নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার নাম- রাজীব নূর খান। ভালো লাগে পড়তে- লিখতে আর বুদ্ধিমান লোকদের সাথে আড্ডা দিতে। কোনো কুসংস্কারে আমার বিশ্বাস নেই। নিজের দেশটাকে অত্যাধিক ভালোবাসি। সৎ ও পরিশ্রমী মানুষদের শ্রদ্ধা করি।

রাজীব নুর

আমি একজন ভাল মানুষ বলেই নিজেকে দাবী করি। কারো দ্বিমত থাকলে সেটা তার সমস্যা।

রাজীব নুর › বিস্তারিত পোস্টঃ

টুকরো টুকরো সাদা মিথ্যা- ৩০

০২ রা মে, ২০১৪ বিকাল ৩:১৭

১। জলিল সাহেব নতুন গাড়ি কিনেছেন। গাড়ির দাম পড়েছে আট লাখ টাকা। সাত হাজার টাকা বেতন দিয়ে ড্রাইভার রেখেছেন। অসৎ টাকায় গাড়ি কেনা হয়নি। জলিল সাহেব একজন সৎ মানুষ। তের বছর টাকা জমিয়ে গাড়ি কিনেছেন। তার ছেলে-মেয়েদের গাড়ির খুব শখ। গাড়িটি ব্যাবহার করেন তার ছেলে-মেয়েরা। তিনি রিকশা এবং বাসে'ই যাতায়াত করেন। সেদিন ছুটির দিনে তিনি কি মনে করে যেন গাড়ি নিয়ে বের হলেন। যাবেন মিরপুর তার ছোট বোনের বাসায়। তার গাড়ি কাওরান বাজার এসে জ্যামে পড়লো। ড্রাইভার এসি ছেড়ে দিয়েছে- আরামে তার ঘুম এসে যাচ্ছিল। গাড়িতে রেডিও চলছিল।

হঠাত জলিল সাহেব জানালা দিয়ে তাকিয়ে দেখলেন- তার গাড়ির পাশে একটা লোকাল বাসে অনেক মানুষজন বানরের মতো ঝুলে আছে। বাসের দিকে তাকিয়ে জলিল সাহেবের লজ্জা করতে লাগল। তিনি সারা জীবন এরকম বাসে ঝুলে ঝুলে গন্তব্যে গিয়েছেন। '৬' নম্বর বাস গুলোতে খুব ভীড় হয়, ঠিকভাবে পা'ও রাখা যায় না। গরমে সারা শরীর ভিজে যায়। একটুও নড়া-চড়া করা যায় না। জলিল সাহেবের মনে হচ্ছে যেন, বাসের ভেতরে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষ গুলো এক আকাশ ঘৃণা নিয়ে তার দিকে তাকিয়ে আছেন। জলিল সাহেব বিবেকের তাড়নায় গাড়ি থেকে নেমে হাঁটা শুরু করলেন মিরপুর। এবং তিনি মনে মনে সিদ্ধান্ত নিলেন- আর কোনো দিন গাড়িতে উঠবেন না।



২। মোবারক সাহেব নতুন একটি গাড়ি কিনেছেন। দাম পড়েছে বাইশ লাখ টাকা। তার আরও দু'টি গাড়ি আছে। দু'টি গাড়ির মধ্যে একটি তার স্ত্রীর এবং একটি তার ছেলের। প্রত্যেকটা ড্রাইভারকে বেতন দেওয়া হয় বারো হাজার টাকা করে। মোবারক সাহেব মিরপুরে একটি গার্মেন্টস দিয়েছেন। সপ্তাহে একদিন সেখানে বসেন। মোবারক সাহেব তার বাপ-দাদার ব্যবসা নিজ বুদ্ধি দিয়ে সাত গুন বাড়িয়েছেন।

তার গাড়ি সিগ্যানালে পড়েছে। তিনি সব সময় জানালা বন্ধ করে রাখেন। জানালা খোলা থাকলেই ভিক্ষুক এবং নানান ধরনের হকার'রা হাত ঢুকিয়ে দেয়। এটা তিনি একেবারেই সহ্য করতে পারেন না। তখন তার ইচ্ছা করে এদের হাত গুলো ভেঙ্গে দিতে।

মোবারক সাহেব তার গাড়ির কালো কাঁচের জানালা দিয়ে দেখতে পেলেন একটা বাসে অনেক গুলো লোক যাতাযাতি করে বানরের মত ঝুলে আছে। মোবারক সাহেবের হঠাত খুব রাগ হলো। তার ইচ্ছা করলো- প্রেট্রোল দিয়ে বাসে আগুন ধরিয়ে দিতে। সব গুলো ঝুলে থাকা বানর আগুনে পুড়ে মরুক। তিনি গরীব মানুষদের একেবারেই সহ্য করতে পারেন না। এই জন্য তিনি আজকাল জানালার দিকে তাকান না। গাড়িতে সব সময় টাইমস এবং একটা ইংরেজী পত্রিকা রাখেন। পত্রিকা নড়াচড়া করেন অথবা মোবাইলে গেমস খেলেন।



৩। আজমল সাহেব একজন সরকারী কর্মকর্তা। তিনি একটি নতুন গাড়ি কিনেছেন। গাড়ির দাম পড়েছে বিয়াল্লিশ লাখ টাকা। তার আরও তিনটা গাড়ি আছে। সেগুলো তার পরিবারের অন্য সদস্যরা ব্যবহার করে। আজমল সাহেব তার ড্রাইভারকে বেশী টাকা বেতন দিতে কখনও কার্পণ্য করেন না। আজ আজমল সাহেব যাচ্ছেন মিরপুর। তিন সপ্তাহে একদিন মিস চাঁদনী নামে একটি মেয়ের কাছে যান যৌনসুখ ভোগ করতে। মেয়েটিকে তিনি প্রতিমাসে মোটা অংকের টাকা দেন। চাঁদনীর একটি চার বছরের ছেলে আছে। স্বামী থাকে বিদেশে। চাঁদনী ছাড়াও আজমল সাহেব আরও তিনজন নারীর কাছে নিয়মিত যান।

