নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি একজন ভাল মানুষ বলেই নিজেকে দাবী করি। কারো দ্বিমত থাকলে সেটা তার সমস্যা।
জমিদার রবীন্দ্রনাথ নিজেকে প্রথাসিদ্ধ জমিদার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চাননি। তাই ভালোবাসা পেয়েছেন, কাছের মানুষ হতে পেরেছেন প্রজাদের। পতিসরের প্রজাদের জন্য তাঁর ভালোবাসার কমতি ছিল না। তাই ছিন্নপত্রের এক চিঠিতে লিখেছিলেন, ‘…অন্তরের মধ্যে আমিও যে এদেরই মত দরিদ্র সুখদুঃখ কাতর মানুষ। এইসমস্ত ছেলেপিলে-গরুলাঙল-ঘরকন্না-ওয়ালা সরল হূদয় মানুষ প্রথম থেকে আমাকে কি ভুল-ই না জানত! …আমাকে এখানকার প্রজারা যদি ঠিক জানত, তাহলে আপনাদের একজন বলে চিনতে পারত।’ জমিদারি কার্য পরিচালনার পাশাপাশি চলত তাঁর সাহিত্যচর্চা। পতিসরে অবস্থানকালে আছে তাই তাঁর উল্লেখযোগ্য সাহিত্য রচনা। দুই বিঘা জমিসহ কথা ও কাহিনীর পুরো অংশই পতিসরে অবস্থানকালে রচিত। এ ছাড়া কাব্যগ্রন্থ চিত্রা, চৈতালী, কল্পনা, ক্ষণিকা, ছড়াছবির অনেক কবিতা এখানকার রচনা। ছোটগল্প প্রতিহিংসা, ঠাকুরদা, উপন্যাস গোরা ও ঘরে বাইরে-এর অংশবিশেষ রবীন্দ্রনাথ পতিসরে বসে লিখেছিলেন।
“আমি অন্তরে অসভ্য, অভদ্র।। আমার জন্য কোথাও কি একটা ভারি সুন্দর অরাজকতা নেই? কতকগুলো খ্যাপা লোকের আনন্দমেলা নেই?” ১৮৯২ খ্রিস্টাব্দের জুন মাসে তাঁর ভ্রাতুষ্পুত্রী ইন্দিরা দেবীর উদ্দেশে একটি চিঠিতে এই পঙ্ক্তি কটি লিখে ফেলেছিলেন রবীন্দ্রনাথ। আর মনে হয়েছিল তাঁর যে কী বকছেন তিনি!
“মানুষ কি লোহার কল যে ঠিক নিয়ম অনুসারে চলবে? মানুষের মনের এত বিচিত্র এবং বিস্তৃত কাণ্ড-কারখানা।। তার এত দিকে গতি।। এবং এত রকমের অধিকার যে এ দিকে-ও দিকে হেলতেই হবে। সেই তার জীবনের লক্ষণ, তার মনুষ্যত্বের চিহ্ন, তার জড়ত্বের প্রতিবাদ। এই দ্বিধা, এই দুর্বলতা যার নেই তার মন নিতান্ত সংকীর্ণ এবং কঠিন এবং জীবনবিহীন। যাকে আমরা প্রবৃত্তি বলি এবং যার প্রতি আমরা সর্বদাই কটুভাষা প্রয়োগ করি সেই তো আমাদের জীবনের গতিশক্তিঃ।” ভাইঝি ইন্দিরার উদ্দেশে যুবক রবির এই চিঠি ১৮৯০ সালের ১০ অক্টোবর লেখা।
