নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার নাম- রাজীব নূর খান। ভালো লাগে পড়তে- লিখতে আর বুদ্ধিমান লোকদের সাথে আড্ডা দিতে। কোনো কুসংস্কারে আমার বিশ্বাস নেই। নিজের দেশটাকে অত্যাধিক ভালোবাসি। সৎ ও পরিশ্রমী মানুষদের শ্রদ্ধা করি।

রাজীব নুর

আমি একজন ভাল মানুষ বলেই নিজেকে দাবী করি। কারো দ্বিমত থাকলে সেটা তার সমস্যা।

রাজীব নুর › বিস্তারিত পোস্টঃ

রবীন্দ্রনাথের কোনো বিকল্প নাই- ৯১

১১ ই জুলাই, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:৩৯

‘ঘরে বাইরে’ উপন্যাসের জন্য রবীন্দ্রনাথের প্রশংসা ও সমালোচনা দুই-ই প্রাপ্য। প্রশংসা একারণে যে বাঙালী বর্ণহিন্দু শ্রেণী নিয়ন্ত্রিত স্বদেশী আন্দোলনের সাথে সমাজের দরিদ্র চাষী ও বিশেষত: মুসলমান কৃষক শ্রেণীর বিচ্ছিন্নতা গভীর অন্তর্দৃষ্টির সাথে তিনি বিশ্লেষণ করেছেন। সমালোচনা এ কারণে প্রাপ্য যে সন্দ্বীপের মতো ভোগী, শঠ ও নিষ্ঠুর চরিত্র দিয়ে সুভাষ চন্দ্র বসু, সূর্য সেন, ক্ষুদিরাম, বিনয়-বাদল-দীনেশ, প্রীতিলতা বা কল্পনা দত্তদের রক্ত ও আত্মত্যাগকে ঢাকার চেষ্টা করে রবীন্দ্রনাথ অসম্ভব অন্যায়ও করেছেন বৈকি ইতিহাসের সাথে।



কাদম্বরীর মৃত্যুর কয়েকদিন আদি ব্রাহ্মসমাজের নববর্ষ উৎসব পালন করা হয়েছিল মহর্ষি ভবনে। এই উপলক্ষে চারটি গান লিখেছিলেন-রবীন্দ্রনাথ । তার মধ্যে একটি গান এই রকম- "বরিষ ধরা মাঝে শান্তির বারি/ শুস্ক হৃদয় লয়ে আছে দাঁড়াইয়ে/ ঊর্ধ্বে মুখে নরনারী/ না থাকে অন্ধকার, না থাকে মোহপাপ।/ না থাকে শোক-পরিতাপ/ হৃদয় বিমল হোক, প্রাণ সবল হোক/ বিঘ্ন দাও অপসারি।" একটি গান লেখা শেষ হয়ে গেলেই- নিজেই সুর দিয়ে গুন গুন করে অনেকক্ষন গাইতেন।আদি ব্রাহ্মসমাজের নববর্ষ উৎসবের পর কাদম্বরীর আত্মহত্যা রবীন্দ্রনাথকে প্রচন্ড আঘাত দেয়। পন্ডিত হেমচন্দ্র বিদ্যারত্নের দায়িত্বে নিমতলা ঘাটের শ্মশানে কাদম্বরীর অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন হয়।আত্মহত্যার মৃত্যু হলে মর্যাদার সাথে দাহ করা হয়েছিল।মায়ের মৃত্যুর সময় রবীন্দ্রনাথের বয়স ছিল তেরো বছর।যেদিন মা মারা গেলেন, তখন তিনি গভীর ঘুমে। মৃত্যু চিনতে শিখেছিলেন- কাদম্বরী বৌঠানের মৃত্যুর পর।



রবীন্দ্রনাথ পদ্মা নদীকে অনেক ভালোবাসতেন। একবার যৌবনে ছিপ নৌকা নিয়ে নদীতে নেমেছিলেন। এই পদ্মা নদী রবীন্দ্রনাথের কাছে সব সময় রহস্যময় এবং অদ্ভুত লাগত।জমিদারি দেখাশোনা করতে না এলে- এই বিশাল পদ্মা দেখা হতো না।জমিদার রবীন্দ্রনাথের কাছে প্রজারা সব সময় তাদের সুখ দুঃখ, আশা স্বপ্ন এবং আবদার নিয়ে আসত। প্রজাদের কষ্টের কথা শুনে রবীন্দ্রনাথের বুক দুমড়ে মুচড়ে উঠত। বারবার চোখ ভিজে উঠত। প্রজারা জমিদার রবীন্দ্রনাথকে খুব আপন ভাবতেন। ভালোবাসতেন, শ্রদ্ধা করতেন। তিনি জমিদারি দেখাশোনা করতে এসে সব সময় খেয়াল রাখতেন- প্রজাদের উপর যেন কখনও জুলুম না হয়।



বাংলাদেশের শিলাইদহ, পতিসর, শাহজাদ পুরে রবীন্দ্রনাথ দীর্ঘ সময় কাটিয়েছেন। স্ত্রী ছেলে- মেয়েসহ কাটিয়েছেন দুই বছর। শেষ বারের মতন প্রজাদের আমন্ত্রণে পটিসরে আসেন ১৯৩৭ সালে। শিলাইদহ, পতিসর, শাহজাদপুরে থাকার সময় রবীন্দ্রনাথ জমিদারি দেখাশোনার পাশাপাশি অনেক লেখালেখি করেছেন।বিশেষ করে গল্প গুচ্ছ এবং ছিন্নপত্র অবিনাশী রচনা।রবীন্দ্রনাথ বলেন, প্রজাদের বড় কষ্ট ! অভাব ওদের ছাড়তেই চায় না।ওদের জন্য বড় কিছু করতে না পারা পর্যন্ত আমি শান্তি পাব না। রবীন্দ্রনাথের বুক থেকে দীর্ঘশ্বাস বের হয়। আমি চাই না প্রজারা জমিদারের কাছে ভিক্ষুকের মতো হাত পাতবে। তাদেরকে নিজের পায়ে দাড়ানোর মতন শক্তি সঞ্চয় করতে হবে। প্রজাদের সব রকম সুযোগ সুবিধা দিতে হবে।রবীন্দ্রনাথ আক্ষেপ করে বলতেন- আমি ধনীর সন্তান কিন্তু ধনী নই।



