নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার নাম- রাজীব নূর খান। ভালো লাগে পড়তে- লিখতে আর বুদ্ধিমান লোকদের সাথে আড্ডা দিতে। কোনো কুসংস্কারে আমার বিশ্বাস নেই। নিজের দেশটাকে অত্যাধিক ভালোবাসি। সৎ ও পরিশ্রমী মানুষদের শ্রদ্ধা করি।

রাজীব নুর

আমি একজন ভাল মানুষ বলেই নিজেকে দাবী করি। কারো দ্বিমত থাকলে সেটা তার সমস্যা।

রাজীব নুর › বিস্তারিত পোস্টঃ

রবীন্দ্রনাথের ধর্মচিন্তা

০৬ ই আগস্ট, ২০১৪ রাত ১০:৩৮

রবীন্দ্রমানসের স্বরূপ বুঝতে হলে আমাদের প্রথমে রামমোহন রায়কে ভালোভাবে বুঝে নিতে হবে। কারণ, রামমোহন রায়ের সুযোগ্য উত্তরসাধক ছিলেন রবীন্দ্রনাথ। বাংলায় রেনেসাঁর সূচনা করেন রামমোহন এবং সমাপ্তি টানেন রবীন্দ্রনাথ। রামমোহন যেমন সত্য সন্ধানী ছিলেন তেমনি ছিলেন মানব-কল্যাণে সোচ্চার। ধর্মীয় সত্যকে তিনি সন্ধান করেছেন কোরআনে, পুরাণে, বাইবেলে এবং মহাপুরুষদের জীবন ও বাণীর মধ্যে। যুক্তিবাদী রামমোহন হিন্দু ধর্মের বহুদেবতার ওপর শ্রদ্ধা হারিয়েছিলেন। কিন্তু হিন্দু ধর্মের উচ্চতর দার্শনিক সিদ্ধান্তের ওপর তাঁর আস্থা ছিল অটুট। রবীন্দ্রনাথের বাবা যেমন ছিলেন ঈশ্বরপ্রেমিক তেমনি ছিলেন হাফিজের অনুরাগী ও ভক্ত।



জোড়াসাঁকোতে থাকতে রবীন্দ্রনাথের ধর্মীয় চিন্তা-ভাবনা যে রকম ছিল শান্তিনিকেতনে যাওয়ার পর তা কিন্তু ধীরে ধীরে বদলে গিয়েছিল। বিশেষ করে বিভিন্ন ধর্মের অনুসারী ছাত্রদের কাছে বক্তব্য তুলে ধরতে গিয়ে তার ধর্মীয় ভাবনায় পরিবর্তন এসেছিল।



গৌতম বুদ্ধ, যীশু খ্রিস্ট, গুরু নানক প্রমুখ ধর্মগুরুর সম্মানে তিনি কবিতা , গান রচনা ও পরিবেশন করেছেন। তাঁদের জীবন ও দর্শন সম্পর্কে আলোচনাও করেছেন। হযরত মোহাম্মদ এর জন্মদিনে শান্তি নিকেতনের মন্দিরের অনুষ্ঠানে ‘কোন আলোকে প্রাণের প্রদীপ জ্বালিয়ে তুমি ধরায় আসো’ গানটি গাওয়া হতো।



রামমোহন ভাবুক ছিলেন, সংস্কারক ছিলেন। শিল্পী ছিলেন না। কিন্তু তার উত্তরসাধক রবীন্দ্রনাথ ছিলেন কবি ও শিল্পী। তাই নানা উৎস থেকে উপাদান সংগ্রহ করে শিল্পরূপ দেয়ার সময় তাঁর ওপর শিল্পীর ব্যক্তিজীবন ও রুচির প্রভাব পড়বে এটাই স্বাভাবিক।



রবীন্দ্রনাথ অনেকগুলো ছদ্মনামে লিখতেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছদ্মনাম: ১) অকপট চন্দ্র ভাস্কর, ২) আন্নাকালী পাকড়াশী, ৩)দিকশূন্য ভট্টাচার্য, ৪)নবীন কিশোর শর্মন, ৫)ষষ্ঠীচরন দেবশর্মা, ৬)বানীবিনোদ বিদ্যাবিনোদ, ৭)শ্রীমতী কনিষ্ঠা, ৮)শ্রীমতী মধ্যমা, ৯)ভানুসিংহ ঠাকুর ।



