নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি একজন ভাল মানুষ বলেই নিজেকে দাবী করি। কারো দ্বিমত থাকলে সেটা তার সমস্যা।
অবন্তি রিকশায় উঠল। আজ তার জন্মদিন। কিন্তু তার মন ভালো নেই। সে এক ঘন্টা রিকশায় করে ঘুরবে। তার মন খারাপ হলেই সে একা একা রিকশা নিয়ে ঘুরে বেড়ায়। বাইশ বছরের মেয়েরা একটু আধটু স্বেচ্ছাচারিতা করতেই পারে। তার বয়সী অনেক মেয়ে দুই বাচ্চার মা হয়ে যায়। বিশেষ বিশেষ দিন গুলতে অবন্তির বেশী কষ্ট হয়। অবন্তির জন্মের সময় তার মা মারা যায়। মা'র মৃত্যুর জন্য অবন্তি নিজেকে দায়ী মনে করে। অবন্তির বাবা- অবন্তিকে এক আকাশ ভালোবাসা দিয়ে বড় করে। অবন্তির চাচারা তার বাবাকে বিয়ের জন্য অনেক রকম চেষ্টা করে- ব্যর্থ হয়। রিকশা ধানমন্ডি আসতেই অবন্তি রিকশাওয়ালাকে বলল- চাচা থামুন। রাস্তার পাশের দোকান থেকে এক কাপ চা খাবো। অবন্তি খুব সহজ ভাবে রিকশা থেকে নেমে রাস্তার পাশের দোকান থেকে চা খেল। আশে পাশের সব মানুষ 'হা' করে এই দৃশ্য দেখল। অবন্তি মনে মনে বলল- দেখবি দেখ, কিন্তু এত কুৎসিত করে তাকানোর কি দরকার?
অবন্তি চা শেষ করে দেখল- তার পাশে একটা ছেলে দাঁড়িয়ে আছে। এই ছেলেটা আজ দুই বছর ধরে অবন্তির পেছনে পেছনে ঘুর ঘুর করছে। ছেলেটি খুব হাসি খুশি- প্রাবন্ত। সারাক্ষন মজার মজার কথা বলে। ছেলেটির নাম শুভ্র। নামের সাথে চাল-চলন কথা বার্তার খুব মিল। শুভ্র বলল, অবন্তি আমাকে এক কাপ চা দিতে বলো। তারপর একটা সিগারেট। আজ আমার কাছে টাকা নেই। তুমি চালিয়ে নাও আমি পরে শোধ করে দিব। অবন্তি হেসে হেসে বলল- এর আগেও তো আরও অনেক টাকা পাই। সেগুলো কবে দিবে ? শুভ্র বলল- আহ অবন্তি, দিব দিব। এখন চুপ করো। চা দিতে বলো। চা খেয়ে এক ঘন্টা তোমার সাথে সারা ধানমন্ডি হাঁটব। শুভ্র বলল- তোমার পাশে পাশে হাঁটতে আমার অনেক ভালো লাগে। নিজেকে রাজা বাদশা মনে হয়। অবন্তি বলল- কিন্তু আমার নিজেকে রানী মনে হয় না। শুভ্র চিৎকার করে বলল- সারা বাংলাদেশে তোমার মত একটাও মেয়ে নেই। তোমাকে সাজতে হয় না, শুধু চোখে কাজল আর কপালে টিপ দিলেই দেবী দেবী মনে হয়।
