নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি একজন ভাল মানুষ বলেই নিজেকে দাবী করি। কারো দ্বিমত থাকলে সেটা তার সমস্যা।
দেশ কাল সমাজ মানুষ সম্পর্কে রবীন্দ্রনাথের চিন্তার কেন্দ্রস্থল ছিল মানবতাবাদী দৃষ্টিকোণ। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় লেখা ‘নোঙচিকের চিঠি’ ও ‘সভ্যতার সংকট’ শীর্ষক বিখ্যাত রচনার কথা অনেকেরই জানা।‘রাশিয়ার চিঠি’র প্রতি দৃষ্টি নিক্ষেপ করলে দেখতে পাই সেখানে ফুটে উঠেছে নতুন সমাজ গঠনের সাহসী উদ্যোগ, সনাতনকে কিভাবে ঝেঁটিয়ে বিদায় করা হয়েছে তার চিত্ররূপ। রবীন্দ্রনাথ কুষ্টিয়ার ছেউড়িয়ার আখড়া থেকে লালনের গানের খাতা সংগ্রহ করেছিলেন। যে খাতা দুটি শান্তিনিকেতনের রবীন্দ্রভবনে সংরক্ষিত রয়েছে। এই খাতা নিয়ে অনেক বিতর্ক অভিযোগ আছে ।
রবীন্দ্রনাথ যখন চীনে গেলেন (১৯২৪) তখন সেখানেও কিছু কাণ্ড ঘটেছিল। এ পর্বে চীনের রাজনীতি সুস্থিত ছিল না। সাংহাইতে সম্বর্ধনায় রবীন্দ্রনাথ যে ভাষণ দিলেন তাতে বললেন চীন ও এশিয়ার প্রতিবেশী জাতিগুলোর সঙ্গে ভারতের মৈত্রীর পথ উন্মোচন করার জন্য তিনি চীনের যুবমনকে আহ্বান করছেন। চীনা শিক্ষিত সম্প্রদায়ের একাংশ ভাবতে চাইল, রবীন্দ্রনাথের এই সফরের প্রকৃত উদ্দেশ্যটা কি? রবীন্দ্রনাথ পরের দিনের বক্তৃতায় তার উত্তর দিলেন। কোনো রাজনৈতিক সুবিধা সংগ্রহের জন্য তিনি আসেন নি, এসেছেন স্বার্থশূন্য প্রেম ও মৈত্রীর জন্য।
‘ছেলেভুলানো ছড়া’ প্রবন্ধে রবীন্দ্রনাথ একটি প্রচলিত ছড়ায় মেয়েকে শ্বশুরবাড়ি পাঠানোর যে কঠিন অন্তর্বেদনা আছে তার বিষাদময় চিত্রের আলোচনা করে ছড়াটির একটি সভ্যপাঠ তৈরি করেন। ‘কন্যাটির মুখে এসব ভাষা ব্যবহার হওয়া উচিৎ হয় না যাহা আমি অদ্য ভদ্রসমাজে উচ্চারণ করিতে কুণ্ঠাবোধ করিতেছি। তথাপি সেই ছত্রটি একেবারেই বাদ দিতে পারিতেছি না। কারণ তাহার মধ্যে ইতর ভাষা আছে বটে, কিন্তু তদপেক্ষা অনেক অধিক পরিমাণে বিশুদ্ধ করুণ রস আছে।
ফ্যাসিবাদ যখন জার্মানীতে তীব্রতর হয়ে উঠল তখন প্রচার করা হচ্ছিল - রবীন্দ্রনাথ একজন ইহুদি, ওঁর আসল নাম Rabbi Nathan.উনি ওপেনহাইমার নামে বোম্বাইয়ের এক ধনী ইহুদি যুবতীকে বিয়ে করে প্রচুর টাকা পেয়েছেন। মেয়েটির বাবা বাঁশের ব্যবসা করে প্রচুর টাকা করেছে। জার্মানীতে রবীন্দ্রনাথ যে কাউন্ট কাইজারলিং এর আতিথ্য নিলেন এটাও অনেকে সুনজরে দেখে নি।
আমেদাবাদ প্রাসাদে থাকার সময় রবীন্দ্রনাথের দুটি ভিন্নধর্মী অভিজ্ঞতা হয়। যার একটি মজার, অন্যটির ফল যতদিন বাঙালি বেঁচে থাকবে ততদিন সেটিও বেঁচে থাকবে। এই অভিমত রবীন্দ্রনাথেরও। প্রাসাদের চূড়ার উপরকার একটা ঘরে রবীন্দ্রনাথ থাকতেন, সেখানে তাঁর সঙ্গী ছিল বোলতার চাক, ‘রাত্রে আমি সেই নির্জন ঘরে শুইতাম–এক একদিন অন্ধকারে দুই-একটা বোলতা চাক হইতে আমার বিছানার উপর আসিয়া পড়িত–যখন পাশ ফিরিতাম তখন তাহারাও প্রীত হইত না এবং আমার পক্ষেও তাহা তীব্রভাবে অপ্রীতিকর হইত।’