নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি একজন ভাল মানুষ বলেই নিজেকে দাবী করি। কারো দ্বিমত থাকলে সেটা তার সমস্যা।
মহাভারত কাহিনী মূলত পাণ্ডু ও ধৃতরাষ্ট্র এই দুই ভাইয়ের পুত্রদের মধ্যকার যুদ্ধকে কেন্দ্র করে রচিত। পাণ্ডুর পাঁচ পুত্রের মধ্যে যুধিষ্ঠির জ্যেষ্ঠ। মহাভারত এমন এক বিশাল মহাকাব্য যার ভিতর রয়েছে হাজার হাজার বৎসর ধরে সৃষ্টি হওয়া উপমহাদেশের বিপুল সংখ্যক গল্পের জাল বিস্তার। বহু গল্পের পিছনে যেমন আছে ঘটনার অভিঘাত তেমন নিছক কল্পিত ঘটনার জাল বিস্তারও হয়েছে হয়ত বিশেষ একটি সামাজিক চাহিদা পূরণের তাগিদ থেকে। অনেক উদ্ভট ও অসম্ভব বা অবাস্তব কাহিনীর সন্নিবেশ এই গ্রন্থের ভিত্তিকে অনেক সময় প্রশ্নসাপেক্ষ করে। মহাভারতের মূল চরিত্রগুলো যে কালের সেই কালে সমাজে পরবর্তী কালের এক স্বামী-ভিত্তিক বিবাহ প্রথা এবং নারীর সতীত্ব সম্পর্কিত মূল্যবোধ ছিল না অথবা কোন শক্ত ভিত্তির উপর দাঁড়ায় নি।
মহাভারত এই মহাকাব্যটি হিন্দুশাস্ত্রের ইতিহাস অংশের অন্তর্গত। মহাভারত-এর মূল উপজীব্য বিষয় হল কৌরব ও পাণ্ডবদের গৃহবিবাদ এবং কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের পূর্বাপর ঘটনাবলি। মহাভারত-এর রচয়িতা ব্যাসদেব। ৪০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ নাগাদ রচিত হয়। মহাভারত কথাটির অর্থ হল ভরত বংশের মহান উপাখ্যান। মহাভারতে পঞ্চপান্ডব সহ বিভিন্ন মূখ্যচরিত্রের মাঝে একটি অন্যতম প্রধান চরিত্র হল মহাবীর কর্ণ। সূর্যদেবের বরে কবজ ও কুন্ডল নিয়ে জন্ম নেওয়া মহাতেজী কর্ণ তাঁর পালক পিতা রথচালক অধিরথের ঘরে বেড়ে ওঠেন। মহাভারতের মূল চরিত্রগুলি বিশেষত পঞ্চপাণ্ডব যাঁদেরকে প্রতিনিধিত্ব করছেন তাঁরা কৃষি সমাজে কিছু পরবর্তী কালে প্রবেশ করায় আদিম সমাজের কিছু মৌল বৈশিষ্ট্য তাঁদের জীবনে ধারণ করেছেন। মহাভারতের যে দুটি চরিত্রকে বিনাদোষে সর্বাধিক অবমাননা সহ্য করতে হয়েছে, তাঁরা হলেন বসুষেণ কর্ণ এবং কৃষ্ণা দ্রৌপদী।
কুন্তী ছিলেন কুন্তিভোজ'র পালিতা কণ্যা, বাসুদেবের বোন, কৃষ্ণ'র ফুফু। তার মানে কুন্তী'র পাঁচ ছেলে, যারা পঞ্চপান্ডব নামে পরিচিত ছিলেন তারা হলেন কৃষ্ণ'র ফুফাতো ভাই। মামাতো ভাই কৃষ্ণ ১৬ হাজার রাজকণ্যা বিয়ে করলেও পঞ্চপান্ডবেরা পাঁচ ভাই পেলেন একটামাত্র বৌ! কুন্তী যখন কুমারী ছিলেন তখন তার গৃহে দুর্বাসা মুনি অতিথি হয়ে এলে কুন্তী তাকে সেবা দ্বারা সন্তুষ্ট করে দ্যান। খুশি হয়ে দুর্বাসা মুনি কুন্তীকে এক অদ্ভুত বর দ্যান, যা কিনা এতোদিন শুধু পুরুষেরাই পেয়ে এসেছে। বর টা ছিলো অ্যামন, কুন্তী কোন দেবতাকে স্মরণ করলে সেই দেবতা এসে কুন্তীকে যৌনসঙ্গম দ্বারা পরিতৃপ্ত করে পুত্রসন্তান দান করবে। দ্রৌপদী সারাজীবন অর্জুনকে ভালবেসেছেন সর্বাধিক, কিন্তু, হায়!! আর্জুন নিজ জয়লব্ধ পুরস্কার অপর চার ভ্রাতার সঙ্গে বিভক্ত করে নেওয়ায় বিশেষ খুশী হন নি।
