নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার নাম- রাজীব নূর খান। ভালো লাগে পড়তে- লিখতে আর বুদ্ধিমান লোকদের সাথে আড্ডা দিতে। কোনো কুসংস্কারে আমার বিশ্বাস নেই। নিজের দেশটাকে অত্যাধিক ভালোবাসি। সৎ ও পরিশ্রমী মানুষদের শ্রদ্ধা করি।

রাজীব নুর

আমি একজন ভাল মানুষ বলেই নিজেকে দাবী করি। কারো দ্বিমত থাকলে সেটা তার সমস্যা।

রাজীব নুর › বিস্তারিত পোস্টঃ

আসুন জাপান দেশটি সম্পর্কে জানি

০৮ ই এপ্রিল, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:৫৫

জাপান এশিয়া মহাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের একটি দ্বীপ রাষ্ট্র। দেশটি এশিয়া মহাদেশের পূর্ব উপকূলের কাছে উত্তর প্রশান্ত মহাসাগরে অবস্থিত। ছোট-বড় সব মিলিয়ে প্রায় ৩,০০০ দ্বীপ নিয়ে জাপান গঠিত। জাপানের ভূ-প্রকৃতি পর্বতময়। দেশটির ৭৫ থেকে ৮০ শতাংশ এলাকাই পাহাড়ি। জাপানের সম্রাট প্রতীকী রাষ্ট্রপ্রধান। জাপানের কেন্দ্রীয় সরকারের স্থানীয় সরকারগুলির উপর নিয়ন্ত্রণ আছে। ১৯৬০-এর দশক থেকে ১৯৮০-র দশক পর্যন্ত জাপান বিশ্বের সবচেয়ে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিশীল দেশগুলির একটি ছিল। জাপানের শ্রমিকসংখ্যা প্রায় ৬ কোটি ৭০ লক্ষ। এদের মধ্যে ৪০%-ই নারী। ১৯শ শতকের শেষ দিকে এবং ২০শ শতকের শুরুর দিকে জাপানে জনসংখ্যার দ্রুত বৃদ্ধি ঘটে। সম্রাট জিমো ৬৬০ খ্রিস্টপূর্বের ১১ ফেব্র“য়ারিতে জাপানি সাম্রাজ্য গঠন করেছিলেন।



জাপানের স্কুলের শিক্ষার্থীরা প্রতিদিন শিক্ষকের তত্ত্বাবধানে ৪৫মিনিট স্কুল পরিস্কারের কাজ করে। জাপানের রাস্তাঘাট পরিস্কার করার কাজে থাকা শ্রমিকদের ডাকা হয় "health engineer" নামে এবং তাদের মাসিক বেতন থাকে ৫০০০$-৮০০০$। প্রতিবছর প্রায় ১০০টি ভুমিকম্প হয়। তারপরেও অর্থনৈতিক অবস্থার বিচারে তারা ২য় সেরা অবস্থানে আছে। জাপানের 'হিরোশিমায়' যে পারমানবিক বোমা ফেটেছিল এবং ধ্বংসযজ্ঞ সম্পর্কে আমরা সবাই কমবেশি জানি। তবে এটা জানি না বোমারফলে তাদের অর্থনৈতিক যে ক্ষতি হয়েছিল তা মাত্র ১০ বছরে কাটিয়ে উঠেছিল। জাপানে রেস্টুরেন্ট, বাস , ট্রেনে মোবাইল ব্যবহার করা নিষিদ্ধ। চীন ও জাপানের মধ্যে মূলত দুটি যুদ্ধ সংঘটিত হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে জাপান যেই পরাক্রমশালী ছিল বিশ্বযুদ্ধের পরে পরাজয়ের মাধ্যমে তার আগ্রাসী ভূমিকার পরিসমাপ্তি ঘটে। আর দ্বিতীয় চীন-জাপান যুদ্ধের সূত্র লুকিয়ে আছে ১৮৯৪-৯৫ সালের প্রথম চীন-জাপান যুদ্ধে।



টোকিও জাপানের বৃহত্তম শহর ও রাজধানী। জাপান বিশ্বের অন্যতম ঘনবসতিপূর্ণ দেশ। জাপান বিশ্বের বুকে একটি প্রধান অর্থনৈতিক শক্তি। এখানকার মানুষের গড় আয় ও জীবনযাত্রার মান বিশ্বের সর্বোচ্চগুলির একটি। বিশ্বখ্যাত ফুজি পর্বত জাপানের সর্বোচ্চ পর্বত। জাপানের সমতল ভূমি খুব কম বলে অনেক পাহাড়-পর্বতের গায়েই একেবারে চূড়া পর্যন্ত চাষবাস করা হয়। ২০০৭ সালে প্রকৃত প্রবৃদ্ধির হার ছিল ২%-এর কিছু বেশি। জাপানে সড়ক নির্মাণে প্রচুর অর্থ ব্যয় করা হয়। জাপানে ১৭৩টি বিমানবন্দর রয়েছে। সবচেয়ে বড় অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দর হল হানেদা বিমানবন্দর, এটি এশিয়ার সবচেয়ে ব্যস্ততম বিমানবন্দর।



