নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার নাম- রাজীব নূর খান। ভালো লাগে পড়তে- লিখতে আর বুদ্ধিমান লোকদের সাথে আড্ডা দিতে। কোনো কুসংস্কারে আমার বিশ্বাস নেই। নিজের দেশটাকে অত্যাধিক ভালোবাসি। সৎ ও পরিশ্রমী মানুষদের শ্রদ্ধা করি।

রাজীব নুর

আমি একজন ভাল মানুষ বলেই নিজেকে দাবী করি। কারো দ্বিমত থাকলে সেটা তার সমস্যা।

রাজীব নুর › বিস্তারিত পোস্টঃ

রবীন্দ্রনাথের কোনো বিকল্প নাই-৯৭

২৮ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ৯:৪২

আমার এক সময় ধারনা ছিল রবীন্দ্রনাথ চা খেতেন না। বিশেষ করে রাস্তার পাশের কোনো দোকান থেকে। কখনও খেলে- শখ করে খেতেন। চার পাশের মানুষদের খেতে দেখে হয়তো একটু শখ করে খেলেন, জিনিসটা কেমন! ঢাকা শহরের সব রাস্তায় রাস্তায় অসংখ্য চায়ের দোকান আছে। একদিন দুপুরবেলা হঠাত আকাশ কালো করে ঝুম বৃষ্টি নামল। আমি ভিজতে ভিজতে রাস্তার পাশের এক দোকান থেকে এক কাপ চা খেলাম। খুব মুগ্ধ হলাম। আশ্চর্য ব্যাপার সাথে সাথে আমার রবীন্দ্রনাথের কথা মনে পড়ল। রবীন্দ্রনাথ কি কখনও বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে রাস্তার পাশের দোকান থেকে চা খেয়েছেন? খেলেও আমার মতো মুগ্ধ কী কখনও হয়েছেন !

আমাদের দেশে রবীন্দ্রনাথ সড়ক আছে, যশোর জেলায়। যশোরের মনিহার সিনেমা হল থেকে চৌরাস্তার মোড় পর্যন্ত রাস্তাটির নামকরণ করা হয়েছে রবীন্দ্রনাথ সড়ক। রবীন্দ্রনাথের নামে নামাঙ্কিত আরেকটা জায়গার নাম- ধানমন্ডির রবীন্দ্র সরেবার। সেখানে একটা মুক্তমঞ্চও আছে, যেখানে প্রায়ই নানা অনুষ্ঠান হয়।রবীন্দ্র সরোবর ভারতেও একটা আছে। কলকাতার সবচেয়ে বড়ো হ্রদটারই নামকরণ করা হয়েছে কবিগুরুর নামে।কলকাতায় রবীন্দ্রনাথের নামে নামকরণ করা হয়েছে আরো বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ স্থানের; হাওড়া- কলকাতা শহর দু’টির সংযোগ সেতুর নাম রবীন্দ্র সেতু। ওখানকার একটা বিখ্যাত সিনেমা হলের ভবনের নাম দেয়া হয়েছে রবীন্দ্রসদন, ওটা এখন ওখানকার তথ্য ও সংস্কৃতি বিভাগের অফিস। পশ্চিমবঙ্গের সর্বোচ্চ সাহিত্য পুরস্কারেরও নামকরণ করা হয়েছে কবিগুরুর নামে- রবীন্দ্র পুরস্কার।