রবীন্দ্রনাথ পদ্মা নদীকে অনেক ভালোবাসতেন। একবার যৌবনে ছিপ নৌকা নিয়ে নদীতে নেমেছিলেন। এই পদ্মা নদী রবীন্দ্রনাথের কাছে সব সময় রহস্যময় এবং অদ্ভুত লাগত।জমিদারি দেখাশোনা করতে না এলে- এই বিশাল পদ্মা দেখা হতো না।জমিদার রবীন্দ্রনাথের কাছে প্রজারা সব সময় তাদের সুখ দুঃখ, আশা স্বপ্ন এবং আবদার নিয়ে আসত। প্রজাদের কষ্টের কথা শুনে রবীন্দ্রনাথের বুক দুমড়ে মুচড়ে উঠত। বারবার চোখ ভিজে উঠত। প্রজারা জমিদার রবীন্দ্রনাথকে খুব আপন ভাবতেন। ভালোবাসতেন, শ্রদ্ধা করতেন। তিনি জমিদারি দেখাশোনা করতে এসে সব সময় খেয়াল রাখতেন- প্রজাদের উপর যেন কখনও জুলুম না হয়।



রবীন্দ্রনাথ যখন গল্প লিখতে শুরু করেন তখন বিশ্বসাহিত্যের ছোটগল্পের দিকপাল লেখকরা হচ্ছেন সমরসেট মম, অ্যাডগার অ্যালান পো, মোঁপাশা, ও হেনরি প্রমুখ। লক্ষ করি এইসব বিশ্বখ্যাত লেখকদের ছোটগল্পের প্রধান বৈশিষ্ট্য হচ্ছে ‘সারপ্রাইজ’। কিন্তু রবীন্দ্রনাথ গল্প লিখতে গিয়ে সে পথে হাঁটেননি। যদিও তাঁর গল্পে সারপ্রাইজ আছে তবে ‘সারপ্রাইজ ইলিমেন্ট’ তার গল্পের প্রধান শক্তি নয়। অপ্রত্যাশিত চমক দিয়ে সাধারণত তাঁর গল্প শেষ হয় না বরং গল্প শেষে পাঠকের জন্য একটা বিশেষ থিমের উসকানি থাকে।



মৃণালিনী দেবীর কাছে এক পত্রে রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন, ‘মানুষের আত্মার চেয়ে সুন্দর আর কিছুই নেই,যখনই তাকে খুব কাছে নিয়ে এসে দেখা যায়, যখনই তার সাথে প্রত্যক্ষ মুখোমুখি পরিচয় হয় তখনই যথার্থ ভালোবাসার প্রথম সূত্রপাত হয়। তখন কোন মোহ থাকে না। কেউ কাউকে দেবতা বলে মনে করবার দরকার হয় না। মিলনে ও বিরহে মত্ততার ঝড় বয়ে যায় না কিন্তু দূরে নিকটে সম্পদে বিপদে অভাবে এবং ঐশ্বর্যে একটি নিঃসংশয় নির্ভরের সহজ আনন্দের নির্মল আলোক পরিব্যাপ্ত হয়ে থাকে।’



রবীন্দ্রনাথ সর্বাধিক চিঠি লিখেছেন নির্মলকুমারী মহলানবিশকে। ১৯২৫ থেকে ১৯৪১ সাল পর্যন্ত চিঠি লিখেছিলেন প্রায় ৫শ’। এই চিঠিগুলো রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সাহিত্য সৃষ্টির এক অসামান্য নিদর্শন। ব্যক্তি এখানে তুচ্ছ বা গৌণ – সৃষ্টিকর্মই উজ্জ্বল এখানে। নির্মলকুমারীকে লেখা চিঠি থেকে ৬৪ টি চিঠি নিয়ে সংকলিত হয়েছে। ‘পথে ও পথের প্রান্তে’ বই। বইটি প্রকাশিত হয় ১৯৩৮ সালে। রবীন্দ্রনাথ বলেছেন, “তাঁর চিঠি হল ভিড়ের আড়ালে অন্তরঙ্গ মানুষের সঙ্গে আলাপ প্রতিলাপ তা সর্বসাধারণের সাহিত্য দরবারে উপস্থাপিত করবার নয়”। রবীন্দ্রনাথ শেষ চিঠি লিখেছিলেন পুত্রবধূ প্রতিমা দেবীকে। মৃত্যুর এক সপ্তাহ আগে ১৯৪১ সালের ৩০ জুলাই ৭টি বাক্যের ওই চিঠিতে তিনি লেখেন, ‘তোমাকে নিজের হাতে কিছু লিখতে পারিনে বলে কিছুতে লিখতে রুচি হয় না।’

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৬ ই আগস্ট, ২০১৪ রাত ১১:০৩

পরিবেশ বন্ধু বলেছেন: অনেক তথ্য ভাণ্ডার রবি ঠাকুরের জীবনীতে , সুন্দর পোস্ট ।

২| ০৬ ই আগস্ট, ২০১৪ রাত ১১:৪২

আজমান আন্দালিব বলেছেন: তথ্যসমৃদ্ধ পোস্ট। +++

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.