নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার নাম- রাজীব নূর খান। ভালো লাগে পড়তে- লিখতে আর বুদ্ধিমান লোকদের সাথে আড্ডা দিতে। কোনো কুসংস্কারে আমার বিশ্বাস নেই। নিজের দেশটাকে অত্যাধিক ভালোবাসি। সৎ ও পরিশ্রমী মানুষদের শ্রদ্ধা করি।

রাজীব নুর

আমি একজন ভাল মানুষ বলেই নিজেকে দাবী করি। কারো দ্বিমত থাকলে সেটা তার সমস্যা।

রাজীব নুর › বিস্তারিত পোস্টঃ

রাস্তার পাশের চায়ের দোকান - ১

০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:০৭

সারা বাংলাদেশের চায়ের দোকান গুলো আমার খুব প্রিয়। আমি প্রতিদিন রাস্তার পাশের চায়ের দোকান থেকে ৩/৪ বার চা-টা খাবো'ই। এই অভ্যাস আমার দীর্ঘ দিনের। দামী রেস্টুরেন্টের চা খেয়ে আরাম পাই না। কিন্তু সস্তা রাস্তার পাশের চায়ের দোকান থেকে চা খেয়ে এক আকাশ আনন্দ পাই। আমার অনেক দিনের ইচ্ছা ধারাবাহিক ভাবে ঢাকা শহরের চায়ের দোকান গুলো নিয়ে লিখব। সত্য কথা বলতে কি- এই সমস্ত চায়ের দোকান থেকে আমি অনেক রকম জ্ঞান সঞ্চয় করেছি। ঘন্টার পর ঘন্টা আমি চায়ের দোকানে পার করেছি। কখনও মধ্যদুপুর বেলা, কখনও ভর সন্ধ্যাবেলায়, কখনও বিকেলবেলায় আবার কখনও মধ্যরাত্রে।



আজ আমি একটা চায়ের দোকানের গল্প বলব। প্রায় তিন বছর এই চায়ের দোকানে আড্ডা দিয়েছি। এই চায়ের দোকান অবস্থিত বাগিচা মসজিদের কাছে। একদম রেললাইনের পাশে। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত এই চায়ের দোকান খোলা থাকে। এই চায়ের দোকানটি আমার খুব পছন্দের। গ্রাম গ্রাম ভাব আছে। কিছুক্ষন পরপর ট্রেন যায়-আসে। রেললাইনের দুই পাশে বস্তি। হাজার রকম মানুষ প্রতিদিন এই দোকানে চা খেয়ে আসে। কত রকম মানুষের সাথে যে আমার পরিচয় হয়েছে- এই চায়ের দোকানে। তাদের কারো সাথে রাস্তায় দেখা হলে জড়িয়ে ধরে। গত দুই বছর ধরে এই চায়ের দোকানে আমার যাওয়া হয় না।



এই চায়ের দোকানটা স্বামী স্ত্রী দুইজন মিলে পরিচালনা করেন। মাঝে মাঝে তাদের ছেলেরাও সময় দেয়। এই দোকানে চা ছাড়াও কলা, রুটি, বিস্কুট সিগারেট পাওয়া যায়। আমি চুপ করে চায়ের দোকানের এক কোনায় বসে থাকতাম। এবং খুব মনোযোগ দিয়ে সব কিছু দেখতাম, তাদের কথা শুনতাম। এইভাবে দিনের পর দিন চলেছে। এক সময় এই চায়ের দোকানে আসা- সবার সাথে একটা সহজ সম্পর্ক হয়ে যায়। এদের মধ্যে আছে- রিকশাওয়ালা, রঙ মিস্ত্রী, সিএনজি চালক, তরকারী বিক্রেতা, ভ্যান গাড়ি চালক- নেশাগ্রস্ত লোকজন, টহল পুলিশ, কলেজে পড়া ছাত্র ইত্যাদি নানা পেশার মানুষের সাথে। আমি চুপ করে থেকে তাদের কথা শুনি। তাদের মন মানসিকতা বুঝতে চেষ্টা করি।



একবার এই চায়ের দোকানে একজনের সাথে আমার ঝগড়া হয়ে যায়। যার সাথে ঝগড়া হয় সে ছিল মস্তান। এই মস্তান আমাকে মারার জন্য দশ বারো জন ছেলে নিয়ে আসে। তাদের হাতে লাঠি, ক্ষুর আর লোহার রড। ভাগ্যক্রমে সেদিন বেঁচে যাই। যদিও এই মস্তান এখন আমাকে রাস্তায় দেখলে সালাম দেয়। একদিন সন্ধ্যায় এই চায়ের দোকানে বসে আছি, গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি পড়ছে- এমন সময়, একজন মহিলা এসে এক লোকের উপর ঝাঁপিয়ে পড়লো। লোকটি বসে আরাম করে চা খাচ্ছিল। পরে জানতে পারলাম তারা স্বামী স্ত্রী । স্বামী তার স্ত্রীর ছোট বোনকে গোপনে বিয়ে করেছে। অন্য কোনো বস্তিতে ঘর ভাড়া নিয়ে থাকে। চায়ের দোকানে গেলে কত রকম বিচিত্র মানুষ যে দেখা যায় !



একদিন সকালে চায়ের দোকানে গিয়ে দেখি- সরকারের লোক এসে চায়ের দোকানটি ভেঙ্গে দিয়েছে। চায়ের দোকানের মালিক সোলেমান ভাই- মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে রেল লাইনের উপর। আমাকে দেখেই বলল- সাংবাদিক ভাই আমি শেষ। আমি বললাম- আপনি তো নিয়মিত পুলিশকে টাকা দিতেন। তাহলে আপনার দোকান ভাংল কেন ? ভাঙ্গা দোকান দুই দিনের মধ্যে আবার মেরামত করা হলো। জানতে পারলাম বছরে এক দুই বার সরকারী লোকজন এসে দোকান ভেঙ্গে দিয়ে যায়। সন্ধ্যার পর চায়ের দোকান খুব বেশী জমজমাট হয়। দেখতে ভালো লাগে। সবাই চা খায়, নানান রকম গল্প করে। কিছু মানুষ খুব'ই নোংরা ভাষায় কথা বলে। আমি তাদের মুখের দিকে হা করে তাকিয়ে থাকি।



যখন আমি যুগান্তর পত্রিকায় কাজ করতাম- তখন আমাকে বলা হলো- চায়ের দোকান নিয়ে ফিচার হবে- তুমি ব্যস্ত একটা চায়ের দোকানের ছবি দাও। আমি এই সোলেমান ভাইয়ের চায়ের দোকানের ছবি দিয়েছিলাম। কিন্তু অফিস আমাকে বলেছিল- বনানী এলাকার চায়ের দোকানের ছবি। হা হা হা...ছবির গায়ে তো আর লেখা থাকে না, যে ছবি টা কোন এলাকার। এই চায়ের দোকানে বেশ কয়েকজন ছেলের সাথে আমার পরিচয় হয়েছিল। বেশ কয়েক বছর তাদের সাথে আমার সুসম্পর্ক ছিল। এখন আমি তাদের শত্রু। ভয়াবহ শত্রু। এই সমস্ত শত্রুদের কথা অন্য কোনো লেখায় লিখব। অবশ্যই লিখব। লিখে লিখেই প্রতিশোধ নিবো। আমি কাউকে ছাড়বো না।



( চলবে...)

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:৩২

বটের ফল বলেছেন: চলতে থাকুন রাজীব নুর ভাই। আছি সাথে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.