নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার নাম- রাজীব নূর খান। ভালো লাগে পড়তে- লিখতে আর বুদ্ধিমান লোকদের সাথে আড্ডা দিতে। কোনো কুসংস্কারে আমার বিশ্বাস নেই। নিজের দেশটাকে অত্যাধিক ভালোবাসি। সৎ ও পরিশ্রমী মানুষদের শ্রদ্ধা করি।

রাজীব নুর

আমি একজন ভাল মানুষ বলেই নিজেকে দাবী করি। কারো দ্বিমত থাকলে সেটা তার সমস্যা।

রাজীব নুর › বিস্তারিত পোস্টঃ

টুকরো টুকরো সাদা মিথ্যা- ২৬

১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ১:৫৪

সাদা গেঞ্জি পরা ছেলেটার পেছনে পেছনে আমি যাচ্ছি। ছেলেটাকে আমি চিনি না। আজ সারাদিন আমার কোনো কাজ নেই। তাই ভাবলাম- সারাদিন সাদা গেঞ্জি পরা ছেলেটার পেছনে পেছনে যাব। সকাল এগারোটা বাজে। ঝকঝকে রোদ। ছেলেটা মৌচাক মার্কেটের সামনে স্বকল্প বাস কাউন্টার এর সামনে এসে থামল। তারপর কিছুক্ষন আকাশের দিকে তাকিয়ে মিরপুর-১ এর টিকিট কেটে বাসে উঠে পড়ল। আমিও টিকিট নিয়ে বাসে উঠে পড়লাম। ছেলেটার পেছনের সীটে আমি বসলাম। আজ ভাগ্য ভালো। জানালার পাশে সীট পেয়েছি। সাদা গেঞ্জি পরা ছেলেটি দেখতে সুন্দর। গায়ের রঙ ফরসা। মাথার চুল লম্বা লম্বা।হঠাত করে ছেলেটির মোবাইল বেজে উঠে- ছেলেটি কি বলল বুঝতে পারলাম না।



বাস বিশ মিনিট ধরে বাংলামটর সিগন্যালে আটকে আছে। বাস ভর্তি যাত্রী। বাইরে কড়া রোদ। শুধু আমি না সারা বাসের যাত্রী ঘামছে। মৌচাক থেকে বাংলা মটর আসতে সময় লাগল পঞ্চাশ মিনিট। ছেলেটা একটু পর পর প্যাকেট থেকে মোবাইল বের করে সময় দেখছে। বাস ফার্মগেট আসতেই ছেলেটা উঠে দাঁড়ালো, সাথে সাথে আমিও উঠে দাঁড়ালাম। মনে মনে ভাবলাম- আজ সারাদিন ছেলেটার সাথে সাথেই থাকব। দেখা যাক না কি হয় ! ছেলেটাকে ফোলো করে খুব আনন্দ পাচ্ছি। রোমাঞ্চ অনুভব করছি। একটু একটু করে আগাতে আগাতে বাস এখন মিরপুর-দশ নম্বরে। আমি জানালা দিয়ে তাকিয়ে চারপাশের মানুষজনের ব্যস্ততা দেখছি খুব আগ্রহ নিয়ে। মিরপুর কর্মাস কলেজের সামনে গিয়ে ছেলেটি বাস থেকে নামল, আমিও নামলাম। তখন সময় দুপুর দুইটা।



ছেলেটি একটা রিকশা নিয়ে বেড়ি বাধের কাছে একটা সাত তলা বাড়ির সামনে রিকশা থামালো। ভাড়া দিয়ে ছেলেটি বাড়ির ভিতরে ঢুকে গেল। আমি বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে ভাবতে লাগলাম, ছেলেটি কার বাসায় গেল ? এবং কেন গেল? কখন নীচে নামবে? কোন ফ্ল্যাটে যাবে ইত্যাদি নানান কথা ভাবতে লাগলাম। আমি সিদ্ধান্ত নিলাম- ছেলেটি যদি মধ্যরাত্রে নীচে নামে- ততক্ষন পর্যন্ত আমি দাঁড়িয়ে থাকব। আশে পাশে কোনো চা সিগারেটের দোকান নেই- খুব বিরক্ত লাগছে। ছেলেটি যদি আজ নীচে না নামে ? কতক্ষন দাঁড়িয়ে থাকব, এখনই পা ব্যাথা করতে শুরু করেছে। তাছাড়া কতক্ষন আর একটা অপরিচিত বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে থাকা যায় ? এখন মনে হচ্ছে, ছেলেটির পেছন পেছন আসা বোকামি হয়েছে।



