নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার নাম- রাজীব নূর খান। ভালো লাগে পড়তে- লিখতে আর বুদ্ধিমান লোকদের সাথে আড্ডা দিতে। কোনো কুসংস্কারে আমার বিশ্বাস নেই। নিজের দেশটাকে অত্যাধিক ভালোবাসি। সৎ ও পরিশ্রমী মানুষদের শ্রদ্ধা করি।

রাজীব নুর

আমি একজন ভাল মানুষ বলেই নিজেকে দাবী করি। কারো দ্বিমত থাকলে সেটা তার সমস্যা।

রাজীব নুর › বিস্তারিত পোস্টঃ

পাঁচশ বছর আগের কথা

০৯ ই নভেম্বর, ২০১৩ রাত ১:২২

পাঁচশ বছর আগের কথা। তখন আরব বণিকদের সঙ্গে ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে ব্যবসা-বাণিজ্য শুরু হয়েছে। এশিয়ার আরব, পারস্য, ভারত, চীন ছিলো সমৃদ্ধশালী দেশ। আর ইউরোপে ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, পর্তুগাল, স্পেন, ইতালি, গ্রিস ছিলো উন্নত দেশ। আফ্রিকার মিশরও কিন্তু এক সময় অনেক উন্নত ছিলো।পর্তুগিজ নাবি ভাস্কো দা গামা।তিনি ছিলেন, পনেরো শতকের বিশ্বসেরা পর্যটক। তিনিই প্রথম এশিয়ার সঙ্গে ইউরোপের বাণিজ্যপথ আবিষ্কার করেন। আবিষ্কারের যুগের সফলতম নাবিক ভাস্কো দা গামা ১৫২৪ খ্রিস্টাব্দের ২৪ ডিসেম্বর ভারতের কোচিতে মৃত্যুবরণ করেন। তার নেতৃত্বেই প্রথম ইউরোপীয় জাহাজ ভারতে আসে।



ভাস্কো ছিলেন বাবা-মায়ের তৃতীয় সন্তান।হজব্রত পালনের উদ্দেশে মক্কাগামী কালিকটের মুসলমানরা তার বাধার সম্মুখীন হয়েছিলেন। অভিযোগ রয়েছে, ৪০০ হজযাত্রীসহ জাহাজটিকে গামা অপহরণ করে নিয়ে গিয়ে তাদের সবাইকে পুড়িয়ে মারেন। সভ্য পৃথিবীর শুরুটা হয়েছিলো ইউরোপ আর এশিয়া মহাদেশ থেকে। এশিয়া-ইউরোপের বিভিন্ন দেশ তাদের সমৃদ্ধির জন্যে বিভিন্ন দেশ থেকে সম্পদ নিয়ে আসতো। কখনো এই সম্পদ আনতো ব্যবসার মাধ্যমে আবার কখনো আনতো দেশ দখল করে। এই সম্পদ সংগ্রহের জন্যই সেই দেশগুলোর দরকার নতুন নতুন দেশ খুঁজে বের করা।



গামা ১৭০ জন নাবিক ও চারটি জাহাজ নিয়ে ৮ জুলাই ১৪৯৭ সালে পর্তুগালের লিসবন বন্দর থেকে যাত্রা করেন। উত্তমাশা অন্তরীণ অতিক্রম করে মোজাম্বিক, মোম্বাসা, মালিন্দি হয়ে ১৪৯৮ সালের ২০ মে ভারতের কালিকট বন্দরে এসে পৌঁছান। আরব বণিকদের বিরোধিতার কারণে তিনি ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনে ব্যর্থ হন। ভারতের সঙ্গে ইউরোপের জলপথ আবিষ্কারে পর্তুগালের রাজা মানুয়েল ছিলেন বিশেষ উদ্যোগী। তিনি প্রথমে এ দায়িত্ব দিয়েছিলেন ভাস্কো দা গামার পিতাকে। পরে তিনি এ দায়িত্ব অর্পণ করেছিলেন ভাস্কো দা গামার উপর। ভাস্কো দা গামার অভিযাত্রার সাফল্য সম্পর্কে তখন অনেকেই সন্দিহান ছিলেন।



