নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি একজন ভাল মানুষ বলেই নিজেকে দাবী করি। কারো দ্বিমত থাকলে সেটা তার সমস্যা।
কাদম্বরী ছিলেন নিঃসন্তান। আজ থেকে দেড়শ বছর আগে নিঃসন্তান রমণী সমাজের চোখে হেয় প্রতিপন্ন হতো। দেবর রবির সঙ্গে কাদম্বরী তার সব দুঃখ বেদনা ভাগ করে নিতেন। কবির বিয়ের কয়েক মাসের মধ্যে তার আত্মহত্যা করার বিষয়টি কাকতালীয়। ঠাকুরবাড়ির অন্দরমহলের যা কিছু সুন্দর তার সব কিছুর সাথে জড়িয়ে আছেন কাদম্বরী। তিনি এ বাড়িতে এসে তিন তলার ছাদে গড়ে তুললেন “নন্দন কানন”। তার অকালমৃত্যু রবীন্দ্রনাথের মনের মধ্যে গভীর ছাপ রেখে যায়, যা তার অসংখ্য গল্পে, কবিতা, গানে তিনি প্রকাশ করেছেন।
( রবীন্দ্রনাথের তো গুজবের শেষ নাই। গুজব আছে রবীন্দ্রনাথ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিরধীতা করেছিলেন। ১৯১২ সালের ২৮শে মার্চ কলিকাতা গড়ের মাঠে কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সভাপতিত্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রতিবাদে নাকি এক বিশাল জনসভার আয়োজন করা হয়। অথচ মজার বিষয় ঐ তারিখে রবীন্দ্রনাথ কোলকাতাতেই ছিলেন না। আরও মজার বিষয় বিশ্ববিদ্যলয় প্রতিষ্ঠার মাত্র পাঁচ বছর পরে সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাঙ্গনেই তিনি বিপুলভাবে সংবর্ধিত হন। বিতর্কের কথা বলতে শুরু করলে শেষ হবে না।
কাদম্বরীর মৃত্যুর এক মাস পরেই তিনি জ্ঞানদানন্দিনী, সুরেন্দ্র, ইন্দিরা ও রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে সরোজিনী জাহাজে চড়ে বেড়াতে বেরিয়েছিলেন। আপাত দৃষ্টিতে মনে হতে পারে “তিনি যেমন ছিলেন, তেমনি আছেন।“ কিন্তু না, কাদম্বরীর জীবনাহুতি জ্যোতিরিন্দ্রকে একেবারে নিঃস্ব করে দিয়েছিল। 'ভগ্নহৃদয় কাব্য' তিনি উৎসর্গ করেছিলেন বউদি কাদম্বরী দেবীকে_ একটি কবিতার মাধ্যমে_ 'তোমারেই করিয়াছি জীবনের ধ্রুবতারা'।
কাদম্বরী একজন সুঅভিনেত্রীও ছিলেন। নাট্যরসিক জ্যোতিরিন্দ্রের মন আরো উজ্জীবিত হয়ে উঠেছিল গুনবতী স্ত্রীকে পেয়ে। একেবারে ঘরোয়া পরিবেশে মাটির উঠোনে জ্যোতিরিন্দ্রের লেখা প্রহসন “এমন কর্ম আর করব না”তে প্রথম অভিনয় করলেন কাদম্বরী। রবীন্দ্রনাথ নায়কের ভূমিকায় ছিলেন, রবীন্দ্রনাথের প্রথম বিলেত যাত্রার আগে এই প্রহসনটি সফলভাবে অভিনীত হয়। রবীন্দ্রমানস গঠনে এই নারীর দান চিরস্মরনীয়। তার কবি হয়ে ওঠার মূলে আন্তরিক চেষ্টায় ছিলেন কাদম্বরী। কাদম্বরী সব সময় রবীন্দ্রনাথকে উসকে দিতেন, “ রবি সবচেয়ে কালো দেখতে, গলার যে কি অবস্থা, ওর চেয়ে সত্য ভালো গায়, ও কোনদিন গাইতেই পারবে না”। আরো বলতেন, “কোনকালে বিহারী চক্রবর্তীর মতো লিখতেও পারবে না”।