অবন্তি এবং অবন্তির বাবা ডিনার শেষ করে ব্যলকনিতে বসেছে। অবন্তি তার বাবার কাঁধে মাথা রেখে বাচ্চা মেয়েদের মতন ছোটবেলার গল্প শুনে। অবন্তির বাবা আজ অবন্তির মা'র গল্প করছে। প্রিয় পাঠক, আসুন অবন্তির বাবার জবানিতে অবন্তির মা'র গল্প শুনি। অবন্তি -বুঝলি মা, তোর মাকে প্রথম দেখি- নীলক্ষেত একটা বইয়ের দোকানে। দেখেই আমি অবাক, অবাক হওয়ার কারন হচ্ছে- গলকাল রাতে এই মেয়েটিকে আমি স্বপ্নে দেখেছি। চা খেয়েছি। অনেক গল্প করেছি। মেয়েটির নাম অলকা। আমি মেয়েটির সামনে গিয়ে বললাম- অলকা কেমন আছো ? আমার একটু ভয়ও করল না, একটু লজ্জা লাগল না। অলকা হাসি মুখে বলল- আমি ভালো আছি। তারপর আমি বললাম- তুমি কি এক কাপ চা খাবে আমার সাথে? অলকা ছোট করে বলল -আচ্ছা। তোর মা, চায়ের কাঁপে প্রথম চুমুক দেবার আগেই বললাম- তুমি কি আমাকে বিয়ে করবে ? অলকা একদম চুপ। সে সময় আমার কোনো টাকা পয়সা ছিল না। তবে আমি দেখতে ছিলাম- রাজপুত্র। হয়তো, আমার রুপে মুগ্ধ হয়েই- তোর মা আমাকে বিয়ে করতে রাজী হলো। তবে, আমি দেখতে যেমন নায়ক রাজ্জাকের মতন ছিলাম- তোর মা ছিল নায়িকা ববিতা'র মতন । বিয়ের পর তো আমরা প্রতি সপ্তাহে একটা করে সিনেমা দেখতাম।
শুভ্র দাঁড়িয়ে আছে- অবন্তিদের বাসার সামনে। এখনও পাঁচ টা বাজেনি, পাঁচ মিনিট বাকি আছে। এই পাঁচ মিনিটে শুভ্র একটা সিগারেট শেষ করবে। সিগারেট শেষ করে অবন্তিদের ঘরের দরজায় টোকা দিতেই- অবন্তির বাবা দরজা খুললেন। শুভ্র বলল- চাচা কেমন আছেন ? অবন্তি কই ? অবন্তির বাবা বললেন- তুমি ঘরে এসে বসো। শুভ্র'র মধ্যে কোনো ভয় বা সংশয় নেই। শুভ্র আরাম করে সোফায় বসল। অবন্তি চা নিয়ে ঘরে প্রবেশ করল। অবন্তি বাবার হাতে চায়ের কাপ দিতে দিতে বলল- বাবা, এই ছেলেটির কথা তোমাকে বলেছি গতকাল। অবন্তির বাবা বললেন- শুভ্র তুমি কি করো? শুভ্র বলল- চাচা, আমি কিছু করি না। কিন্তু আমি আপনার মেয়েকে বিয়ে করতে চাই। আমি বেঁচে থাকতে কোনো দুঃখ-কষ্ট অবন্তিকে স্পর্শ করতে পারবে না। অবন্তির বাবা শুভ্র'র সাহস দেখে- আনন্দিত হলেন। এই রকম সাহসী ছেলে তার খুব পছন্দ। তিনি শুভ্র'র চোখ মুখ দেখে- মনে মনে ভাবলেন- এই ছেলে সাহসী এবং সহজ সরল। কোনো জটিলতা এই ছেলের মধ্যে নেই।
অবন্তি'র বাবা বাজারে গেলেন। আজ শুভ্র'র প্রিয় খাবার রান্না হবে। রান্না করবে শুভ্র এবং অবন্তি'র বাবা। অবন্তি তখন বই পড়বে। রবীন্দ্রনাথের 'শেষের কবিতা' অবন্তির অনেক প্রিয় বই। যখন খুব আনন্দ হয়- তখন অবন্তি শেষের কবিতা বইটি পড়ে। "মনে হয় অজস্র মৃত্যুরে
পার হয়ে আসিলাম/ আজি নব প্রভাতের শিখর চুড়ায়;/ রথের চঞ্চল বেগ হাওয়ায় উড়ায়/ আমার পুরানো নাম।" শুভ্র অবন্তি'র পাশে বসতে বসতে বলল- "শুক্লপখক হতে আনি/ রজনী গন্ধার বৃন্তখানি/ যে পারে সাজাতে
