নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার নাম- রাজীব নূর খান। ভালো লাগে পড়তে- লিখতে আর বুদ্ধিমান লোকদের সাথে আড্ডা দিতে। কোনো কুসংস্কারে আমার বিশ্বাস নেই। নিজের দেশটাকে অত্যাধিক ভালোবাসি। সৎ ও পরিশ্রমী মানুষদের শ্রদ্ধা করি।

রাজীব নুর

আমি একজন ভাল মানুষ বলেই নিজেকে দাবী করি। কারো দ্বিমত থাকলে সেটা তার সমস্যা।

রাজীব নুর › বিস্তারিত পোস্টঃ

ঈদের ছুটিতে ঘুরে আসুন- সুসং দুর্গাপু

০৬ ই অক্টোবর, ২০১৩ রাত ১১:৩২

সুসং দুর্গাপুর। সারিবদ্ধ সবুজ পাহাড়, আঁকাবাঁকা নদী-ছড়া, সাদা মাটি দিগন্ত বিস্তৃত বালুচর বেষ্টিত এক বৈচিত্র্যময় জনপদ। সোমেশ্বরীর কূল ঘেঁষে দাড়িয়ে এ জনপদ। যার আছে হাজার বছরের সমৃদ্ধ ইতিহাস ঐতিহ্য।৬২৯ খ্রিস্টাব্দে হিন্দুরাজ শশাংকের আমন্ত্রণে চৈনিক পরিব্রাজক হিউ এন সাঙ যখন কামরূপ অঞ্চলে আসেন, তখন পর্যন্ত নারায়ণ বংশীয় ব্রাহ্মণ কুমার ভাস্কর বর্মণ কর্তৃক কামরূপ রাজ্য পরিচালিত ছিল।বৃটিশ ও জমিদারী প্রথা উচ্ছেদের দাবীতে বৃহত্তর উত্তর ময়মনসিংহের কৃষকগণ ১৯৩৬ হতে ১৯৪৯ সাল পর্যন্ত সংগ্রাম আন্দোলন চালিয়ে যায়। এটি কৃষক বিদ্রোহ ও টংক আন্দোলন নামে পরিচিত। কিংবদন্তি আছে যে, ১৫ শতকের শেষ দিকে সুসং দুর্গাপুরের রাজা জানকি নাথ বিয়ে করেন কমলা দেবী নামে এক সুন্দরী মহিলাকে। রাণী কমলা দেবী যেমনি রূপেগুণে সুন্দরী ছিলেন তেমনি ছিলেন পরম ধার্মিক।



রাজধানী ঢাকা থেকে সড়ক পথে ১৫৯ কিলোমিটার দূরে ময়মনসিংহ ও কিশোরগঞ্জ জেলা লাগোয়া জেলা নেত্রকোনা। এর উত্তরে মেঘালয়ের গারো পাহাড়, দক্ষিণে কিশোরগঞ্জ জেলা, পূর্বে সুনামগঞ্জ জেলা এবং পশ্চিমে ময়মনসিংহ জেলা।কথিত আছে, গহিন জঙ্গল আর জীব-জানোয়ারের সঙ্গে মিতালি গড়ে একসময় গারো আদিবাসীরা বসবাস শুরু করেছিল বলেই এর নাম হয় গারো পাহাড়। কংস, সোমেশ্বরী, মগরা, ধলা প্রভৃতি এ জেলার প্রধান নদী। দুর্গাপুরের বিরিসিরি ইউনিয়নে অবস্থিত আদিবাসী সাংস্কৃতিক একাডেমি।ছোট্ট একটি জায়গার পরতে পরতে বেড়ানোর মতো অনেক জায়গা রয়েছে দুর্গাপুরে।ব্রিটিশ আমলে ইংরেজ খ্রিস্টান মিশনারি তৎপরতার গোড়াপত্তন হয় এ বিরিশিরি ও রাণীখং এলাকায়। জিয়াউর রহমানের আমলে বিরিশিরিতে প্রতিষ্ঠিত হয় বাংলাদেশের উপজাতীয় কালচারাল একাডেমি।



আদিবাসী সাংস্কৃতিক একাডেমি থেকে কিছুটা সামনে শোমেশ্বরী নদী পার হয়ে কিছু দূর এগুলেই চোখে পড়বে এ স্মৃতিসৌধটি। বর্ষা মৌসুমে শোমেশ্বরী জলে পূর্ণ থাকলেও শীত মৌসুমে নদীটি পায়ে হেঁটে পার হওয়া যায়। প্রতিবছর ৩১ ডিসেম্বর কমরেড মনি সিংহের মৃত্যু দিবসে এখানে তিন দিন ব্যাপী মনি মেলা নামে লোকজ মেলা বসে।দুর্গাপুরের পাশ দিয়েই বয়ে গেছে অসামান্য সুন্দর সোমেশ্বরী নদী। ভারতের মেঘালয় রাজ্যের গারো পাহাড় থেকে সৃষ্ট এ নদী মেঘালয়ের বাঘমারা বাজার হয়ে রানিখং পাহাড়ের পাশ দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। জনশ্রুতি আছে সোমেশ্বর পাঠক নামে এক সিদ্ধপুরুষ এ অঞ্চলের দখল নেওয়ার পর থেকে নদীটি সোমেশ্বরী নাম লাভ করে। একেক ঋতুতে এ নদীর সৌন্দর্য একেক রকম।



