নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার নাম- রাজীব নূর খান। ভালো লাগে পড়তে- লিখতে আর বুদ্ধিমান লোকদের সাথে আড্ডা দিতে। কোনো কুসংস্কারে আমার বিশ্বাস নেই। নিজের দেশটাকে অত্যাধিক ভালোবাসি। সৎ ও পরিশ্রমী মানুষদের শ্রদ্ধা করি।

রাজীব নুর

আমি একজন ভাল মানুষ বলেই নিজেকে দাবী করি। কারো দ্বিমত থাকলে সেটা তার সমস্যা।

রাজীব নুর › বিস্তারিত পোস্টঃ

রবীন্দ্রনাথের কোনো বিকল্প নাই- ৭৯

০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ১:১৬

বাংলা সাহিত্যের এক অনন্য স্রষ্টা হচ্ছেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।রবীন্দ্রনাথের মৃত্যুর এত বছর পরেও রবীন্দ্র মূল্যায়ন সঠিকভাবে হয় নি। একদল যেমন ভক্তিরসে ভরপুর হয়ে তাঁকে পুজো করে ছাড়ছে, অন্য দল তেমনি তাঁর বিরুদ্ধে ক্রমাগত বিষোদগার বর্ষণ করে চলেছে, মূলতঃ সাম্প্রদায়িক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে। এই দুয়ের মাঝামাঝি থেকে রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে নির্মোহ এবং নৈর্ব্যক্তি আলোচনা নেই বললেই চলে। রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে এই সমস্যাটা আজকের নয়। তিনি জীবিত থাকা অবস্থা থেকেই এটা চলে আসছে। রবীন্দ্রনাথ নিঃসন্দেহে শ্রেষ্ঠ বাঙালিদের মধ্যে অগ্রগন্য। তাঁর অসীম মেধা, সীমাহীন সৃষ্টিশীলতা, শিল্প-সাহিত্যের বিভিন্ন অঙ্গনে গ্রীবা উন্নত রাজহংসের মত সাবলীল বিচরণ অন্য সব বাঙালিদের থেকে তাঁকে অনন্য করে তুলেছে।



১৮৭৪ সালে ‘ভারতী’ পত্রিকায় রবীন্দ্রনাথের ‘অভিলাষ’ কবিতাটি প্রকাশিত হয়। এটিই তাঁর প্রথম প্রকাশিত রচনা। ১৮৭৫ সালে বার্ষিক হিন্দুমেলা উৎসব উপলক্ষ্যে তিনি রচনা করেন ‘হিন্দুমেলার উপহার’। কবিতাটি প্রকাশিত হয় ‘অমৃতবাজার পত্রিকা’য়। এই বছরই মাতৃবিয়োগ হয়েছিল রবীন্দ্রনাথের। ১৮৭৭ সালে ‘ভারতী’ পত্রিকায় রবীন্দ্রনাথের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ রচনা প্রকাশিত হয়। এগুলি হল ‘মেঘনাদবধ কাব্যের সমালোচনা’, ভানুসিং-ভণিতাযুক্ত রাধাকৃষ্ণ-বিষয়ক কবিতাগুচ্ছ (যা পরবর্তীকালে ‘ভানুসিংহ ঠাকুরের পদাবলী’ নামে গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়) এবং ‘ভিখারিণী’ ও ‘করুণা’ নামে দুটি গল্প। উল্লেখ্য, ‘ভিখারিণী’ বাংলা সাহিত্যের প্রথম ছোটোগল্প। ১৮৭৭ সালেই দাদা জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘অলীকবাবু’ নাটকে নামভূমিকায় অভিনয়ের মাধ্যমে রঙ্গালয়ে আবির্ভাব ঘটে নট রবীন্দ্রনাথের। ১৮৭৮ সালে প্রকাশিত হয় রবীন্দ্রনাথের প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘কবিকাহিনী’। এটি রবীন্দ্রনাথের প্রথম মুদ্রিত গ্রন্থও বটে। এই বছরই বিলেত যাত্রার প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য সেকালের বোম্বাই প্রেসিডেন্সিতে অবস্থিত আমেদাবাদ শহরে যান রবীন্দ্রনাথ। সেখানে আনা তড়খড় নামে একটি মারাঠি মেয়ের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এই ব্যর্থ প্রণয়ের ছায়া পড়েছিল ১৮৮৪ সালে প্রকাশিত তাঁর ‘নলিনী’ নাট্যকাব্যে।



