নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার নাম- রাজীব নূর খান। ভালো লাগে পড়তে- লিখতে আর বুদ্ধিমান লোকদের সাথে আড্ডা দিতে। কোনো কুসংস্কারে আমার বিশ্বাস নেই। নিজের দেশটাকে অত্যাধিক ভালোবাসি। সৎ ও পরিশ্রমী মানুষদের শ্রদ্ধা করি।

রাজীব নুর

আমি একজন ভাল মানুষ বলেই নিজেকে দাবী করি। কারো দ্বিমত থাকলে সেটা তার সমস্যা।

রাজীব নুর › বিস্তারিত পোস্টঃ

স্বপ্ন থেকে

২৮ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৩:৫৩

১/ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালীন ঘটনা। এ সময় একটি স্বপ্ন মিত্রপক্ষের সামরিক গোপনীয়তা রক্ষায় যথেষ্ট সহায়ক হয়েছিল। তখন চীনা বন্দর সোধাতোর বৃটিশ কন্সাল ছিলেন মি. রোনাল্ড হল। তাঁর স্মৃতিকথায় তিনি লিখেছেন : এক রাতে দুঃস্বপ্ন দেখে আমার ঘুম ভেঙে যায়। আমি স্বপ্নে দেখি, গুরুত্বপূর্ণ কোনো ঘটনা ঘটায় আমি অত্যন্ত উদ্বিগ্ন। আমি তখন আর মুক্ত নই। বৃটিশ কন্সাল হিসেবেও আমি কর্মরত নই।



এই স্বপ্ন আমাকে বেশ প্রভাবিত করে। আমি গভীর রাতে ঘুমুতে গেলেও খুব ভোরে উঠে পড়ি। অস্বস্তি দূর করার জন্যে নিচের তলায় নেমে যাই ম্যানিলা বেতারের ভোরের খবর শোনার জন্যে।



ম্যানিলা বেতার ধরার সাথে সাথেই আমি শুনলাম, আজ সকালে ম্যানিলায় বোমাবর্ষণ করা হয়েছে। কালবিলম্ব না করে আমি আমার দফতরের পথে রওয়ানা হই। দফতরে পৌঁছেই সকল গুরুত্বপূর্ণ দলীল-দস্তাবেজ ভস্মীভূত করতে শুরু করি। দলীল-দস্তাবেজ ভস্মীভূত করে নিশ্চিহ্ন করতে না করতেই জাপানীরা আমাকে বন্দী করে।



আমার আমেরিকান সহকর্মী অবশ্য এতটা ভাগ্যবান ছিলেন না। জাপানীরা তাঁকে বিছানা থেকেই গ্রেফতার করে। ফলে তিনি কোনো কিছু ভস্মীভূত করতে সক্ষম হননি।



স্বপ্ন দেখার চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যেই আমি জাপানী জেনারেলের কাছ থেকে একটা চিঠি পাই। তাতে লেখা ছিলো, যেহেতু অক্ষশক্তি ও মিত্রশক্তির মধ্যে যুদ্ধ শুরু হয়েছে তাই বৃটিশ কন্সাল হিসেবে আমার আর কোনো মর্যাদা নেই।



২/ স্বপ্ন-একটি মাত্র স্বপ্ন ইউরোপের ইতিহাসকে প্রভাবিত করেছিলো ব্যাপকভাবে। রোম সম্রাট জুলিয়াস সিজার তখনও জীবিত। তার একজন প্রভাবশালী সভাসদ সিসিরো এক রাতে স্বপ্ন দেখেন যে, সিজারের যোগ্য উত্তরাধিকারী মনোনয়নের জন্যে দেবতা জুপিটার সিনেটের তনয়দের প্যারেড পরিদর্শন করছেন। কিন্তু কাউকেই দেবতার মনঃপুত হলো না। এমন সময় প্যারেডের মাঠে দেখা গেলো এক অদ্ভুত তরুণকে। দেবতা জুপিটার তাকেই মনোনীত করলেন সিজারের উত্তরাধিকারী। ঘুম ভাঙার পরও সিসিরোর মনে স্বপ্নে দেখা তরুণের মুখচ্ছবি ভাসতে লাগল।



পরদিন সিসিরো দরবারে যাওয়ার পথে একদল তরুণের সাক্ষাৎ পেলেন। তারা শরীরচর্চা শেষে ফিরছিল। তাদের মধ্যেই তিনি দেখতে পেলেন স্বপ্নে দেখা তরুণকে। সিসিরো এর পূর্বে সে তরুণকে কখনো দেখেননি। খোঁজ নিয়ে তিনি জানতে পারলেন, তরুণের নাম অক্টাভিয়াস। তার বাবা-মার তেমন কোনো পরিচিতি রাজধানীতে নেই।



কয়েক বছর পরের কথা। সিজারের উত্তরাধিকারী মনোনয়ন নিয়ে বিরোধ সৃষ্টি হলো। সিসিরো তার স্বপ্নের বলে বলিয়ান হয়ে সর্বশক্তিতে অক্টাভিয়াসের পক্ষ সমর্থন করলেন। অক্টাভিয়াস আরোহণ করলেন রোমের সিংহাসনে। অক্টাভিয়াসই পরে সর্বশ্রেষ্ঠ রোম সম্রাট হিসেবে অগাস্টাস নামে ইতিহাসখ্যাত হন।



