নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার নাম- রাজীব নূর খান। ভালো লাগে পড়তে- লিখতে আর বুদ্ধিমান লোকদের সাথে আড্ডা দিতে। কোনো কুসংস্কারে আমার বিশ্বাস নেই। নিজের দেশটাকে অত্যাধিক ভালোবাসি। সৎ ও পরিশ্রমী মানুষদের শ্রদ্ধা করি।

রাজীব নুর

আমি একজন ভাল মানুষ বলেই নিজেকে দাবী করি। কারো দ্বিমত থাকলে সেটা তার সমস্যা।

রাজীব নুর › বিস্তারিত পোস্টঃ

রবীন্দ্রনাথের কোনো বিকল্প নাই-৯৯

১২ ই নভেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৩:০৩

আজ থেকে দেড়'শো বছর আগে, খাঁচার পাখির মতো বন্ধী থাকতে হতো নারীদের। বাইরের দুনিয়ার সাথে তাদের কোনো যোগাযোগ করার কোনো নিয়ম ছিল না। এমন কি লেখাপড়া নিষিদ্ধ ছিল তাদের জন্য। আর পোশাক বলতে ছিল, শুধু শাড়ি। রবীন্দ্রনাথ নিজেই ১৯৩৬ সালে লেখা একটি প্রবন্ধে মেয়েদের এই পোশাক পরার সেকেলে সংস্কারের কথা বলেছেন- সেই এক বস্ত্রের দিনে সেমিজ পরাটাও নির্লজ্জতার লক্ষন ছিল। এমন কি, মেয়েদের ছাতা ব্যবহারও লজ্জার কারণ ছিল। জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবার নারীদের আধুনিক করে তোলেন। অন্ধকার থেকে আলোতে নিয়ে আসে। দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর থেকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর পর্যন্ত কম-বেশী অবদান রাখেন।



সত্যেন্দ্রনাথ ও জ্যোতিরিন্দ্রনাথ উভয়ই নারী মুক্তির দিকে যেসব পদক্ষেপ নিয়েছিলেন, তা নিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথের জন্মের পর। আমার ধারনা রবীন্দ্রনাথ প্রথম প্রেমে পড়েন- আনা তরখড়ের। আনা তরখড় নিয়ে তার পিতা আত্মারাম পান্ডুরঙ কলকাতায় এসেছিলেন ১৮৭৯ সালে। উদ্দেশ্য ছিল রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে কন্যার বিবাহ। কিন্তু আত্মারাম পান্ডুরঙ কে ব্যর্থ হয়ে ফিরে যেতে হয়। এরপর রবীন্দ্রনাথ আট মাস ছিলেন স্কট পরিবারের সাথে। এ পরিবারে অবিবাহিত তিনটি কন্যা ছিল। তাদের মধ্যে ছোট দুই বোনের সাথে তার খুব ঘনিষ্ঠতা হয়েছিল। বিশেষ করে, কনিষ্ঠ কন্যা 'লুসি'র সাথে রবীন্দ্রনাথের যে সম্পর্ক হয়েছিল- তাকে প্রেম বলা যায় অনায়াসেই। ( রবীন্দ্রনাথের স্ত্রী মৃণালিনী দেবী জোড়াসাঁকোর একান্নবর্তী পরিবারে সুখী ছিলেন না।)



রবীন্দ্রনাথ তার 'কঙ্কাল' গল্পের নায়িকাকে তৈরি করেছিলেন সব সৌন্দর্য দিয়ে এবং সবচেয়ে বড় কথা নিজের মনের মাধুরী মিশিয়ে। একান্নবর্তী পরিবারে নারীদের যে হৃদয়স্পর্শী নিগ্রহ ও নিপীড়ন সহ্য করতে হয়, তারও দরদি চিত্র উপস্থাপন করেছিলেন। উদাহরণ হিসেবে 'দেনাপাওয়া' (১৮৯১) গল্পের নিরুপমাকে মনে পড়া খুব স্বাভাবিক। খুব সুন্দরী এই কিশোরীকে অনেক পছন্দ হয়েছিল তার ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট স্বামীর। কিন্তু তার পিতা পণের টাকা দিতে না পারায় নিরুপমা বাপের বাড়ি যাওয়ার অধিকার হারিয়ে ফেলে। পিতাকেও অনেক অপমান সহ্য করতে হয়। এখানে আমি একটা ব্যাপার উল্লেখ্য করতে চাই- ১৯১০ সালে রবীন্দ্রনাথ তার পুত্র রথীন্দ্রনাথ কে বিয়ে দিয়েছিলেন, বালবিধবা প্রতিমা দেবীর সঙ্গে। দেবেন্দ্রনাথ জীবিত থাকলে সেটা সম্ভব হত না।



