নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি একজন ভাল মানুষ বলেই নিজেকে দাবী করি। কারো দ্বিমত থাকলে সেটা তার সমস্যা।
বিশার সমুদ্রের বুকে জাহাজ নিয়ে পাড়ি জমায় নাবিকেরা, দিন গড়িয়ে মাস চলে যায় এবং এক বন্দর থেকে আরেক বন্দরে পৌছাতে। ফলে বছরের অধিকাংশ সময়ই এদেরকে ছুটতে হয় সমুদ্র থেকে সমুদ্রে। বাংলাদেশের নির্মিত জাহাজ ইউরোপে রফতানি হচ্ছে। বাংলাদেশে নির্মিত জাহাজ বেশ উন্নত বলে ইউরোপে প্রশংসিত হয়েছে। জাহাজ নির্মাণে প্রচুর দক্ষ-অদক্ষ শ্রমিকের প্রয়োজন হয়। বাংলাদেশে জাহাজ নির্মাণে স্বল্প খরচে প্রচুর শ্রমিক পাওয়া যায়। আর এ কারণে নির্মাণ খরচ অনেক কম। জাহাজ রফতানি করে বাংলাদেশ প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা আয় করেছে। বিশ্বে বাংলাদেশের জাহাজ নির্মাণ কারিগরদের সুনাম ছড়িয়ে পড়েছে। বাংলাদেশ এখন বিশ্বমানের অনেক ধরনের জাহাজ নির্মাণে পারদর্শী। দেশীয় বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান কয়েক বছর ধরে জাহাজ নির্মাণ করে বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের নাম শক্ত অবস্থানে নিয়ে গেছে।
বিশ্বে প্রতি বছর সমুদ্রগামী জাহাজের সংখ্যা ৬ শতাংশ হারে বাড়ছে। কিন্তু জাহাজ নির্মাণ শিল্প বাড়ছে ৩ শতাংশ হারে। বিশ্বে ছোট ও মাঝারি আকারের সমুদ্রগামী জাহাজের চাহিদা থাকায় প্রধান প্রস্তুতকারক দেশগুলোর বাইরে বিকল্প খোঁজে বিশ্বব্যাপী তৎপর ক্রেতারা। এ কারণে ব্যবসায়ীরা এখন বাংলাদেশের প্রতি ঝুঁকেছে। রফতানি তালিকায় সম্ভাবনাময় নতুন পণ্য হিসেবে ২০০৮ সালের ১৫ মে সমুদ্রগামী জাহাজ রফতানি শুরু হয়। বিদেশ থেকে একটি গাড়ি আমদানির ক্ষেত্রে আমদানিকারককে ২০০ থেকে ৩০০ শতাংশ কর দিতে হয়। অথচ জাহাজ আমদানির ক্ষেত্রে কর দিতে হয় মাত্র ৩৭ শতাংশ।
জাহাজ নির্মাণের কাঁচামালের ৯০ শতাংশই ভেঙে ফেলা জাহাজ থেকে সংগ্রহ করা হয়। বাকি ১০ শতাংশ আমদানিনির্ভর। সাধারণ জাহাজের চেয়ে তেলবাহী জাহাজ নির্মাণে খুবই সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়। কারণ তেলবাহী জাহাজ দুর্ঘটনায় পতিত হওয়া মানেই মারাত্মক পরিবেশ বিপর্যয়ের অশনিসংকেত। বর্তমানে বিশ্বব্যাপী চালু থাকা জাহাজের প্রায় ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ আগামী কয়েক বছরের মধ্যে ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়বে। ভারত, চীন, কোরিয়ার তুলনায় বাংলাদেশে জাহাজ নির্মাণ ব্যয় ২০ শতাংশ থেকে ৩৫ শতাংশ কম। বিশ্ববাজারে এখনো জাহাজের চাহিদার তুলনায় সরবরাহে ২৫ ভাগ ঘাটতি রয়েছে। চট্টগ্রামে বর্তমানে বেশ কয়েকটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান জাহাজ নির্মাণ করছে।