রবীন্দ্রনাথ বলতেন- আমি যদি কেবল দু'তিনটি গ্রামকেও মুক্তি দিতে পারি অজ্ঞতা-অক্ষমতার বন্ধন থেকে, তবে সেখানেই সমগ্র ভারতবর্ষের একটি ছোট আদর্শ তৈরি হবে। শিক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে, প্রতিটা গ্রামে যেন আনন্দের বাতাস বয় । প্রজারা এক আকাশ ভালোবাসা নিয়ে রবীন্দ্রনাথকে বলছেন- বাবুমশায়, আপনার মনটা অনেক বড়। আপনার মতো জমিদার চিরকাল থাকলে গ্রামের মানুষের দুঃখ থাকত না। প্রজারা রবীন্দ্রনাথকে ভালোবাসতেন। অত্যাচারী জমিদার মনে করত না।কিন্তু ঠাকুরদার সময় প্রজাদের শায়েস্তা করার জন্য টিএফ রাইস নামের সাহেবকে ম্যানেজার করা হয়েছিল। তখন শিলাইদহের মুসলমান প্রজারা খাজনা দিতে অস্বীকার করে বিদ্রোহ করেছিল। প্রজাদের শায়েস্তা করার জন্য দ্বারকানাথ এবং দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর যে ব্যবস্থা নিয়েছিলেন- তার বিরুদ্ধে কলম ধরেছিলেন- সাহসী সম্পাদক কাঙ্গাল হরিনাথ মজুমদার।



রবীন্দ্রনাথ তীব্র ভাবে অনুভব করেছেন- শিলাইদহ, পতিসর এবং শাহজাদপুর না এলে অনেক কিছু দেখা থেকে বঞ্চিত হতে হতো, অনেক অভিজ্ঞতা সঞ্চয় হতো না। এসব এলাকার মানুষের জীবনযাপনের মধ্যে থেকে উঠে এসেছে তার গল্পগুলো। মৃণালিনী অনেককে আর্থিক সহযোগিতা করেছেন। সবচেয়ে মজার কথা হচ্ছে- রবীন্দ্রনাথকে বই কেনার জন্য নিয়মিত টাকা দিতেন। রবীন্দ্রনাথই শিলাইদহে লাঠিখেলা চালু করেছেন। লাঠি খেলার মাধ্যমে গ্রামবাসী শক্তি চর্চা করছে।



রবীন্দ্রনাথের অতি আদরের পুত্র শমির মৃত্যুর পরদিন রাতে আকাশ ভেঙে জোছনা নেমেছিল। রবীন্দ্রনাথ একা টানাবারান্দায় বসে প্রবল জোছনার দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে লিখলেন—

‘আজ জ্যোৎস্নারাতে সবাই গেছে বনে

বসন্তের এই মাতাল সমীরণে।

যাব না গো যাব না যে

রইনু পড়ে ঘরের মাঝে—

এই নিরালায় রব আপন কোণে।…

আমার এ ঘর বহু যতন ক’রে

ধুতে হবে মুছতে হবে মোরে।

আমারে যে জাগতে হবে

কী জানি সে আসবে কবে

যদি আমায় পড়ে তাহার মনে…’





দীর্ঘদিন রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে গবেষনা করে আমার কেবলই মনে হয়েছে- একটা মানুষ কতকিছু যে করতে পারে, রবীন্দ্রনাথকে না পড়লে বোঝা যাবে না।



( চলবে......)

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ১১ ই জুলাই, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:৪৫

পরিবেশ বন্ধু বলেছেন: অবশ্যই তার কাব্য না পড়লে তাকে বুঝা বড় দায়
আজও পাঠকের হৃদয়ে সে ভাস্বর
ভাষার যাদুকর রবি ঠাকুর জলন্ত আজও বিশ্ব সাহিত্য সভায়

২| ১১ ই জুলাই, ২০১৩ রাত ৯:৫২

রেজোওয়ানা বলেছেন: আরেহ, দারুন!

রবীন্দ্র রচনা আলোচনা করা আমার কাছে অনেক কঠিন বিষয় মনে হয় :(

৩| ১১ ই জুলাই, ২০১৩ রাত ১০:৩৬

সেলিম আনোয়ার বলেছেন: রবীন্দ্রনাথের কোনো বিকল্প নাই- সহমত

৪| ১১ ই জুলাই, ২০১৩ রাত ১১:৫৮

প্রোফেসর শঙ্কু বলেছেন: দারুণ পোস্ট।

৫| ১২ ই জুলাই, ২০১৩ রাত ১:২৩

রোমেন রুমি বলেছেন: রবীন্দ্রনাথ ভিন্ন আমার কোন দেবতা নেই ......

৬| ১২ ই জুলাই, ২০১৩ দুপুর ১২:৪০

নীহারিক০০১ বলেছেন: তিনি বোধ অনুভবের রাজা..............

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.