নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার নাম- রাজীব নূর খান। ভালো লাগে পড়তে- লিখতে আর বুদ্ধিমান লোকদের সাথে আড্ডা দিতে। কোনো কুসংস্কারে আমার বিশ্বাস নেই। নিজের দেশটাকে অত্যাধিক ভালোবাসি। সৎ ও পরিশ্রমী মানুষদের শ্রদ্ধা করি।

রাজীব নুর

আমি একজন ভাল মানুষ বলেই নিজেকে দাবী করি। কারো দ্বিমত থাকলে সেটা তার সমস্যা।

রাজীব নুর › বিস্তারিত পোস্টঃ

জলের সন্তরন- (এক)

২৪ শে অক্টোবর, ২০১৩ রাত ১:১৩

অনেক গুলো সাপ মিজানের শরীরের সাথে প্যাঁচিয়ে আছে। কুচকুচে কালো বিচ্ছিরি রকমের সাপ গুলো। মিজান ছোটবেলা থেকেই সাপ খুব ভয় পায়। একবার মৌচাক মার্কেটের সামনে একদল মহিলা সাপুড়েরা মিজানের সামনে এসেছিল। মিজান রিকশা করে মগবাজার যাচ্ছিল। জ্যামের কারনে রিকশা থেমে ছিল। সাপুড়েদের দেখে মিজান লাফ দিয়ে রিকশা থেকে নেমে এক দৌড়ে মগবাজার চলে গিয়েছিল।

গলার কাছে প্যাঁচিয়ে থাকা একটা সাপ মিজানকে বলল- স্যার, আপনি ভয় পাবেন না। আপনার কোনো ক্ষতি আমরা করবো না। আমাদের কে বলা হয়েছে- আপনার গায়ে প্যাঁচিয়ে বসে থাকতে। হচ্ছে কি ? সাপ কি করে কথা বলছে? এটা কি স্বপ্ন? মিজান স্বপ্ন দেখছে? মিজান চেষ্টা করছে- স্বপ্ন থেকে বের হতে। পাশ ফিরতে গিয়েই মিজানের ঘুম ভাঙ্গল। ঘুম ভাঙ্গার পর মিজান নিজের উপর নিজে খুব রাগ করলো। এইরকম ভিত্তিহীন স্বপ্ন দেখার মানে কি? অবশ্য ঘুমের মধ্যে মানুষ তো ইচ্ছা করে স্বপ্ন দেখে না, কে জেনো দেখায়।



মিজান দাঁত ব্রাশ শেষ করে, অনেক সময় নিয়ে গোছল করলো। এখন তার আগুন গরম এক কাপ চা খেতে ইচ্ছা করছে। কিন্তু এ বাসায় চা বানানো হয় না। বছরে দুই তিন বানানো হয়। বাসার সবাই এমন ভাব করবে, তারা খুব ব্যস্ত। তবে ভাবীকে খুব করে অনুরোধ করলে চা বানিয়ে দিবেন। মাকে বললে, মা বলবেন, বাবা যা দোকান থেকে কিনে নিয়ে আয়- আমিও এক কাপ খাই। চায়ের ব্যাপার টা খুব অদ্ভুত, একবার মাথার ভেতর ঢুকে গেলে- চা না খাওয়া পর্যন্ত শান্তি নাই।



বাসা থেকে বের হতেই তমা ভাবীর সাথে দেখা। ভাবী পরীকে ডিম খাওয়াচ্ছেন। এই ডিম খাওয়ার দৃশ্য খুবই বিচ্ছিরি। তমা ভাবী মাসীকে বললেন- পরীকে মাম খাইয়ে দাও। ( মাসী এই বাসায় পাঁচ বছর ধরে কাজ করছে, মাসীর নাম মরিয়ন কিন্তু সবাই তাকে মাসী বলেই ডাকে।) ভাবী কঠিন গলায় বললেন, মিজান আজ তুমি হিমির সাথে অবশ্যই দেখা করতে যাবে। মিজান বলল, আচ্ছা। হিমি আমাকে কাল সন্ধ্যায় বেশ কয়েকবার ফোন করেছে, আমি তোমাকে বলতে ভুলে গিয়েছি। মিজান চলে যাচ্ছিল, তমা ভাবী বললেন- আজ আমি একটা নতুন জামা পড়েছি- তুমি কিছু বললে না যে ! মিজান বলল, ভাবী আপনাকে অনেক সুন্দর লাগছে।



