নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার নাম- রাজীব নূর খান। ভালো লাগে পড়তে- লিখতে আর বুদ্ধিমান লোকদের সাথে আড্ডা দিতে। কোনো কুসংস্কারে আমার বিশ্বাস নেই। নিজের দেশটাকে অত্যাধিক ভালোবাসি। সৎ ও পরিশ্রমী মানুষদের শ্রদ্ধা করি।

রাজীব নুর

আমি একজন ভাল মানুষ বলেই নিজেকে দাবী করি। কারো দ্বিমত থাকলে সেটা তার সমস্যা।

রাজীব নুর › বিস্তারিত পোস্টঃ

শিব এবং

২৯ শে এপ্রিল, ২০১৪ রাত ১২:৫১

সৃষ্টির শুরুতে দেবতারা যখন পৃথিবী তৈরীর কাজে ব্যাস্ত, ধ্বংসের দেবতা শিব তখন গভীর ধ্যানে মগ্ন। ধ্বংসের দেবতা যদি ধ্যানে মগ্ন থাকেন তাহলেতো ধ্বংস হবে না, আর ধ্বংস না হলে সৃষ্টিও হবে না। ধ্বংসের দেবতা শিবের এহেন আচরণে সৃষ্টির দেবতা ব্রহ্মা ও স্থিতির দেবতা বিষ্ণু পড়লেন বিপদে। এ বিপদ থেকে উদ্ধারের জন্য স্থিতির দেবতা বিষ্ণু; সৃষ্টির দেবতা ব্রহ্মাকে বুদ্ধি দিলেন, তার মানসপুত্র দক্ষকে কাজে লাগানোর। বুদ্ধিমতো ব্রহ্মা দক্ষকে ডেকে বললেন, তুমি জগম্মাতার পূজা কর। প্রর্থনা কর তিনি যেন তোমার কন্যরূপে জন্মগ্রহণ করেন এবং শিবের পত্নী হন। এ ছাড়া অন্য কোনভাবে আর শিবের ধ্যান ভাঙ্গানো যাবে না।



শিব একজন হিন্দু দেবতা। আজ থেকে ৭ হাজার বছর আগে সদা শিব পৃথিবীতে আসেন। হিন্দুদের দেবতা সবাই আর্য, শুধুমাত্র শিব বাঙ্গালি। হিন্দুধর্মের শৈব শাখাসম্প্রদায়ের মতে, শিবই হলেন সর্বোচ্চ ঈশ্বর। ভারত, নেপাল ও শ্রীলঙ্কার সমগ্র হিন্দুসমাজেই শিবের পূজা প্রচলিত। আধুনিক শিবের সঙ্গে বৈদিক দেবতা রুদ্রের নানা মিল লক্ষিত হয়। রুদ্র ছিলেন বজ্রবিদ্যুৎসহ ঝড়ের দেবতা; তাঁকে একজন ভয়ানক, ধ্বংসকারী দেবতা হিসেবে কল্পনা করা হত। রুদ্র নামটি আজও শিবের অপর নাম হিসেবে ব্যবহৃত হয়। শিবলিঙ্গ পুরুষ যৌনাঙ্গে আদলে নির্মিত এবং শিবলিঙ্গের পূজা ভক্তদের মধ্যে কামুকতা বৃদ্ধি করে। জ্ঞানের রাজ্য পার হয়েই জানা যায় শিবকে। জ্ঞানদায়িনী দেবী সরস্বতী পূজার পরই আসে শিবরাত্রি। এরও একটি গভীর তাৎপর্য আছে।



শিবের একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হল তাঁর তৃতীয় নয়ন। এই নয়ন দ্বারা শিব কামকে ভস্ম করেছিলেন। শিবের হাতে ডমরু নামে একপ্রকার বাদ্যযন্ত্র শোভা পায়। নন্দী নামে একটি পৌরাণিক ষাঁড় শিবের বাহন। বারাণসী শিবের প্রিয় নগরী। এই নগরী হিন্দুদের পবিত্রতম তীর্থগুলির অন্যতম। হিন্দু ধর্মগ্রন্থে এই নগরী কাশীধাম নামে পরিচিত। শিবকে একাধারে যোগী ও গৃহী রূপে কল্পনা করা হয়। শিব ও পার্বতীর দুই পুত্র – কার্তিকেয় ও গণেশ। শিবই প্রথম বিবাহ প্রথা প্রবর্তন করে পারিবারিক জীবনে শৃঙ্খলাবোধ ও সমাজ জীবনে ছন্দবদ্ধ রূপ দিলেন। শিব শব্দের শাব্দিক অর্থ মঙ্গল; আর লিঙ্গ মানে চিহ্ন।অর্থাৎ শিবলিঙ্গ মানে মঙ্গলময় চিহ্ন। ভক্তরা এই লিঙ্গকে প্রণাম করে। কোয়ার্টারের বিনিময়ে মঙ্গল কামনা করে। কারন লিঙ্গটিই তো একটি ভগবান, জগদীশ্বর, বিশ্বব্রহ্মান্ডের সৃষ্টিকর্তা, মালিক। তাঁর ঈশারায় প্রতিদিন সূর্য্য উঠে এবং ডুবে। বিশ্বব্রহ্মান্ড একদিন ধ্বংশ হবে এই লিঙ্গের ইচ্ছাতেই।



