নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি একজন ভাল মানুষ বলেই নিজেকে দাবী করি। কারো দ্বিমত থাকলে সেটা তার সমস্যা।
"আমার যদি আম্মুর মত ক্যান্সার হয় তখন কিভাবে চিকিৎসা হবে? ক্যান্সার তো ব্যায়বহুল রোগ আর আমাদের সংসার তো গরীবের সংসার!! দয়া করে তখন মানুষের কাছে হাত পেত না...এমন কি আমার বাপ ভাইয়ের কাছেও নাহ!"
আমি আমার স্ত্রীর লেখা চিঠি হাতে নিয়ে বসে আছি। কি সুন্দর করে ছোট্র একটা চিঠি লিখেছে। আজ থেকে চার বছর আগের লেখা চিঠি। পরিস্কার পরিচ্ছন্ন সুন্দর হাতের লেখা। আমার চোখের পানির ফোটা পড়ছে চিঠির উপর। ঝাপসা চোখে আমি তাকিয়ে আছি- চিঠির দিকে। সকাল থেকে অসংখ্য বার চিঠিটি আমি পড়েছি। লিলি কিভাবে জানত তার ক্যান্সার হবে ? বাসর রাতে এই চিঠিটি লিলি আমার হাতে দিয়ে বলেছিল- আমি যেদিন তোমাকে এই চিঠি পড়তে বলব সেদিন পড়বে, তার আগে কখনও না। নো নেভার। আমি লিলির কথা রেখেছি- চিঠি পড়িনি। চার বছর আগের লেখা চিঠির কথা আমি ভুলেই গিয়েছিলাম। গতকাল রাতে লিলিকে হাসপাতালে দেখতে যাওয়ার পর লিলি- এই চিঠির কথা আমাকে মনে করিয়ে দিল। সকালে হাসপাতালে এসে চিঠিটি আমি লিলির হাতে দেই। লিলি বলল- নিচে গিয়ে এক কাপ চা খেয়ে- চিঠিটি পড়বে।
আজ এক মাস হলো লিলিকে হাসপাতালে ভর্তি করেছি। নানান ডাক্তারি পরীক্ষা করানোর পর ডাক্তার আমাকে জানায় লিলির খুব কঠিন ক্যান্সার হয়েছে। সে বেশী দিন বাঁচবে না। বিদেশ নিয়ে গেলেও না। আমি লিলিকে ডাক্তারের এ কথা বলিনি। বলেছি- ভালো হয়ে যাবে তবে সময় লাগবে। তুমি কোনো চিন্তা করো না। সব ঠিক হয়ে যাবে। লিলি এক আকাশ বিস্ময় নিয়ে আমার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে। আমি খুব চেষ্টা করি- আমার বুকের ভেতরের ভাংচুরের ছাপ যেন আমার মুখে না পড়ে। আমার মুখ দেখে লিলি যেন কিছু বুঝতে না পারে। দিন দিন লিলির শরীর ভেঙ্গে পড়ছে। শুকিয়ে যাচ্ছে। মাথার চুল পড়ে যাচ্ছে। মায়াময় একটি মুখ স্থায়ীভাবে মলিন হয়ে গেছে। কঠিন এক অসুখের নাম ক্যান্সার।প্রাথমিক অবস্থায় ক্যান্সার রোগ সহজে ধরা পরে না, ফলে শেষ পর্যায়ে গিয়ে ভালো কোনও চিকিৎসা দেয়াও সম্ভব হয় না। বাস্তবিক অর্থে এখনও পর্যন্ত ক্যান্সারের চিকিৎসায় পুরোপুরি কার্যকর কোনও ওষুধ আবিষ্কৃত হয় নি।ম্যালিগন্যান্ট টিউমারকেই ক্যান্সার বলে। কেমোথেরাপি হলো শেষ চিকিৎসা।এই ব্যবস্থায় ক্যান্সার কোষকে ধ্বংস করতে অ্যান্টি-ক্যান্সার (সাইটোটক্সিক) ড্রাগস বা ওষুধ ব্যবহার করা হয়।