অর্ঘ্যথালা কৃষ্ণপক্ষ রাতে/ সে আমারে দেখিবারে পায় অসীম ক্ষমায়/ ভালমন্দ মিলায়ে সকলি,/ এবার পূজায় তারি আপনারে দিতে চাই বলি।" শুভ্র আবৃত্তি শেষ করে পকেট থেকে একটা আংটি বের করে অবন্তি'কে পরিয়ে দিল। তারপর অবন্তি'র কলাপে একটা ছোট্র চুমু দিয়ে বলল- অনেক ভালোবাসি তোমাকে। অবন্তি'র চোখ থেকে দু'ফোটা জল গড়িয়ে পড়ল। শুভ্র অবন্তি'র চোখের পানি মুছে দিয়ে বলল- খবরদার আর কখনও যেন তোমার চোখে পানি না দেখি।
এক বছর হয়ে গেল অবন্তি'র বিয়ে হয়েছে। অবন্তি'র পেটে বাচ্চা । সাত মাস চলছে। ডাক্তার বলেছে একটা ছেলে বাচ্চা হবে। পেটের মধ্যে বাচ্চা টা খুব বেশী নড়াচড়া করে, অবন্তি টের পায়। সুন্দর সুখের সংসার। অবন্তি মনে মনে ভাবে- জীবন অনেক সুন্দর। তারা বড় একটা বাসা নিয়েছে। শুভ্র, অবন্তি এবং অবন্তি'র বাবা এক সাথে থাকে। অবন্তি'র বাবা সারাক্ষন বইয়ের মধ্যে ডুবে থাকেন। শুভ্র অফিস শেষ করে- বাসায় ফিরে শ্বশুরের সাথে দাবা খেলতে বসে। শুভ্র প্রতিদিন অবন্তিকে ডাবের পানি খাওয়ায়। রাতে ঘুমানোর আগে- অভন্তিকে ধরে ধরে কিছুক্ষন হাঁটায়। অবন্তি ঘুমানোর পর শুভ্র ব্যলকনিতে দাঁড়িয়ে ভাবে- জীবনটা মন্দ নয়। রাতে অবন্তি ভয়ের স্বপ্ন দেখে- স্বামীকে জড়িয়ে ধরে, সাথে সাথে তার সব ভয় চলে যায়। ভোরে অবন্তি'র বাবা ফযরের নামাজ পড়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে ভাবেন- অবন্তি'র মা বেঁচে থাকল জীবনটা আরও বেশী আনন্দময় হতো। এক শরত কালের শুক্রবার ছুটির দিনে শুভ্র অবন্তিকে নিয়ে যায় কাশবনে। অবন্তি নীল রঙের একটা জামদানী শাড়ি পরে। কাশফুলের মাঝে অবন্তিকে দাঁড় করিয়ে ছবি তুলল শুভ্র। অবন্তির বাবা অবন্তি আর শুভ্র'র ছবি তুলে দিল।
কাশবন থেকে ফেরার পথে- পেছন থেকে অবন্তিদের গাড়িতে ধাক্কা দেয় একটা ট্রাক। সাথে সাথে অবন্তিদের গাড়ি বিশ গজ দূরে ছিটকে পড়ে। হাসপাতালে নেওয়ার পর শুভ্র এবং অবন্তির বাবা মারা যায়। অবন্তির বেঁচে যায় কিন্তু অবন্তির বাচ্চা টা পেটের মধ্যেই মরে যায়।
২| ১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ৮:৩৫
ঢাকাবাসী বলেছেন: আবার ট্রাজেডি! ভাল।
©somewhere in net ltd.
১| ১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৫:৪৩
মায়াবী ছায়া বলেছেন: ওহ.....শেষটায় কেন এমন নিষ্ঠুরতা
শুরুটা অনেক ভাল লাগছে ।।
ভাল থাকুন ।।