নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি ভালোবাসাহীন জগতের বাসিন্দা, জীবন যেখানে নীরস। প্রতিনিয়ত খুঁজে যাই ভালবাসার রূপ এবং অবগাহন করতে চাই যুক্তির সাগরে।

রায়হানুল এফ রাজ

আমি খুব সাধারণ মানুষ।পৃথিবীতে এই অল্প সময় বিচরণে আমি বুঝে গেছি আমার সম্বল একমাত্র আমি। প্রকৃতির মাঝে আমি আমিই। আমার অস্তিত্বও আমি। তাই নিজেকে নিয়ে খেলতেই আমি বেশি পছন্দ করি। মেতে থাকতে চাই যুক্তির খেলা নিয়ে।

রায়হানুল এফ রাজ › বিস্তারিত পোস্টঃ

অস্তিত্ব জুড়ে তুমি

০৯ ই আগস্ট, ২০১৬ রাত ১১:৪৮


“আমি আসলেই পাগল হয়ে গেছি, কিংবা পাগল হয়ে যাচ্ছি। আমি প্রকৃতির উপর খুব বেশি নির্ভর হয়ে গেছি। বৃষ্টির দিন গুলোতে আমি দুই কাপ চা নিয়ে বারান্দায় বসি। সামনা সামনি দুটি চেয়ার। ছোট্ট টেবিলটাতে দুটি চায়ের কাপ। বাইরে বৃষ্টি হচ্ছে। কি সুন্দর একটি আবহ! মৃদু শব্দে রবীন্দ্র সঙ্গীত বাজছে। পরিবেশটাকে রোমান্টিক বললে খুব কমই হয়ে যাবে। সব কিছুই আছে ঠিক আগের মতোই শুধু তুমি নেই। সেই অভ্যাস এখনো থেকে গেছে। বৃষ্টির দিনে তোমাকে নিয়ে চা খাওয়ার মুহূর্তগুলো আমি এখনো ভুলতে পারিনি। তাই তো নিজের স্মৃতির সাথে কোন রকম প্রতারণা না করেই এখনো ভালোবাসার পসরা সাজিয়ে বসে থাকি। তোমাকে ধরে রাখতে পারিনি কিন্তু তোমাকে নিয়ে পার করা মধুর স্মৃতিগুলো কে আমি হারিয়ে যেতে দেইনি।
তোমাকে নিয়ে যেমন ভরা পূর্ণিমার রাতে জোছনা দেখতাম তেমনই এখনো রোজ দেখি। তখন তুমি পাশে ছিলে। আর এখন ঐ দূর থেকে তারা হয়ে আমার পাশে থাক। মেয়েকে একদিন দেখালাম। বললাম, ঐ যে তারাটা দেখছ ওটা তোমার মা। সে কি হাসি তার। যেন মুক্ত ঝরছে। বলল, বাবা তুমি বোকা। তারাটা মা হতে যাবে কেন? ঐ চাঁদটাই তো মা। কথাটা বলেই পুতুল হাতে নিয়ে দৌড়ে তার দাদুর ঘরে চলে গেল। আমি একা একা বসে বসে তোমার কথা ভাবছি। আসলে আমি তো একা নই, ঐ যে তুমি হাসি মুখে আমার পাশে বসে আলো বিলিয়ে দিচ্ছ।
ইদানীং দেখি মেয়েটাও জোছনাকে ভালোবেসে ফেলেছে। বারান্দায় একা একা বসে সে জোছনা দেখে আর গোপনে খুব সন্তর্পণে চোখ মোছে। আমি সেটা দেখেও না দেখার ভান করি। একটু কাঁদুক সে। যা মা নাই তাকে একটু কাঁদতেই হয়।
একটা নতুন পাগলামি যুক্ত হয়েছে আমার দৈনন্দিন জীবনে। শুনলে তুমি হাসবে। খুব হাসবে। সেই সেদিনের মতো যেদিন আমি বাজার থেকে পচা মাছ নিয়ে এসেছিলাম। তুমি হাসতে হাসতে হাপিয়ে উঠেছিলে। জানো, সেদিনের কথা মনে হলে এখনো তোমার উপর খুব রাগ হয়। তুমি জানতে আমি ভালো বাজার করতে পারি না। তবুও তুমি হেসেছিলে। আমার খুব খারাপ লেগেছিল। তবে তোমার সেদিনের বলা অনেক কথার মাঝে একটি কথা এখনো আমার কানে বাজে। তুমি হিটলারের মতো প্রচণ্ড জাত্তাভিমান নিয়ে বলেছিলে মানুষ ভুল করতে পারে কিন্তু তুমি ভুল করতে পারো না। আমি ভুল করতে পারি এই কথা তুমি বিশ্বাস করতে না। সেই ছাত্রজীবন থেকেই তুমি এতটাই বিশ্বাস করতে আমাকে। তোমার মনে আছে একদিন ল্যাবে ম্যাডামের সাথে যে তর্ক করলাম? তুমি আমার পক্ষ হয়ে ম্যাডামের সাথে তর্ক করেছিলে। আমি ভুল ছিলাম তবুও। তুমি নেই কিন্তু তোমার সেই কথা আমার এখনো অনেক আছে। শেষ বার কবে কোন কাজ করতে গিয়ে ভুল করেছিলাম তা আমার মনে নেই।
তুমি যেদিন আমাকে ছেড়ে না ফেরার দেশে চলে গেলে সেদিও প্রচুর বৃষ্টি ছিল। প্রকৃতি চায়নি কেউ আমার কান্না দেখুক। যদিও আমি কাঁদতে পারিনা, তার পরও সেদিন আমার দুচোখ ভেঙ্গে জোয়ার এসেছিলো। আমি নিজেকে সামলাতে পারিনি। পারবোই বা কি ভাবে? আমাকে শান্ত করার মানুষ দুটি আমার মা ও তুমি দুজনেই তো না ফেরার দেশে। তবে হ্যাঁ, আমার লক্ষ্মী মেয়েটাও কীভাবে যেন আমাকে সামলানোর কৌশল শিখে গেছে। তাই তোমাকে যখন কবরে রেখে আসি তখন অঝোর বৃষ্টির কারণে আমার কান্না কেউ দেখেনি। যখন বাড়ি ফিরে এলাম তোমার চার বছরের মেয়ে ঠিকই বুঝেছিল আমি কাঁদছি। বুঝবেই না বা কেন? তোমার মেয়ে তো। তোমার মতোই হয়েছে। আমার না বলা কষ্টগুলোও বুঝে ফেলে। বাড়িতে ঢুকতেই সে এক লাফে আমার কোলে চলে এসে ঠিকই আমার চোখ মুছে দিয়েছে। বৃষ্টিকে আমি তাই আমার মেয়ের সমান ভালোবাসি। দুজনেই আমার কষ্টগুলো বুঝে ফেলে।
এই দেখ তোমার কথা ভাবতে শুরু করে মনটা খারপ হয়ে গেল। খুব কান্না পাচ্ছে। মনে হয় কেঁদে ফেলব বাচ্চা ছেলের মতো। বৃষ্টি হচ্ছে। আমার কান্না কেউ দেখবে না। শুধু দেখবে তিন জন। ঐ দূর থেকে মা, তুমি আর তোমার রেখে যাওয়া ছোট্ট মেয়েটা।”



মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.