লিলি তার মেয়ের নাম রেখেছে- লিলিয়ান। লিলিয়ানের বয়স আড়াই বছর। প্রতিদিন বিকেলে লিলিয়ান তার বাবার সাথে মাকে দেখতে যায়। লিলি, লিলিয়ানকে বুকে জড়িয়ে ধরে অনেকক্ষন কাঁদে। তখন লিলয়ান তার ছোট দুই হাতে মায়ের গলা জড়িয়ে ধরে। এবং একটু পর-পর মায়ের চোখের পানি আঙ্গুল দিয়ে মুছে দেয়। কপালে চুমু দিয়ে দেয়। ঠিক এই সময় লিলিয়ানের বাবা বারান্দায় দাঁড়িয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকেন। এবং খুব গোপনে চোখের পানি ফেলেন। লিলিয়ানের দেখাশোনা করে- লিলির ছোট বোন লিপি। লিপি তার বোনকে দেখতে আসে না। বোনের কষ্ট সে সইতে পারে না। লিলির মত লিপিও লিলিয়ানকে জড়িয়ে ধরে কাঁদে। খুব কাঁদে। সবাই সবার কান্না দেখে- সবাই সবাইকে শান্ত্বনা দেয়। কিন্তু লিলিয়ানের বাবাকে কেউ শান্ত্বনা বা ভরসার কথা বলে না। শুধু লিলি বুঝে মানুষটা ভিতরে ভিতরে কষ্টে চুরমার হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু তার কিছু করার নেই।
ক্যান্সার রোগীর হাসপাতালের খরচ অনেক। এই খরচ চালানো- একজন ফোটোগ্রাফারের পক্ষে সম্ভব নয়। আমি ছোট একটা পত্রিকাতে চাকরী করি। খুব সামান্য বেতন। বেতন পেয়ে আমি লিলির হাতে সব টাকা দিয়ে দেই। এত অল্প টাকায় লিলি কিভাবে সংসার চালায় কে জানে ! তবে লিলি কোনোদিন কোনো অভিযোগ করেনি। অন্য মেয়েদের মতন সংসারে টাকা নিয়ে অশান্তি করেনি। দু'জন দু'জনকে ভালোবেসে বিয়ে করেছি। আসলে আমরা দু'জন ছিলাম খুব ভালো বন্ধু। কিন্তু এক সময় আমরা দু'জন তীব্রভাবে অনুভব করি-দু'জন দু'জনকে অনেক ভালোবাসি। তারপর একদিন হুট করে বিয়ে করে ফেলি। বিয়ের দেড় বছর পর লিলিয়ান হয়। যাই হোক, আমি লিলির চিঠি সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে- পরিচিত-অপিরিচিত সবার কাছে হাত পাতলাম। লিলিকে বাঁচাতেই হবে। আমি সারাদিন পাগলের মতন ঘুরে ঘুরে- লিলির চিকিৎসার জন্য টাকা ধার-দেনা করতে লাগলাম। লিলির চিন্তায়-চিন্তায়, আমার ঘুম নেই, আমার খাওয়া-দাওয়া নেই।
চোখের সামনে দিনদিন লিলি বিছানার সাথে মিশে যাচ্ছে।মাথার সব চুল পড়ে যাচ্ছে। লিলির মাথার এক আকাশ চুল আমার খুব পছন্দের। সেই চুল গাছের পাতার মতন ঝরে যাচ্ছে। এখন লিলি কথা বলতে পারে না।