মিজান হোটেলে গিয়ে আরাম করে নাস্তা খেল। নাস্তা খাওয়ার পর এক কাপ চা। এখন সে আরেক কাপ চা খাবে, সাথে সিগারেট। প্রথম চা-টার সাথে সিগারেট খায়নি। হোটেল থেকে বের হয়ে আর বাসায় ফিরতে ইচ্ছা করল না মিজানের। বেকার হওয়ার এই এক সুবিধা। কোনো কিছুতেই কখনও তাড়া থাকে না। সে এখন ইচ্ছা করলেই টঙ্গী চলে যেতে পারে বাসে করে, অথবা ট্রেনে করে গাজীপুর। জানালার পাশে সিট নিয়ে, রাস্তার নানান দৃশ্য দেখতে দেখতে। অবশ্য সে ইদানিং রাস্তা-ঘাটে পরিচিত মানুষদের এড়িয়ে চলে। পরিচিত কারো সাথে দেখা হয়ে গেলেই- তারা আফসোস শুরু করে দেয়। তোমার সব বন্ধুরা কত কি করে ফেলল, তুমি কিছুই করতে পারলে না। তোমার কোনো ভালো চাকরী হচ্ছে না কেন ? কেউই বুঝতে চায় না, যে মিজান চাকরীর কাঙ্গাল না। সবাইকেই চাকরী করতে হবে এমন কোনো কথা আছে? থাক না, দুই এক একজন ছন্নছাড়া।



মিজান একটা খবরের কাগজ কিনল। এখন সে কোথাও বসে আরাম করে খবরের কাগজ পড়বে। একটা দৈনিক পত্রিকাতে কত রকমের যে খবর ছাপায়! মিজান সব খবর খুব মন দিয়ে পড়ে। কোনো কিছুই বাদ দেয় না। দুই ইঞ্চি একটা বিজ্ঞাপনও সে আগ্রহ নিয়ে পড়ে। পত্রিকা শেষ করে মিজান দেখলো আড়াইটা বেজে গেছে। এবং খুব ক্ষুধা পেয়েছে। পকেটে অল্প কয়েকটা টাকা আছে, এই টাকায় হোটেলে খাওয়া যাবে না। তবে রাস্তার পাশের চায়ের দোকান থেকে রুটি কলা খাওয়া যাবে। সমস্যা হলো দুপুরবেলা গরম ভাত খেতে ইচ্ছা করছে। ধোয়া উঠা গরম ভাত। সাথে ডিম সহ ইলিশ মাছ, ডাল ভর্তা আর ঝাল মুরগীর মাংস। মিজান নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করে, কারন এই পৃথিবীতে একজন মেয়ে আছে, যে মিজান কে দেখা মাত্র বলবে- মুখটা শুকনা কেন ? নিশ্চয়ই দুপুরে কিছু খাওনি। চুপ করে টেবিলে বসো, আমার সামনে বসে আরাম করে খাবে। কোনো কথা না। মেয়েটির নাম হিমি।



মিজান রাস্তায় হাঁটতে শুরু করলো। আকাশের অবস্থা ভালো না। আকাশ ভরা মেঘ। যেকোনো সময় ঝুম বৃষ্টি নামবে। মিজানের ইচ্ছা করছে রিকশায় করে বৃষ্টিতে ভিজতে। কিন্তু পকেটে টাকা নেই। মিজান মনে করতে চেষ্টা করছে রবীন্দ্রনাথের বৃষ্টি নিয়ে কোনো গান। মনে পড়ছে না। হিমিকে জিজ্ঞেস করলে হিমি চট করে বলে দিতে পারত। আচ্ছা, রবীন্দ্রনাথ কি কখনও খালি পকেটে একা একা রাস্তায় ঘুরে বেড়িয়েছেন ? গত তিন ধরে আকাশ কালো হয়ে আসছে কিন্তু বৃষ্টি হচ্ছে না। হিমির সাথে দেখা হলে স্বপ্নের কথাটা বলতে হবে। স্বপ্নে সাপ দেখলে কি হয়- হিমি বলে দিবে। এবং খুব সুন্দর একটা ব্যাখ্যাও দাঁড় করাবে।



মিজান হিমির বাসায় যাওয়ার পর ঝুম বৃষ্টি নামলো। হিমি মিজানকে দেখে একটুও অবাক হলো না। যেন মিজান আজ আসবে হিমি তা জানতো। মিজান এক আকাশ বিস্ময় নিয়ে হিমির দিকে তাকিয়ে আছে। হিমি আজ একটা নীল শাড়ি পড়েছে। দুই হাত ভর্তি কাঁচের চুড়ি, কপালে একটা নীল টিপ, চোখে মোটা করে দিয়েছে কাজল। মিজান কে দেখে হিমি অনেক খুশি হয়েছে। আনন্দে তার চোখে পানি এসে গেছে। বুকের মধ্যে যেন কেমন করছে। মিজানকে দেখলেই হিমি অস্থিরবোধ করে। মিজান বলল, দাঁড়িয়ে আছো কেন, বসো। হিমি বসে বলল- আজ তুমি আসবে এটা আমি জানতাম। মিজান বলল- কিভাবে? হিমি বলল গতকাল রাতে তোমাকে স্বপ্নে দেখেছি। তুমি আসবে বলেই আজ শাড়ি পরেছি। সেজেছি। মিজান পকেট থেকে একটা চিঠি বের করে হিমির হাতে দিল। হিমির সাথে দেখা হলেই- মিজান চিঠি দেয়।



