নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি একজন ভাল মানুষ বলেই নিজেকে দাবী করি। কারো দ্বিমত থাকলে সেটা তার সমস্যা।
আপনাকে কেন বলছি জানিনা, হয়ত গল্প-উপন্যাস পছন্দ করেন তাই অথবা আপনাকে আমার ফালতু মনে হয়নি। আমাদের তিনজন বন্ধু কমন আর তারা আমার বহু বছরের চেনা এবং পছন্দের মানুষ, তাই আপনিও চেনা, হয়তো পছন্দেরও। আমি গল্পের বই যখন প্রথম পড়তে শিখি ঠিক তখন আমার হাতে আসে হুমায়ুন আহমেদের ''জশহা বৃক্ষের দেশে'' নামক একটা বই। তখন ক্লাশ সেভেনে পড়ি। বইটা সম্ভবত আমাকে বড় চাচা দিয়েছিলেন। আমি হুমায়ূন আহমেদের এমন কোনো লেখা নেই যে পড়িনি। একটা বই দশ/বিশ বার করে পড়েছি।
শুরু হল আমার বই পড়া, পাঠ্য বই এর তলায় লুকিয়ে গল্পের বই পড়তাম। সেই ছোটবেলা থেকে এখন পর্যন্ত হুমায়ূন আহমেদের যে কোনো বই পড়া শেষ হলে আমি কিছুক্ষণ চুপচাপ কান্না করি, হয়ত আমি বেশি আবেগী মেয়ে।
যা হোক, আগে আমার ফেসবুক ছিল না আর বাংলা কোনো চ্যানেলও নাই। তাই উনি ( হুমায়ূন আহমেদ ) অসুস্থ ছিলেন এবং মারা গেলেন, আমি জানলাম না, দেশে ফোন করেছি বাসা থেকে জানতে পারলাম তারা টেলিভিশনে স্যারের মৃত্যু সম্পর্কীয় অনু্ষ্ঠান দেখছেন। হুমায়ূন আহমেদের মৃত্যুর কথা শুনে যেন আমার মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ল। পেটে কেমন যেনো একটা পাঁক দিলো, আমি বাথরুমে গিয়ে বমি করলাম। আমার স্বামী জানতে চাইল আমি ঠিক আছি তো? স্বামী কাজে যাবো তো, তাই আমি বললাম হুম, ঠিক আছি। কোনো সমস্যা নাই। কিন্তু হুমায়ূন আহমেদ পৃথিবীতে নেই- এটা ভেবেই আমার কলিজা ছিঁড়ে যাচ্ছে।
আমার মন স্যার জীবিতই আছেন সেটা পাকাপোক্ত ভাবে মেনে নিলো। এটা ভাবা মাত্রই আমি অনেক শান্তি পেলাম। আমার স্বামীর অনেক বড় ব্যাবসা এবং তখন সে নতুন একটা শাখা খুলেছেন ইতালী'তে। তার প্রায়ই ইতালি থাকতে হচ্ছে। আমি বিশাল একটা বাড়িতে একা থাকছি। বাচ্চাদের নিয়ে ভীষন ভয় পেয়ে সারাদিন দুই তলায় পার করছি, তিন তলায় বড় বড় রুম ঘুমানোর জন্য, ভয়ে যাই না, চোখ মুখ নীল করে হল রুমে আমার বাচ্চাদের নিয়ে বসে থাকি।
রাতে হঠাত ঘুম ভেঙ্গে গেলে দেখি- রুমের ছাদে অনেক গুলো নানান রঙ্গের বেলুন উড়ছে। কিছুক্ষণ ভাল করে চেয়ে থাকলে বেলুন সরে যায়, মানে বেলুন গুলো স্থান পরিবর্তন করে। হঠাৎ এমন একটা রাতে রুম ভরে গেছে কড়া সিগারেটের গন্ধে, আমরা কেউ সিগারেট খাই না। আমি থরথর করে কাঁপতে লাগলাম। ভেবেছি বাসায় কেউ ধুকে পরেছে, ভয়ে হাতের কাছে রাখা পিতলের ফুলদানি নিলাম। মোবাইল থেকে পুলিশ কে call দিলাম কিন্তু কথা বলছি না ভয়ে জমে গেছি। পুলিশ আমার নাম্বার থেকে address ফাইন্ড করে বাসার সামনে পাঁচ মিনিটে হাজির। বেল বাজছে কিন্তু আমি বিছানা থেকে নামলাম না। বুঝতে পারছেন কে এসেছিল?
