নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি একজন ভাল মানুষ বলেই নিজেকে দাবী করি। কারো দ্বিমত থাকলে সেটা তার সমস্যা।
মসলিন তুলার আঁশ থেকে প্রস্তুত করা এক প্রকারের অতি সুক্ষ্ম কাপড়বিশেষ।ইরাকের এক বিখ্যাত ব্যবসাকেন্দ্র হলো মসূল। এই মসূলেও অতি সূক্ষ্ম কাপড় প্রস্তুত হতো। এই 'মসূল' এবং 'সূক্ষ্ম কাপড়' -এ দুয়ের যোগসূত্র মিলিয়ে ইংরেজরা অতিসূক্ষ্ম কাপড়ের নাম দেয় 'মসলিন'।বাংলার ইতিহাসে 'মসলিন' বলতে বোঝানো হয় তৎকালীন ঢাকা ও তার পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে উৎপাদিত অতি সূক্ষ্ম একপ্রকার কাপড়কে।মসলিন প্রস্তুত করা হতো পূর্ব বাংলার সোনারগাঁও অঞ্চলে। মসলিনে তৈরি করা পোশাকসমূহ এতই সুক্ষ্ম ছিলো যে ৫০ মিটার দীর্ঘ মসলিনের কাপড়কে একটি দিয়াশলাই বাক্সে ভরে রাখা যেতো।'শবনম' কথাটার অর্থ হলো ভোরের শিশির। ভোরে যদি শবনম মসলিন শিশির
ভেজা ঘাসে শুকোতে দেয়া হলে শবনম দেখাই যেতোনা, এতোটাই মিহী আর সূক্ষ্ম ছিলো এই মসলিন। ২০ গজ লম্বা আর ১ গজ প্রস্থের শবনমের ওজন হতো ২০ থেকে ২২ তোলা।
বাংলার নবাব বা সুবাদারদের জন্য তৈরি হতো এই মসলিন। সরকার-ই-আলা নামের জায়গা থেকে পাওয়া খাজনা দিয়ে এর দাম শোধ করা হতো বলে এর এরকম নামকরণ। লম্বায় হতো ১০ গজ, চওড়ায় ১ গজ আর ওজন হতো প্রায় ১০ তোলা।বর্তমানে বাংলাদেশে জামদানী নামে এক প্রকার পাতলা কাপড়ের শাড়ি পাওয়া যায়। তবে আগেকার যুগে 'জামদানী' বলতে বোঝানো হতো নকশা করা মসলিনকে। ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসকেরা মসলিন উৎপাদন বন্ধ করার জন্য মসলিন বয়নকারী তাঁতিদের হাতের বুড়ো আঙুল কেটে নেয।পৃথিবীর অনেক বিখ্যাত লোকজন ঢাকা-সোনারগাঁও এর এই উঁচুমানের মসলিন দেখে মুগ্ধ হয়েছিলেন।ঢাকা আর আশেপাশের এলাকাতে- মুঘল আমলে সপ্তদশ শতকে মসলিন শিল্প বিকাশ লাভ করেছিল চূড়ান্ত রকম। আজও আমরা দীর্ঘশ্বাস ফেলে সেই যুগের মসলিসকেই মনে করি।১৮৫১ সালে লন্ডনে এক আন্তর্জাতিক প্রদর্শনীতে ঢাকা হতে কিছু মসলিন পাঠানো হয়। সেখানে এক পাউন্ড সুতা দেখানো হয়েছিলো যা প্রায় আড়াইশো মাইল ছিল !! আরও মসলিন সম্বন্ধে, “মর্নিং ক্রনিকল” পত্রিকায় লিখা হয়- হাবিবুল্লাহ তাঁতির বোনা দশ গজ লম্বা একখন্ড মসলিনের ওজন মাত্র তিন আউন্স !!
