নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি একজন ভাল মানুষ বলেই নিজেকে দাবী করি। কারো দ্বিমত থাকলে সেটা তার সমস্যা।
বেদ হিন্দুদের প্রাচীনতম ধর্মগ্রন্থের নাম। এর চারটি মূল অংশ রয়েছে। বেদ মানবিক গ্রন্থ না। ‘বেদ’ শব্দের বু্ৎপত্তিগত অর্থ জ্ঞান। বেদকে ঈশ্বরের বাণী বলে মনে করা হয়। এটি কতগুলি মন্ত্র ও সূক্তের সংকলন। বেদ রচনার শুরু থেকে তা সম্পূর্ণ হতে বহুকাল সময় লেগেছে। সেই কালসীমা মোটামুটিভাবে খ্রিষ্টপূর্ব ২৫০০-৯৫০ অব্দ পর্যন্ত ধরা হয়। বেদকে শুধু ধর্মগ্রন্থ হিসেবেই নয়, প্রাচীন ভারতের রাজনীতি, অর্থনীতি, সমাজ, সাহিত্য ও ইতিহাসের একটি দলিল হিসেবেও গণ্য করা হয়। মনু বেদ রচনার দুই-তিন শতাব্দী পরের লোক। অবশ্য কেউ কেউ বলেন তিনি খ্রিস্টীয় পঞ্চম শতাব্দীর মানুষ ছিলেন। মহর্ষি কৃষ্ণ দ্বৈপায়ন ব্যাস বেদকে চার ভাগে ভাগ করেন। এতে বোঝা যায় আগে চার বেদ ছিল না, একটিই ছিল। বেদ মানুষের দ্বারাই রচিত।
হিন্দুদের গরুর গোস্ত খাওয়া বেদের কোথাও নিষিদ্ধ নেই; বরং খাওয়ার বিধান আছে। সবচেয়ে প্রাচীন হচ্ছে ঋগবেদ। এতে প্রায় ১০,০০০ এর ও বেশী মন্ত্র আছে। বেদসমূহ কোনো একক ব্যক্তির দ্বারা রচিত নয়। লোকবিশ্বাস অনুযায়ী, একাধিক ঋষির নিকট বেদসমূহ প্রদত্ত হয়েছিল। এই ঋষিগণ আবার তাঁদের শিষ্যদের কাছে বেদসমূহ হস্তান্তরিত করেন। মহর্ষি ব্যাস হলেন বেদসমূহের বিন্যাসক, বা আমাদের আজকের ভাষায় বললে, সম্পাদক। বেদ এবং সাধারন বুদ্ধি অনুসারে তিনি অবশ্যই নিরাকার। বেদে ঈশ্বরের সাকার রূপ ধারণ করার কোন ধারণা নেই। অধিকন্তু সেখানে এমন কিছুর উল্লেখ নেই যে ঈশ্বর আকারহীন হয়ে কিছু করতে পারবে না তাই তাকে অবশ্যই আকার ধারণ করতে হবে। বেদ-এর ভাষা আদি সংস্কৃত।
আগুন থেকে যেমন ধোঁয়া বের হয়, তেমনি ঈশ্বর থেকে বেদ উৎপন্ন হয়েছে। অপর মতে, বেদ পঞ্চভূত থেকে উৎসারিত। বেদের উৎস সম্পর্কে নানা মুনির নানা মত। কিন্তু একটি ব্যাপারে সবাই একমত। সেটি হল, বেদ মানুষের প্রতি ঈশ্বরের একটি প্রত্যক্ষ উপহার। এই জন্য বেদের প্রতি মানুষের শ্রদ্ধাবোধও সর্বোচ্চ স্তরের। বেদ-এ রয়েছে সর্বমোট ২০,৩৭৯টি মন্ত্র বা ঋক। প্রাচীন ভারতকে বলা হয় বৈদিক ভারত। ওই বৈদিক কথাটা এসেছে বেদ থেকেই। দীর্ঘকাল বেদ বিচ্ছিন্ন হয়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল। পরে বেদ সঙ্কলন করলেন কৃষ্ণদ্বৈপায়ন বেদব্যাস। ইঁনিই রচেছিলেন মহাভারত। যিশুখ্রিস্টের জন্মের ১৫০০ বছর আগে আর্যরা পারস্য হয়ে প্রাচীন ভারতে এসেছিল প্রাচীন । তার আগেই প্রাচীন ভারতে হরপ্পা ও মহেনজোদারো সভ্যতা প্রায় ধ্বংসের মুখে এসে পৌঁছেছিল। তো, আর্যরা প্রথমে ভারতবর্ষের পশ্চিমাঞ্চলে বসবাস করে; আরও পরে তারা পূবের গাঙ্গেয় অববাহিকা অবধি পৌঁছেছিল। এভাবেই সূচিত হয়েছিল বৈদিক যুগের।