রবীন্দ্রনাথ ১৯২৮ সালে লেখা 'নারীর মনুষ্যত্ব' প্রবন্ধে নারীর উপর পুরুষের সর্বব্যাপী কৃতিত্বের কারণ ব্যাখ্যা করেছেন। ১৮৮৪ সালে রবীন্দ্রনাথ 'ঘাটের কথা' লিখেন। নায়িকা কুসুম। কুসুমের বয়স ছিল সাত বছর। ১৮৯৩ সালে লিখেন 'মহামায়া'। নায়িকা মহামায়া, কুলীন কন্যা। বয়স ছিল ২৪ বছর। ১৯১৮ সালে লিখেন 'পাত্রপাত্রী' । নায়িকা ছিল দীপালি। বয়স ২৫ বছর, সংকরবিবাহজার কন্যা। ১৯৩৪ সালে লিখেন 'মালঞ্চ'। নায়িকা সরলা। বয়স ছিল- ৩০ বছর। এবং 'চার অধ্যায়' এর নায়িকা ছিল এলা। এলার বয়স ছিল ২৯ বছর, উচ্চশিক্ষিত ও বিপ্লবী। রবীন্দ্রনাথের লেখা থেকে- এখন আসি তার জীবনে। রবীন্দ্রনাথ নিজের কন্যার বিয়ে দিতে গিয়ে- বাল্যবিবাহ ও পণপথা মেনে নিয়েছিলেন। এবং পাত্র বেছে নেওয়ার ব্যাপারেও রবীন্দ্রনাথ তার কন্যাদের কোনো রকম সুযোগ দেননি।



রবীন্দ্রনাথের 'যোগাযোগ' উপন্যাসের কুমু শেষ পর্যন্ত নীরবে পরাজয় স্বীকার করে নিলেও স্বামীর সঙ্গে শয্যায় যেতে রাজি হয়নি। 'গোরা' উপন্যাসের কিশোরী চরিত্র ললিতা তার পারিবারিক ধর্মকে পর্যন্ত মেনে নিতে অসম্মত হয়। আধুনিক বাংলা সাহিত্যে রবীন্দ্রনাথের রচনাতেই প্রথম বারের মতো এমন নারী দেখা যায় , আত্মীয়তার সম্পর্ক ছাড়াও যারা একজন পুরুষের সাথে অসংকোচে বন্ধুভাবে কথাবার্তা বলতে পারে এবং পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধা নিয়ে একসঙ্গে কাজ করতে পারে। ১৮৯১ সালের অক্টোবর মাসে কৃষ্ণভাবিনী দাস 'শিক্ষিতা ও নারী' নামে যে প্রবন্ধ লিখেছিলেন, রবীন্দ্রনাথ তার দীর্ঘ সমালোচনা লিখেন। তাতে তিনি লিখেছিলেন যে, 'পুরুষের কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করিয়া অর্থোপার্জন স্ত্রী লোকের কার্য নহে।'



১৯২৫ সালে রবীন্দ্রনাথ এক প্রবন্ধে লিখেছিলেন- 'নারীকে ইতর ভাষায় অপমান করতে পুরুষ কুন্ঠিত হয় না। কেননা পুরুষ এখনো- মনে করে যে সেই হলো মানুষ।' ১৯২৮ সালে লেখা 'হিন্দুবিবাহ' প্রবন্ধে তিনি লিখেছেন- 'সাহিত্য, কলা বা বিজ্ঞান প্রভৃতিতে মেয়েদের যথেষ্ট পরিমানে দেখতে পাওয়া যায় না তার কারণ অনেকে রকম নির্ণয় করেন'।রবীন্দ্রনাথ রচনাবলির প্রবন্ধের বর্ণানুক্রমিক তালিকা লক্ষ করা যায় অক্ষয় চন্দ্র চৌধুরী থেকে হিসাব পর্যন্ত কবি আট শতের অধিক প্রবন্ধ রচনা করেন। প্রমথ চৌধুরীকে এক পত্রে রবীন্দ্রনাথ বলেন : 'শাস্ত্রে আছে মৃত্যুতেই ভবযন্ত্রণার অবসান নেই, আবার জন্ম আছে। আমাদের যে লেখা ছাপাখানার প্রসূতিঘরে একবার জন্মেছে তাদের অন্ত্যেষ্টি সৎকার করলেও তারা আবার দেখা দেবে। অতএব সেই অনিবার্য জন্ম-প্রবাহের আবর্তন অনুসরণ করে প্রকাশকেরা যদি বর্জনীয়কে আসন দেন সেটাকে দুষ্কর্ম বলা চলবে না।' প্রবন্ধের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে রবীন্দ্রনাথ তাঁর 'ঘুষাঘুষি' প্রবন্ধে বলেন : 'ছবিতে যেমন চৌকা জিনিসের চারিটা পাশই একসঙ্গে দেখানো যায় না, তেমনি প্রবন্ধেও একসঙ্গে একটি বিষয়ের একটি, বড়োজোর দুইটি দিক দেখানো চলে।'



