নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ছেছড়া লেখক

রাইয়ান পাটোয়ারী

সম্পাদক, তরুণোদয়

রাইয়ান পাটোয়ারী › বিস্তারিত পোস্টঃ

ছাত্র রাজনীতির একাল সেকাল

১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ রাত ১:২৮




ষাটের দশকের রাজনীতিকে বাংলাদেশের ছাত্র রাজনীতির সোনালী সময় বলা হয়ে থাকে। মূলত ‘৫২’ ও ‘৫৪’ র পাকিস্থানিদের দমননীতি পর দেশ ও দেশের মানুষের অধিকার রক্ষার জন্য দলে দলে তরুনরা রাজনীতি তে ভিড়তে শুরু করে। এই নিবন্ধন টিতে ছাত্র রাজনীতি বলতে তরুণ রাজনীতির কথাই ইঙ্গিত করা হবে। যুগে যুগে বাঙ্গালী জাতি সকল অন্যায় অবিচার এর বিরুদ্ধে প্রতিরোদ গড়ে তোলে তরুণ প্রজন্মের হাত ধরেই। যার স্পষ্ট উদাহরন ‘৬৬’ র ছয় দফা, ‘৬৯’ এর গণঅভ্যুথান, ‘৭১’ এর মহান মুক্তিযোদ্ধ এবং ‘৯০’ এর স্বৈরচারবিরোধী আন্দোলনে। কিন্তু এর পরের ইতিহাস হয়ে পড়ে অনাকাঙ্খিত ও দুঃখজনক। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ছত্রছায়ায় থেকে ছাত্র সংগঠনের নেতা কর্মীরা নীতি আদর্শ থেকে দূরে সরে হত্যা, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, দখলদারিত্ব, টেন্ডারবাজিসহ বিভিন্ন সহিংস কার্যকলাপে জড়িয়ে পড়তে থাকে। মানুষের কল্যানের জন্য ব্যাবহৃত ছাত্র রাজনীতি ক্রমেই হয়ে পড়ে স্বার্থকেন্দ্রিক আর লেজুড়ভিত্তিক। যা বর্তমানে এসে ক্যান্সারে রূপ নিয়েছে। ছাত্র রাজনীতির এই দুর্দশার কারন পর্যালোচনা করতে গিয়ে প্রথমেই আসে প্রেক্ষাপট এর কথা। মূলত ষাটের দশকের প্রেক্ষাপট আর বর্তমান প্রেক্ষাপট সম্পূর্ণ ভিন্ন। ষাটের দশকে সবার মনে একটাই বাসনা ছিলো। কি করে দেশকে পাকিস্থানি শোষকদের কাছ থেকে মুক্ত করা যায়, কি করে দেশ স্বাধীন করা যায়। তখন এতো গ্রুপিং ছিলো না। দল, মত নির্বিশেষে সবাই এক কাতারে এসে দেশকে স্বাধীন করতে চেয়েছিলো। কিন্তু পরবর্তীতে দেশ স্বাধীন হওয়ার পরে প্রেক্ষাপট দ্রুত পরিবর্তন হতে থাকে । শাষক শ্রেনীর কাছ থেকে অধিকার আদায়ের পরিবর্তে নিজেকে শাষকশ্রেণীতে রুপান্তরিত করার প্রয়াস চলতে থাকে। ফলে ছাত্র রাজনীতি ক্রমেই তার গৌরব হারাতে শুরু করে।
এবার বর্তমান অবস্থার দিকে দৃষ্টি ফেরানো যাক। বর্তমানে তরুণ প্রজন্মের রাজনীতির অবস্থা আরো বেশি করুণ হয়ে পড়েছে। মেধাবী, যোগ্য, দেশপ্রেমিক তরুণরা ক্রমেই রাজনীতি অঙ্গণ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। ফলে অযোগ্যরাই সেই অবস্থানে প্রতিষ্ঠা পেয়ে যাচ্ছে। যারা নিজেকে যোগ্য আর সৎ করার পরিবর্তে পা চাটার অভ্যাসটা ভালো ভাবে রপ্ত করছে। কারণ পা চাটাদের রাজনেতিক অঙ্গনে এখন দাফট