বিছানায় উঠে বসতে পারে না। নাকের ভিতরে পাইপ দিয়ে খাবার খাওয়ানো হয়। আমি লিলির চোখের দিকে তাকিয়ে থাকি। লিলির চোখ দিয়ে টপ টপ করে পানি পরে। লিলির সারা শরীর মরে গেছে- শুধু চোখ বেঁচে আছে। ডাক্তার'রা বলেছেন- আল্লহকে ডাকুন। আমাদের কিছুর করার নেই। এখন, আমরা শুধু রোগীর ব্যাথা কমানোর চেষ্টা করছি। একদিন সন্ধ্যায় লিলির বিছানার পাশে বসে লিলির হাত ধরে বললাম- বেবি, তোমার কিচ্ছু হবে না। আমি টাকার ব্যবস্থা করেছি। আগামী রবিবার তোমাকে সিঙ্গাপুর নিয়ে যাচ্ছি। লিলির জীর্ণ হাতে চুমু দিয়ে বললাম- কোনো ভয় নেই। লিলি মলিন চোখে আমার দিকে তাকিয়ে থাকল আর চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পড়ল। আমি লিলির চোখের পানি মুছে দিলাম-কিন্তু লিলি আমার চোখের পানি মুছে দিতে পারল না। ডাক্তার এসে বললেন- রোগীকে ডিস্টার্ব করবেন। তাকে একা থাকতে দেন।
আজ ২২ শে শ্রাবন। আকাশ ভরা মেঘ। গুম গুম শব্দে আকাশ নাঁচছে। যে কোনো সময় ঝুম বৃষ্টি নামবে। লিলিয়ান এবং তার বাবা রাস্তার পাশের দোকান থেকে চা খাচ্ছে। চা শেষ করে লিলিয়ান তার বাবার কোলে চড়ে- তার মাকে দেখতে যাবে। ডাক্তার বলেছেন- আজ লিলি অন্যদিনের চেয়ে অনেক ভালো আছে। তার ব্যাথাবোধ কমে গেছে। এবং লিলিয়ান ইচ্ছা করলে তার মায়ের সাথে অনেকক্ষন গল্প করতে পারবে। লিলিয়ান হাসপাতালে গিয়ে তার মায়ের মাথার কাছে বসল। লিলিয়ান তার ছোট হাত দিয়ে মায়ের গালে হাত রাখল। লিলি তার বাচ্চার দিকে এক আকাশ ভালোবাসা নিয়ে তাকালো। লিলির চোখের ইশারায় লিলিয়ান এবং তার বাবা দুইজন লিলির দুই হাত ধরল। লিলির চোখে এক আকাশ আনন্দ খেলা করল। কিন্তু এই আনন্দ বেশীক্ষন লিলি ধরে রাখতে পারল না। হঠাত তার খুব কষ্ট শুরু হলো। নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসলো। মুখ দিয়ে লালা পরতে লাগল। বুকের ভিতর গর-গর শব্দ হতে শুরু করলো। লিলিয়ান এবং লিলিয়ানের বাবা লিলির কষ্ট দেখে চিৎকার করে কাঁদতে লাগল। লিলিয়ান আম্মু আম্মু বলে মাকে জড়িয়ে ধরল। লিলিয়ানের বাবা ডাক্তার ডাকতে লাগলেন। আর কি আশ্চর্য ডাক্তার আশার আগেই লিলি মারা গেল।
২| ১৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ১:৫০
খেয়া ঘাট বলেছেন: আপনি চমৎকার লিখেন। আমি আপনার লিখার একজন গুনমুগ্ধ পাঠক।
সবচেয়ে ভালো লাগে আপনি নিজেক সাহিত্যিক বানানোর অপচেষ্টায় শব্দ আর বাক্যের উপর অযথা অত্যাচার করেন না। সাবলীল গদ্যে , ঝরঝরে ভাষায় লিখে যান।
১৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ১:৫৫
রাজীব নুর বলেছেন: আপনি ফেসবুকে আমাকে এড করুন। Rajib Noor Khan
©somewhere in net ltd.
১| ১৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ১:২৩
পরিবেশ বন্ধু বলেছেন: জীবনের গল্প আসলে জগত এর এক ট্র্যাজেডি
নিঃশব্দ চলে যাওয়া ভাবতে অবাক লাগে ,
তারপরও কথা থাকে , বিধাতার সিদ্ধান্ত মেনে নিতে হয় ।;।