প্রাচ্যদেশে ভারত তখন ছিল এক সমৃদ্ধ উপমহাদেশ। এখানে আসার জলপথ আবিষ্কারের চেষ্টা চলেছিল বহু বছর ধরে। এর প্রায় দুশ বছর আগে থেকে স্পেন ও অন্যান্য ইউরোপীয় দেশের অভিযাত্রী নাবিকরা সমুদ্রপথে ভারতে আসার চেষ্টা করেছিলেন। অনেক পর্তুগিজ পর্যটকও এ পথে অভিযান চালিয়েছিলেন। তারা কেবল উপকূলীয় নৌ-চালনা জানতেন। এদের মধ্যে লোপো গনজালভেজ বিষুব রেখা অতিক্রম করেছিলেন। দিয়োগো চাও আবিষ্কার করেছিলেন জায়ারে।এক সময় ক্রিস্টোফার কলম্বাস ভারতবর্ষ আবিষ্কারের নেশায় নিনা, পিন্টা, সান্তামারিয়া নামের তিনটি জাহাজ নিয়ে সমুদ্রে ভেসেছিলেন। দুই মাস লোনা জলে ভেসে যখন সবুজের সন্ধান লাভ আর বিস্তীর্ণ তটরেখা দেখলেন, তিনি উল্লসিত হয়ে বললেন, আমি ভারতবর্ষ আবিষ্কার করেছি। আসলে সেটি ভারতবর্ষ নয়, ১৪৯২ এর ১২ অক্টোবর তিনি আমেরিকার বাহামা দ্বীপপুঞ্জে অবতরণ করেছিলেন। সেটা ছিল তার আমেরিকা আবিষ্কার।



বাঙলার সমৃদ্ধ লোকসাহিত্য, পুথি, কবিতা, গান এমনকি বালক রবীন্দ্রনাথের আমসত্ত্ব দুধ ভাতে আকৃষ্ট হয়ে কোনো বণিক বা পর্যটক বঙ্গে আসেনি। বাঙলা ভাষাতেও আকৃষ্ট হয়ে নয়, ওরা এসেছে বাংলাদেশের বিখ্যাত মসলার গন্ধে। গোলমরিচ আর লবণ ছিটিয়ে সেদিন পর্যন্ত ওরা কেটে-ছিঁড়ে মাংস খেত। বঙ্গের তেজপত্র, লবঙ্গ, দারুচিনি, এলাচ রন্ধনে যুক্ত হয়ে গোশেতর স্বাদই দিল পাল্টে। আর যুগ যুগ ধরে আরব বণিকরাই পাশ্চাত্যের দেশগুলোতে ভারতীয় মসলার জোগান দিয়ে রসনার উদ্রেক ও মাংসাশী জাতিগুলোকে ভারতমুখী করেছিল। ভারত ভূমের সন্ধান পেয়ে পর্তুগিজরা আধিপত্য নিরঙ্কুশ করতে আরব ও মুসলিম বিতাড়ণে তত্পর হয়।



বিশ্বখ্যাত নাবিক ক্রিস্টোফার কলম্বাসও ভারতে আসার জলপথ খুঁজতে অভিযাত্রায় বের হয়েছিলেন। ১৪৯২ সালের ৩ আগস্ট তিনি কাঠের তৈরি তিনটি জাহাজ ও ৯০ জন নাবিকসমেত সমুদ্রযাত্রা শুরু করেছিলেন। ভারতের জলপথ আবিষ্কার করতে গিয়ে তিনি আবিষ্কার করেছিলেন এক নতুন মহাদেশ। তিনি ভেবেছিলেন যে, তিনি ভারতে পৌঁছে গেছেন। কিন্তু আসলে তিনি যে মহাদেশ আবিষ্কার করেছিলেন সে মহাদেশের নাম আমেরিকা। ইতালিয়ান পর্যটক মার্কো পোল ১২১৯ খ্রিস্টাব্দে পরিভ্রমণে বেরিয়ে যে দ্বীপমালাটির নাম রেখেছিলেন ইস্ট ইন্ডিজ তার অধুনা নামটি হলো ইন্দোনেশিয়া তথা ইন্ডিয়েন এশিয়া, যেখানে ভাস্কো দা গামার পদাঙ্ক অনুসরণ করে পরবর্তীতে হাজির হতে থাকল অন্যান্য পর্তুগিজ নাবিক। ১৬৪১ খ্রিস্টাব্দে সেখানে চলল ইউরোপীয় নানা জাতের শ্বেতাঙ্গদের দখলদারিত্বের লড়াই যাতে শেষ পর্যন্ত বিজয়ী হলো ক্ষুদ্রতর হল্যান্ড। প্রাচীনকাল হতে ভারতবর্ষ থেকে জাপান পর্যন্ত বিস্তৃত গোটা ভূভাগই ইউরোপীয়দের কাছে পরিচিত ছিল ইন্ডিজ তথা ভারতবর্ষ হিসেবে।