'মিসির আলি' অনেকদিন সময় লেগেছে তাকে সহ্য করতে। প্রথম প্রথম খুব ভয় পেতাম। এখন আর একা বাড়িতে একটুও ভয় পাইনা। ডাক্তার দেখিয়েছি। ডাক্তার সব শুনে বললেন, জানো মাইকেল জ্যাকসন মারা যাবার পর বহু মেয়ে তাদের ফ্লাটে তাকে দেখেছে? আমার মনে হল উনি আমাকে ভুল বুঝলেন। এরপর আর সেই ডাক্তারের কাছে যাইনি।
আমি কি বুড়ো মানুষ টার সাথে প্রেম করছি! দীর্ঘদিন আমি আলাদা ঘরে আমার বাবুদের নিয়ে ঘুমাচ্ছি কারন রাতে মিসির সাহেবের সাথে হাল্কা কথা হয়। ফেসবুকের বিভিন্ন জনের হাস্যকর কমেন্ট, স্ট্যাটাস এসব নিয়ে আমরা অনেক হাসি। আজ সকালেও ঘুম থেকে ডেকে বললেন ভাবনা ( আমার ডাক নাম) তুমি এখন ম্যাসেজ লেখ উত্তর পাবা। আপনি উত্তর দিলেন। আমার এখন আর কোনও বন্ধু নাই, আমি খুব ভাল জব করতাম এখন আর বাসা ছেড়ে বাহিরে জেতে ইচ্ছে করে না।
মিসির সাহেব কিন্তু তিন তলা ছেঁড়ে নামেন না। আমার মেঝ মেয়ে পেটে থাকতে আমার দাদী মারা জান, আমি যখন এগার মাস বয়স, তখন থেকে দাদীর কাছে বড় হয়েছি, তাই যখন দাদী মারা গেলেন আর আমি কনসিভ এর জন্য যেতে পারলাম না তখনও একি বাপার হল। দাদীও আমার সাথে থাকেন, এখন। দাদীর শাড়িটা খুব সুন্দর। সাদা শাড়ির মধ্যে ছোট ছোট নীল ফুল আঁকা। মিসির আলী সাহেব কে দেখতে পারিনা শুধু অনুভব করি। দাদী খুব ধর্ম পরায়ণ ছিলেন এখন সারাক্ষন মিসির সাহেবের পেছনে লাগেন। ইদানিং রাতে খুব গরম লাগে তাই আমি রাতে জানালা খুলে ঘুমিয়েছি, কিন্তু দাদী বললেন, জানালা বন্ধ কর ( জানালায় কোনো গ্রিল নাই) মিসির বেশি সুবিধার না তোমাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিবে। মিসির সাহেব রাগেন না সিগারেট ধরান আর বলেন যুক্তিহীন কথা বার্তা।
এ টুকুই......আপনার কাছে কি গল্পের মত লাগলো?