মিজান খেতে বসেছে। রান্না খুব ভালো হয়েছে। ডিম সহ ইলিশ মাছ, ডাল ভর্তা আর ঝাল মুরগীর মাংস। মিজান আরাম করে খেল। হিমি বলল, কতদিন আর এভাবে ঘুরে বেড়াবে? এবার চাকরী খোঁজো। মিজান হাসলো, কিছু বলল না। হিমির ইচ্ছা করছে- মিজানের গালটা একটু ছুঁয়ে দিতে। লজ্জার কারনে পারছে না। মিজান বলল আজ যাই। পরে আবার দেখা হবে, কথা হবে। হিমি বলল, আচ্ছা। কিন্তু হিমির বলতে ইচ্ছা করছে- খবরদার তুমি যাবে না, তুমি আমার সামনে চুপ করে বসে থাকো। আমি তোমার চুল আচড়ে দিবো। ঝুম বৃষ্টির মধ্যেই মিজান দরজা খুলে বের হয়ে গেল। একবারও পেছন ফিরে তাকালো না। যদি পেছন ফিরে তাকাতো, তাহলে দেখতে পেত- হিমি চোখ ভর্তি পানি নিয়ে মিজানের দিকে তাকিয়ে আছে।



রাত এগারো টায় হিমি বিছায় শুয়ে মিজানের চিঠি পড়ল। বাইরে তখনও ঝুম বৃষ্টি। যতবার হিমি মিজানের চিঠি পড়ে, ততবার তার চোখ ভিজে উঠে। হিমির বড় খালা, হিমির বিয়ে ঠিক করেছে। হিমি ঠিক করে রেখেছে, মিজানকে ছাড়া সে আর কাউকে বিয়ে করবে না। মিজানের সমস্যা হচ্ছে মিজান বেকার। হিমি বিশ্বাস করে মিজানের ভালো চাকরী হবে। তারপর তারা বিয়ে করবে। ছোট দুই রুমের একটা বাসা থাকবে তাদের। বাসাটা হিমি নিজের মনের মতন করে সাজাবে। এক সময় তাদের সংসারে নতুন একটা বাবু আসবে। বাবুর নামটাও হিমি ঠিক করে রেখেছে। হিমি চিঠিটা আবার বের করলো। ঘুমাবার আগে সে আরেকবার চিঠিটা পড়বে। মিজান সুন্দর করে চিঠি লিখতে জানে না। চিঠির মধ্যে কোনো আবেগ-ভালোবাসা থাকে না। তবুও চিঠি পড়লে হিমির চোখ ভিজে উঠে। কেন এমন হয় ?



হিমি, বেশ কয়েকদিন ধরে রাতে ঘুমুতে পারি না।ঘুমুলেই সাপ স্বপ্নে দেখি। তুমি তো জানো আমি সাপ খুব ভয় পাই। সাপ গুলো আমার গলা প্যাচিয়ে বসে থাকে। এর মধ্যে একটা সাপ আবার- আমাকে স্যার বলে ডাকে। টুকটাক কথা বার্তা বলে। আমাকে ভয় না পাওয়ার আশ্বাস দেয়। সাপের আশ্বাস পেয়ে আমার অস্থিরতা আরও বেড়ে যায়। কি করলে সাপ থেকে মুক্তি পাবো, আমাকে জানাও।

ইতি, মিজান।



( চলবে...)

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২৪ শে অক্টোবর, ২০১৩ রাত ১:৪৮

কুচ্ছিত হাঁসের ছানা বলেছেন: হুমায়ুন আহমেদের মত লাগল আপনার লেখা। চালিয়ে যান।

২| ২৪ শে অক্টোবর, ২০১৩ সকাল ৯:৫৪

ডরোথী সুমী বলেছেন: খুব ভাল লেগেছে। কিন্তু কেন জানি মনে হচ্ছে হিমির স্বপ্ন কখনো সত্যি হবেনা।

৩| ২৪ শে অক্টোবর, ২০১৩ বিকাল ৫:৩৪

ঢাকাবাসী বলেছেন: বেশ একটা হুমায়ুন আহমেদ হুমা্য়ুন আহমেদ সুবাস আছে (সু অর্থে)। চমৎকার লাগছে।

৪| ২৪ শে অক্টোবর, ২০১৩ রাত ১১:৩৫

ইরফান আহমেদ বর্ষণ বলেছেন: চমৎকার লাগলো!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.