ভাস্কো দা গামার জন্ম পর্তুগালের সাইনিসে, ১৪৬৯ সালে। তিনি জ্যোতির্বিদ্যা এবং নৌচালনবিদ্যায় শিক্ষা গ্রহণ করেন। ১৫০২ সালে ভাস্কো দা গামা ১৫টি জাহাজ এবং যুদ্ধ সরঞ্জামসহ দ্বিতীয়বার ভারতবর্ষে আসেন। প্রথমবার পর্তুগিজদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার না করার অজুহাতে তিনি বহু নিরীহ ভারতীয়কে হত্যা করেন। ভাস্কো দা গামা ও তার সঙ্গীরা ছিলেন খ্রিস্টান ধর্মের অনুসারী। তাদের মনে হল, স্থানীয় লোকজন খ্রিস্টানদের সঙ্গে শত্রুতা করতে পারে। এই ভয়ে তারা নিজেদের মুসলমান হিসেবে পরিচয় দেয়।



১৪৯৮ সালের ২০ মে। ভাস্কো দা গামা তার জাহাজের বহর নোঙর করলেন কালিকট বন্দরে। আরব সাগরের তীরবর্তী দক্ষিণ ভারতের বিখ্যাত বন্দর ছিল এটি। সেখানে তিনি আর একটা পেদ্রো স্থাপন করলেন। তিনি যে ভারতে পৌঁছে গেছেন সেটা ছিল তার স্বাক্ষর। এভাবে আফ্রিকার চারপাশ ঘুরে ইউরোপ থেকে প্রাচ্যে ভাস্কো দা গামার প্রথম অভিযাত্রা শেষ হল।সে সময়ে কালিকট দক্ষিণ ভারতের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যকেন্দ্র। সেখানকার হিন্দুরাজা ছিলেন সামুথিরি (জামোরিন)। তিনি তখন ছিলেন তার দ্বিতীয় রাজধানী পোন্নানিতে। ইউরোপীয় নৌবহরের আগমনের খবর পেয়ে তিনি দ্রুত ফিরে এলেন রাজধানীতে। ঐতিহ্য অনুযায়ী ভাস্কো দা গামাকে সাদর অভ্যর্থনা জানানো হল। প্রায় ৩০০০ সশস্ত্র লোক সামিল হল অভ্যর্থনা শোভাযাত্রায়।



ভাস্কো দা গামা ১৫০২ সালে ১৫টি জাহাজ ও যুদ্ধসরঞ্জাম নিয়ে দ্বিতীয়বার ভারতে আসেন। এ যাত্রায় তিনি একটি দ্বীপপুঞ্জ আবিষ্কার করেন। এর নাম রাখা হয় আমিরান্তে দ্বীপপুঞ্জ। সে সময়ে ভারতে কালিকট ও কোচিনের রাজার মধ্যে বিবাদ চলছিল। এই বিবাদের সুযোগ নিয়ে ভাস্কো দা গামা ভারতে প্রথম পর্তুগিজ বাণিজ্যকুঠি নির্মাণ করেন। কোচিন ও কানানোর নামে দুটি জায়গায় বাণিজ্যকুঠি নির্মিত হয়। কোচিন শহরে পর্তুগিজরা দুর্গ নির্মাণ করে এবং নিকটবর্তী রাজ্যগুলির সঙ্গে বাণিজ্যসম্পর্ক স্থাপন করে। ভারতের বিপুল সম্পদের খোঁজ পেয়ে অন্যান্য ইউরোপীয় দেশও ভারতে যাতায়াত শুরু করে।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০৯ ই নভেম্বর, ২০১৩ ভোর ৫:০১

শিশেন সাগর বলেছেন: ভালো লাগলো ব্রিফ হিস্টরী থাকায়। লেখাটা অনেক নির্ভেজাল ভাবে পড়ে যাওয়া যায়।

২| ০৯ ই নভেম্বর, ২০১৩ সকাল ৯:৫৬

ঢাকাবাসী বলেছেন: ভাল লাগল।

৩| ১০ ই নভেম্বর, ২০১৩ রাত ১০:৩৬

শূন্য পথিক বলেছেন: ভালো একটা ধারণা পেলাম। ধন্যবাদ।।

৪| ১০ ই নভেম্বর, ২০১৩ রাত ১১:০১

ড. জেকিল বলেছেন: সুন্দর পোস্ট, অনেক কিছু জানতে পারলাম, ধন্যবাদ তথ্যবহুল পোস্টটি লিখার জন্য।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.