রবীন্দ্রনাথও ইন্দ্রিয়চালিত মানুষ ছিলেন। কাজেই, নানা প্রয়োজনে তাঁরও দোষগুণ নানা প্রসঙ্গে উচ্চারণ করতে হয়, হবে। আহমদ শরীফ বলেন :রবীন্দ্রনাথ বিরূপ সমালোচনা সহ্য করতে পারতেন না, প্রতিবাদ করার লোক পাওয়া না গেলে বেনামে লিখে তিনি আত্মপক্ষ সমর্থন করতেন। রবীন্দ্রানুরাগী ও রবীন্দ্রস্নেহভাজন অন্নদাশংকর রায় বলেছেন, রবীন্দ্রনাথ তাঁর ত্রুটি-নিন্দা-কলঙ্কের সাক্ষ্য প্রমাণ সতর্ক প্রয়াসে অপসারিত বা বিনষ্ট করতেন। তা সত্ত্বেও তাঁর ঘনিষ্ঠ সুশোভন সরকার তাঁর প্রণাম-প্রীতিরূপ দুর্বলতার কথা বলে গেছেন। তাঁর সেজো ভাইয়ের পৌত্র সুভোঠাকুর [সুভগেন্দ্রনাথ ঠাকুর] জমিদার পরিচালনায় তাঁর স্বার্থবুদ্ধির কথা বর্ণনা করেছেন।আহমদ শরীফের মতে নোবেল পুরস্কার প্রাপ্তির আগের রবীন্দ্রনাথের কাঁচা লেখা প্রাজ্ঞ হয়ে উঠেছে নোবেল প্রাপ্তির পরের সময়ে। তাঁর ভাষাতেইঃ নোবেল পুরস্কারের মান রক্ষার খাতিরেই রবীন্দ্রনাথকে বৈশ্বিক ও বিশ্বমানবিক চিন্তা-চেতনার অনুশীলন করতে হয়েছে। তাঁর দীর্ঘায়ু তাঁকে এ সুযোগ-সৌভাগ্য দিয়েছে। পুরস্কার প্রাপ্তির পরে তিনি সুদীর্ঘ আটাশ বছর বেঁচে ছিলেন, তার আগে বাল্য-কৈশোরের যৌবনের মধ্যবয়সের জীবনদেবতা চালিত কাঁচা-পাকা লেখায় ঊনিশ শতক ও এ শতকের এক দশক কেটেছে বটে, প্রায় সমসংখ্যক বছরব্যাপী, কিন্তু পরিচ্ছন্ন ও পরিপক্ক জ্ঞান-প্রজ্ঞা, মন-মনন এবং মনীষা ও নৈপুণ্য নিয়ে বিশ্ববোধ অন্তরে জাগ্রত রেখে লিখেছেন জীবনের স্বর্ণযুগে আটাশ বছর ধরে। বলতে গেলে পুরস্কার পূর্বকালের রবীন্দ্রনাথ ছিলেন ঊনিশ শতকী কবি আর পুরস্কার উত্তরকালের রবীন্দ্রনাথ হলেন বিশ শতকের মনীষা মানুষ।