অন্ধকার বিছানার এই অভিজ্ঞতা এর আগে পরে কখনো কবির জীবনে ঘটেনি। এই প্রাসাদ-বাস তাঁকে আর একটি অপার অসীম গভীর অনুভূতির ভিতর নিয়ে আসে। শুক্লপক্ষের গভীর রাতে সবরমতী নদীর দিকে প্রাসাদের ছাদে হাঁটতে হাঁটতে রবীন্দ্রনাথ তাঁর নিজের সুর দেওয়া সর্বপ্রথম গানগুলি রচনা করেছিলেন। তাঁর নিজের দেওয়া সুরে সর্বপ্রথম গান ‘নীরব রজনী দেখো মগ্ন জোছনায়’।
হাতের লেখায় চেনা যায় মানুষের মন৷ সেই চেনার বিদ্যেটার নাম গ্রাফোলজি৷ রবীন্দ্রনাথ কী খেতেন, কী পরতেন, তাঁর কবিতার মালীরা কোন ধরনের নিড়ুনি দিয়ে ঘাস ছাঁটতেন ইত্যাকার জ্ঞানগর্ভ গবেষণায় শতবর্ষ কেটে গেলেও তাঁর হাতের লেখা নিয়ে তেমন কোনও চর্চা এত কাল পাইনি আমরা৷ অথচ, পাওয়া উচিত ছিল৷
আনন্দ মোহন কলেজের শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনার জবাবে কবি ছাত্রছাত্রীদের উদ্দেশে একটি লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন। সম্ভবত আলেকজান্ডার ক্যাসেলে শুয়ে কবি পূর্বরাতে ভাষণটি লিখে থাকবেন। আনন্দ মোহন কলেজ শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে লিখিত কবিগুরুর নাতিদীর্ঘ বক্তব্যটিতে তাঁর শিক্ষাভাবনার কয়েকটি দিকের নিবিড় প্রকাশ ঘটেছে। শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনার জবাবে দেওয়া বক্তৃতায় রবীন্দ্রনাথ সেদিন বলেছিলেন,
‘যে শিক্ষার ধারা আমাদের ছাত্ররা আজকাল পাচ্ছে, আমার মনে হয়, তাতে তাদের ভালো কিছুই নেই, তাতে তারা ভারগ্রস্ত হয়েই পড়ছে। মানুষকে আমরা পাখির মত খাদ্য যত দিচ্ছি, কিন্তু বুঝতে পাচ্ছি না—যে তা সে হজম কর্তে পাচ্ছে না। এই যে ছাত্রের বাল্যকাল থেকে বয়স্ক অবস্থা পর্যন্ত নোট মুখস্থ করে, কোন বইয়ের জিনিসটুকু মনে গেঁথে গেঁথে বৎসর পাশ যাচ্ছে, একি শুধু দু’টা কথা নামের পেছনে দেবার জন্য? জ্ঞানের কি আর কোন উদ্দেশ্য নেই? পাশ হয়ে এলে আর তারা জ্ঞানের আলোচনা কর্তে চায় না—বাস্তব রাজ্যের ভিতর থেকে তাদের পুঁথিগত বিদ্যার সার্থকতা খুঁজে নেবার প্রবৃত্তি তাদের নেই। এ যে মস্ত বড় ত্রুটি; ঐ ত্রুটি তো যায় না। শিক্ষা পুঁথির জিনিস হয়ে পড়লে মন ভালো কিছু গ্রহণ কর্তে পারে না—কেবল পুঁথির বোঝা বয়ে বেড়ায়, জ্ঞান তার হয় না।’
রবীন্দ্রনাথের এই বক্তৃতা কেবল ১৯২৬ সালের আনন্দ মোহন কলেজের শিক্ষার্থীদের জন্যই ছিল না, এই বক্তৃতা তিনি করেছিলেন বাংলাদেশের অনাগত কালের শিক্ষার্থীদের জন্যও। প্রায় ৮৫ বছরের পুরোনো সেই বক্তৃতা বিস্ময়করভাবে নতুন, আজও প্রাসঙ্গিক।
২| ১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ১১:৩৬
অন্তহীন বালক বলেছেন:
©somewhere in net ltd.
১| ১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ১০:২১
shfikul বলেছেন: +++