মানুষ, প্রকৃতি, ঈশ্বর- এই তিনে মিলে একাত্ম। জীবন-মৃত্যু যেন এক অদৃশ্য সুতোয় গাঁথা বাস্তবতা। তাই মৃত্যুর জন্য শোক অর্থহীন। ঈর্ষা মানব চরিত্রের এমন এক ভয়ংকর উপকরণ, যার প্রভাব থেকে মুক্ত থাকা কঠিন। হোন না তিনি প্রতিভাবান কবি ও শিল্পী বা দার্শনিক। রবীন্দ্রনাথের অন্তরঙ্গমহল সেই কালো ঈর্ষার শিকার। গীতাঞ্জলির মানুষ-ঈশ্বর-ভালোবাসা মূল্যহীন হয়ে দাঁড়ায়। কবির সবচেয়ে কাছের মানুষ আর্নেস্ট রিজ ৯ জানুয়ারি (১৯১৪) রবীন্দ্রনাথকে লেখেন : A rather sharp wedge has been driven into our close circle, since you left us, but we try to be stoical. heaven be good to you. দিন কয় পর স্টার্জ মুর কথাটা আরো স্পষ্ট করে লেখেন : Your having won the Nobel prize when Hardy had been the official candidate of the Royal Society of Literature ... has made you a certain number of enemies whose ill will is not solely due to the fickleness of their minds, আরেক ঘনিষ্ঠজন কবি রবার্ট ব্রিজেস রবীন্দ্রনাথকে অভিনন্দন জানান সাত মাস পর।



এডওয়ার্ড থমসন হিসাব করেছেন তার কবিতার লাইনের সংখ্যা দেড় লাখেরও বেশি। গদ্যের আয়তন হবে তার দ্বিগুণ। কবি হিসেবে তিনি শেক্সপিয়র, গ্যেটের সমপর্যায়ের। ছোটগল্প লেখক হিসেবে রবীন্দ্রনাথ, মোপাসা, চেখভ এক কাতারে দাঁড়িয়ে আছেন। রবীন্দ্রনাথ যে মহাকবি, বিশ্বকবি এ নিয়ে কোনো বিতর্ক নেই।রবীন্দ্রনাথের বহু রচনা বিভিন্ন ভাষায় অনুবাদ হওয়া সত্ত্বেও রবীন্দ্রনাথ যে কত বড় কবি তা পৃথিবী এখনও জানে না। পৃথিবী বলতে আমি সাহিত্য অনুরাগী শিক্ষিতজনের কথাই বলছি।মার্ক্সবাদীরা রবীন্দ্রনাথকে তার ভাববাদী আচরণটুকু বাদ দিয়েই রসাস্বাদন করবেন এবং মানব প্রগতির পক্ষে কাজে লাগাবেন। লেনিন যে কারণে তলস্তয়কে মহান বলে বর্ণনা করে রুশ বিপ্লবের দর্পণ বলেছিলেন (যদিও তলস্তয় আগাগোড়া ভাববাদী), মার্ক্সস যেভাবে বুর্জোয়া লেখক বালজাকের লেখার ভূয়সী প্রশংসা করেছেন, সেই একইভাবে রবীন্দ্রনাথকেও আমরা সমাজপ্রগতি ও মুক্তির পক্ষের শক্তি বলে বিবেচনা করতে পারি।



'বলাকা' রবীন্দ্রকাব্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ রচনা। কিন্তু তারপরই পলাতকা থেকে কবি নেমে এসেছেন ধুলামাটি মাখা পৃথিবীতে। কবিতায়, ছোটগল্পে স্থান পেয়েছে এই সংসারের সাধারণ মানুষ, গরিব ও মধ্যবিত্ত, ধর্মীয় ও সামাজিক বিধি ব্যবস্থায় নির্যাতিত নারী। রবীন্দ্রনাথের শ্রেষ্ঠ উপন্যাস গোরা’য় দেখি গোঁড়া হিন্দুত্ববাদে বিশ্বাসী গোরা চরিত্রের বিশ্ব মানবতায় উত্তরণ।রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর মৃত্যুর অল্প আগে সভ্যতার সঙ্কট প্রবন্ধে যে রাজনৈতিক দলিল আমাদের জন্য রেখে গেছেন তার অপরিসীম মূল্য এখনও রয়েছে। কবি এই দলিলে পাশ্চাত্ত্যের সভ্যতার সঙ্কট তুলে ধরেছেন।সর্বোপরি মানুষের মহাকবি মানুষের প্রতিই আস্থা ঘোষণা করেছেন, ‘আর একদিন অপরাজিত মানুষ নিজের জয়যাত্রার অভিযানে সকল বাধা অতিক্রম করে অগ্রসর হবে তার মহত্ মর্যাদা ফিরে পাবার পথে। মনুষ্যত্বের অন্তহীন প্রতিকারহীন পরাভবকে চরম বলে বিশ্বাস করাকে আমি অপরাধ মনে করি।’ একবিংশ শতাব্দীর মানুষ আমরাই যেন হতে পারি, সেই অপরাজিত মানুষ, হতে পারি রবীন্দ্রনাথের উত্তরাধিকার, যা তিনি আমাদের জন্যই রেখে গেছেন।