বাংলা সাহিত্যের প্রথম সার্থক ছোটোগল্পকার রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। মূলত হিতবাদী, সাধনা, ভারতী, সবুজ পত্র প্রভৃতি মাসিক পত্রিকাগুলির চাহিদা মেটাতে তিনি তাঁর ছোটগল্পগুলি রচনা করেছিলেন।রবীন্দ্রনাথের একাধিক ছোটোগল্প চলচ্চিত্র, নাটক ও টেলিভিশন ধারাবাহিকের আকারে পুনঃসৃজিত হয়েছে। তাঁর গল্পের কয়েকটি উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্রায়ণ সত্যজিৎ রায় পরিচালিত ‘তিন কন্যা’ (‘মনিহারা’, ‘পোস্টমাস্টার’ ও ‘সমাপ্তি’ অবলম্বনে) ও ‘চারুলতা’ (‘নষ্টনীড়’ অবলম্বনে), তপন সিংহ পরিচালিত ‘অতিথি’, ‘কাবুলিওয়ালা’ ও ‘ক্ষুধিত পাষাণ’[১৩৯], পূর্ণেন্দু পত্রী পরিচালিত ‘স্ত্রীর পত্র’ ইত্যাদি।রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের উপন্যাস অবলম্বনে কয়েকটি চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে। এগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য সত্যজিৎ রায়ের ‘ঘরে বাইরে’ ও ঋতুপর্ণ ঘোষের ‘চোখের বালি’।১৯০০ সালে শান্তিনিকেতনে বসবাস শুরু করার পর থেকে রবীন্দ্রসংগীত রচনার তৃতীয় পর্বের সূচনা ঘটে। এই সময় রবীন্দ্রনাথ বাউল গানের সুর ও ভাব তাঁর নিজের গানের অঙ্গীভূত করেন। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর রবীন্দ্রনাথের গান রচনার চতুর্থ পর্বের সূচনা হয়।,কবির এই সময়কার গানের বৈশিষ্ট্য ছিল নতুন নতুন ঠাটের প্রয়োগ এবং বিচিত্র ও দুরূহ সুরসৃষ্টি। তাঁর রচিত সকল গান সংকলিত হয়েছে ‘গীতবিতান’ গ্রন্থে।



রবীন্দ্রনাথ ১৮৭৮ সালের আগস্টে মেজদা আইসিএস সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুরের কর্মস্থল আহমেদাবাদ ত্যাগ করে বোম্বাইতে তাঁর বন্ধু ডা. আত্মারাম পান্ডুরংয়ের পরিবারে আশ্রয় গ্রহণ করেন—প্রধানত স্পোকেন ইংলিশে সড়গড় ও ইংরেজদের আদবকায়দায় ধাতস্থ হওয়ার উদ্দেশ্যে। বঙ্গদেশের ব্রাহ্মসমাজের মতো মহারাষ্ট্র-গুজরাটের ‘প্রার্থনা সমাজ’-এর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা আত্মারামের পরিবার বোম্বাই অঞ্চলে ধর্ম ও সমাজ-সংস্কার আন্দোলনের ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা গ্রহণ করেছিল। আর তাঁর বিলাতফেরত কন্যা আন্না অগ্রণী ভূমিকা গ্রহণ করেছিলেন নবীন রবীন্দ্রনাথকে ইংরেজিয়ানায় প্রশিক্ষিত করে তোলার ক্ষেত্রে।বহুকাল পরে ১৯২৭ সালের ১ জানুয়ারি অতুলপ্রসাদ সেন ও দিলীপকুমার রায়ের সঙ্গে আলাপে রবীন্দ্রনাথ এই তরুণীর কথা স্মরণ করেছেন:‘তখন আমার বয়স বছর ষোলো। আমাকে ইংরেজি কথা বলা শেখানোর জন্যে পাঠানো হ’ল বম্বেতে একটি মারাঠি পরিবারে।...সে-পরিবারের নায়িকা একটি মারাঠি ষোড়শী। যেমন শিক্ষিতা, তেমনি চালাক-চতুর, তেমনি মিশুক।...তার স্তাবক-সংখ্যা নিতান্ত কম ছিল না—বিশেষ আরো এই জন্যে যে ঐ বয়সেই সে একবার বিলেত চক্র দিয়ে এসেছিল।সেসময়ে মেয়েদের বিলেত-যাওয়া আজকের মতন পাড়া-বেড়ানো গোছের ছিল না, মনে রেখো।‘আমার সঙ্গে সে প্রায়ই যেচে মিশতে আসত। কত ছুতো ক’রেই সে ঘুরত আমার আনাচে কানাচে।—আমাকে বিমর্ষ দেখলে দিত সান্ত্বনা, প্রফুল্ল দেখলে পিছন থেকে ধরত চোখ টিপে।‘একথা আমি মানব যে আমি বেশ টের পেতাম যে ঘটবার মতন একটা কিছু ঘটছে, কিন্তু হায় রে, সে-হওয়াটাকে উস্কে দেওয়ার দিকে আমার না ছিল কোনোরকম তৎপরতা, না কোনো প্রত্যুৎপন্নমতিত্ব। ‘একদিন সন্ধ্যাবেলা...সে আচম্্কা এসে হাজির আমার ঘরে। চাঁদনি রাত। চার দিকে সে যে কী অপরূপ আলো হাওয়া!...কিন্তু আমি তখন কেবলই ভাবছি বাড়ির কথা। ভালো লাগছে না কিছুই। মন কেমন করছে বাংলাদেশের জন্যে, আমাদের বাড়ির জন্যে, কলকাতার গঙ্গার জন্যে। হোমসিকেনস যাকে বলে।সে ব’লে বসল: “আহা, কী এত ভাবো আকাশপাতাল!”এই পরিবারের সঙ্গে দীর্ঘকাল পরেও রবীন্দ্রনাথের যোগাযোগ ছিল। আন্না-র কনিষ্ঠা ভগিনী মানক-কে ২৯ জানুয়ারি ১৯১৪ তারিখে রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন:It is nice of you to write to me as you have done. Youৎ voice belongs to that little world of familiar faces in a city of strangers where I took my shelter when I was seventeen and where you were just emerging from your nebulous stage of indistinctness....The other day when I accepted an invitation to come to Bombay I hoped to see you and talk to you of the old days spent under your father’s roof.