শিব মৃত্যুর দেবতা যমকে জয় করেছিলেন। শিবের আটটি বিশেষ রূপকে একত্রে অষ্টমূর্তি বলে। শিবের শরীর পাঁচটি মন্ত্র দ্বারা গঠিত। এগুলিকে বলা হয় পঞ্চব্রহ্মণ। শিব পূজা দু'রকম ভাবেই হয় । মূর্তি এবং লিঙ্গ। শিব বিষ্ণুর নারী অবতার মোহিনীর রূপে মুগ্ধ হয়ে তাঁর সঙ্গে মিলিত হন। উভয়ের মিলনের ফলে আয়াপ্পার জন্ম হয়। চৈত্রসংক্রান্তির দিন বাংলায় শিবকেন্দ্রিক একটি বিশেষ উৎসব পালিত হয়। এটি চড়ক উৎসব নামে পরিচিত। এটি পৌরাণিক উৎসব নয়, লোকউৎসব। " ব্রিটিশরা মনে করত, শিবলিঙ্গ পুরুষ যৌনাঙ্গে আদলে নির্মিত এবং শিবলিঙ্গের পূজা ভক্তদের মধ্যে কামুকতা বৃদ্ধি করে। বর্তমানে ভারতের কামরূপে হিন্দুদের যে তীর্থস্থান আছে সেখানে সতীর মহামুদ্রা বা যোনী পতিত হয়েছিল। এজন্য ঐ স্থান মানুষের কাছে তুলনামূলকভাবে বেশী আকর্ষণীয়। বিশেষ করে যাদের বাচ্চা-কাচ্চা হয় না, তারা সন্তানের আশায় কামরূপে দেবীর প্রার্থনা করতে যায়। যে স্থানে সতীর মহামুদ্রা বা যোনীমন্ডল পতিত হয়েছিল সেই যায়গাকে বলা হয় কুব্জিকাপীঠ। বিশ্বাস করা হয়; যোনীরূপী যে প্রস্তরখন্ডে মা কামাখ্যা অবস্থান করেন, সেই শিলা স্পর্শ করলে মানুষ মুক্তিলাভ করে।







শিবের এক নাম ভূত নাথ। ভূত অর্থ প্রাণী, তিনি প্রাণিজগতের পালক। তাঁর কাছে উচুঁ নিচু নেই। তিনি সর্বভূতে সমদর্শী। শিব পূজায় জাতিকুলের বিচার নেই। আসলে হাজার বছরের বিদেশি শাসনে পরাধীন থাকায় বিদেশী শাসকগন সনাতন ধর্মকে নিয়ে যা ইচ্ছে তাই করেছে। শুধু উপাসনালয় ভেঙ্গেই ক্ষান্ত থাকেনি, নানা কুৎসা রটাতেও পিছপা হয়নি। ১৯০০ সালে প্যারিস ধর্মীয় ইতিহাস কংগ্রেসে ভারত সন্ন্যাসী স্বামী বিবেকানন্দ বলেন, শিবলিঙ্গ ধারণাটি এসেছে বৈদিক যূপস্তম্ভ বা স্কম্ভ ধারণা থেকে। মহেশখালীর আদিনাথ জাতীয় মহাতীর্থে প্রতিবছর শিব চতুর্দশীতে বসে হিন্দু পুন্যার্থীদের মিলনমেলা। এ উপলক্ষে বিশাল লোকজ মেলাও বসে মহেশখালীতে। উনবিংশ শতাব্দীর শেষভাগে পাশ্চাত্য গবেষকরা লিঙ্গ ও যোনিকে নারী ও পুরুষের যৌনাঙ্গ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। তবে হিন্দুরা শিবলিঙ্গকে সৃষ্টির পিছনে নারী ও পুরুষ উভয়ের অবদানের কথা স্মরণ করে শিবলিঙ্গের পূজা করেন।