জ্যোতিরিন্দ্রনাথের জোব্বার পকেট থেকে উদ্ধার করা কয়েকটি চিঠি থেকে কাদম্বরী এটা জানতে পারলেন যে, নটী বিনোদিনীর সঙ্গে তার স্বামীর প্রণয় সম্পর্ক রয়েছে। রবীন্দ্রনাথের বিয়ের কয়েক মাসের মধ্যেই তার অকাল মৃত্যু হয়। ঘটনাটা আকস্মিক হলেও অভাবনীয় নয়। তীব্র অভিমানীনি কাদম্বরী এর আগেও আত্মহত্যার চেষ্টা চালিয়ে ছিলেন। তিনি প্রচন্ড ইন্ট্রোভার্ট, সেন্টিমেন্টাল ও স্কিজোফ্রেনিক ছিলেন। রবীন্দ্রনাথের বিয়ের জন্য মেয়ে দেখতে কাদম্বরীর বিপুল উৎসাহ ছিল।
জ্যোতিরিন্দ্রনাথের দুটি নাটকের অভিনয় করতে এসে সেকালের সবচেয়ে নামকরা অভিনেত্রী বিনোদিনীর সঙ্গে তার পরিচয় হয়। সেই পরিচয় ক্রমশ পরিণতি লাভ করে প্রণয়ে। কাদম্বরী আত্মহত্যা করার পর রবি ঠাকুর গেয়েছিলেন, "মনে কী দ্বিধা রেখে গেলে চলে"। কাদম্বরী আত্মহত্যা করার আগে রবির ঘরে এসে মুচকি হেসে চলে গিয়েছিলেন, গানটির প্রথম অন্তরায় সে ঘটনার বর্ণনা আছে, "তুমি সে কি হেসে গেলে, আঁখি কোণে, আমি বসে বসে ভাবি, নিয়ে কম্পিত হৃদয়খানি...।" সে সময় বউদি কাদম্বরী কিছু একটা বলতে চেয়ে থেমে গিয়েছিলেন, শুধু হাসি দিয়ে চলে গেলেন। রবি ঐ না বলা কথাটা শোনার জন্য আক্ষেপ করেছেন এই গানটার শেষ অন্তরায়, "বারেক তোমায় শুধাবারে চাই, বিদায়কালে কী বল নাই, সে কী রয়ে গেল গো, সিক্ত যুঁথির গন্ধ বেদনে...।
নিঃসন্তান কাদম্বরীর মধ্যে একটি সন্তানের জন্য তীব্র আকাংঙা ছিল। তিনি শিশুদেরকে প্রচন্ড ভালোবাসতেন। জানকীনাথ ও স্বনর্কুমারীর ছোটমেয়ে ঊর্মিলাকে নিজের কাছে রেখে সন্তান স্নেহে মানুষ করছিলেন তিনি। তার কাছেই ঊর্মিলা বড় হচ্ছিল তার মেয়ে হয়ে। একটু বড় হয়ে স্কুলে যাওয়া শুরু করার দুমাসের মধ্যেই তেতলার সিড়ি থেকে একা নামতে গিয়ে ঊর্মিলা পড়ে যায় এবং মারা যায়। এই ঘটনাটি কাদম্বরীর কোমল মনে যথেষ্ট চাপ সৃষ্টি করেছিল। কবি তাঁর জীবন স্মৃতিতে লিখেছেন- ছোটবেলায় মাকে হারানোর শোক তিনি ততোটা বুঝতে পারেননি, কারন কাদম্বরী দেবী মায়ের অভাবটা বুঝতে দেন নি। যদিও কাদম্বরী তখন তাঁরই বয়সী এবং খেলার সঙ্গী। অনেক কবিতা ও গানে তাঁর ছায়া দেখা যায়। কাদম্বরী দেবীর মৃত্যুর চার বছর পর কবি "তবু মনে রেখো-- " গানটি লেখেন। এটা তাঁকে উদ্দেশ্য করেই লেখেন এতে কোন সন্দেহ নেই।