ছিয়াত্তর বছর বয়সে লেখা একশ পনের পৃষ্ঠার সেই বইটির নাম ছিল বিশ্বপরিচয়। তিনি যে বিজ্ঞানপ্রেমিক ছিলেন, বিজ্ঞানের রস আস্বাদনে তাঁর যে লোভের অন্ত ছিল না। রবীন্দ্রনাথের এক সময় ইচ্ছে হয়েছিলো পশ্চিমের ‘হোম ইউনিভার্সিটি লাইব্রেরি’র অনুকরণে ‘লোকশিক্ষা গ্রন্থমালা’ তৈরির – যেটি জনপ্রিয় ভাষায় বিজ্ঞানকে সর্বসাধারণের কাছে পোঁছিয়ে দেবে। কাজেই ভাষা হতে হবে যথাসম্ভব সহজ সরল, পাণ্ডিত্যবিবর্জিত। তিনি ভেবেছিলেন মহাবিশ্বের সাথে সাধারণ পাঠকদের পরিচয় করিয়ে দেবার জন্য একটা বই লেখা হবে, এবং বইটির ভার তিনি দেন পদার্থবিদ্যার অধ্যাপকের কাজ নিয়ে বিশ্বভারতীতে যোগ দেয়া তরুণ অধ্যাপক প্রমথনাথ সেনগুপ্তের উপর।



( সংগ্রহ থেকে, চলবে )

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ২:০০

শিশেন সাগর বলেছেন: ভালো লাগা রইলো।

২১ শে জুলাই, ২০১৯ বিকাল ৫:৫৬

রাজীব নুর বলেছেন: ধন্যবাদ।

২| ০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ সকাল ১১:২০

আরজু পনি বলেছেন:

রবীন্দ্রনাথ বিরূপ সমালোচনা সহ্য করতে পারতেন না, প্রতিবাদ করার লোক পাওয়া না গেলে বেনামে লিখে তিনি আত্মপক্ষ সমর্থন করতেন।......মাল্টিবাজি রবীন্দ্রনাথ ও করতেন, ভালো লাগলো জেনে।

২১ শে জুলাই, ২০১৯ বিকাল ৫:৫৭

রাজীব নুর বলেছেন: দুঃখজনক।

৩| ০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ দুপুর ১:৪৭

শূন্য পথিক বলেছেন: হুমায়ূন আহমেদের "কবি" নাটকের শুরুতে এমন একটা কথা ছিল।।

২১ শে জুলাই, ২০১৯ বিকাল ৫:৫৭

রাজীব নুর বলেছেন: হে হে

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.