৩/ প্রখ্যাত বৃটিশ সেনাপতি জেনারেল গর্ডন তখন ভারতে। এক রাতে স্বপ্ন দেখেন যে, তিনি একটি খরস্রোতা নদী পার হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। নদী পার হওয়ার জন্যে একটি ধূসর রঙের নৌকায় কয়েকজন সৈন্যসহ উঠছেন। মাঝপথে যাওয়ার পর তাদের নৌকা ডুবতে শুরু করে। এ সময় তিনি তার পাশে যে সৈনিককে দাঁড়ানো দেখতে পান তাকে তিনি ইতিপূর্বে অবাধ্যতার জন্যে শাস্তি দিয়েছিলেন।



পর পর কয়েক রাত তিনি এ স্বপ্ন দেখেন। প্রতিবারেই নৌকা নিমজ্জিত হতে শুরু করার সময় তার পাশে সেই সৈনিককে দাঁড়ানো দেখতেন।



এর অল্প কিছুদিন পর জেনারেল গর্ডনকে একটি খরস্রোতা নদী অতিক্রম করতে হয়। তিনি নৌকায় উঠতে যাচ্ছিলেন, কিন্তু হঠাৎ লক্ষ করলেন যে, নৌকাটি স্বপ্নে দেখা নৌকার ন্যায় এবং এর রংও ধূসর। আরো ভাল করে লক্ষ্য করতেই তিনি দেখতে পেলেন যে, তার সঙ্গী সৈনিকদের মধ্যে এমন একজন রয়েছে, যাকে তিনি ইতিপূর্বে অবাধ্যতার জন্যে শাস্তি দিয়েছেন।



একজন জেনারেলের পক্ষে স্বপ্নের ওপর গুরুত্ব দান কিছুটা অস্বাভাবিক। কেউ কেউ একে বোকামিও মনে করতে পারেন। কিন্তু জেনারেল গর্ডন নৌকায় উঠলেন না। বরং সৈনিকদের নৌকা টেনে ডাঙ্গায় তোলার নির্দেশ দেন। নৌকা ডাঙ্গায় ওঠানোর পর তা ওল্টাতে বলেন। নৌকা ওল্টানোর পর দেখা যায় যে, নৌকার তলায় অসংখ্য ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ছিদ্র। নৌকার ওপর পাটাতনের জন্যে তা দেখা যাচ্ছিল না। নৌকা ওপরে তোলার এই অভাবিত ঘটনা দেখে সৈনিকটি জেনারেল গর্ডনের পায়ে লুটিয়ে পড়ে। সকল অপরাধ স্বীকার করে ক্ষমা প্রার্থনা করে সে।



৪/ ১৮১২ সাল। স্পেন্সার পার্সভেল তখন ইংল্যাণ্ডের প্রধানমন্ত্রী। ১০ মে তিনি লর্ড হ্যারোবির আতিথ্য গ্রহণ করেন। রাতের খাওয়া-দাওয়ার পর তিনি যথারীতি ঘুমুতে যান। নরম বিছানার পেলব স্পর্শে ক্লান্ত প্রধানমন্ত্রীর দু'চোখ ঘুমে জড়িয়ে আসে। কিন্তু অল্পক্ষণের মধ্যেই একটি বিশ্রি স্বপ্ন তার চোখের ঘুম কেড়ে নেয়। সারারাত তিনি আর ঘুমুতে পারেননি। পর দিন সকালে নাস্তার টেবিলে তিনি লর্ড হ্যারোবির নিকট রাতের স্বপ্নের কথা বর্ণনা করলেন। তিনি বলেন, ‘বালিশে মাথা লাগাতে না লাগাতেই আমি স্বপ্ন দেখলাম, হাউজ অব কমন্সের লবির মধ্যে দিয়ে আমি হেঁটে যাচ্ছি। এমন সময় এক ব্যক্তি হঠাৎ আমার পথরোধ করে দাঁড়াল। তার কোটের বোতামগুলো ছিল পিতলের। কালবিলম্ব না করে সে আমাকে গুলি করল। মুহূর্ত মাত্র। তারপর আমার প্রাণহীন দেহ মাটিতে লুটিয়ে পড়ল।



১১ মে বিকেলে পার্লামেন্টের অধিবেশন শুরু করার কথা। লর্ড হ্যারোবি তার বন্ধুকে পার্লামেন্টের অধিবেশনে যোগদান থেকে বিরত রাখার জন্যে চেষ্টা করলেন। কিন্তু স্পেন্সার পার্সভেল শুধুমাত্র একটি স্বপ্ন দ্বারা বিচলিত হতে অস্বীকৃতি জানালেন। লর্ড হ্যারোবির প্রচেষ্টা তাই ফলপ্রসূ হলো না। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় যে, স্বপ্ন তিনি যেভাবে তাঁর মৃত্যু দেখেছিলেন, একইভাবে তিনি নিহত হন। প্রধানমন্ত্রীর হত্যাকারী বেলিংহামের পরনেও ছিল সবুজ জ্যাকেট আর তার বোতামগুলোও ছিল পিতলের।