একদিকে ব্যক্তিগত জীবনে কাদম্বরী দেবী ছিলেন 'গভীর দুখে দুখী'। তার বাবা ছিলেন ঠাকুরবাড়ির দূরসম্পর্কের আত্মীয় এবং কম বেতনের বাজার-সরকার। বেতন মাত্র কুড়ি টাকা । আগে থেকে তার সঙ্গে আত্মীয়তাও ছিল। তার মা ছিলেন স্বয়ং দ্বারকানাথ ঠাকুরের মামাতো বোন। কিন্তু তাই বলে না আত্মীয়তার কারণে, না বৈবাহিক কারণে তিনি কোনো বিশেষ সম্মান পাননি ঠাকুর পরিবারের কাছ থেকে। কাদম্বরীর নিজের গায়ের রঙও ছিল শ্যামলা। সে তুলনায় জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ছিলেন রাজপুত্রের মতো। কাদম্বরী জীবিত থাকা অবস্থায় রবিরচনার সিংহভাগই কাদম্বরী দেবীকে উৎসর্গ করা। "রবীন্দ্রনাথের রচনাবলীতে যেসব নারী চরিত্র এসেছে তাতে কোন না কোনভাবে কাদম্বরী দেবীর ছায়াপাত ঘটেছে।" "দেবর বৌদির সম্পর্ক সবসময়ই খানিকটা হেঁয়ালিপূর্ন। সবচে উল্লেখযোগ্য বিষয় যেটা তা হলো তার আত্মহত্যার খবরটা একরকম ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। পরিবারের কেউ আর এ নিয়ে কখনো মুখ খোলেনি। এবং এটা খুই বিস্ময়কর যে এই পরিবারের কেউ এই ঘটনার কথা লিখেও রাখেনি কোথাও।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে নিয়ে আলোচনা হলে অনেক সময়ই অনেকে তার বৌদি কাদম্বরী দেবীকে তার সাথে জড়িয়ে এক ধরনের রসাত্মক আলোচনা করতে পছন্দ করেন। তাদের মধ্যে একটা অন্য ধরনের সম্পর্কের ইঙ্গিতও দেন। আসলেই কি সেই ধরনের কিছু আদৌতেও তাদের মধ্যে ছিল? ভালোলাগা মানেই কি কোন ধরনের আলাদা বা নিষিদ্ধ সম্পর্ক? রবীন্দ্রনাথের জীবনে যদি এই মহিয়সী নারীর আগমন না ঘটতো তা হলে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এর বাংলা সাহিত্যে যে বিশাল অবদান তা সৃষ্টি হতো কিনা সে বিষয়ে আমি যথেষ্ট সন্দিহান। পিতা বাজার-সরকার_ সেই সূত্রে কাদম্বরী বড় হয়েছিলেন ঠাকুরবাড়ির নিচের তলার সাধারণ চাকরবাকরদের সঙ্গে, অযত্নে লালিত। ওপরতলার মূল পরিবারের সদস্যরা এদের দেখতেন তুচ্ছ-তাচ্ছিল্যের চোখে, কৃপার দৃষ্টিতে। এহেন নয় বছর বয়সী কালো মেয়েকেই বিয়ে করতে বাধ্য হলেন উনিশ বছর বয়সী জ্যোতিরিন্দ্রনাথ। বধূ হিসেবে মেনে নিলেন অন্য বউয়েরাও। কারণ, দেবেন্দ্রনাথের নির্দেশ অথবা আদেশ সে বাড়িতে ছিল বেদবাক্যের মতো।