কথিত আছে, একদা দূর্গার সাথে সঙ্গমকালে শিব এত বেশী উত্তেজিত হয়ে পড়েছিলেন যে, তাতে দুর্গার প্রাননাশের উপক্রম হয়। দুর্গা মনে মনে শ্রীকৃষ্ণকে স্বরন করতে থাকেন, এমন সময় শ্রীকৃষ্ণ আর্ভিভূত হয়ে নিজ হস্তস্থিত সুদর্শন চক্রধারা আঘাত করল উভয়ের সংযুক্ত যৌনাংঙ্গ কেটে আসে। ঐ সংযুক্ত যৌনাঙ্গের মিলিত সংস্করনের নাম বানলিঙ্গ বা শিবলিঙ্গ যা হিন্দু সমাজের একটি প্রধান পূজ্য বস্তু এবং ঐ শিবলিঙ্গের পুজার জন্য বহু বড় বড় শিব মন্দির গড়ে উঠেছে। সেন রাজবংশের সর্বশেষ রাজা ছিলেন লক্ষ্মণ সেন। তিনি শিব ভক্ত পরায়ণ নৃপতি ছিলেন। রাজা লক্ষ্মণ সেন কর্তৃক বাংলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে বহু মন্দির প্রতিষ্ঠিত হয়। এর মধ্যে যশোর জেলার মুরলী গ্রামের জোড়া শিব মন্দির দুটি খুবই মনোরম।



ভারতীয় পুরাণ মতে, জীবের সৃষ্টা হলেন দশ প্রজাপতি। এদের মধ্যে একজন হলেন দক্ষ। দক্ষ একবার রাজসূয় যজ্ঞের আয়োজন করেন। সবাইকে তিনি নেমতন্ন করলেও কী কারণে কন্যা সতী ও জামাতা শিবকে নেমতন্ন করেননি । সতী নারদের কাছে পিতার এই যজ্ঞের কথা জানতে পারলেন; এরপর শিব- এর অনুমতি নিয়ে যজ্ঞস্থলে উপস্থিত হলেন ঠিকই তবে সেখানে শিব এর নিন্দা শুনে ভয়ানক ক্ষিপ্ত হয়ে উঠলেন। অপমানে সতী যোগাসনে দেহত্যাগ করেন। শিব প্রাণপ্রিয় স্ত্রীর মৃত্যু সংবাদ পেলেন। এবং দ্রুত যজ্ঞস্থলে উপস্থিত হলেন। ভীষণ ক্রোধে শিব যজ্ঞ তছনছ করলেন এবং দক্ষের মুন্ডচ্ছেদ করলেন। তারপর সতীর মৃতদেহ কাঁধে নিয়ে প্রলয়নৃত্য আরম্ভ করলেন। এতে পৃথিবী ধ্বংসের সম্মূখীন হয়। তখন নারায়ণ সুদর্শন চক্র দিয়ে সতীর দেহ খন্ড খন্ড করেন। শিব এতে শান্ত হন। কাজেই শিব- এর তান্ডব অকারণ নয়। সেটি তাঁর বিরহক্ষুব্দ প্রেমময় রূপেরই প্রকাশ।



একবার এক মহাসম্মানীয় ধর্ম প্রচারক ও ধর্মীয় মহামানব তার মুসাল্লাম বা নামাজের স্থান থেকে ঈদ-উল-আজহার নামাজ পড়ার উদ্দেশ্যে বের হয়েছিলেন। পথে তার সঙ্গে কিছু স্ত্রীলোকের দেখা হয়। তিনি তাদেরকে অতিক্রম করার সময় বললেন “হে স্ত্রীলোকেরা, দান খয়রাত করো, যেহেতু আমি দেখিয়াছি যে দোজখের অধিকাংশ অধিবাসীই স্ত্রীলোক” তখন স্ত্রীলোকেরা জিজ্ঞাসা করলেন, “কেন এমন হলো?” মহামানব উত্তর দিলেন, “তোমরা তোমাদের স্বামীদের প্রতি অকৃকজ্ঞ। আর আমি তোমাদের অপেক্ষা স্বল্পতর বুদ্ধিমান ও কর্ম পরায়ণ কাহাকেও দেখি নাই” স্ত্রীলোকেরা জিজ্ঞাসা করলো, “আমাদের বুদ্ধি ও ধার্মিকতার কি অভাব”? মহামানব উত্তর দিলেন, “দুই জন স্ত্রীলোকের সাক্ষ্য কি একজন পুরুষের সমান নহে”? স্ত্রীলোকেরা বলল, “হ্যাঁ”। তিনি বললেন, “ইহাই প্রমান করে স্ত্রীলোকের বুদ্ধিরও অভাব। আর ইহা কি সত্য নয় যে, যখন কোন স্ত্রীলোক ঋতুমতি হয় তখন সে নামাজ বা রোজা রাখতে পারে না”? স্ত্রীলোকেরা বললেন “হ্যাঁ”। তিনি বললেন, “ইহাই তাদের ধার্মিকতার অভাব”।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.