জাপানিরা জাপানি ভাষায় তাদের দেশকে নিহোং বা নিপ্পোং বলে ডাকে, যার অর্থ "সূর্যের উৎস"। জাপানে উৎপাদিত দ্রব্যের মধ্যে বিভিন্ন জাপানি ব্র‌্যান্ডের মোটরযান, ক্যামেরা, কম্পিউটার, টেলিভিশন এবং সাউন্ড সিস্টেম বিশ্বখ্যাত। বৈদেশিক বাণিজ্যের মাধ্যমে জাপান যে বৈদেশিক মুদ্রা আয় করে, তা অর্থনীতির জন্য কাঁচামাল ক্রয়ে ব্যবহার করা হয়। জাপানের মাত্র ১৫% ভূমি আবাদযোগ্য। কৃষিখাত সরকার থেকে প্রচুর ভর্তুকি পায়। জাপানের সবচেয়ে বড় সমুদ্র বন্দর হলনাগোয়া বন্দর। ২০২৫ সাল নাগাদ ৬৫ থেকে ৮৫ বছর বয়সবিশিষ্ট নাগরিকের অংশ ৬% থেকে ১৫%-এ উন্নীত হবে বলে আশা করা হচ্ছে। মোট জনসংখ্যার মাত্র ৪% কৃষিকাজে নিয়োজিত। বিশ্বের সবচেয়ে সুন্দর শহর জাপানের টোকিও। আর সবচেয়ে নোংরা শহর ভারতের মুম্বই।



জাপানে ৭ম শতক থেকে একজন সম্রাট শাসন করে আসছেন। ১২শ শতকে শোগুন নামের সামরিক শাসকদের উদ্ভব ঘটে। ১৭শ শতকের শুরুতে একটি শক্তিশালী সামরিক সরকার প্রায় সব বিদেশীর জন্য দেশটির সীমান্ত বন্ধ করে দেয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জাপান অক্ষশক্তিদের পক্ষে যুদ্ধ করে। জাপানের পরাজয়ের মাধ্যমে যুদ্ধের সমাপ্তি ঘটে এবং এতে দেশের বেশির ভাগ শিল্পকারখানা, পরিবহন নেটওয়ার্ক, এবং নাগরিক অবকাঠামো ধ্বংস হয়ে যায়। জাপানের প্রধান দুইটি ধর্ম হলো শিন্তো ধর্ম ও বৌদ্ধ ধর্ম। বর্তমানেও বহু জাপানি দুই ধর্মই সমানভাবে অনুসরণ করে। শিন্তো ধর্ম ১৬শ থেকে ১৯শ শতকে বিস্তার লাভ করে। ৬ষ্ঠ শতকে জাপানে প্রথম বৌদ্ধ ধর্মের প্রচলন হয়। ১৫৪৯ সালে জাপানে খ্রিস্টধর্মের আগমন ঘটে এবং এক শতাব্দী পরে এটিকে সরকার নিষিদ্ধ করে দেন।



জাপানে সোনা, ম্যাগনেসিয়াম ও রূপার মজুদ দেশের বর্তমান শিল্প চাহিদা মেটাতে সক্ষম। কিন্তু জাপান আধুনিক শিল্পে ব্যবহৃত অনেক খনিজের জন্য জাপান বিদেশের উপর নির্ভরশীল। জন্মের কয়েক মাস পর থেকেই বাচ্চার বিছানা আলাদা করে দেওয়া হয়; তাকে খাওয়া, গোছ্‌ল, ঘু্‌ম, টয়লেট করা ইত্যাদির রুটিন সেখানো শুরু হয় এ বয়স থেকেই। জাপানীরা মোটামুটি অনেক দেশের মানুষ থেকে সচ্ছল, তারপরেও তারা তাদের বাসায় কোন 'কাজের লোক কিংবা গৃহপরিচারিকা' রাখে না, নিজেদের বাসার কাজ নিজেরা করে। জাপানে ট্রেনের বিলম্ব হওয়ার হার প্রতি বছরে মাত্র ৭সেকেন্ড। পুরো বিশ্বে তারা তাদের সময়ানুবর্তিতার জন্য খুব প্রশংসিত।



দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে জাপানকে অনেক মুসলিম দেশের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করতে হয়। যুদ্ধ শেষে শিল্পের উন্নতির জন্য তেল উৎপাদনকারী মুসলিম দেশের সাথে তার সম্পর্ক আরো স্বাভাবিক হয়। এর ফলে জাপানে মুসলমানদের যাতায়াত বৃদ্ধি পায়। জাপানী অধিবাসীরাও মুসলিম দেশসমূহে আসে। খ্রীষ্টপূর্ব ১৩০০০ সাল থেকে ৩০০ সাল পর্যন্ত সময়কে জাপানের জ্যামন পিরিয়ড (Jomon Period) বলা হয়। এসময়কালীন জাপানের অধিবাসীদের জীবিকা ছিলো শিকার ও মৎস্য আহরন। জাপান নামটি জাপানীদের দেয়া নাম নয়। জাপানীদের কাছে কিন্তু জাপানের চেয়ে মূলত নিপ্পন অথবা নিহন নামটা বেশি জনপ্রিয়। নিপ্পন নামটি মূলত সকল জাপানী দাপ্তরিক কাজে ব্যবহার করা হয়। জাপানের মুদ্রা, ডাক টিকেট এমনকি আন্তর্জাতিক ক্রীড়া অঙ্গনে জাপানের স্থলে নিপ্পন নামটি ব্যবহৃত হয়। নিহন নামটা জাপানীদের কাছে অত্যন্ত ঘরোয়া যা জাপানে এখনও অভ্যন্তরীণ কাজে প্রতিনিয়তই ব্যবহৃত হয়।



ইউরোপীয় উপনিবেশের সময় থেকে জাপানকে সবচেয়ে পূর্বের দেশ হিসেবে বিবেচনা করা হত। তাছাড়া যেহেতু জাপানী ভাষায় চীনা ভাষার উপস্থিতি অত্যান্ত শক্তিশালী। সেহেতু নিপ্পন শাব্দিক অর্থ সূর্যের উৎপত্তির বিশ্লেষণে ইউরোপীয়রা জাপানকে সূর্যোদয়ের দেশ হিসেবে প্রচার করে ফেলে। সম্ভবত ইউরোপীয়রা জাপানকে সবচেয়ে পূর্বের দেশ হিসেবে বিবেচনা করেই সুর্যদয়ের দেশ বলে প্রচার করে ফেলে। সেই প্রচারের ধারাবাহিকতায়ই আজও জাপান সূর্যোদয়ের দেশ হিসেবে পরিচিত।



বাংলাদেশ থেকে প্রতি বছর অনেকেই উচ্চশিক্ষার উদ্দেশ্যে পাড়ি জমান জাপানে। যাদের বড় একটি অংশ যাচ্ছে স্কলারশিপ নিয়ে। জাপান সরকার, বেসরকারি সংস্থা ছাড়াও বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় নিয়মিত স্কলারশিপ দিচ্ছে। এসব স্কলারশিপের আওতায় একদিকে বিনা খরচেই পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছে, অন্যদিকে লুফে নিচ্ছে আন্তর্জাতিক মানের ডিগ্রি। দেশটির বেশির ভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়াশোনার ভাষা জাপানি হলেও কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদেশি শিক্ষার্থীরা ইংরেজি মাধ্যমে পড়ার সুযোগ পাচ্ছে। জাপানের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তি হতে কিছুটা বেগ পেতে হয়। কারণ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ যোগ্য ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের ভর্তি আবেদনই কেবল গ্রহণ করে। তবে দেশটির ক্ষেত্রে ভর্তি নিশ্চিত হলেই ভিসা প্রক্রিয়ায় আর জটিলতা থাকে না।



বৈদেশিক ছাত্রছাত্রীদের প্রায় ৯.৫ শতাংশই জাপানে অধ্যয়নরত জাপানে উচ্চ শিক্ষা গ্রহনের এই ব্যাপক চাহিদার কারণ হচ্ছে জাপানে ছাত্রছাত্রীরা যুগোপযোগী সর্বাধুনিক প্রযুক্তি এবং জ্ঞান অর্জন করতে পারে যা ২য় বিশ্বযুদ্ধোত্তর জাপানের বিস্ময়কর অর্থনৈতিক উন্নতির মুল হাতিয়ার হিসাবে কাজ করেছে। ইলেকট্রনিক্স থেকে শুরু করে মেডিসিন, সাহিত্য থেকে শুরু করে ব্যবসা প্রশাসন যেকোন বিষয়েই জাপানী বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পড়াশুনার বিস্তৃত সুযোগ রয়েছে। তাই অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশ থেকেও প্রতিবছর উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ছাত্রছাত্রী জাপানে পড়াশুনা করতে যাচ্ছে।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৮ ই এপ্রিল, ২০১৪ রাত ৮:৫২

ভ্রমন কারী বলেছেন: অনেক কিছু জানলাম। ধন্যবাদ আপনাকে।

২| ০৮ ই এপ্রিল, ২০১৪ রাত ৯:২৩

নীল জোসনা বলেছেন: জাপানী বাচ্চাদের স্কুলিং সিষ্টেম টা খুব ইন্টারেস্টিং । আর ওরা ছোট থেকেই খুব গোছানো ওদের এভাবেই ট্রেইন করা হয় ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.