১৯৪১ সালে ‘সাহিত্যের মূল্য’-এ রবীন্দ্রনাথ বলেন: ‘জীবন মহাশিল্পী। সে যুগে যুগে দেশে দেশান্তরে মানুষকে নানা বৈচিত্র্যে মূর্তিমান করে তুলছে। লক্ষ লক্ষ মানুষের চেহারা আজ বিস্মৃতির অন্ধকারে অদৃশ্য, তবুও বহুশত আছে যা প্রত্যক্ষ, ইতিহাসে যা উজ্জ্বল। জীবনের এই সৃষ্টিকার্য যদি সাহিত্যে যথোচিত নৈপুণ্যের সঙ্গে আশ্রয় লাভ করতে পারে তবেই তা অক্ষয় হয়ে থাকে। সেইরকম সাহিত্য ধন্য–ধন্য ডন কুইক্সট্ ধন্য রবিনসন ক্রুসো।



১৩১৯ সালে পথের সঞ্চয়-এ ‘কবি ইয়েটস্’ প্রবন্ধে রবীন্দ্রনাথ বলেন, ‘ইংলন্ডের বর্তমানকালের কবিদের কাব্য যখন পড়িয়া দেখি তখন ইহাদের অনেককেই আমার মনে হয়, ইহারা বিশ্বজগতের কবি নহেন। ইহারা সাহিত্যজগতের কবি।…কবিরা যেন ওস্তাদ হইয়া উঠিয়াছে, অর্থাৎ প্রাণ হইতে গান করিবার প্রয়োজনবোধই তাহাদের চলিয়া গিয়াছে, এখন কেবল গান হইতেই গানের উৎপত্তি চলিতেছে। যখন ব্যথা হইতে কথা আসে না, কথা হইতেই কথা আসে, তখন কথার কারুকার্য ক্রমশ জটিল ও নিপুণতর হইয়া উঠিতে থাকে। আবেগ তখন প্রত্যক্ষ ও গভীরভাবে হৃদয়ের সামগ্রী না হওয়াতে সে সরল হয় না; সে আপনাকে আপনি বিশ্বাস করে না বলিয়াই বলপূর্বক অতিশয়ের দিকে ছুটিতে থাকে; নবীনতা তাহার পক্ষে সহজ নহে বলিয়াই আপনার অপূর্বতা প্রমাণের জন্য কেবলই তাহাকে অদ্ভুতের সন্ধানে ফিরিতে হয়।



‘নবযুগের কাব্য’-এ রবীন্দ্রনাথ বলেন, ‘বালক-বয়সেই ইংরেজি সাহিত্যের আঙিনায় যাওয়া-আসা শুরু করেছি। ভাষার আভিধানিক বেড়াটা যেমনি পার হয়েছি অমনি ওখানকার ফলের বাগান থেকে ফল পাড়বার আনন্দে বেলা কেটেছে। যেটুকু বাধা পেয়েছি তাতে ঠেকিয়ে রাখতে পারে নি বরঞ্চ ঔৎসুক্য বাড়িয়েছে। ইংরেজি সাহিত্যের পথে এই সর্বজনীনতার আহ্বান পেয়েছিলুম একে সমতলতা বললে অসংগত হবে। এর মধ্যে বাঁকচোর উঁচুনিচু যথেষ্ট ছিল। লেখকদের মধ্যে ব্যক্তিগত বৈষম্যের অভাব ছিল না। কিন্তু রূঢ়ভাবে কোনো দেউড়ি থেকে কোনো দ্বারী ঠেকিয়ে রাখেনি।



