![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
শফিক অপরাধীর মত দাড়িয়ে আছে তাদের ঘরের দরজার
সামনে, আর তার মা তাকে অবিরাম বকা দিয়েই যাচ্ছে
তো দিয়েই যাচ্ছে। এজন্য অবশ্য রাহেলা বেগমকে দোষ
দিয়ে লাভ নাই। মাস্টার্স পাশ ছেলে তাও আবার বড়
সন্তান যদি পাশ করে ৩ বছর বেকার ঘরে বসে থাকে,
তবে মা-বাবার আর কিই বা করার থাকে।
শফিকের বাবা একজন সামান্য কেরানির চাকরি করে, তাও
আবার বেসরকারি অফিসে। শফিকের আরো দুটো ছোট
বোনও আছে, যাদের পড়াশুনা করানোই এখন দায় হয়ে
দাড়িয়েছে।
তার উপর আছে নিত্য অভাব-অনটন। একারনেই বাসায়
শফিকের অবস্হান খুবই নড়বড়ে। তার উপর শফিকের বাবা
বাসায় আসতে আজ অনেক দেরি করছেন। তাই রাহেলা
বেগমের মেজাজ আজ সপ্তমে উঠে আছে।
শফিকের বাবা কখনোই এত দেরি করে বাড়ি ফেরেন না।
অথচ এখন রাত ১১.৩০টা বাজতে চলল, তাও উনার
দেখা নেই। তাই রাহেলা বেগম অজানা আশংকায় অস্হির
হয়ে ঘর-বার করছেন, আর শফিকের সাথে ঝগড়া করছেন।
এতক্ষন চুপচাপ শুনতে শুনতে আর সহ্য করতে না পেরে
"ধুর ছাই " বলে ঘর থেকে বের হয়ে গেল।
বাসা থেকে বের হয়েছে এমন সময় ঝুম বৃষ্টি শুরু হোল।
আর শফিক বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতেই চলতে লাগলো।
হাটতে হাটতে চিন্তা করতে লাগলো, " অনেক হয়েছে
আর না। এবার আমাকে কিছু করতেই হবে, এভাবে আর
চলছে না। গত ৩ বছর চাকরির পেছনে ঘুরতে ঘুরতে
নিজের আয়ু অর্ধেক কমিয়ে ফেলেছি।"
"এবার অন্য পথ ধরতে হবে। প্রয়োজনে বিপথে গিয়ে
হলেও আমাকে এবার টাকার মুখ দেখতেই হবে। অভাবের
সংসারটা যেন হা করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। "
একথা ভাবতে ভাবতেই হঠাৎ প্যান্টের পকেটে পড়ে থাকা
"পকেট নাইফ " টার উপর হাত পড়ে শফিকের। এটা ওর খুব
প্রিয় একটি জিনিস, যা কখনো ও হাত ছাড়া করে না।
প্যান্টের পকেটে হাত ঢুকিয়ে "পকেট নাইফ " টা বের করে
এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে শফিক।
এমন সময় অন্ধকার বৃষ্টি স্নাত রাস্তা ধরে কারো
এগিয়ে আসার আওয়াজ পেল শফিক। তক্ষুনি মনে মনে
শফিক ভাবলো,
"আজ তবে ছিনতাই দিয়েই শুরু করি নতুন জীবন। একাজে
তো আর মামা-খালুর প্রয়োজন হবে না। "
একথা ভেবেই পকেটে হাতটা চেপে ধরে চুপিচুপি
আগুন্তুকের দিকে এগিয়ে যেতে থাকে শফিক।
শরিফুল সাহেব
শরিফুল সাহেব আজ অনেক একটু নিশ্চিন্ত হয়ে বাড়ি
ফিরছিলেন। অনেক বলে কয়ে আজ এক বন্ধুর কাছ থেকে
হাজার দশেক টাকা হাওলাত করতে পেরেছেন। উনি বাড়ির
পথে হাটতে হাটতে ভাবছিলেন,
"যাক এমাসে অন্তত মিলার মাকে ডাক্তার দেখাতে
পারবো। বেচারি টাকার অভাবে আজ অনেক দিন
চিকিৎসার অভাবে অসুখে কষ্ট পাচ্ছে। আর মেয়ে দুটোর
পরীক্ষার ফিসটাও জমা দিতে পারবো মনে হচ্ছে সময়