আজমল সাহেবের গাড়ি কাওরান বাজার এসে সিগ্যানালে পরেছে। তিনি জানালা দিয়ে দেখলেন- একটা বাসে অনেক গুলো লোক ঝুলে আছে। ঝুলে থাকা মানুষ গুলোকে দেখে আজমল সাহেব অনেক আনন্দ পেলেন। দরিদ্র মানুষদের দেখে তিনি অনেক আনন্দ পান। বাসে যাতাযাতি করে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষ গুলোর দিকে তাকিয়ে আজমল সাহেব মিটমিট করে হাসেন এবং অকথ্য ভাষায় গালাগালি করেন। এবং বাসের লোকজনদের দিকে তাকিয়ে কখনো কখনো ভিক্ষুক এবং হকারদের ধমক দেন, এই গাড়িতে হাত দিবি না। দাগ পড়ে যাবে।

আজমল সাহেব দুর্নীতি করে অনেক টাকার মালিক হয়েছেন। সরকারী দলের অনেক নেতা তাকে তোষামদ করেন। আজমল সাহেবের অনেক দিনের ইচ্ছা ধনী এবং গরীবদের জন্য আলাদা রাস্তা করা হোক। যেন এসি গাড়িতে বসে ঝুলে থাকা বানরদের না দেখতে হয়।

মন্তব্য ১৫ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (১৫) মন্তব্য লিখুন

১| ০২ রা মে, ২০১৪ বিকাল ৩:২৪

পরিবেশ বন্ধু বলেছেন: চমৎকার খণ্ড গল্প , এদের বিভেদে বুঝা যায় কার চরিত্র কেমন ।

০২ রা মে, ২০১৪ রাত ১০:০৩

রাজীব নুর বলেছেন: হুম।

২| ০২ রা মে, ২০১৪ বিকাল ৪:২১

ইকরাম বাপ্পী বলেছেন: sundor sundor...... kintu garir bandor gula ei gari dekhe ki vabe ta ki bolben na? amar vabna apnar golpe nai dekhe koshto pailam..... bandoe der kotha keu vabe na..... :(( :(( :(( :-< :-< :-< :-<

০২ রা মে, ২০১৪ রাত ১০:০৪

রাজীব নুর বলেছেন: বাংলিশ লেখা পড়তে পারি না।

৩| ০২ রা মে, ২০১৪ রাত ৮:০৩

তাসজিদ বলেছেন: জীবন যার কাছে যে রকম।

৪| ০২ রা মে, ২০১৪ রাত ৮:১৫

আমার.আমি বলেছেন: ঘটনাটি চমৎকারভাবে সাজানো হয়েছে । অসাধারন ।

৫| ০২ রা মে, ২০১৪ রাত ৮:৩০

স্বপ্নচারী গ্রানমা বলেছেন:
চমৎকৃত হইলাম অতিশয়,

অনেকদিন পরে আপনার লেখা পেলাম ।

ভালোলাগা/ভালো থাকুন ।

৬| ০২ রা মে, ২০১৪ রাত ৯:৩২

মোঃ নুরুল আমিন বলেছেন: কতদিন বানরের মত ঝুলেছি। পড়তে পড়তে মনে হলো, এখনও ঝুলেই আছি!

@ইকরাম বাপ্পীঃ বানররা ওই গাড়ি দেখেনা। তারা ঠেলাঠেলি করে একে অপরের জায়গা দখল করতে, চি্‌তকার-গালাগালি করতে, আর একে বারে নিচের বানরগুলো পড়ে যাওয়া ঠেকাতে ব্যস্ত.।.।

৭| ০২ রা মে, ২০১৪ রাত ৯:৩৫

বটবৃক্ষ~ বলেছেন: ভাল লাগলো..।

৮| ০২ রা মে, ২০১৪ রাত ১০:২০

বাকি বিল্লাহ বলেছেন: ভাল লাগলো ;)

৯| ০২ রা মে, ২০১৪ রাত ১০:৪০

মাননীয় মন্ত্রী মহোদয় বলেছেন: ভালো লাগলো

১০| ০২ রা মে, ২০১৪ রাত ১০:৫৪

সিফাত সারা বলেছেন: দুঃখ লাগলো :( :( তাও ভাল লাগলো :-B :-B

১১| ০৩ রা মে, ২০১৪ রাত ১:০২

সময়ের গ্যাঁড়াকল বলেছেন: তেমন বুদ্ধি নিয়ে কিছু বলতে পারলাম না,তবে মারাত্মক বলছেন ;)

১২| ০৩ রা মে, ২০১৪ রাত ১:২০

সচেতনহ্যাপী বলেছেন: বাস্তবতারও সীমা থাকে। কিন্তু আপনার লেখায় তিন প্রজাতির বাস্তবতা তথা বিবেকের দংশন এতো সুন্দরভাবে ফুটে উঠেছে যা অবর্ননীয়। তবে জলিল সাহেবের মত লোকদের দেখতে আমাদের যাদুঘরে যেতে হবে,একদিন।

১৩| ০৩ রা মে, ২০১৪ বিকাল ৫:৪৬

শ্রাবণধারা বলেছেন: জলিল সাহেবের কথা পড়ে খুব ভাল লাগলো। থাকুক দু চারটে এমন মানুষ - আমাদের কল্পনায় হলেও থাকুক তারা আমাদের ভাবনায়, ভালবাসায়।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.