রবীন্দ্রনাথ সাহিত্যের আলোচনায় বলেন, ‘বঙ্কিমবাবুর নভেলগুলি ঠিক নভেল যত বড়ো হওয়া উচিত তার আদর্শ। ভাগ্যে তিনি ইংরাজি নভেলিস্টের অনুকরণে বাংলায় বৃহদায়তনের দস্তুর বেঁধে দেন নি, তা হলে বড়ো অসহ্য হয়ে উঠত, বিশেষত সমালোচকের পক্ষে। এক-একটা ইংরাজি নভেলে এত অতিরিক্ত বেশি কথা, বেশি ঘটনা, বেশি লোক যে, আমার মনে হয় এটা একটা সাহিত্যের বর্বরতা। সমস্ত রাত্রি ধরে যাত্রাগান করার মতো। প্রাচীনকালেই ওটা শোভা পেত। তখন ছাপাখানা এবং প্রকাশক সম্প্রদায় ছিল না, তখন একখানা বই নিয়ে বহুকাল জাওর কাটবার সময় ছিল।’’



রবীন্দ্রনাথ তাঁর ‘আত্মপরিচয়ে’ বলছেন, ‘রুচির প্রমাণ তর্কে হতে পারে না। রুচির প্রমাণ কালে। কালের ধৈর্য অসীম, রুচিকেও তার অনুকরণ করতে হয়।’ তাঁর বয়স যখন ত্রিশকে ছুঁইছুঁই করছে তখন তিনি চাচ্ছেন সরল সুন্দর মধুর উদার লেখা। তলস্তয়ের ‘আনা কারেনিনা’র মতো Sickly বই পড়ে কী সুখ তিনি বুঝতে পারেন না। ত্রিশ পেরিয়ে তিনি বলছেন, সমগ্র মানুষ যেখানে মুক্তিলাভ করেছে সেই সুবৃহৎ অনাবরণের মধ্যে অশ্লীলতা নেই। শেক্সপীয়র, রামায়ণ বা মহাভারত অশ্লীল নয়। কিন্তু এমিল জোলা ও ভারতচন্দ্র অশ্লীল–কেননা সেখানে মানুষ কেবল আংশিকভাবে অনাবৃত। দু-এক বছর পরে তিনি বলছেন, শেক্সপীয়রের ‘ওথেলো’ দ্বিতীয়বার পড়তে তাঁর কিছুতেই মন উঠে না। তার কারণ, ওথেলোর মধ্যে যেটুকু করুণা আছে তা তাঁকে আকর্ষণ করে, কিন্তু নাটকের শেষ অংশের বর্বরতা ও নিষ্ঠুরতা তাঁকে বিমুখ করে।



( ( আমি খুব দুঃখিত, রবীন্দ্রনাথের কোনো বিকল্প নাই-৫১ পর্ব লিখে শেষ ঘোষনা করেছিলাম । পরে দেখি আরো কিছু বিষয় লেখার বাকি আছে, তাই আবার লিখতে হলো । এর আগে একবার ১৮ পর্ব লিখে শেষ পর্ব ঘোষনা করেছিলাম । আরও কিছু ব্যাপার না লিখলেই নয়, তাই আবার লিখতে হলো । কিছু ঘটনা না লিখলে এই ধারাবাহিক লেখাটি অসম্পূর্ণ থেকে যাবে । আর অসম্পূর্ণতা আমার ভালো লাগে না । একশো পর্বে লেখাটি শেষ হবে। আর মাত্র তিন পর্ব বাকি।



সবাইকে ধন্যবাদ । ভালো থাকুন । )

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২৮ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ৯:৪৭

পরিবেশ বন্ধু বলেছেন: কবির ঐতিহাসিক নিদর্শন সমূহ অবশ্যই মানুষের জন্য তীর্থ স্থান

২| ২৮ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ৯:৪৭

খেয়া ঘাট বলেছেন: চমৎকার লিখেছেন। মুগ্ধ হয়ে পড়লাম।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.