নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার নাম- রাজীব নূর খান। ভালো লাগে পড়তে- লিখতে আর বুদ্ধিমান লোকদের সাথে আড্ডা দিতে। কোনো কুসংস্কারে আমার বিশ্বাস নেই। নিজের দেশটাকে অত্যাধিক ভালোবাসি। সৎ ও পরিশ্রমী মানুষদের শ্রদ্ধা করি।

রাজীব নুর

আমি একজন ভাল মানুষ বলেই নিজেকে দাবী করি। কারো দ্বিমত থাকলে সেটা তার সমস্যা।

রাজীব নুর › বিস্তারিত পোস্টঃ

ইতিহাসঃ পানাম নগর

২৩ শে মার্চ, ২০১৩ বিকাল ৫:২২

ঈসা খাঁ এর আমলের বাংলার রাজধানী পানাম নগর। পানাম নগর পৃথীবির ১০০টি ধ্বংসপ্রায় ঐতিহাসিক শহরের একটি।ঢাকার অদূরে ২৭ কি.মি দক্ষিণ-পূর্বে নারায়নগঞ্জ এর খুব কাছে সোনারগাঁতে অবস্থিত এই নগর।মধ্যযুগীয় নগরটির যথার্থ অবস্থান নির্দেশ করা কঠিন। বিক্ষিপ্ত নিদর্শনাদি থেকে প্রতীয়মান হয় যে, এটি পূর্বে মেঘনা, পশ্চিমে শীতলক্ষ্যা, দক্ষিণে ধলেশ্বরী ও উত্তরে ব্রহ্মপুত্র নদ দ্বারা বেষ্টিত একটি বিস্তৃত জনপদ ছিল।এখানে কয়েক শতাব্দী পুরনো অনেক ভবন রয়েছে, যা বাংলার বার ভূইয়াঁদের ইতিহাসের সাথে সম্পর্কিত। সোনারগাঁর ২০ বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে এই নগরী গড়ে ওঠে।১৫ শতকে ঈসা খাঁ বাংলার প্রথম রাজধানী স্থাপন করেছিলেন সোনাগাঁওয়ে। পূর্বে মেঘনা আর পশ্চিমে শীতলক্ষ্যা নদীপথে বিলেত থেকে আসতো বিলাতি থানকাপড়, দেশ থেকে যেতো মসলিন। শীতলক্ষ্যা আর মেঘনার ঘাটে প্রতিদিনই ভিড়তো পালতোলা নৌকা।



১৪০০ শতাব্দীতে এখানে একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয় যেখানে পৃথীবির নামি-দামি শিক্ষকরা পড়াতে আসতেন।শহরটিতে ঔপনিবেশিক ধাঁচের দোতলা এবং একতলা বাড়ি রয়েছে প্রচুর। যার বেশিরভাগ বাড়িই ঊনবিংশ শতাব্দির (১৮১৩ খ্রিস্টাব্দের নামফলক রয়েছে)। মূলত পানাম ছিলো হিন্দু ধনী ব্যবসায়ীদের বসতক্ষেত্র। ব্যবসায়ীদের ব্যবসা ছিলো ঢাকা-কলকাতা জুড়ে। তারাই গড়ে তোলেন এই নগর।বাংলার স্বাধীন রাজা ঈসা খাঁর পদচারণা ছিলো এই নগরীতে। সুলতানী আমল থেকে এখানে বিকশিত ছিলো বাংলার সংস্কৃতি। সংস্কারের নামে নষ্ট করে ফেলা হয়েছে পানাম নগরীর প্রকৃত নকশা।



১৬১১ খ্রিস্টাব্দে মোঘলদের সোনারগাঁ অধিকারের পর সড়ক ও সেতু নির্মাণের ফলে রাজধানী শহরের সাথে পানাম এলাকার সরাসরি যোগাযোগ স্থাপিত হয়।পানামের টিকে থাকা বাড়িগুলোর মধ্যে ৫২টি বাড়ি উল্লেখযোগ্য।ইটের সঙ্গে ব্যবহার করা হয়েছে ঢালাই-লোহার তৈরি ব্র্যাকেট, ভেন্টিলেটর আর জানালার গ্রিল। মেঝেতে রয়েছে লাল, সাদা, কালো মোজাইকের কারুকাজ।পানাম নগরীর পরিকল্পনাও নিখুঁত। নগরীর পানি সরবাহের জন্য দুপাশে ২টি খাল ও ৫টি পুকুর আছে। প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই আছে কুয়া বা কূপ।নর্তকীর পায়ের ঘুঙুর, দরবার ঘরে ঘরে বসে না মানুষের মেলা। সারি সারি ডিঙ্গি ভেড়ে না এখানে। ডিঙ্গি বেয়ে আসে না আর সওদাগর কিংবা বণিকের দল। মেতে ওঠে না কেনাবেচার বর্ণিল উৎসব। ধনদৌলতে ভরে ওঠে না খাজাঞ্চিখানা।