বেদে ৩৩ মিলিয়ন দেবতার উল্লেখ করেনি কিন্তু ৩৩ ধরনের দেবতার উল্লেখ রিয়েছে। সংস্কৃতিতে দেবতা অর্থ হচ্ছে ধরন বা প্রকার।বিষয়টি শতপথ ব্রাক্ষনে খুবই পরিষ্কার ভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। এই ৩৩ ধরনের দেবতাদের মধ্যে রয়েছে ৮ বসু (পৃথিবী, জল, আগুন, বাতাস, আকাশও, চন্দ্র, সূর্য ও গ্রহ/নক্ষত্রাদি ) যা বিশ্ব ব্রক্ষান্ডের (Universe) অংশীভূত যেখানে আমরা বাস করি। ১০টি দেহের জীবনী শক্তি (প্রান, অপান, বায়ু,উদানা, সামানা, নাগা, কুর্মা, কুকালা এবং দেবাদত্ত) ১টি আত্মা যাকে বলা হয় রুদ্র। বেদের প্রধানতম দেবতা ছিল অগ্নি ।হিন্দু ধর্মে যত ইশ্বরের নাম দেওয়া হয় সেগুলো আসলে এক জন ইশ্বরেরই গুনবাচক নাম। তাঁরই নাম ব্রহ্মা, তাঁরই নাম বিষ্ণু, তিনিই ইন্দ্র তিনিই সরস্বতি । বেদ থেকে তার সুস্পষ্ট প্রমান পাওয়া যায়।
বেদ বলে- যে ব্যক্তি অলীক দেব দেবীর পুজা করে, সে দৃষ্টি হরনকারী গাঢ় অন্ধকারে ডুবে যায়’(ঋকবেদ-৫;২;৫)।আরও আছে ‘যারা সম্ভুতির (অর্থাৎ যা আল্লাহর সৃষ্টি যেমন জল, বাতাস, সুর্য ইত্যাদি) পুজা করে তারা অন্ধকারের দিকে যাচ্ছে । আর যারা অসম্ভুতির পুজা করে তারা আরো অন্ধকারের দিকে যাচ্ছে’ (ঋকবেদ)। গৌতম বুদ্ধ বৌদ্ধধর্ম প্রবর্তন করেছিলেন ; যিশু খ্রিস্ট খ্রিস্টধর্ম এবং হজরত মহম্মদ ইসলাম ধর্ম প্রবর্তন করেন। কিন্তু হিন্দুধর্ম কোনো এক জন মাত্র ব্যক্তির দ্বারা প্রবর্তিত হয়নি। এটি ধর্মের একটি অনন্য বৈশিষ্ট্য। কোনো এক জন মানুষের জীবনকথা হিন্দুধর্মের ভিত্তি নয়। প্রত্যেক ধর্মের আচার-আচরণ ও বিধিমালা সম্বলিত নিজস্ব ধর্মগ্রন্থ থাকে। তেমনি হিন্দু ধর্মেরও ধর্মগ্রন্থ আছে। তবে হিন্দু ধর্মের ধর্মগ্রন্থের সংখ্যা অনেক। এ ধর্মগ্রন্থগুলো হল ১. বেদ, ২. উপবেদ, ৩. বেদান্ত, ৪. স্মৃতি সংহিতা, ৫. গীতা, ৬. পুরাণ, ৭. আগামশাস্ত্র, ৮. রামায়ণ ও মহাভারত, ৯. চন্ডী এবং ১০. ষড়দর্শন, উপনিষদ ইত্যাদি।
শ্রুতি কী? ‘শ্রুতি’ শব্দের আক্ষরিক অর্থ হল ‘যা শোনা হয়েছে’। সুপ্রাচীন কালের বৈদিক ঋষিরা কঠোর তপস্যা করে নিজেদের শুদ্ধ করেন। তখন তাঁরা তাঁদের হৃদয়ে স্বয়ং ঈশ্বরের বাণী শুনতে পান। ঈশ্বরের মুখ থেকে শোনা এই সত্যগুলি তাঁরা যে পবিত্র গ্রন্থরাজিতে ধরে রাখেন, তারই নাম হল ‘শ্রুতি’। শ্রুতি মানুষের লেখা বই নয় ; তাই শ্রুতিকে বলা হয় ‘অপৌরুষেয়’। শ্রুতিকেই আমরা সাধারণত চিনি ‘বেদ’ নামে। ‘বেদ’ শব্দের অর্থ ‘জ্ঞান’। এই প্রসঙ্গে স্বামী নির্মলানন্দ লিখেছেন, “হিন্দুদের কয়েকখানি বিশেষ ধর্মগ্রন্থকে কেন বেদ বলে তাহার একটি কারণ আছে। সংস্কৃতে ‘বিদ্’ ধাতুর অর্থ ‘জানা’। এই ধাতু হইতে নিষ্পন্ন বলিয়া ‘বেদ’ শব্দের মূল অর্থ ‘জ্ঞান’। বেদ বলিতে বিশেষতঃ ঈশ্বর, জীব ও জগৎ সম্বন্ধে পারমার্থিক জ্ঞানই বুঝায়।