প্রাচীন আমল থেকেই বাংলাদেশের বস্ত্র শিল্পের সুখ্যাতি থাকলেও মূলত মুঘল আমলে ঢাকা যখন রাজধানী হয় তখন থেকেই সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম কাপড়ের সুখ্যাতি ছড়িয়ে পড়তে থাকে । সম্রাট, নবাবেরা মসলিন কাপড় কেনা আরম্ভ করেন চড়া দামে। সে যুগে মসলিন তৈরির জন্য বিখ্যাত ছিল ঢাকা, ধামরাই, সোনারগাঁ, টিটবাদি, জঙ্গলবাড়ি আর বাজিতপুর। জঙ্গলবাড়ি অধিকাংশের পেশা তখন মসলিন বোনা। উনিশ শতকের প্রথমভাগেও সেখানে একাজে নিয়োজিত ছিলেন প্রায় একশ তাঁতি পরিবার।জেমস টেলর সাহেব ১৮৫১ সালে যখন মসলিনের উপর একটি পান্ডুলিপি তৈরি করেন মসলিনের স্বর্ণযুগ তখন পড়তির দিকে; অথচ যা জানা যায় ঢাকাতে তখনও সাতশ’ ঘরের বেশি তাঁতি নিয়োজিত ছিল এই কাজে। মসলিন তৈরি করার জন্য দরকার হতো বিশেষ ধরনের তুলা, ফুটি কার্পাস। এ বিশেষ ধরনের কার্পাসটি জন্মাতো মেঘনা নদীর তীরে ঢাকা জেলার কয়েকটি স্থানে। একদম ভাল মানের কার্পাস উৎপন্ন হত মেঘনার পশ্চিম তীরে। শ্রীরামপুর, কেদারাপুর, বিক্রমপুর, রাজনগর ইত্যাদি স্থানগুলো ফুটি কার্পাসের জন্য বিখ্যাত ছিল। আজকের যে কাপাসিয়া নামটি আমরা জানি তা এসেছে এই কারপাস হতে। মেঘনা এমনিতেই খুব বড় নদী, তার উপর সমুদ্রের কাছাকাছি আবার বর্ষাকালে নদীর দু’কূল ভেসে যেত। তার ফলে যে পলি জমতো তার কারনেই ফুটি কার্পাসের উৎপাদন খুব ভাল হতো এসব স্থানগুলোতে। কিন্তু একজন কার্পাস চাষী একবিঘা জমিতে ভালমানের মসলিন তৈরির জন্য মাত্র ছয় কেজির মতো তুলা পেত ।
মসলিন তৈরির প্রক্রিয়াটা এত জটিল আর সময় সাপেক্ষ ছিল যে সম্রাটদের জন্য উন্নত মসলিন তৈরি করেই দিন কাটতো তাঁতিদের- বাড়তি মসলিন তৈরি করার সময় মিলতো তাই কম।১৭৭২ সালের এক হিসাব থেকে দেখা যায় যে ওই বছর সম্রাটকে পাঠানো হয় একলক্ষ টাকার ‘মলবুস খাস’ আর বাংলার নবাবকে পাঠানো হয় তিনলক্ষ টাকার ‘সরকার-ই-আলি’।মসলিনের সাথে জড়িত আমাদের দেশের প্রতিটি কৃষক, শ্রমিক, তাঁতীকে নানাভাবে ঠকানো হত, নির্যাতন করা হত। গরীব চাষিকে টাকা ধার দিয়ে তার কাছ হতে খুব কম দামে কার্পাস নিয়ে যেত একশ্রেনীর দেশী মানুষ। বিশ্বখ্যাত মসলিন তৈরিতে যেসব তাঁতি জড়িত ছিলেন, তারা প্রায় সময়ই অর্ধউলঙ্গ ও নিরন্ন অবস্থায় থাকতেন। এক কথায় তাদের অবস্থা ছিল খুবই শোচনীয়, কারণ মসলিনের পুরো মুনাফা লুটত ফড়িয়া এবং বণিকরা।
ঢাকাই মসলিন শাড়ির কথা লিখতে গিয়ে, মনে পড়ে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বাঁশী কবিতা। "এ গান যেখানে সত্য/ অনন্ত গোধূলী লগ্নে/ সেইখানে বহি চলে ধলেশ্বরী,/ তীরে তমালের ঘন ছায়া---আঙ্গিনাতে/ যে আছে অপেক্ষা ক'রে,/ তার পরনে ঢাকাই শাড়ি, কপালে সিঁদুর ।" ৩০০ খ্রীস্টাব্দে প্রাচীন ভারতীয় মণিষী কৌটিল্য তাঁর অর্থশাস্ত্র বইতে উল্লেখ করেছেন যে,বঙ্গ ও পুন্ড্রবর্ধন মানে উত্তরবঙ্গে একধরনের সূক্ষ্ম-বস্ত্র বয়ন করা হয়। গ্রিক ইতিহাসবিদ পেরিপ্লাস এর বইতে আছে বঙ্গ থেকে আরব,চীনা ও ইতালীয় বণিকরা চার ধরণের সূক্ষ্ম-বস্ত্র ইউরোপে নিয়ে আসেন।
১৮ ই জুলাই, ২০১৯ বিকাল ৫:৫১
রাজীব নুর বলেছেন: অবশ্যই সম্ভব। কিন্তু অনেক দাম হবে। সবচেয়ে বড় কথা তেমন কারিগরও নেই।
©somewhere in net ltd.
১| ০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ দুপুর ১২:৫৯
ড. জেকিল বলেছেন: আর কি বানানো সম্ভব না এই জিনিস ?