নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার নাম- রাজীব নূর খান। ভালো লাগে পড়তে- লিখতে আর বুদ্ধিমান লোকদের সাথে আড্ডা দিতে। কোনো কুসংস্কারে আমার বিশ্বাস নেই। নিজের দেশটাকে অত্যাধিক ভালোবাসি। সৎ ও পরিশ্রমী মানুষদের শ্রদ্ধা করি।

রাজীব নুর

আমি একজন ভাল মানুষ বলেই নিজেকে দাবী করি। কারো দ্বিমত থাকলে সেটা তার সমস্যা।

রাজীব নুর › বিস্তারিত পোস্টঃ

আসুন কিউবা দেশটি সম্পর্কে জানি

২৬ শে নভেম্বর, ২০১৬ রাত ৯:১৩



কিউবা উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকার মধ্যস্থলে অবস্থিত। হাভানা কিউবার রাজধানী। ক্যারিবীয় অঞ্চলের সবচেয়ে ধনী রাষ্ট্র কিউবা। কিউবা ৪০০ বছর ধরে স্পেনের একটি উপনিবেশ ছিল। দিগ্বিজয়ী নাবিক ক্রিস্টোফার কলম্বাস তার প্রথম অভিযানে কিউবায় পৌঁছে এই অঞ্চলটিকে স্পেনের অধীন বলে দাবী করেন। ১৯৭৪-এ বাংলাদেশের দুর্ভিক্ষপীড়িত মানুষের জন্য আমেরিকা যে খাদ্য–সাহায্য পাঠাতে অস্বীকার করে, তার কারণ ছিল নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে বাংলাদেশ কিউবায় পাট রপ্তানি করেছিল। কিউবা সবুজ, শস্য-শ্যামলা দেশ। ডিসেম্বর থেকে মার্চ-এপ্রিল আবহাওয়া খুবই চমৎকার থাকে, শীতভাবাপন্ন, নাতিশীতোষ্ণ বলা চলে। মে থেকে অক্টোবর-নভেম্বর গ্রীষ্মকাল থাকে, বৃষ্টিও নিয়মিত হয়। সমুদ্রবেষ্টিত কিউবাকে দেখতে অনেকটা বিশাল এক কুমিরের মতোই মনে হয়। হাভানা শহরের তিন দিকই সমুদ্র এবং নদীতে মিশে আছে।

কৃষিতে সমৃদ্ধ হলেও কিউবা খুব কম কৃষিদ্রব্যই রপ্তানি করে, এর মধ্যে আছে চিনি, তামাক, লেবুজাতীয় ফল এবং বিভিন্ন ধরনের উৎপাদিত দ্রব্য। কিউবা বনজ সম্পদে সমৃদ্ধ। মেহগনি, সিডার, বিকলগ্রাম, মাজাগুয়া, টেকা প্রভৃতি কাঠের জন্য বিখ্যাত। খনিজ সম্পদে কিউবা সমৃদ্ধ। নয় হাজার শান্তিকামী গেরিলা যোদ্ধা নিয়ে হাভানায় ক্যাস্ট্রোর বিপ্লবী অভিযানে সহযোদ্ধা ছিলেন চে গুয়েভারা। পালিয়ে যায় বাতিস্তা যুক্তরাষ্ট্রে। ক্যাস্ট্রো প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব ভার গ্রহণ করেন।



সোভিয়েত ইউনিয়ন সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসাবে কিউবার প্রতি বন্ধু হিসাবে হাত বাড়িয়ে দেয়। ১৯৬১ সালে কাস্ত্রোর নেতৃত্বাধীন কিউবা সরকারি ভাবে মার্কসবাদ গ্রহণ করে। কিউবার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের অঘোষিত যুদ্ধ সুফল বয়ে আনেনি। কিউবাকে পিষে মারার জন্য কী করেনি আমেরিকা? ভাড়াটে সৈন্য পাঠিয়ে সামরিক অভিযানের চেষ্টা করেছে। সে দেশের নেতা ও বিপ্লবের প্রতীক ফিদেল কাস্ত্রোকে হত্যার চেষ্টা হয়েছে একাধিকবার।

যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা থেকে আঠারো শত কিলোমিটারের দ্বীপ দেশটি। কত কাছের হলেও আদতে বহু দূরের। সম্পর্কের দূরত্ব উত্তর-দক্ষিণ মেরু হতেও অধিক। বিশ্ব মানচিত্রে এখনও কমিউনিস্ট দেশ হিসেবে কিউবা নিজের শক্ত অবস্থানকে ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছে বহু বাধা-বিপত্তির পরও। যুক্তরাষ্ট্র চায়, কিউবা একদলীয় সরকারের বৃত্ত থেকে বের হয়ে আসুক। ১৯৫৯ সালে ফিদেল কাস্ত্রোর নেতৃত্বে কিউবার কমিউনিস্ট পার্টি বাতিস্তা সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করে এবং কিউবায় একদলীয় কমিউনিস্ট শাসন প্রবর্তন করেন। কিউবান নাগরিকদের ঐকমত্যে পৌঁছানোর বা বিরোধী নেতা নির্বাচন করার কোন সুযোগ নেই।



বাংলাদেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের সঙ্গে যখন দেখা হয়েছিল কিউবার নেতার সঙ্গে, ফিদেল বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্ব, তাঁর সিদ্ধান্ত; অবিচলতা নিয়ে বলতে গিয়ে উল্লেখ করেছিলেন, ‘আমি হিমালয় দেখিনি, কিন্তু শেখ মুজিবকে দেখেছি। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে সমর্থন করেছিল কিউবা। কিউবার শতকরা ৮৫ জন মানুষের নিজের বাসস্থান আছে। বাকী ১৫ শতাংশ মানুষ সরকারী আবাসনের আওতায় বাস করে, যেখানে তারা তাদের বেতনের মাত্র ১০% ভাড়া হিসেবে দেয়। ফিদেল যত ভালোই হোক, একটি রাষ্ট্রের ক্ষমতা এতদিন ধরে আঁকড়ে থাকাও এক ধরনের দুর্নীতি। কারণ, দিন শেষে এ পৃথিবীতে কেউই অপরিহার্য নয়।

কিউবার মাথাপিছু বাৎসরিক আয় $৯৫০০, বাঙলাদেশে মাত্র $১৫০০। কিউবা একটি সমাজবাদী রাষ্ট্র যেখানে নীতি নির্ধারিত হয় দশের জন্য। আমেরিকার আবহাওয়া অফিস আগে পূর্বাভাসের জন্য কিউবান আবহাওয়াবিদদের কাছে ধর্না দিত। ১৯০০ সালে গ্যালভেস্টনে যে প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় হয়েছিলো তার পূর্বাভাস কিউবার আবহাওয়া অফিস অনেক আগেই দিয়েছিলো। কিন্তু আমেরিকানরা সেটা পাত্তা দেয় নি। ফলশ্রুতিতে প্রায় ৮-১২ হাজার লোক সেবার নিহত হয়েছিলো, যা আমেরিকার ইতিহাসে এখনো সর্বোচ্চ। এরপর থেকে আমেরিকান আবহাওয়াবিদরা কিউবাকে অনেক সমীহ করতো (সে যুগে রাডার, স্যাটেলাইট ইত্যাদি কোনো ধরনের প্রযুক্তি ছিলো না, আবহাওয়ার পূর্বাভাস ছিলো অনেক দুরূহ ব্যাপার)।



সবচে’ কম পয়সায় কিউবা ঘুরে আসার সুযোগ দিচ্ছে Sunwing Airlines। কিউবা'ইয় ইলেক্ট্রনিক সামগ্রীর দাম কানাডা আমেরিকার তুলনায় দ্বিগুন। কমিউনিষ্ট দেশ কিউবায় মুসলমানের সংখ্যা মাত্র পাঁচ হাজার। শহর আলামারার এক পরিত্যক্ত খেলার মাঠে প্রতি শুক্রবার জুমার নামাজের জন্য জড়ো হন কয়েকজন কিউবান মুসলিম। এই শহরে হাতে গোনা অল্প কজন মুসলিমের বাস। খেলার মাঠে যখন তারা নামাজ পড়েন, তখন পাশ দিয়ে বিকিনি হেঁটে যায় মহিলারা, বিয়ারের ক্যান হাতে পার্কে বসে থাকা পুরুষরা তাকিয়ে দেখে নামাজ পড়ার দৃশ্য। কিউবার মতো একটা দেশে ইসলামিক রীতি এবং ঐতিহ্য মেনে চলার চ্যালেঞ্জ খুব স্পষ্ট।