আনন্দ শীপ ইয়ার্ড ১৯৮৩ সালে বুড়িগঙ্গার তীরবর্তী কেরানীগঞ্জের জিনজিরায় জাহাজ নির্মাণ শুরু করে। দেশে বর্তমানে ৮০ হাজার দক্ষ ও দেড় লক্ষ অদক্ষ কর্মী জাহাজ নির্মাণ শিল্পে জড়িত থেকে তাদের জীবিকা নির্বাহ করছে। ১৯৫৬ সালের দিকে বিশ্বের মধ্যে আমাদের দেশ জাহাজ তৈরী ও মেরামতের জন্য জাহাজ শিল্প একটি অন্যতম খাত হিসেবে পরিচিত ছিল। পাল তোলা কাঠের জাহাজ যখন সাত সমুদ্র পাড়ি দিত সে যুগে চট্টগ্রামে গড়ে উঠেছিল জাহাজ নির্মাণ শিল্পের বিশাল অবকাঠামো। চট্টগ্রামে নির্মিত বাণিজ্যতরী ও রণতরীর কদর ছিল বিশ্বব্যাপী। রফতানি হতো পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে। কর্ণফুলী নদীর দক্ষিণ তীরে ১৫টি শিপইয়ার্ড নিয়ে জাহাজ নির্মাণ জোন গড়ে তোলা সম্ভব।
বিশ্ববাজারে এ মুহূর্তে প্রায় ৪০ হাজার কোটি ডলারের জাহাজ নির্মাণের অর্ডার রয়েছে। এর মাত্র শতকরা দুই ভাগ কাজও যদি বাংলাদেশের জাহাজ নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানগুলো পায়, তাহলেও প্রায় ৮০০ কোটি ডলারের (৬০,০০০ কোটি টাকা) বৈদেশিক মুদ্রা আয় করতে পারবে বাংলাদেশ। বাংলাদেশে এখন ছোট-বড় শতাধিক জাহাজ নির্মাণ কারখানা গড়ে উঠেছে। এর মধ্যে মাত্র ৭টি প্রতিষ্ঠান রফতানিযোগ্য জাহাজ নির্মাণ করছে। এরমধ্যে রয়েছে, চট্টগ্রামের ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ড, কর্ণফুলী শিপইয়ার্ড, ফিসার শিপইয়ার্ড, মেঘনা ঘাটের আনন্দ শিপইয়ার্ড, খান ব্রাদার্স শিপইয়ার্ড, নারায়ণগঞ্জের এনইএসএল শিপইয়ার্ড ও দেশ শিপইয়ার্ড। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে জাহাজ নির্মাণ কাজে নিয়োজিত রয়েছেন প্রায় ১০ হাজার বাংলাদেশি।
পৃথিবীর ৯০% জাহাজ ভাঙ্গার কাজ বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান ও চীন করে থাকে। এর মধ্যে ভারত, বাংলাদেশ ও পাকিস্তান গত তিনদশকের বেশি সময় ধরে এ শিল্পে প্রভাব বিস্তার করে আসছে। জাহাজভাঙ্গা শিল্পের ব্যবসা হচ্ছে ‘মরা হাতি লাখ টাকা’র মত। জাহাজের কোন কিছুই ফেলে দেওয়া যায় না। জাহাজভাঙ্গা ব্যবসাকে প্রকৃত অর্থে শিল্প হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া উচিত এবং অবকাঠামোগত ও আর্থিক সুবিধাদি অর্থাৎ ব্যাংক ঋণ ও আমদানি রপ্তানি সংক্রান্ত সুযোগ সুবিধা সমূহ নিশ্চিত করা খুব প্রয়োজন। জাহাজ ভাঙ্গার সময় একটি গুরম্নত্বপূর্ণ বিষয়ে নজর দিতে হবে তা হলো বর্জ্য তেল যেন মাটিতে অথবা সমুদ্রের জলে মিশে না যায়।
©somewhere in net ltd.