বেশি। বর্তমানে যে সকল তরুণরা রাজনীতিতে প্রবেশ করছে তাদের অধিকাংশের মধ্যেই দেশপ্রেম কিংবা মানুষের কল্যান করার মানসিকতা নেই। বরংচ কিভাবে নিজেকে মানি আর মাসেল পাওয়ারে পাওয়ারপুল করা যায় সেই চিন্তাই উদগ্রীভ থাকে। বড় বড় রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের স্বার্থে ব্যাবহার করার জন্য তরুণদের হাতে তুলে দেয় অস্ত্র। তাই বর্তমানে কোনো ছাত্র কিংবা তরুণ রাজনীতিতে যুক্ত হওয়ার অর্থ হলো চাঁদাবজি, টেন্ডারবাজি, দখলদারি করা আর সাথে আছে নিজেদের মধ্যে গ্রুফিং আর নিয়মিত অস্ত্রের মহড়া দেওয়া। সত্তরের দশকে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে তরুণরা ব্যাবহার করতো তাদের মেধাশক্তি, প্রজ্ঞা, আর সৃজনশীলতা কিন্তু বর্তমানে এই সবের পরিবর্তে স্থান করে নিচ্ছে দেশী-বিদেশী অস্ত্রসস্ত্র। অস্ত্রের ঝনঝনানি বাজিয়ে নিজেদের শক্তির জানান দেয় বর্তমানে তারুণ্য নির্ভর রাজনীতি সংগঠন গুলো।
এখন কথা হলো, তরুণদের এ ধরনের মানসিকতার কারণ কি? কারণ টা অনেকাংশেই স্পষ্ট। বর্তমানে তরুণদেরকে সুস্থ ধারার রাজনীতিতে অনুপ্রানিত করার মতো কেউ নেই। সবাই সবার স্বার্থের বাহিরে কিছু করার চেষ্টা করে না। আর স্বার্থ যেখানে মুখ্য, সংঘাত সেখানে অনিবার্য। অথচ ষাটের দশককে যদি আমরা রাজনীতির উত্তাল সময় হিসেবে বিবেচনা করি, তাহলে দেখতে পাই ঐ সময়ে যারা প্রথম সারির রাজনীতিবিদ ছিলেন তারা কেউ নিজেদের স্বার্থের কথা বিবেচনা করেন নাই। সবাই নিঃস্বার্থ ভাবে দেশের কল্যানের জন্য রাজণীতি করে গেছেন। আর তখন তরুণদের কে অনুপ্রানিত করেছিলো এ কে এম ফজলুল হক, আবদুল হামিদ খান ভাসানী, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মত মানুষ গুলোর নিঃস্বার্থ দেশপ্রেম। আজ আর কোনো রাজনীতিবিদ তরুণদের কে অনুপ্রানিত করতে পারতেছে না। বরংচ তরুণদেরকে অর্থের প্রলোভন দেখিয়ে নিজেদের ক্ষমতায় রাখার হাতিয়ার হিসেবে ব্যাবহার করছে।
আজকাল তরুণ মেধাবীরা রাজনীতিকে ঘৃণা করে । তারা রাজনীতি অঙ্গনে আসতে চায় না। আবার অনেকেই আসতে চাইলে ও উপযুক্ত পরিবেশ এর অভাবে আসতে পারে না। যার উদাহরণ স্বরুপ হয়ত আমরা বলতে পারি ডাকসু, রাকসু সহ ছাত্র ইউনিয়ন নির্বাচন গুলো মুখ থুবড়ে পড়ে থাকার কথা। একটি দেশকে এগিয়ে নিতে যেমন শিক্ষক, ডাক্তার, প্রকৌশলদের প্রয়োজন রয়েছে ঠিক তেমনি একজন সৎ, মেধাবী রাজনীতি বিদ এর ও প্রয়োজন আছে। তাই দেশকে সমান তালে এগিয়ে নেওয়ার জন্য সৎ, যোগ্য , মেধাবী তরুণদের রাজনীতি অঙ্গনে আসতে হবে। আর প্রবীণদেরকেই এর সুষ্ঠ, সুন্দর পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.