“আমি তো পূর্বেই বলেছি জীবনটা একটা গম্ভীর বিদ্রƒপ, এর মজাটা একটু বোঝা শক্ত।। কারণ যাকে নিয়ে মজা করা হয়, মজার রসটা সে তেমন গ্রহণ করতে পারে না। এই মনে করো দুপুর রাত্রে খাটে শুয়ে আছি, হঠাৎ পৃথিবীটা ধরে এমনি নাড়া দিলে যে কে কোথায় পালাবে পথ পায় না। মতলবটা খুব নতুন রকমের এবং মজাটা খুব আকস্মিক তার আর সন্দেহ নেই। বড়ো বড়ো সম্ভ্রান্ত ভদ্রলোকদের অর্ধেক রাত্রে উর্ধশ্বাসে অসম্বৃত অবস্থায় বিছানার বাইরে দৌড় করানো কি কম কৌতুক! এবং দুটো-একটা সদ্যোনিদ্রোত্থিত হতবুদ্ধি নিরীহ লোকের মাথার উপরে বাড়ির আস্ত ছাদটা ভেঙে আনা কি কম ঠাট্টা! হতভাগ্য লোকটা যেদিন ব্যাংকে চেক লিখে রাজমিস্ত্রীর বিল শোধ করছিল, রহস্যপ্রিয়া প্রকৃতি সেইদিন বসে কত হেসেছিল!” লক্ষ না করে পারি না, রবীন্দ্রনাথ এখানে রহস্যপ্রিয়া প্রকৃতির কথা বলেছেন, ঈশ্বরের কথা নয়।
রবীন্দ্রমানসের স্বরূপ বুঝতে হলে আমাদের প্রথমে রামমোহন রায়কে ভালোভাবে বুঝে নিতে হবে। কারণ, রামমোহন রায়ের সুযোগ্য উত্তরসাধক ছিলেন রবীন্দ্রনাথ। বাংলায় রেনেসাঁর সূচনা করেন রামমোহন এবং সমাপ্তি টানেন রবীন্দ্রনাথ।রামমোহন যেমন সত্য সন্ধানী ছিলেন তেমনি ছিলেন মানব কল্যাণে সোচ্চার। ধর্মীয় সত্যকে তিনি সন্ধান করেছেন কোরআনে, পুরানে, বাইবেলে এবং মহাপুরুষদের জীবন ও বাণীর মধ্যে। যুক্তিবাদী রামমোহন হিন্দু ধর্মের প্রতিমা পূজা ও বহুদেবতার ওপর শ্রদ্ধা হারিয়েছিলেন। কিন্তু হিন্দু ধর্মের উচ্চতর দার্শনিক সিদ্ধান্তের ওপর তাঁর আস্থা ছিল অটুট।রবীন্দ্রনাথের বাবা যেমন ছিলেন ঈশ্বরপ্রেমিক তেমনি ছিলেন হাফিজের অনুরাগী ও ভক্ত।
জোড়াসাঁকোতে থাকতে রবীন্দ্রনাথের ধর্মীয় চিন্তা-ভাবনা যে রকম ছিল শান্তিনিকেতনে যাওয়ার পর তা কিন্তু ধীরে ধীরে বদলে গিয়েছিল। বিশেষ করে বিভিন্ন ধর্মের অনুসারী ছাত্রদের কাছে বক্তব্য তুলে ধরতে গিয়ে তার ধর্মীয় ভাবনায় পরিবর্তন এসেছিল। গৌতম বুদ্ধ, যীশু খ্রিস্ট, গুরু নানক প্রমুখ ধর্মগুরুর সম্মানে তিনি কবিতা ও গান রচনা ও পরিবেশন করেছেন। তাঁদের জীবন ও দর্শন সম্পর্কে আলোচনাও করেছেন। হযরত মোহাম্মদ (সা-এর জন্মদিনে শান্তি নিকেতনের মন্দিরের অনুষ্ঠানে ‘কোন আলোকে প্রাণের প্রদীপ জ্বালিয়ে তুমি ধরায় আসো’ গানটি গাওয়া হতো।। রামমোহন ভাবুক ছিলেন, সংস্কারক ছিলেন।। শিল্পী ছিলেন না। কিন্তু তার উত্তরসাধক রবীন্দ্রনাথ ছিলেন কবি ও শিল্পী। তাই নানা উৎস থেকে উপাদান সংগ্রহ করে শিল্পরূপ দেয়ার সময় তাঁর ওপর শিল্পীর ব্যক্তিজীবন ও রুচির প্রভাব পড়বে এটাই স্বাভাবিক।
০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৯ বিকাল ৫:৩৪
রাজীব নুর বলেছেন: ধন্যবাদ। ভালো থাকুন।
©somewhere in net ltd.
১| ২৩ শে আগস্ট, ২০১৩ বিকাল ৩:৪৬
ঢাকাবাসী বলেছেন: ভাল লাগল।