে খেল। সেই রাতের পর আরকু আর পুরোপুরি একা রইল না।
নারীটির নাম ছিল ইরা। সে-ও হারিয়ে গিয়েছিল নিজের দল থেকে। তারা দু’জনে মিলে শিকার করত, গাছের ফল খেত, একে অপরকে পাহারা দিত। ধীরে ধীরে তাদের মনে হলো, হয়তো দলকে খুঁজে পাওয়া সম্ভব।
কয়েক সপ্তাহ পর দূরে ধোঁয়ার কুণ্ডলী দেখা গেল। তারা সাহস করে এগোল। গুহার মুখে দাঁড়িয়ে ছিল আরকুর নিজের দলের কয়েকজন। প্রথমে সবাই সন্দিহান ছিল, কিন্তু আরকুর বুকে থাকা পুরনো পাথরের লকেট দেখে তারা তাকে চিনে ফেলল। আনন্দে চিৎকার করে দল এগিয়ে এল।
দীর্ঘ একাকীত্ব আর মৃত্যুর মুখোমুখি হওয়ার পর অবশেষে আরকু তার দল ফিরে পেল। সঙ্গে পেল নতুন সঙ্গী ইরাকে। আগুনের চারপাশে বসে মাংস ভাগাভাগি করতে করতে সে বুঝল—বেঁচে থাকার সংগ্রামে একার শক্তি যথেষ্ট নয়, দল আর সঙ্গীরাই আসল নিরাপত্তা।
আরকুর সেই গল্প আজ নেই, তার নামও ইতিহাসে হারিয়ে গেছে। কিন্তু লাখ বছর আগে এক আদিম মানুষ তার সংগ্রামে প্রমাণ করে গিয়েছিল—মানুষ একা নয়, মানুষের বেঁচে থাকা মানেই দল, আগুন, আর বিশ্বাস।
০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:০৫
খাঁজা বাবা বলেছেন: ধন্যবাদ এ আই কে
২| ০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৩
রাজীব নুর বলেছেন: সুন্দর।
০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:০৬
খাঁজা বাবা বলেছেন:
৩| ০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:০৩
বিজন রয় বলেছেন: শেষ লাইনেই মূল কথা।
০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:২৬
খাঁজা বাবা বলেছেন: হ্যাঁ
৪| ০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:২৫
কামাল১৮ বলেছেন: মানুষের ইতিহাস হলো সংগ্রামের ইতিহাস।
৫| ০৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২০
রাজীব নুর বলেছেন: পোষ্টে আবার এলাম, কে কি মন্তব্য করেছেন??
৬| ০৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২৮
নজসু বলেছেন:
প্রকৃত শক্তি আসে একতা আর বিশ্বাস থেকে।
©somewhere in net ltd.
১|
০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৩৭
কাজী ফাতেমা ছবি বলেছেন: ভালো লাগলো পোস্ট