৫/ উনিশ শো বাহাত্তরের শেষ নাগাদ, সম্ভবত ডিসেম্বর মাস। প্রখ্যাত চিত্র শিল্পী রফিকুন্নবী তখন আর্ট কলেজের শিক্ষক। এক রাতে তিনি স্বপ্ন দেখলেন পোস্ট অফিসের পিওন তাঁকে একটা চিঠি দিয়ে গেছে। চিঠিতে লেখা আছে তাঁকে কোনো একটি দেশ স্কলারশীপ দিয়েছে উচ্চতর পড়াশোনার জন্যে। শিগগিরই যেতে হবে ওখানে। চিঠিটা পেয়ে অসম্ভব আনন্দ লাগছিল রফিকুন্নবীর। পরক্ষণেই তার ঘুমটা ভেঙে গেল। জেগে উঠে তাঁর মনে হলো একটা সুন্দর জগৎ মাটি হয়ে গেছে একটু আগেই।



পরদিন যথারীতি কর্মস্থল আর্ট কলেজে গেলেন রফিকুন্নবী। সকাল ১১ টায় ক্লাস নিচ্ছিলেন, এমন সময় প্রিন্সিপাল (শফিক হোসেইন) ডেকে পাঠালেন তাঁকে। রফিকুন্নবী ভাবলেন হয়ত ক্লাস সম্পর্কিত কোনো কথাবার্তা আছে। কিন্তু প্রিন্সিপালের কক্ষে গিয়ে যা শুনলেন তাতে অবাক হয়ে গেলেন তিনি। ভেতরে একটা উত্তেজনাও বোধ করছিলেন। প্রিন্সিপাল তাঁকে জানালেন যে, গ্রীক সরকারের একটি বৃত্তি। কলেজ থেকে তাঁর নাম পাঠানো হবে বলে ঠিক করা হয়েছে। যাওয়ার ইচ্ছা থাকলে আজই কিছু কাগজপত্র পূরণ করে পাঠিয়ে দিতে হবে।



রফিকুন্নবী সে সময় মনে মনে প্যারিস অথবা লণ্ডনে যাওয়ার আকাঙ্ক্ষা পোষণ করছিলেন। কিন্তু স্বপ্নটি এত তাড়াতাড়ি ফলে যাচ্ছে দেখে ভাবলেন কপালে গ্রীসই লেখা আছে হয়ত। দ্বিরুক্তি না করে সব কাগজপত্র পূরণ করে পাঠিয়ে দিলেন। মাস খানেক পরই চিঠি পেলেন গ্রীসের স্কলারশীপটা তাঁর হয়ে গেছে। পরের অক্টোবরেই রফিকুন্নবী গ্রীসে গিয়ে হাজির হয়েছিলেন টানা তিন বছরের জন্যে।



৬/ আনন্দময় স্বপ্ন দেখলে মনে চমৎকার একটা অনুভূতি জাগে। তেমনি খারাপ স্বপ্ন দেখলেও আমার শিহরিত হই, ভয় পাই। একটা অজানা আশঙ্কার ছায়া যেন থেকে যায় কয়েক ঘণ্টা বা কয়েক দিন। তেমনি একটা স্বপ্ন দেখছিলেন কথা শিল্পী জুবাইদা গুলশান আরা।



সে সময় তিনি ডেনমার্কে ছিলেন। একদিন স্বপ্ন দেখলেন আকাশে একটা প্লেনে আগুন ধরে গেছে। এবং শেষ পর্যন্ত পুরে ধ্বংস হয়ে গেছে প্লেনটি। তারপর এই স্বপ্নের মধ্যেই দেখলেন আগুন লেগে ধ্বংস হয়ে যাওয়া বিমানের পাইলটকে কাঠের কফিনে করে কবর দেয়া হলো। ঘুম ভাঙার পর ভীষণ ভয় পেয়ে গেলেন জুবাইদা গুলশান আরা। তখন তাঁর এক ঘনিষ্ট আত্মীয় বিমানের সাথে সংশ্লিষ্ট চাকুরি করেন। তিনি তাদের খবরাখবর নিয়ে সতর্ক থাকতে বললেন।



এর ঠিক পরের মাসেই জুবাইদা গুলশান আরার সেই আত্মীয় এয়ার কমোডর বাশারের মর্মান্তিক দুর্ঘটনাটি ঘটে। তিনি তখন দেশে ফিরে এসেছেন। টেলিভিশনে যখন বাশারের মৃত্যু পরবর্তী ঘটনা দেখছিলেন তখন স্তম্ভিত হয়ে গেলেন জুবাইদা গুলশান আরা। ঠিক এ ঘটানাটাই স্বপ্নে ঘটতে দেখেছিলেন তিনি।



(সাপ্তাহিক বিচিত্রায় ১৯৭৫ সালে প্রকাশিত)

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ২৮ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৪:৪১

ইলুসন বলেছেন: শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.