নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার নাম- রাজীব নূর খান। ভালো লাগে পড়তে- লিখতে আর বুদ্ধিমান লোকদের সাথে আড্ডা দিতে। কোনো কুসংস্কারে আমার বিশ্বাস নেই। নিজের দেশটাকে অত্যাধিক ভালোবাসি। সৎ ও পরিশ্রমী মানুষদের শ্রদ্ধা করি।

রাজীব নুর

আমি একজন ভাল মানুষ বলেই নিজেকে দাবী করি। কারো দ্বিমত থাকলে সেটা তার সমস্যা।

রাজীব নুর › বিস্তারিত পোস্টঃ

উপসংহার

২৮ শে আগস্ট, ২০১৩ রাত ১২:৩৪

মধ্য দুপুর। আমি বসে আছি রমনা পার্কে। এক আকাশ অস্থিরতায় আর চিন্তায় চোখে অন্ধকার দেখছি। আজ তিন দিন ধরে আমি পলাতক। ডিবি পুলিশ এবং র‍্যাব আমাকে খুজছে যৌথভাবে। আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ- আমি জোড়া খুন করেছি। আমি জীবনে একটা মুরগী জবো করি নাই। আর আমি খুন করবো মানুষ ! কপাল দোষে ভাল বন্ধুর দোষে জুটে গেল কিছু শত্রু। ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা শত্রুরা সবাই এক হয়ে- আমাকে করে দিল খুনের আসামী। জানি না তাদের কি লাভ হলো। আমি ধরা পড়লে দ্রুত ট্রাইবুনালে বিচার হবে। একমাসের মধ্যে সব ঝামেলা শেষ হবে এবং হয়তো ফাসিও হয়ে যাবে। সত্যি সত্যি খুন করলে আমার কিচ্ছু হতো না। সব সাজানো এবং বানোয়াট বলেই আমার ফাঁসি হয়ে যাবে। বেশ কয়েকজন সুশীল সাক্ষীও আছেন। ধরা খাওয়ার আগে বেশ কয়েকটা জরুরী কাজ শেষ করতে হবে আগে। ঈশ্বর দয়া করো কাজ গুলো যেন শেষ করে ধরা খাই। আমি মনে মনে কাজ গুলোর একটা তালিকা তৈরি করলাম-



১/ বাবলু'র সাথে দেখা করা।

২/ হিমির সাথে দেখা করা।

৩/ আব্বার সাথে মোবাইলে কথা বলা।

৪/ তারেক মাহমুদ এর সাথে দেখা করা।

৫/ বিনা আপার সাথে দেখা করা।

৬/ পরীর জন্য খেলনা মাছ কিনতে হবে।



১/ বাবলু'র সাথে দেখা করাঃ এক বছর আগে বাবলু'র বিয়েতে যেতে পারিনি। এখন বাবলু'র বৌ হাসপাতালে ভর্তি। বাচ্চা হবে। বাবলু'র ধারনা আমি যদি তার পাশে গিয়ে দাঁড়াই, তাহলে তার অস্থিরতা কমবে। বাবলু আমার খুব কাছের বন্ধু। অতি ভালো একটা ছেলে। একদিন বাবলু আমার জন্য থানায় গিয়েছিল। পুলিশ আমাকে না পেয়ে বাবলুকে থানায় আটকে রাখে। অবশ্যই উচিত বাবলু'র অস্থিরতা কমানো।



২/ হিমির সাথে দেখা করাঃ যে কোনো সময় আমি আইন শৃখলা বাহিনীর হাতে ধরা পড়তে পারি। আমি ধরা পড়লে যে সবচেয়ে বেশী কষ্ট পাবে- সে হচ্ছে হিমি। তাকে অবশ্যই কিছু কথা গুছিয়ে বলতে হবে। যেন সে না কাঁদে, না কষ্ট পায়। যদি কোনো কারনে আমার ফাঁসি না হয় এবং আমি ছাড়া পেয়ে যাই- তাহলে আর দেরী করবো না। খুব শ্রীঘই হিমিকে বিয়ে করে ফেলব। ( হিমি আমাকে এত সহজে মরতে দিবে না। বাংলাদেশের বাঘা বাঘা উকিল ঠিক করবে। পারলে আজরাইলের কাছ থেকে আমাকে কেড়ে আনবে )



৩/ আব্বার সাথে মোবাইলে কথা বলাঃ পুলিশ আমাকে ধরে নিয়ে গেলে আব্বা পাগল হয়ে যাবে। তার সব ক্ষমতা দিয়ে আমাকে জেল থেকে বের করতে চেষ্টা করবে। কিন্তু পারবে না। সাধারন আসামীকে বের করা যায়- খুনের আসামীকে না। দুনিয়ার সবাই বিশ্বাস করবে আমি খুনী কিন্তু যারা আমার কাছের মানুষ তারা মরে গেলেও আমাকে খুনী বলে বিশ্বাস করবে না। আমার শত্রুরা নানান ভাবে আমাকে ক্ষতির করার চেষ্টা করেছে- বারবার তারা ব্যর্থ হয়েছে। মনে হচ্ছে এবার তারা জিতে যাবে। আব্বা কি পারবে খুনের আসামীকে বের করে নিয়ে আসতে ?