কিউবার রাজধানী হাভানায় মুসলমানদের নামাজ পড়ার জায়গা এখন পর্যন্ত একটাই। সেটা হলো ইমাম ইয়াইয়া পেড্রো টোরেজের বাড়িতে। তিনি কিউবার ইসলামিক লীগের প্রেসিডেন্ট। ইমাম পেড্রো টোরেজ স্বীকার করলেন, কিউবার মত দেশ, যেখানে মদ্য পান আর খোলামেলা যৌনতা একেবারেই স্বাভাবিক ব্যাপার, শুকর যেখানে জাতীয় খাদ্য, সেখানে কড়াকড়িভাবে ইসলাম মেনে চলা খুবই কঠিন।



বিমল মুখারজি'র 'দুচাকায় দুনিয়া' বইটি পড়লে কিউবা সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পারবেন। অভিনেতা মামুনুর রশিদের এক সাক্ষাৎকারে দেখলাম তিনি বলেছেন- মানুষ যে কত ভাল হতে পারে তা আমি কিউবা যেয়ে বুঝেছি। অধিকাংশ ট্যুরিস্ট আসেন কানাডা, ইউরোপ চীন, রাশিয়া কোরিয়া প্রভৃতি দেশ থেকে। পেট্রোলের দাম আমেরিকা কানাডা থেকে বেশী, লিটার প্রতি দেড় ডলার। হাভানায় গেলে আপনি বিনামূল্যে টাইম মেশিনে চড়ার সুযোগ পাবেন। রাস্তায় নামলে দেখবেন এখনো ১৯৫০-এর দশকের ট্যাক্সিক্যাবগুলো রীতিমতো রাস্তা কাঁপিয়ে চলছে। উঠে পড়ুন ট্যাক্সিক্যাবে, সেটাই টাইম মেশিন। ভুলেই যাবেন অর্ধশতাব্দী এগিয়ে আছেন আপনি।



মানুষ দেখতে হলেও কিউবায় যাবেন। বন্ধুবৎসল হিসেবে খ্যাতি রয়েছে কিউবানদের। ছোট ছোট গলির ভেতরে দেখবেন দাদার বয়সীরা হাফপ্যান্ট পরে আরাম কেদারা বিছিয়ে দিব্যি বসে আছেন। রাস্তায় দেখবেন বাচ্চাদের সাথে পাল্লা দিয়ে বুড়োরা ফুটবল নিয়ে কাড়াকাড়ি করছেন। এই দৃশ্যগুলোই কিউবানদের প্রাণবন্ত জীবন-যাপনের উদাহরণ। হাভানার নাম অনেকেই মনে রাখে হাভানা চুরুটের নামে। রাম এবং সিগারেটের বৈচিত্র্যের জন্য বিখ্যাত হাভানা। অনেকেই কার্টুন ভর্তি করে সিগারেট নিয়ে আসেন হাভানা থেকে। এত সস্তায় এত ধরনের সিগারেট সহজে আর কোথাও মিলবে না।

মন্তব্য ৭ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৭) মন্তব্য লিখুন

১| ২৬ শে নভেম্বর, ২০১৬ রাত ৯:৪২

ঢাকাবাসী বলেছেন: খুব ভাল লাগল কিউবার বর্ণনা। লেখা ও ছবি খুব সুন্দর।

২| ২৬ শে নভেম্বর, ২০১৬ রাত ৯:৫৩

নস্টালজিক বলেছেন: সহজ করে লিখেছেন। মন খারাপ লাগছিল পড়তে পড়তে।

৩| ২৭ শে নভেম্বর, ২০১৬ রাত ৩:১৫

ইলি বলেছেন: সুন্দর বর্ণনা।

৪| ২৭ শে নভেম্বর, ২০১৬ সকাল ৯:৪২

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: কিউবার নানা তথ্য জেনে ভালো লাগলো। ধন্যবাদ।

৫| ২৭ শে নভেম্বর, ২০১৬ সকাল ১০:০২

শূণ্য পুরাণ বলেছেন: খুব ভাল লাগল,কিউবার বিপ্লবী সৈরশাসককে লাল সালাম।

৬| ২৯ শে নভেম্বর, ২০১৬ সকাল ৯:০০

ওসেল মাহমুদ বলেছেন: কিউবা তো ভাই বেশ ধনী দেশ দেখছি ! মাথাপিছু আয় ৯৫০০ ডলার !

৭| ০২ রা ডিসেম্বর, ২০১৬ রাত ২:২১

ইমরান নিলয় বলেছেন: ভালোই জানা হলো

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.