নগরীর ভিতরে আবাসিক ভবন ছাড়াও আছে মসজিদ, মন্দির, গীর্জা, মঠ, গোসলখানা, নাচঘর, পান্থশালা, চিত্রশালা, খাজাঞ্চিখানা, দরবার কক্ষ, গুপ্ত পথ, বিচারালয়, পুরনো জাদুঘর। এছাড়া আছে ৪০০ বছরের পুরোন টাকশাল বাড়ি। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর নীলচাষের নির্মম ইতিহাসের নীরব সাক্ষী হয়ে রয়েছে পানামের নীলকুঠি। পানাম পুলের কাছে দুলালপুর সড়কের পাশেই এর অবস্থান।একবার পারস্যের খ্যাতিমান কবি হাফিজ-কে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন তৎকালীন বাংলার সুলতান গিয়াসউদ্দিন আযম শাহ। বৃদ্ধ কবি হাফিজ সে আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে আসতে না পেরে একটা গজল রচনা করে উপহার পাঠান সুলতানকে। এই গজলের সূত্র ধরেই ফারসি এক পর্যটক এসেছিলেন সোনারগাঁ-তে, আর মুগ্ধ হয়েছিলেন পানাম নগরীর সৌন্দর্য্য দেখে।সেই সময় এই নগরী ছিল বস্ত্র-বাণিজ্যের রাজধানী। তবে ইংরেজরা ধীরে ধীরে একসময় ঐতিহাসিক এ ব্যবসাকেন্দ্রটির নিয়ন্ত্রণও নিয়ে নেয়। তারা মসলিনের কারিগরদের বৃদ্ধাঙ্গুল কেটে পঙ্গু করে দেয় যাতে তারা মসলিন কাপড় আর না বুনতে পারে। এর ফলে ইউরোপে তৈরি কাপড়ের একচেটিয়া বাজার সৃষ্টি হয় এখানে। একইসঙ্গে এদেশীয় চাষাবাদ বন্ধ করে নীলচাষের জন্য এখানে তারা স্থাপন করে নীল কুঠি।



পানাম নগরের মূল প্রবেশ পথের ছোট্ট খালটির উপরে একটি সেতু ছিলো, যার কোনো অস্তিত্ব আর অবশিষ্ট নেই।অযত্ন আর অবহেলায় পানাম নগরের বাড়িঘরগুলোতে শ্যাওলা ধরেছে, ভেতরের পরিবেশটা স্যাঁতস্যাঁতে, গোমট। বাড়িগুলোর দেয়ালে গজাচ্ছে গাছপালা, অনেক বাড়ির ভিতরে ঢুকে গেছে গাছের শিকড়। অনেক ঘরের চৌকাঠ ও রেলিং খুলে পড়েছে। চুরি হচ্ছে কড়িকাঠ ও তক্তা। ফলে বিভিন্ন সময় বাড়িগুলোর ছাদ ধ্বসে পড়ছে, ভেঙ্গে পড়ছে সিঁড়ি ও দেয়াল। পরিত্যক্ত এসব বাড়িগুলোর অনেকগুলোতে মানুষ কিংবা পশু-পাখি মলমূত্র ত্যাগ করে থাকে।এমনকি ২০০৫ খ্রিস্টাব্দে দুটো বাড়ি সম্পূর্ণ ধ্বসে পড়ে।



বাংলাদেশে পানাম নগরীর ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি নিয়ে ২০১০ খ্রিস্টাব্দে তৈরি হয় "সুবর্ণগ্রাম" নামে একটি ডকু-ড্রামা। নাটকটি রচনা করেন ইলোরা লিলিত এবং পরিচালনা করেন ফারুকে আজম।২০১০ খ্রিস্টাব্দে নাসির উদ্দীন ইউসুফ-এর পরিচালনায় "গেরিলা" নামের একটি পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রের চিত্রায়ণ হয় পানাম নগরীতে। চলচ্চিত্রে মুক্তিযুদ্ধপূর্ব বাংলাদেশকে তুলে ধরতে পানাম নগরীকে বেছে নেয়া হয়েছে।ঢাকা থেকে যাতায়াত ব্যবস্থাও সহজ।গুলিস্থান থেকে 'মোগরাপারা ' এর যেকোনো বাসে করে চলে আসা যায় 'মোগরাপারা'।সেখান থেকে অটোরিকশা যোগে দশ-পনের মিনিটেয় চলে আসা যায় পানাম নগরীতে।



নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলার ঐতিহাসিক পানাম নগরে অবৈধভাবে বসবাসকারী ৪৯ জন দখলদারকে উচ্ছেদ করতে ব্যর্থ হয়েছে স্থানীয় উপজেলা প্রশাসন। দফায় দফায় নোটিশ দিয়েও দখলদারদের উচ্ছেদ সম্ভব হয়নি।

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ দুপুর ১:২৮

রাজীব নুর বলেছেন: এত কষ্ট করে লিখি কিন্তু কেউ পড়ে না, মন্তব্য করে না।

২| ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০১৯ বিকাল ৫:১৮

ইসিয়াক বলেছেন: আমি পড়ি বন্ধু ।আমি এসে গেছি।

০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০১৯ বিকাল ৫:২৮

রাজীব নুর বলেছেন: অনেক শুকরিয়া।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.