মত। আর তো মাত্র একদিন বাকী জমা দেয়ার। কালই
ওদের হাতে টাকাটা দিয়ে দেব যাতে জমা দিয়ে দিতে
পারে। "
এসব চিন্তা করতে করতে হাতের বাজারের ব্যাগটা নিয়ে
হাটছিলেন, এমন সময় মুষলধারায় বৃষ্টি পড়তে আরম্ভ
করলো। পকেটে রাখা টাকার কথা চিন্তা করে পথের
ধারের একটা টঙ দোকানের সামনের ছাউনির নিচে গিয়ে
দাড়ালেন উনি। একটু দেরি হলেও বৃষ্টি বন্ধ হবার পরই
রওয়ানা দিবেন বলে ঠিক করলেন তিনি। দাড়িয়ে দাড়িয়ে
বিরক্ত হচ্ছেন এমন সময়ে পুরো এলাকার কারেন্ট চলে
গেলো। চারপাশটা যেন এত রাতে আরো নির্জন হয়ে
গেল আরো।
হঠাৎ করে একটা কুকুর ডেকে উঠতেই গা ছম ছম করে
উঠলো শরিফুল সাহেবের। আধ ঘন্টা অপেক্ষা করার
পরও যখন কারেন্ট আসলো না তখন আরো অস্হির হয়ে
উঠলেন শরিফুল সাহেব। খেয়াল করে দেখলেন বৃষ্টি
পরার আওয়াজটা ক্রমশ কমে আসছে।
তখন তিনি বৃষ্টি মাথায় করেই টঙ দোকান থেকে সাবধানে
বের হয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিলেন। আর চিন্তা
করতে লাগলেন,
"বাড়ি গিয়ে যখন মিলার মাকে টাকা পাওয়ার কথা বলবো
তখনই ও নিশ্চিন্ত হবে। এতক্ষনে নিশ্চই চিন্তায়
অস্হির হয়ে আছে। কারন টাকাটা না পেলে যে মেয়ে
দুটোর একটা বছর নস্ট হয়ে যেত। "
পরিশেষে
শফিক অন্ধকারে আগত মানুষটার পদধ্বনি শুনছে আর
হাতের "পকেট নাইফ "টাকে আকড়ে ধরে নিজেকে
প্রস্তুত করছে জীবনের প্রথম ছিনতাই এর জন্য। ওকে
যে আজ প্রমাণ করতেই হবে, যে ও অকর্মা নয়।
ও নিজেও পারে সংসারের জন্য নিজের বিবেক বুদ্ধির
বিসর্জন দিয়ে বিপথে গিয়ে টাকা কামাই করতে।
ধীরে ধীরে অপর ব্যাক্তিটি কাছে চলে এলে শফিক ঘাপটি
ধরে রাস্তার একপাশে দাড়িয়ে থাকে। যাতে ঔ আগন্তুক
কাছে আসার সাথে সাথে ও লোকটার উপর চড়াও হতে
পারে।
লোকটি প্রায় কাছে চলে আসার পর শফিক নিজের গলার
স্বাভাবিক গলার স্বরটা পাল্টে একটু ভারী গলায় বলে
উঠে,
" কই যান চাচা মিয়া, একটু খাড়ান দেহি। কতা আছে
আপনের লগে। "
শরিফুল সাহেবের গা ভয়ে হিম হয়ে আসে সাথে সাথে।
উনি তাড়াতাড়ি পকেটের টাকাটা আতংকে চেপে ধরেন
আর ভয়ে ভয়ে বলে উঠেন,
" কে বাবা আপনি? আমার সাথে আপনার কি কথা, বাবা??
"
শফিক উত্তর দেয়, " আমি কে তা কি মুখে বইলা দিতে
হইব নিকি?? বুঝেন না এত রাইতে কারা রাস্তায় দাড়া
করায় ?? "
শরিফুল ভয়ে ভয়ে উত্তর দেন, "আমার কাছে তো কিছু
নাই বাবা, আমি খুবই দরিদ্র এক মানুষ। "
এ কথা শুনে শফিক রেগে শরিফুল সাহেবের কলার ধরে
যেই ঝাকুনি দিতে যাবে এমন সময় কারেন্ট চলে আসে।
আরে পাশের স্ট্রিট ল্যাম্প থেকে আলো এসে পড়ে
দুজনের মুখে।
আর ওরা হতভম্ব হয়ে পরস্পরের দিকে তাকিয়ে থাকে।
শরিফুল সাহেব চিৎকার করে উঠেন,
" শফিক, তুই ? "
আর শফিক, " বাবা ? " বলে চিৎকার করে উঠে দৌড়ে
পালিয়ে যায়,,,, হয়তো চিরতরে।
©somewhere in net ltd.