দুর্গাপুর উপজেলায় অবস্থিত সুসং দুর্গাপুরের জমিদার বাড়ি। সুসং দুর্গাপুরের সোমেশ্বর পঠকের বংশধররা এ বাড়িটি তৈরি করেছিলেন। বাংলা ১৩০৪ সালের ভয়াবহ ভূমিকম্পে জমিদার বাড়িটি একেবারে ধ্বংস হয়ে গেলে তাদের বংশধররা এটি পুনর্নির্মাণ করেন।জেলার মোহনগঞ্জ, মদন, খালিয়াজুড়ি, কলমাকান্দায় কম বেশি ৫৬ টি হাওর ও বিল আছে। শুস্ক মৌসুমে হাওরে চাষাবাদ হলেও বর্ষা মৌসুমে পানিতে পরিপূর্ণ থাকে। তখন এসব এলাকার একমাত্র বাহন হয় নৌকা। দুর্গাপুর-বিরিশিরি এলাকার এখন প্রধান দু:খ এখানকার সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা।গারো পাহাড়ের কোল ঘেঁষে রূপকথার মতো একটি এলাকা সুসং দুর্গাপুর। চারদিকে যেন সবুজের সমারোহ। নেত্রকোণার এই এলাকাটি খনিজ সম্পদে সমৃদ্ধ। বাংলাদেশে এখানেই শুধু সাদামাটি পাওয়া যায়।



বিরিসিরি থেকে শোমেশ্বরী নদী পার হয়ে রিকশায় রানীখং গ্রাম। এখানে আছে সাধু যোসেফের ধর্মপল্লি। রানীখং গ্রামের এ ক্যাথলিক গির্জাটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ১৯১২ সালে।রাশমণি স্মৃতিসৌধ থেকে প্রায় দেড় কিলোমিটার দূরে বিজয়পুরে আছে চীনা মাটির পাহাড়। এখান থেকে চীনা মাটি সংগ্রহের ফলে পাহাড়ের গায়ে সৃষ্টি হয়েছে ছোট ছোট পুকুরের মতো গভীর জলাধার। পাহাড়ের গায়ে স্বচ্ছ জলাধারগুলো দেখতে চমৎকার।ময়মনসিংহ থেকে বিরিশিরি পর্যন্ত সড়ক সংস্কার হলেই দুর্গাপুর পর্যটন শিল্প দেশে কোটি কোটি টাকার যোগান দিতে পারবে।



দুর্গাপুর মানে পিঠের ঝুলিতে সন্তান এবং মাথায় জ্বালানী কাঠের বোঝা কিম্বা কলসি কাঁখে নিয়ে কর্মঠ গারো নারীর বাজারে আসা। টিলার উপরে মিশন হাসপাতাল।পাহাড়ী নদী সোমেশ্বরীর দক্ষিণ পাশের ছোট্ট একটি এলাকা বিরিশিরি। নদীর উত্তরে দুর্গাপুর সদর।আদিবাসীদের এ বৈচিত্র্যময় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে সংরক্ষণ, উন্নয়ন এবং চর্চার লক্ষ্য নিয়েই ১৯৭৭ সালে বিরিশিরিতে সরকারী উদ্যোগে গড়ে তোলা হয় উপজাতীয় কালাচারাল একাডেমী।



দুর্গাপুরে থাকার জন্য সবচেয়ে ভালো ব্যবস্থা হলো ইয়ূথ মেন খৃষ্টান অ্যাসোসিয়েশন বা ওয়াইএমসিএ-এর রেস্ট হাউস।এছাড়া দুর্গাপুরে থাকার জন্য সাধারণ মানের কিছু হোটেল আছে। ময়মনসিংহ থেকে ৫২ কিলোমিটার দূরের এ জনপদে আজও গড়ে ওঠেনি উন্নত সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা। ফলে রাজধানী ঢাকা ও ময়মনসিংহ সদর থেকে কার্যত বিচ্ছিন্ন এ অপরূপ সৌন্দর্য ভূমিতে পৌছানো রীতিমতো দুরূহ কাজ।জারিয়া-ঝাঞ্জাইলে কংস নদীর উপর বেইলি ব্রিজ থাকলেও ব্রিজটি মূলত ওয়ানওয়ে। একটি ট্রাক উঠার পর পথচারীদের জন্য নিরাপদ জায়গা ওই ব্রিজটিতে নেই।



দুর্গাপুরের প্রবেশপথ কংশ তীরের ঝাঞ্জাইল বাজার থেকে দুর্গাপুর পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার রাস্তায় ৪ টি ব্রিজ অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ।সোমেশ্বরীর কূল ঘেঁষে এ জনপদের ছোট্ট একটি ইউনিয়নের নাম বিরিশিরি, যেখানে সারিবদ্ধ সবুজ পাহাড় আঁকাবাঁকা নদী-ছড়া বেষ্টিত এক বৈচিত্র্যময় জনপদ। উত্তরের হিমেল হাওয়া এবং সোমেশ্বরীর স্বচ্ছ জলধারা নিমিষেই দূর করে দেবে আপনার ভ্রমণ পথের ক্লান্তি ।আপনি দেখতে পাবেন অনেক কিছুই যা আপনার চোখ জুড়িয়ে দেবে, আপনাকে করবে ইতিহাস সমৃদ্ধ ।

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ০৬ ই অক্টোবর, ২০১৩ রাত ১১:৪৫

নোঙ্গর ছেঁড়া বলেছেন: দারুন লেখা! আরো ছবি পেলে ভালো হতো। +++

০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৯ বিকাল ৫:৪৯

রাজীব নুর বলেছেন: ধন্যবাদ। ভালো থাকুন।

২| ০৭ ই অক্টোবর, ২০১৩ রাত ১২:২৪

সদয় খান বলেছেন: পড়ে ভাল লাগলো । দেখি যাওয়া যায় কিনা ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.