মহাভারত-এর প্রথম অংশের বর্ণনা অনুযায়ী, ব্যাসদেবের অনুরোধে তাঁর নির্দেশনা মতো গণেশ এই মহাকাব্য লিপিবদ্ধ করার দায়িত্ব নেন। সমস্ত কাহিনীতে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ মুখ্য চালকের ভূমিকায় থাকেন। এই কাহিনীর আধ্যাত্মিক সারাংশ হল ধর্মের জয় ও অধর্মের নাশ। ভোজ রাজার কন্যা কুন্তি দেবী বিয়ের আগে একবার দুর্বাসা মুনির সেবা করে এক বর লাভ করেন যাতে তিনি যে কোন দেবতাকে আহ্বান করতে পারতেন এবং সন্তান লাভ করতে পারতেন। কুন্তী শুধুমাত্র পান্ডব জননীই ছিলেন না, তিনি ছিলেন তাদের একমাত্র নির্ভরযোগ্য রাজনৈতিক পরামর্শদাত্রী। কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের শুরুর দিকে সন্ধির জন্য কৃষ্ণ হস্তিনাপুরে এসে কুন্তির সাথে দেখা করেন, কিন্তু কুন্তী তাতে রাজি হননি। পান্ডবদের তিনি প্রাণের মায়া ত্যাগ করে যুদ্ধ করে রাজ্য জয়ে উদ্বুদ্ধ করেছিলেন, তিনি বলেন "পান্ডব জননী হয়ে তিনি পরের দয়ার বাঁচতে চান না।
কর্ণ ছিলেন স্পষ্টভাষী এবং অহংকারী! তাঁর কথার মধ্যে মিষ্টতা ছিলনা তাই ভীষ্ম, দ্রোণসহ অনেকেই কর্ণকে পছন্দ করতেন না কিন্তু দুর্যোধন কর্ণের উপর প্রচন্ড ভরসা করতেন। কুরুক্ষেত্র যুদ্ধে শুরুতেই কৌরবদের পক্ষে পিতামহ ভীষ্মকে সেনাপতি করা হয়। কিন্তু ভীষ্ম বলেন, কর্ণ যুদ্ধ করলে তিনি যুদ্ধ করবেন না যেহেতু কর্ণ ভীষ্মকে অসন্মান করতেন। কর্ণ জানান, বুড়ো ভীষ্ম দুদিন যুদ্ধ করতেই মারা যাবেন তারপর তিনি একদিনেই কর্ণকে হত্যা করবেন! যদিও কৌরবদের পক্ষে সবচেয়ে ভাল যুদ্ধ করেন মহারথী ভীষ্ম। মহাভারতে কুন্তীকে একজন দৃঢ়চরিত্রের তেজস্বিনী ও আদর্শ জননী হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে।
পৃথিবীর অন্যতম প্রাচীন একটি সাহিত্যকর্ম হিসাবে মহা ভারত পৃথিবী বিখ্যাত। এক সময় সমগ্র পৃথিবীকেই ইলাবৃত বর্ষ বা ভারতবর্ষ নামে ডাকা হত। এই পৃথিবীর শাসনভারের দায়িত্ব ছিল ইতিহাস বিখ্যাত অনেক অনেক রাজাদের হাতে। বর্তমান ‘নরওয়ে’ দেশটির নাম সংস্কৃত শব্দ ‘নরক’ থেকে এসেছে । ‘সোভিয়াত’ এসেছে ‘শ্বেত’ থেকে। ‘রাশিয়া’ ‘ঋষি’ থেকে এসেছে, এভাবে সাইবেরিয়া শব্দটিও সংস্কৃত থেকে আগত। ‘স্ব্যান্দিনাভিয়া’ ‘স্কন্দ’ থেকে এসেছে। যিনি দেবতাদের প্রধান কমান্ডার হিসেবে ছিলেন। মহাভারতে যুধিষ্ঠিরকে অজাতশত্রু