এবং বেদই সর্বপ্রাচীন ও সব শাস্ত্র এই বেদ থেকেই জন্ম নিয়েছে বলে কথিত ও প্রসিদ্ধ। বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপধ্যায় তাঁর দেবতত্ব ও হিন্দুধর্ম প্রবন্ধে বলেছেন বেদের অতিরিক্ত ও কিছু যা অন্য শাস্ত্রে আছে — বেদ বলে প্রচার পেয়েছে। যা বেদে নাই বা বেদবিরুদ্ধ তাও অনেক সময় বেদের অন্তর্ভূক্ত বলে চালিয়ে দেওয়া হয়েছে। তবে বেদ যে হিন্দু ধর্ম ও সংস্কৃতির মূল উত্স এ কথা হিন্দুমাত্রেই জানেন ও স্বীকার করেন। কিন্তু অনেকে বেদের একটি সীমাবদ্ধ বা সঙ্কীর্ণ অর্থ করেন। প্রকৃতপক্ষে বেদ একটি গ্রন্থবিশেষের নাম নয়। বেদ বলতে বোঝায় সম্পূর্ণ একটি সাহিত্য। পণ্ডিতেরাও, যাঁরাই হিন্দুশাস্ত্রের সম্যক জ্ঞান লাভ করেছেন তাঁরা জেনেছেন বেদের সমগ্রতা।
০৩ রা মে, ২০২১ রাত ১১:১৯
রাজীব নুর বলেছেন: ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।
২| ১০ ই এপ্রিল, ২০১৪ রাত ৯:৫৯
Gupi বলেছেন: thank you for a good wrighting
০৩ রা মে, ২০২১ রাত ১১:২০
রাজীব নুর বলেছেন: ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।
৩| ১১ ই এপ্রিল, ২০১৪ ভোর ৫:২১
দিশার বলেছেন: জরু আর গরু কে নাকি চাবুক এর উপর রাখতে হয়? বেদ এর শিক্ষা। ...
০৩ রা মে, ২০২১ রাত ১১:২০
রাজীব নুর বলেছেন: ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।
©somewhere in net ltd.
১| ১০ ই এপ্রিল, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:২৬
বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: ভাল একটা লেখা হঠাৎ খেই হারিয়ে ফেলল এখানে এসে................................ "গৌতম বুদ্ধ বৌদ্ধধর্ম প্রবর্তন করেছিলেন ; যিশু খ্রিস্ট খ্রিস্টধর্ম এবং হজরত মহম্মদ ইসলাম ধর্ম প্রবর্তন করেন। কিন্তু হিন্দুধর্ম কোনো এক জন মাত্র ব্যক্তির দ্বারা প্রবর্তিত হয়নি। এটি ধর্মের একটি অনন্য বৈশিষ্ট্য। কোনো এক জন মানুষের জীবনকথা হিন্দুধর্মের ভিত্তি নয়"
ইসলাম একজন ব্যক্তি দ্বারা প্রবর্তিত ধর্ম এ তথ্য কোথায় পেলেন?
ইসলাম শুরু থেকে বাবা আদম আ: থেকে শেষ নবী মুহাম্মদ সা: পর্যন্ত ১ লক্ষ মতান্তরে ২ লক্ষ নবী রাসূল আ: গণ কর্তৃক প্রর্বতিত। এই সাধারন জ্ঞানটুকুতো আপনার থাকার কথা। তাহলে একজন ব্যক্তি কর্তৃক প্রবর্তিত ধর্ম এ কথা সঠিক নয়।
কৃষ্ণ, গৌতম বুদ্ধ, নানক, সক্রেটিস তথা সকল শুভ বুদ্ধি এবং কল্যানের পথের পথিক সকলেই সেই মহান স্রষ্টার পক্ষ থেকেই কালে কালে যুগে যুগে দেশে দেশে এক অভিন্ন শান্তি, সম্প্রীতি আর মিলনের বানী শুনিয়ে গেছেন। তারা নাম পরিচয়আর স্থানের কালের ভিন্নতা বহুমুখিতা সত্বেও একই পথের পথিক মাত্র। নয় কি?
সূরা ফাতিহায় বারবার সেই প্রার্থনাই স্মরণ করিয়ে দেয়া হয়েছে- আমাদের সেই পথে চালাও যেই পথে তোমার প্রিয়জনেরা গমন করেছেন, সেই পথে নয় যা মন্দ ও অভিশপ্ত!
আর শ্রুতির কথা যা বলেছেন আরবিতে তাই ওহি। ঐশিবাণী প্রাপ্তির অনেক পথের অন্যতম। এখনও অলি আউলিয়ারা মোরাকাবায় আল্লাহর তরফ থেকে ভাল মন্দের নির্দেশনা ভিন্ন ভিন্ন ভাবে পেয়ে থাকেন।
আল কোরআন কোন ব্যক্তি জীবনি গ্রন্থ নয়। সেটাও সেই শ্রুতি , ওহির মাধ্যমে প্রাপ্ত বানী সমূহ। যা মানব কল্যানের জন্য প্রত্যাদেশ কৃত।