ঘড়িতে রাত তিনটা। চিঠিটা আমি অনেক সময় নিয়ে মোট একুশ বার পড়লাম। একুশ বার পড়তে আমার সময় লাগলো ৭২ মিনিট। গুল্লু নামের একটা ছেলে এই চিঠি আমাকে ধরিয়ে দিয়ে গেছে। বলেছে তিন দিনের মধ্যে এই চিঠির মেয়েটির সমস্যার সমাধান করে দিতে। আমি কোনো মনোবিজ্ঞানী না। আমি অতি সাধারন খেটে খাওয়া মানুষ। কিন্তু গুল্লুর ধারনা আমার বুদ্ধি আইনস্টানের কাছাকাছি। আমি ইচ্ছা করেই আমার প্রতিভা বিকশিত করি না। খুবই ভুল কথা। প্রতিভা লুকিয়ে রাখা যায় না। দিনের আলোর মতই প্রতিভা ঝকমক করে উঠে।
আমি একটা সাদা কাগজ নিয়ে লিখতে শুরু করলাম। একটা বিশেষ কারনে লেখাটা আমাকে অগোছালো লিখতে হবে। হয়তো এই লেখার মধ্যেই ভাবনা মেয়েটির সমস্যার সমাধান খুঁজে পাওয়া যাবে। এই কাগজটা সকালে গুল্লুকে দিতে হবে।
ভাবনা মেয়েটি অবশ্যই বুদ্ধিমতি। ধৈর্য্য অনেক কম। চিঠি লেখার অভ্যাস একেবারেই নেই। অগোছালো এবং বিশ্রী রকম। নিঃসঙ্গ মানুষেরা অগোছালো হয়। অবশ্য এই অগোছালো ব্যাপারটা শুধু নিজের ক্ষেত্রেই। মেয়েটি মিসির আলীর ব্যাপারটা সম্পূর্ণ মিথ্যা লিখেছে। এটা তার অবচেতন মনের কল্পনা। কল্পনা এবং বাস্তব ইচ্ছা করেই গুলিয়ে ফেলেছে। গুলিয়ে ফেলে এক ধরনের সস্তা আনন্দ পেয়েছে। মেয়েটা তার দাদীকে অসম্ভব ভালোবাসে। এবং আমি নিশ্চিত দাদীকে নিয়ে তার অনেক আনন্দময় সৃতি আছে।
দীর্ঘদিন বিদেশে থাকলে এবং নানান অস্থিরতার কারনে মেয়েটি হতাশ হয়ে পড়েছে। তার মধ্যে স্বামী ব্যস্ততার কারনে মেয়েটি হয়ে পড়েছে নিঃসঙ্গ। ভাবনা মেয়েটি অপরিচিত মানুষের সাথে কথা বলে আনন্দ পায় না। মেয়েটার পেটে হাজার হাজার কথা জমে আছে কিন্তু সে কথা বলার মানুষ খুঁজে পায় না। সবচেয়ে বড় কথা ভাবনা তার অবচেতন মনের কাছে বন্দী। অবচেতন মন তাকে নিয়ে খেলছে।
স্বপ্নে অথবা বাস্তবে বেলুন দেখাটা খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার। বেলুন অনেক রঙের হয়। মেয়েটির ছোট ছোট দু'টি বাচ্চা আছে। বাচ্চারা বেলুন খুব পছন্দ করে। আর বেলুন বাতাসে একটু নড়ে উঠতেই পারে, এটা স্বাভাবিক। আর সিগারেটের গন্ধ পাওয়াটা আরও বেশী স্বাভাবিক। গরমের কারনে জানালা ছিল খোলা- আশে পাশের কোনো বাসায় কেউ সিগারেট খেয়েছে- বাতাসে সেই সিগারেটের ধোয়া মেয়েটির ঘরে ঢুকেছে।
গুরুতর কোনো সমস্যায় ভাবনা পড়েনি। চিন্তার কিছু নেই। ছোট্র সাধারন সমস্যা আর এই সমস্যা ভাবনা নিজেই খুব সহজে সমাধান করতে পারে। এই মেয়েটির এক আকাশ স্বচ্ছ মায়া-মমতা আর ভালোবাসার প্রয়োজন। মেয়েটির চারপাশে সব সময় থাকা দরকার তার প্রিয় মানুষদের। প্রিয় মানুষেরা কাছে থাকলেই- মিসির আলী তার তিন তলার ঘর দখল করে রাখবে না। মৃত দাদীও এসে জানালা বন্ধ করতে বলবে না। মাঝে মাঝে কিছু মানুষ কিছু নরম সমস্যা নিজেই তৈরি করে। সমস্যা যে তৈরি করে- সে খুব সহজেই সেই সমস্যার সমাধানও করতে পারে।
( প্রথম পর্ব এখানেই শেষ।)
©somewhere in net ltd.