বলা হয়। অজাতশত্রুর অর্থ হল যাঁর কোনও শত্রু জন্মায় নি। স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠবে কৌরবরা কি তাহলে যুথিষ্ঠিরের সঙ্গে শত্রুতা করে নি! করে থাকলে উনি অজাতশত্রু হন কি করে? কর্ণ ছিলেন সেই একমাত্র বীর, স্বয়ং ভগবান শ্রীকৃষ্ণ নিজহস্তে যাঁর পারলৌকিক ক্রিয়াকর্ম করেছেন। সারা জীবনে কর্ণ কিছুই পাননি, যা তাঁর একান্তই প্রাপ্য ছিল।
মহাভারত আমাদের হিন্দুদের ধর্ম ও সভ্যতার উৎস। সেইজন্য মহাভারতকে বলা হয় হিন্দুর “পঞ্চম বেদ”। মহাভারতের প্রতিটি চরিত্রই আমাদের সমাজের এক একটা দিকের বৈশিষ্ট্যকে তুলে ধরেছে। এখানে, ভাল ও মন্দ চরিত্রগুলোর দ্বন্দ্বের মধ্যই সত্যধর্মকে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। অন্যান্য পুরাণ, য্যামন গ্রীস, রোম অথবা জার্মান দেশের পুরাণের মতোন ভারতের পৌরাণিক পুরুষ চরিত্রগুলো ছিলো অতিমাত্রায় বহুগামী, বীরোচিত। তবে অন্যসব দেশের পৌরাণিক নারী চরিত্রগুলো একটু কম হলেও বহুগামী ছিলো, কিন্তু ভারতীয় পৌরাণিক চরিত্রগুলোর অবস্থা এক্ষেত্রে সমবেদনা পাওয়ার মতোন, আমি অন্তত বহুগামী নারী ত্যামন একটা দেখিনি, যেটুকু পাওয়া যায় সেটুকু একাধিক বহুগামী পুরুষেরই কল্যাণে। স্বেচ্ছায় বহুগামী এক নারী চরিত্রের দ্যাখা পাওয়া যায় দ্রৌপদী-পঞ্চপান্ডবের উপাখ্যানে, পঞ্চপান্ডবের মা কুন্তী, যার কারনে দ্রৌপদীও ভাগ্যক্রমে অথবা দুর্ভাগ্যক্রমে বহুগামী হয়েছেন।
মহাভারতের দুই নায়কোচিত চরিত্র, - ভীষ্ম ও কর্ণ – দুজনেই মহামতি। পঞ্চ পাণ্ডব ভ্রাতাদের মধ্যে ভীম ২য়। পাণ্ডব ভাইদের বনবাসের সময়ে ভীম হিড়িম্বা নামের রাক্ষসীকে বিয়ে করেন, এবং তাদের ঘটোৎকচ নামের একটি পুত্র সন্তান হয়। কর্ণ ছিলেন সূর্য ও কুন্তীর পুত্র। কুন্তীর বিবাহের পূর্বে তাঁর জন্ম হয়। তিনি ছিলেন দুর্যোধনের ঘনিষ্ঠ বন্ধু এবং কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে কৌরব পক্ষে যোগ দেন। কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে ভীষ্ম কৌরব সেনাবাহিনীর সেনাপতি নিয়োজিত হন। কর্ণ দ্রৌপদীর সঙ্গে অশ্লীল আচরণ করেছিলেন, এই অভিযোগে ভীষ্ম কর্ণকে সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে বাধা দেন। আসলে তিনি কুন্তীর কন্যাবস্থায় পুত্রলাভের কথা জানতেন এবং চান নি কর্ণ আপন ভাইদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করুক। যুদ্ধের একাদশতম দিনে ভীষ্ম শরশয্যায় শায়িত হন এবং ত্রয়োদশ দিনে দ্রোণ সেনাপতি হন। চতুর্দশ দিন শেষ হয় চক্রব্যূহে অর্জুনপুত্র অভিমন্যুর মৃত্যু দিয়ে।
©somewhere in net ltd.