এক ঘন্টা পনের মিনিট পর ছেলেটি নীচে নামল। হাতে একটি আপেল। ছেলেটি হাঁটতে হাঁটতে এসে বড় রাস্তায় দাঁড়ালো। রাস্তার পাশের দোকান থেকে চা সিগারেট খেল। আমিও চা বিস্কুট সিগারেট খেলাম। হঠাত রোদের তেজ কমে গিয়ে আকাশে মেঘ জমতে শুরু করেছে। এই সময় ছেলেটির মোবাইলে রিং বেজে উঠল- কথা শেষ করে একটা রিকশা ঠিক করল। তার কিছুক্ষন পর পরীর মতন সুন্দর একটা মেয়ে এলো। তারা দুইজন হাসতে হাসতে রিকশায় চেপে বসল। এতক্ষন ফলো করেছি একজনকে, এখন ফলো করতে হবে দুইজনকে। কাজ বেড়ে গেল। এদিকে আকাশের অবস্থাও ভালো না। যাই হোক, দেখি শেষ পর্যন্ত কি হয়? সবাই সব কিছুর শেষ দেখতে পারে না। কিন্তু আমি তো সবার মত না। শুরু যখন করেছি- কাজেই শেষও করবো।



ছেলে-মেয়েটি চিড়িয়াখানার ভেতর ঢুকল। আমিও টিকিট কেটে চিড়িয়াখানায় প্রবেশ করলাম। তখন সময় বিকাল চার টা। ছেলেটি বানর দেখতে চাইল- মেয়েটি বলল- বানর কি দেখবে ? তারপর ছেলেটি এক আকাশ অভিমান করে বলল- হাতী আমি দেখবই। হাতী আমার প্রিয় প্রানী। মেয়েটি হেসে ফেলল। তাদের পেছন পেছন আমি হাঁটতে হাঁটতে শেষ। আমার পা ব্যাথা হয়ে গিয়েছে- কিন্তু তারা হেঁটেই যাচ্ছে। আমার ইচ্ছা করছে- তাদের গিয়ে বলি- আর কত হাঁটবেন? দয়া করে এখন একটু বসুন। আমি আর পারছি না। অবশেষে তারা চিড়িয়াখানার ময়লা লেকের সামনে একটা ভাঙ্গা বেঞ্চে বসল। আমি তাদের পাশের বেঞ্চে গিয়ে বসলাম। এর আগে আমি কখনো ঢাকা চিড়িয়াখানায় আসি নাই। এত নোংরা আর বিচ্ছিরি। ছিঃ ।



ছেলেটি অনেক আগ্রহ নিয়ে হাতী আর গন্ডার দেখলো। সন্ধ্যা হবার কিছুক্ষন আগে তারা চিড়িয়াখানা থেকে বের হলো। তাদের সাথে সাথে আমিও। তারা বাদাম কিনল। ছেলেটি বাদাম ছিলে দিচ্ছে- মেয়েটি কুট কুট করে চাবাচ্ছে। তারা রিকশা নিয়ে বেনারশী পল্লী গেল। একটা বিরানীর দোকানে ঢুকে, ছেলেটি খিচুরী আর মেয়েটি মোরগ পোলাউ খেল। আমি খেলাম তেহারী। তারপর তারা এই গলি সেই গলি হাঁটতে শুরু করলো। আমিও তাদের পেছন পেছন আবার হাঁটা শুরু করলাম। মেয়েটি আইসক্রীম খেল, ছেলেটি সিগারেট। মেয়েটি পপ কর্ণ খেল। আরও কি কি যেন কেনাকাটা করল। ঝালমুড়ি, গেন্ডারির রস- আমলকি। সাত রঙের চুরী এবং দুইটা টাউজার।





সাড়ে সাত টায় ছেলেটি মেয়েটিকে তার বাসায় নামিয়ে দিল। তারপর ছেলেটি একা একা অনেকক্ষন হাঁটল, রাস্তার পাশের দোকান থেকে চা সিগারেট খেল। দিনের শুরুতে রোমাঞ্চ লাগছিল কিন্তু এখন বিরক্ত লাগছে। ইচ্ছা করছে নরম বিছানায় কিছুক্ষন ঘুমাই। চায়ের দোকানে বসে ঝিমুচ্ছিলাম। হঠাত দেখি ছেলেটি নাই। আশে পাশে খুঁজে কোথাও পেলাম না। নিজের উপরই খুব রাগ লাগল। মন খারাপ নিয়ে রাত দশটায় বাসায় ফিরলাম। গোছল করে খাওয়া দাওয়া শেষ করলাম। ঘুমানোর আগে অনেকক্ষন ছেলে-মেয়েটির জন্য প্রার্থনা করলাম। তারা ভালো থাকুক, তাদের সব প্রিয় মানুষেরা ভালো থাকুক, ভালো থাকুক সমগ্র মানবজাতি। পাশের বাসায় গান বাজছে- "যদি আমার কোনও পালাবার জায়গা

না থাকে – দিন, রাত্রি, অন্ধকারে।/ তুমি কি আমার হাতটা একটু ধরবে।/ ওগো বন্ধু, তুমি কি আমার হাতটা একটু ধরবে।"

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ২:২৭

খেয়া ঘাট বলেছেন: ছেলেটিকে বোকা এবং ভালো মনে হলো।

২| ১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ২:৪৯

ইরফান আহমেদ বর্ষণ বলেছেন: হুম (আপনের কমেন্ট আপনারেই দিলাম)

৩| ১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ সকাল ১০:২৬

ঢাকাবাসী বলেছেন: কি হলো?

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.