৪/ তারেক মাহমুদ এর সাথে দেখা করাঃ এই তারেক মাহমুদ আমাকে ফাসিয়েছে। সে একা না। তার সাথে আরও সাত আট জন আছে। কিন্তু মুল পরিকল্পনা তার। তার সাথে দেখা করে বলল- তারেক ভাই, দুই বছর ধরে নানান পরিকল্পনা করেছেন, কোনো বার'ই আমাকে কাবু করতে পারেন নি। এইবার মনে হয় আপনার চেষ্টা সফল হবে। যাই হোক, শুনুন- আমাকে এত ভয় পান কেন আপনারা ? আমি কি কখনও আপনাদের কোনো ক্ষতি করেছি? হিংসা ভালো নয়। আমার অপরাধ আমি আপনাদের আসল চেহারা দেখে ফেলেছি। ভাই তারেক আমি আপনাকে এমন দু'টা কথা বলতে পারি- যে কথা শুনে আপনার কলিজা উড়ে যাবে।



৫/ বিনা আপার সাথে দেখা করাঃ বিনা আপা'র সাথে দেখা করা খুব দরকার। সে নারায়ণগঞ্জ এ নতুন বাড়ি করেছে। বাড়ির চারপাশে গাছ-পালা দিয়ে ভরে ফেলেছে- সে এখন বাজার থেকে কোনো সবজি কিনে না। নিজের চাষ করা সবজি খায়। বারবার যাব যাব করে আর যাওয়া হয়নি। বিনা আপা, আমার জন্য একটা মেয়ে দেখেছে। আমি তাকে সুন্দর করে বুঝিয়ে বলেছি-, আপাতত বিয়ের জন্য আমি কোনো মেয়ে দেখতে চাই না। কিন্তু তার খুব অনুরোধ একবার যেন যাই। বিনা আপা ছোটবেলা থেকেই আমাকে খুউব আদর করেন।



৬/ পরীর জন্য খেলনা মাছ কিনতে হবেঃ কিছু কিছু প্রিয় মুখ আছে- কয়দিন পর পর না দেখলে ভালো লাগে না। পরী আমাকে চাচা না বলে, বলে চাচুই। পরী কার কাছে যেন একটা সবুজ মাছ দেখেছে- যে মাছ আকাশে উড়ে আবার মাটিতে দৌড় দিতে পারে। কখন পুলিশের হাতে ধরা পরে যাই- তার আগেই পরীর জন্য খেলনা মাছটা কিনে ফেলা প্রয়োজন। যদি সময় না পাই- তাহলে হিমিকে ফোন করে মাছের কথা বলতে হবে। সমস্যা হলো- আমার সাথে এখন মোবাইল নেই। রমনা পার্কে ঢোকার সময় পার্কের পুকুরে ফেলে দিয়েছি। কারন মোবাইল টা অন থাকলেই পুলিশ আমাকে খুব সহজেই ধরে ফেলবে। সব কাজ সুন্দর ভাবে শেষ না করে ধরা পড়লে আমার জন্য ঝামেলা হয়ে যাবে।



কখন দুপুর শেষ হয়ে বিকেল হয়ে গেছে- খেয়াল করিনি। খুব ক্ষুধা পেয়েছে। কয়দিন ধরে খাওয়া দাওয়ায় খুব অনিয়ম হচ্ছে। এই অনিয়মটা হিমি একেবারে অপছন্দ করে। ফুল বিক্রি করে একটা বাচ্চা ছেলেকে টাকা দিয়ে খাবার কিনতে পাঠিয়েছে- এক ঘন্টা হয়ে গেল- ছেলেটার কোনো খোঁজ নেই। কিন্তু তার ফুল গুলো আমার কাছে রেখে গেছে। ছেলেটার জন্য কতক্ষন অপেক্ষা করবো বুঝতে পারছি না। ইচ্ছা করছে পার্কের বেঞ্চে শুয়ে একটা লম্বা ঘুম দেই। খুব ক্লান্ত লাগছে, সাথে তীব্র ক্ষুধা বোধ। খাবারের অপেক্ষা করতে-করতে কখন ঘুমিয়ে পরেছি জানি না। ঘুম ভাঙ্গল মশার কামড়ে সন্ধ্যার পর। হাতে সময় কম- কাজ গুলো দ্রুত শেষ করতে হবে। কিন্তু কি আশ্চর্য- রমনা পার্ক থেকে বের হয়ে- শাহবাগ মোড়ে সন্ধ্যা সাত টায় র‍্যাব আমাকে গ্রেফতার করল।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২৮ শে আগস্ট, ২০১৩ রাত ১২:৪৮

অর্থনীতিবিদ বলেছেন: দারুন আফসোস লাগছে। বেচারা ছয়টি কাজের একটিও করতে পারল না।

২| ২৮ শে আগস্ট, ২০১৩ রাত ২:১৯

নাজিম-উদ-দৌলা বলেছেন:
গল্প বলার ভঙ্গিটা ইন্টারেস্টিং ছিল। কাহিনিটা আরও জমিয়ে তুলতে পারলে ভাল লাগত।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.