কাদম্বরী দেবী মারা গেলেন, কিন্তু উজ্জ্বল নক্ষত্রের মতো তার প্রতি রবীন্দ্রনাথের ভালোবাসা বেঁচে থাকল, যতদিন তিনি নিজে বেঁচে ছিলেন। কত গান, কত কবিতায় তার এই ভালোবাসা ভাস্বর হয়ে আছে। সেই সঙ্গে সোয়াশ' বছর পরে কাদম্বরী দেবী আজও অমর হয়ে আছেন রবীন্দ্র-সাহিত্যে আর সেই সঙ্গে অমর হয়ে আছে তাদের রোমান্টিক প্রেমের ক্লাসিক কাহিনী। রবীন্দ্রনাথের ভালোবাসা আর স্নেহের খিদে মিটিয়েছিলেন বউদি। বউদির অভাবে তার হৃদয় তৃষিত হয়ে উঠল। সেই ভালোবাসার অভাব মৃণালিনী দেবী পূরণ করতে পারলেন না। বস্তুত, মৃণালিনীর সঙ্গে তার এ সময়ে কোনো সম্পর্ক আদৌ গড়ে উঠেছিল কি-না, সে বিষয়ে সন্দেহ আছে।
ঠাকুরবাড়ি, পুত্রবধূর আত্মহত্যার পর মরদেহ মর্গে পাঠায় না, স্ক্যান্ডেল এড়ানোর উদ্দেশ্যে ৫১ টাকা ১২ আনা খরচ করে জোড়াসাঁকোর বাড়িতেই করোনার কোর্ট বসিয়ে রিপোর্ট গোপন করে এবং খবরের কাগজের মুখ বন্ধ রাখার জন্য ঘুষ দেয়। স্বয়ং মহর্ষির উদ্যোগে করোনার রিপোর্ট লোপ করা বা, কেন ‘সুইসাইড নোট’ গায়েব করা হল ঠাকুরবাড়ির অন্দরমহলের।
প্রতিভাবান ব্যক্তিদের আমরা আমাদের মতো কল্পনা করতে ভালোবাসি, সেটাকেই স্বাভাবিক বলে মেনে নিই। কিন্তু আমাদের পায়ের জুতো রবীন্দ্রনাথের পায়ে কী করে ঠুকবে!
২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ দুপুর ২:০২
রাজীব নুর বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ।
২| ২৬ শে নভেম্বর, ২০১৪ রাত ৯:৪২
রাবেয়া রব্বানি বলেছেন: কাদম্বরী দেবী মারা গেলেন, কিন্তু উজ্জ্বল নক্ষত্রের মতো তার প্রতি রবীন্দ্রনাথের ভালোবাসা বেঁচে থাকল, যতদিন তিনি নিজে বেঁচে ছিলেন। কত গান, কত কবিতায় তার এই ভালোবাসা ভাস্বর হয়ে আছে। সেই সঙ্গে সোয়াশ' বছর পরে কাদম্বরী দেবী আজও অমর হয়ে আছেন রবীন্দ্র-সাহিত্যে আর সেই সঙ্গে অমর হয়ে আছে তাদের রোমান্টিক প্রেমের ক্লাসিক কাহিনী। রবীন্দ্রনাথের ভালোবাসা আর স্নেহের খিদে মিটিয়েছিলেন বউদি। বউদির অভাবে তার হৃদয় তৃষিত হয়ে উঠল। সেই ভালোবাসার অভাব মৃণালিনী দেবী পূরণ করতে পারলেন না। বস্তুত, মৃণালিনীর সঙ্গে তার এ সময়ে কোনো সম্পর্ক আদৌ গড়ে উঠেছিল কি-না, সে বিষয়ে সন্দেহ আছে।
আপনার লেখাটি কাদম্বরী দেবীর সুইসাইড নোট থেকে ইন্সপায়ার্ড মনে হচ্ছে।
তবে কি এমন অপূর্ণ ভালোবাসা বা অনুপ্রেরণা হারানোর কষ্ট থাকতে হয় কবি সাহিত্যিকের। তাড়িয়ে বেড়ানো স্ৃতি তাকে হয়ত লিখিয়ে নিয়েছে এত ।
০৩ রা মে, ২০২১ রাত ১০:৫২
রাজীব নুর বলেছেন: মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
©somewhere in net ltd.
১| ২৮ শে মার্চ, ২০১৪ রাত ৮:৫০
মোঃ মোশাররফ হোসাইন বলেছেন: আপনার হয়তো এই লেখাটা ভালো লাগবে: Click This Link