১৩৪১ সালের বৈশাখে রবীন্দ্রনাথ 'গদ্যছন্দ' প্রবন্ধে বলেন, ''আজ সরস্বতীর আসনই বল, আর তাঁর ভাণ্ডারই বল, প্রকাণ্ড আয়তনের। সাবেক সাহিত্যের দুই বাহন, তার উচ্চৈঃশ্রবা আর তার ঐরাবত, তার শ্রুতি ও স্মৃতি; তারা নিয়েছে ছুটি। তাদের জায়গায় যে যান এখন চলল, তার নাম দেওয়া যেতে পারে লিখিতি। সে রেলগাড়ির মতো, তাতে কোনোটা যাত্রীর কামরা কোনোটা মালের। ১৯০০ তেই ব্রহ্মবান্ধবের সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের পরিচয়, কয়েকবার সাক্ষাৎ হয়। কার্তিক লালের বেথুন রোর বাড়িতে রবীন্দ্রনাথ আসতেন। কবিকে চেয়ার ব্রহ্মবান্ধব আসনে বসা, ঘন্টার পর ঘন্টা আদর্শ বিনিময় চলত। তখন 'সারস্বত আয়তন' নামে একটা স্কুল সিমলা স্ট্রীটে চালাচ্ছিলেন ব্রহ্মবান্ধব ও তাঁর সিন্ধি শিষ্য রেবাচাঁদ। এই বিদ্যালয় ব্যবস্থা ছিল প্রাচীন আশ্রম পদ্ধতিতে গুরুকুল রীতির।



ব্রহ্মবান্ধবই সর্বপ্রথম রবীন্দ্রনাথকে 'বিশ্বকবি'র মর্যাদা দেন, সর্বপ্রথম 'গুরুদেব' আখ্যা দেন। প্রথমটি Sophia পত্রিকায় The World Poet of Bengal এই নামে বেরিয়েছিল ১ সেপ্টেম্বর, ১৯০০ তে। এ প্রবন্ধের বক্তব্য হল - রবীন্দ্র কবিতা তাঁর দেহ লাবণ্যের থেকে মহত্তর। তিনি প্রকৃতির যাবতীয় শোভা ও সৌন্দর্যের সঙ্গে প্রণয়ডোরে আবদ্ধ। তবে আনন্দচিন্তার সঙ্গে আছে বিষণ্ণতা। তিনি এক বিশ্বকবি, দেবদারুর মতো যার শিকড়গুলি চলে গেছে মাটির নীচে। এ প্রসঙ্গে তিনি প্রকৃতির পরিশোধ, কাবুলিওয়ালা, টেনিসনের ইন মেমোরিয়াম, শেলীর এপিসাইকিডিয়ন থেকে প্রসঙ্গ এনে কবিকে বিশ্বসাহিত্যে স্থাপন করেন। দ্বিতীয় প্রবন্ধ 'নৈবেদ্য' বেরিয়েছিল The Twentieth Century পত্রিকার জুলাই ১৯০১-এ 'নরহরিদাস' ছদ্মনামে। নৈবেদ্য কাব্যের এই প্রথম দীর্ঘ আলোচনা রবীন্দ্রনাথকে খুবই খুশী করেছিল। এ প্রবন্ধে তিনি একাধিক কবিতার উদাহরণ দিয়ে কবিতার ব্যাখ্যা করেন এবং বলেন, কাব্যটি ধর্ম ভাবুকদের কাছে আনন্দের খনি, এখানে ধর্মচিন্তার কোনো ভুল নেই। তিনি এ কাব্যে পেয়েছেন হিন্দু মনের নতুন শক্তির পরিচয়, অনন্তের মাঝে মিশে যাবার তীব্র বাসনা। তিনি আবিষ্কার করেন চারটি প্রসঙ্গ - একের সঙ্গে একের যোগ, মানবের মধ্যে ঈশ্বর চেতনা, জাতীয় ভাগ্য গঠনে ঈশ্বরের ভূমিকা, ঈশ্বরের নিজ চেতনার উন্মোচন।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১২ ই নভেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৩:১৯

শায়মা বলেছেন: অনেক অনেক ভালো লাগা ভাইয়া।

২| ১২ ই নভেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৩:৫০

ঢাকাবাসী বলেছেন: জানা কাহিনী, তবু পড়ে ভাল লাগল।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.